Tuesday, April 30, 2019

রমজান মাসের ৩০ আমল 30 Amol of Ramadan


রহমান রহীম আল্লাহ্‌ তায়ালার নামে-


লিখেছেন: হাবীবুল্লাহ মুহাম্মাদ ইকবাল 
সম্পাদনা: ড.আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া

রমাদান মাস আল্লাহ তাআলা এক বিশেষ নিয়ামাত। সাওয়াব অর্জন করার মৌসুম। এ মাসেই কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে, রহমাত, বরকত ও নাজাতের মাস-রমাদান মাস। আল-কুরআনে এসেছে: ‘‘রমাদান মাস, যার মধ্যে কুরআন নাযিল করা হয়েছে লোকদের পথ প্রদর্শক এবং হিদায়াতের সুস্পষ্ট বর্ণনারূপে এবং সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারীরূপে’’ [সূরা আলবাকারাহ : ১৮৫]
রমাদান মাসের ফযিলাত সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: ‘‘রমাদান- বরকতময় মাস তোমাদের দুয়ারে উপস্থিত হয়েছে। পুরো মাস রোযা পালন আল্লাহ তোমাদের জন্য ফরয করেছেন। এ মাসে জান্নাতের দরজা উন্মুক্ত করে দেয়া হয়, বন্ধ করে দেয়া হয় জাহান্নামের দরজাগুলো। দুষ্ট শয়তানদের এ মাসে শৃংখলাবদ্ধ করে দেয়া হয়। এ মাসে আল্লাহ কর্তৃক একটি রাত প্রদত্ত হয়েছে, যা হাজার মাস থেকে উত্তম। যে এর কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হল, সে বঞ্চিত হল (মহা কল্যাণ হতে)’’ [সুনান আত-তিরমিযি: ৬৮৩]
এ মাসে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ আমল রয়েছে, যেগুলো পালন করার মাধ্যমে আমরা জান্নাতে যেতে পারি, জাহান্নাম থেকে মুক্তি পেতে পারি। নিম্নে রমাদান মাসের আমল সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।

তবে এ আমলগুলো করার জন্য শর্ত হলো:
এক:- ইখলাস অর্থা ‘‘একনিষ্ঠতার সাথে একমাত্র আল্লাহ তাআলার জন্যে আমল করা। সুতরাং যে আমল হবে টাকা উপার্জনের জন্য, নেতৃত্ব অর্জনের জন্য ও সুনাম-খ্যাতি অর্জনের জন্যে সে আমলে ইখলাস থাকবে না অর্থা এসব ইবাদাত বা নেক আমলের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জিত হবে না বরং তা ছোট শির্কে রূপান্তরিত হতে পারে। আল-কুরআনে এসেছে: আর তাদেরকে কেবল এই নির্দেশ দেয়া হয়েছিল যে, তারা যেন আল্লাহর ইবাদাত করে তাঁরই জন্য দীনকে একনিষ্ঠ করে” [সূরা আল-বাইয়্যেনাহ : ৫]
দুই:- ইবাদাতের ক্ষেত্রে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুসরণ। সহীহ হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যে সকল ইবাদাতের কথা উল্লেখ আছে সেগুলো পরিপূর্ণ অনুসরণ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে কোনো বাড়ানো বা কমানোর সুযোগ নেই। কারণ, ইবাদাত হচ্ছে তাই যা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শিখিয়ে দিয়েছেন। কুরআনে এসেছে:এবং রাসূল তোমাদের জন্য যা নিয়ে এসেছেন তা তোমরা গ্রহণ কর, আর যা থেকে সে তোমাদের নিষেধ করে তা থেকে বিরত হও’ [সূরা হাশর: ৭]
এ বিষয়ে রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: ‘‘যে এমন ইবাদত করল যাতে আমাদের কোন নির্দেশনা নেই তা পরিত্যাজ্য হিসাবে গণ্য হবে’’ [সহীহ মুসলিম : ৪৫৯০] 

আরও পড়ুন, রমজানের ৩০ দিনের ৩০ ফজিলত

রমাদান মাসের গুরুত্বপূর্ণ আমলগুলো হলো:-
[১] সিয়াম পালন করা:  ইসলামের পাঁচটি রুকনের একটি রুকন হল সিয়াম। আর রমাদান মাসে সিয়াম পালন করা ফরজ। সেজন্য রমাদান মাসের প্রধান আমল হলো সুন্নাহ মোতাবেক সিয়াম পালন করা। মহান আল্লাহ বলেন: সুতরাং তোমাদের মধ্যে যে, মাসটিতে উপস্থিত হবে, সে যেন তাতে সিয়াম পালন করে” [সূরা আল-বাকারাহ : ১৮৫]
সিয়াম পালনের ফযিলাত সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: ‘‘যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে ইখলাস নিয়ে অর্থা একনিষ্ঠভাবে আল্লাহকে সন্তুষ্টি করার জন্য রমাদানে সিয়াম পালন করবে, তার অতীতের সব গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে’’ [সহীহ বুখারী : ২০১৪]
‘‘যে কেউ আল্লাহর রাস্তায় (অর্থা শুধুমাত্র আল্লাহকে খুশী করার জন্য) একদিন সিয়াম পালন করবে, তাদ্বারা আল্লাহ তাকে জাহান্নামের অগ্নি থেকে সত্তর বছরের রাস্তা পরিমাণ দূরবর্তীস্থানে রাখবেন’’ [সহীহ মুসলিম : ২৭৬৭]

[২] সময় মত সালাত আদায় করা: সিয়াম পালনের সাথে সাথে সময় মত নামায আদায় করার মাধ্যমে জান্নাতে যাওয়ার পথ সুগম হয়। কুরআন মাজীদে বলা হয়েছে: নিশ্চয় সালাত মুমিনদের উপর নির্দিষ্ট সময়ে ফরয।’ [সূরা নিসা : ১০৩]
এ বিষয়ে হাদীসে এসেছে:আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর নবী! কোন আমল জান্নাতের অতি নিকটবর্তী? তিনি বললেন, সময় মত নামায আদায় করা। [সহীহ মুসলিম : ২৬৩]

[৩] সহীহভাবে কুরআন শেখা: রমাদান মাসে কুরআন অবতীর্ণ করা হয়েছে। এ মাসের অন্যতম আমল হলো সহীহভাবে কুরআন শেখা। আর কুরআন শিক্ষা করা ফরয করা হয়েছে। কেননা কুরআনে বলা হয়েছে:‘‘পড় তোমার রবের নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন’’ [সূরা আলাক : ১]
 রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরআন শেখার নির্দেশ দিয়ে বলেন:‘‘তোমরা কুরআন শিক্ষা কর এবং তিলাওয়াত কর’’ [মুসনাদ আলজামি : ৯৮৯০]

 [৪] অপরকে কুরআন পড়া শেখানো: রমাদান মাস অপরকে কুরআন শেখানোর উত্তম সময়। এ মাসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে সাহাবীদেরকে কুরআন শিক্ষা দিতেন। এ বিষয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: ‘‘তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ব্যক্তি সেই, যে নিজে কুরআন শিক্ষা করে ও অপরকে শিক্ষা দেয়’’ [সহীহ আল-বুখারী : ৫০২৭]
যে আল্লাহর কিতাব থেকে একটি আয়াত শিক্ষা দিবে, যত তিলাওয়াত হবে তার সাওয়াব সে পাবে’ [সহীহ কুনুযুস সুন্নাহ আন-নবুবিয়্যাহ : ০৭]

[৫] সাহরী খাওয়া: সাহরী খাওয়ার মধ্যে বরকত রয়েছে এবং সিয়াম পালনে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। হাদীসে এসেছে: ‘‘সাহরী হল বরকতময় খাবার। তাই কখনো সাহরী খাওয়া বাদ দিয়ো না। এক ঢোক পানি পান করে হলেও সাহরী খেয়ে নাও। কেননা সাহরীর খাবার গ্রহণকারীকে আল্লাহ তাআলা ও তাঁর ফেরেশতারা স্মরণ করে থাকেন’’ [মুসনাদ আহমাদ : ১১১০১, সহীহ]

[৬] সালাতুত তারাবীহ পড়া: সালাতুত তারাবীহ পড়া এ মাসের অন্যতম আমল। তারাবীহ পড়ার সময় তার হক আদায় করতে হবে। হাদীসে এসেছে: যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে সাওয়াব হাসিলের আশায় রমাদানে কিয়ামু রমাদান (সালাতুত তারাবীহ) আদায় করবে, তার অতীতের সব গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে’ [সহীহ আল-বুখারী : ২০০৯]
তারাবীহ এর সালাত তার হক আদায় করে অর্থা ধীরস্থীরভাবে আদায় করতে হবে। তারাবীহ জামায়াতের সাথে আদায় করা সুন্নাহ এর অন্তর্ভুক্ত। হাদীসে আছে: ‘‘যে ব্যক্তি ইমামের সাথে প্রস্থান করা অবধি সালাত আদায় করবে (সালাতুত তারাবীহ) তাকে পুরো রাত কিয়ামুল লাইলের সাওয়াব দান করা হবে’’ [সুনান আবূ দাউদ : ১৩৭৭, সহীহ]
তারাবীর রাকাত সংখ্যা নিয়ে বিস্তারিত: 
আলেমদের ইজতিহাদ নির্ভর মাসয়ালাগুলো নিয়ে কোন মুসলিমের সংবেদনশীল আচরণ করাকে আমরা সমীচীন মনে করি না। যে আচরণের কারণে মুসলমানদের মাঝে বিভেদ ও ফিতনা সৃষ্টি হয়।
শাইখ ইবনে উছাইমীন রহিমাহুল্লাহকে এমন ব্যক্তি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হয় যিনি ইমামের সাথে ১০ রাকাত তারাবী নামায পড়ে বিতিরের নামাযের অপেক্ষায় বসে থাকেন,ইমামের সাথে অবশিষ্ট তারাবী নামায পড়েন না,তখন তিনি বলেন:
এটি খুবই দুঃখজনক যে,আমরা মুসলিম উম্মাহর মধ্যে এমন একটি দল দেখি যারা ভিন্ন মতের সুযোগ আছে এমন বিষয় নিয়ে বিভেদ সৃষ্টি করেন।এই ভিন্ন মতকে তারা অন্তরগুলোর বিচ্ছেদের কারণ বানিয়ে ফেলেন। সাহাবীদের সময়েও এই উম্মতের মাঝে মতভেদ ছিল, কিন্তু তা সত্ত্বেও তাঁদের অন্তরগুলো ছিল ঐক্যবদ্ধ।তাই দ্বীনদারদের কর্তব্য, বিশেষভাবে যুব-সমাজের কর্তব্য হচ্ছে ঐক্যবদ্ধ থাকা।কারণ শত্রুরা তাদেরকে নানারকম ফাঁদে ফেলানোর জন্য ওঁত পেতে বসে আছে।”[আশ-শারহুল মুমতি‘ (৪২২৫)]
এই মাসয়ালার ব্যাপারে দুই পক্ষই অতিরিক্ত বাড়াবাড়ি করে।প্রথম পক্ষের লোকেরা যারা ১১ রাকাতের বেশি তারাবী পড়েন তাদের আমলকে একেবারে অস্বীকার করে এ আমলকে বিদআত আখ্যায়িত করেন। আর দ্বিতীয় পক্ষের লোকেরা যারা শুধু ১১ রাকাতে সীমাবদ্ধ থাকেন তাদের আমলকে অস্বীকার করে বলেন:তারা ইজমাএর খেলাফ করছে।
চলুন আমরা এ ব্যাপারে শাইখ ইবনে উছাইমীন রহিমাহুল্লাহ এর উপদেশ শুনি,তিনি বলেন:
এক্ষেত্রে আমরা বলব: বাড়াবাড়ি বা শিথিলতা কোনটাই উচিত নয়। কেউ কেউ আছেন সুন্নাহতে বর্ণিত সংখ্যা মানার ব্যাপারে কড়াকড়ি আরোপ করেন এবং বলেন: সুন্নাহতে যে সংখ্যার বর্ণনা এসেছে তা থেকে বাড়ানো নাজায়েয। যে ব্যক্তি সে সংখ্যার বেশী তারাবী পড়ে তার কঠোর বিরোধিতা করেন এবং বলেন যে, সে গুনাহগার ও সীমালঙ্ঘণকারী।
এই দৃষ্টিভঙ্গি যে ভুল এতে কোন সন্দেহ নেই।কিভাবে সে ব্যক্তি গুনাহগার বা সীমালঙ্ঘণকারী হবে যেখানে নবীসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে রাতের সালাত (কিয়ামুল লাইল) সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেছিলেন:দুই রাকাত,দুই রাকাত।তিনি তো কোন সংখ্যা নির্দিষ্ট করে দেননি।এ কথা সবারই জানা আছে যে,যেই সাহাবী রাতের সালাত সম্পর্কে নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে প্রশ্ন করেছিলেন, তিনি রাতের নামাযের সংখ্যা জানতেন না। কারণ যিনি সালাতের পদ্ধতিই জানেন না,রাকাত সংখ্যা সম্পর্কে তার না-জানবারই কথা। আর তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সেবকও ছিলেন না যে আমরা এ কথা বলব-তিনি রাসূলের বাসার ভিতরের আমল কি সেটা জানতেন। যেহেতু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সেই সাহাবীকে কোন সংখ্যা নির্দিষ্ট করে দেননি, শুধু সালাতের পদ্ধতি বর্ণনা করেছেন,এতে জানা গেল যে, এ বিষয়টি উন্মুক্ত। সুতরাং যে কেউ ইচ্ছা করলে ১০০ রাকাত তারাবীর নামায ও ১ রাকাত বিতির নামায আদায় করতে পারেন।
আর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- এর বাণী :
(صلواكمارأيتمونيأصلي)
তোমরা আমাকে যেভাবে সালাত আদায় করতে দেখলে সেভাবে সালাত আদায় কর।
এই হাদিসটির বিধান সাধারণ নয়; এমনকি এ মতাবলম্বীদের নিকটও নয়।তাই তো তারা কোন ব্যক্তির উপর একবার ৫ রাকাত,একবার ৭ রাকাত, অন্যবার ৯ রাকাত বিতির আদায় করা ওয়াজিব বলেন না। আমরা যদি এ হাদিসকে সাধারণভাবে গ্রহণ করি তাহলে আমাদেরকে বলতে হবে যে বিতিরের নামায কোনবার ৫ রাকাত,কোনবার ৭ রাকাত এবং কোনবার ৯ রাকাত আদায় করা ওয়াজিব। বরং তোমরা আমাকে যেভাবে সালাত আদায় করতে দেখলে সেভাবে সালাত আদায় কর”-এ হাদিসদ্বারা সালাত আদায়ের পদ্ধতি বুঝানো উদ্দেশ্য;সালাতের রাকাত সংখ্যা নয়।তবে রাকাত সংখ্যা নির্দিষ্ট করে এমন অন্য কোন দলীল পাওয়া গেলে সেটা ভিন্ন কথা।
যাই হোক,যে বিষয়ে শরিয়তে প্রশস্ততা আছে সে বিষয়ে কারো উপর চাপ প্রয়োগ করা উচিত নয়।ব্যাপারটি এ পর্যন্ত গড়িয়েছে যে,আমরা দেখেছি কিছু ভাই এ বিষয়টি নিয়ে এতবেশি বাড়াবাড়ি করেন যে,যেসব ইমাম ১১ রাকাতের বেশি তারাবী নামায পড়েন এরা তাদের উপর বিদআতের অপবাদ দেন এবং (১১ রাকাতের পর) মসজিদ ত্যাগ করেন। এতে করে তারা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বর্ণিত সওয়াব থেকে বঞ্চিত হন। তিনি বলেছেন:ইমাম নামায শেষ করা পর্যন্ত যে ব্যক্তি ইমামের সাথে কিয়ামুল লাইল (রাতের নামায) পড়বে তার জন্য সম্পূর্ণ রাতে নামায পড়ার সওয়াব লেখা হবে।”[হাদিসটি বর্ণনা করেছেন তিরমিযি (৮০৬) এবং সহীহুত তিরমিযি গ্রন্থে (৬৪৬)আলবানী হাদিসটিকে সহীহ্ আখ্যায়িত করেছেন] এ শ্রেণীর লোকদের মধ্যে অনেকে ১০ রাকাত বিতির আদায় করে বসে থাকে; ফলে কাতার ভঙ্গ হয়। আবার কখনও তারা কথাবার্তা বলে; যার ফলে মুসল্লিদের সালাতে বিঘ্ন হয়।
আমরা এ ব্যাপারে কোন সন্দেহ পোষণ করছিনা যে তাঁরা ভাল চাচ্ছেন এবং এক্ষেত্রে তাঁরা মুজতাহিদ; কিন্তু সব মুজতাহিদ সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছেন না। আর দ্বিতীয় পক্ষটি প্রথম পক্ষের সম্পূর্ণ বিপরীত। যারা ১১ রাকাতের মধ্যে তারাবীকে সীমাবদ্ধ রাখতে চান এরাতাদের কঠোর বিরোধিতা করেন এবং বলেন যে, তুমি ইজমাথেকে বের হয়ে গেছ। অথচ আল্লাহ তাআলা বলেছেন:আর যে তার কাছে সত্য প্রকাশিত হওয়ার পর রাসূলের বিরোধিতা করে এবং মুমিনদের পথের বিপরীত পথ অনুসরণ করে আমি তাকে সেদিকে পরিচালিত করব যেদিকে সে অভিমুখী হয় এবং আমি তাকে প্রবেশ করাব জাহান্নামে।আর তা কতইনা খারাপ প্রত্যাবর্তন।” [আন-নিসা, ৪:১১৫] তারা বলেন যে, আপনার আগে যারা অতিবাহিত হয়েছেন তাঁরা শুধু ২৩ রাকাত তারাবীই জানতেন। এরপর তারা বিপক্ষবাদীদের তীব্র বিরোধিতা শুরু করেন। এটাও ভুল।[আশশারহুল মুমতি (৩/৭৩-৭৫)]
যারা ৮ রাকাতের বেশি তারাবীর নামায পড়া নাজায়েয মনে করেন তারাযে দলীল দেন সেটা হলো আবু সালামাহ্ ইবনে আব্দুর রহমান এর হাদিস যাতে তিনি আয়েশা (রাদিয়াল্লাহু আনহা) কে প্রশ্ন করেছিলেন :রমজানে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সালাত কেমন ছিল?”তিনি বললেন:রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রমজানে বা রমজানের বাইরে ১১ রাকাতের বেশি আদায় করতেন না। তিনি ৪ রাকাত সালাত আদায় করতেন- এর সৌন্দর্য ও দৈর্ঘ্য সম্পর্কে প্রশ্ন করবেন না (অর্থা তা এতই সুন্দর ও দীর্ঘ হত)। এরপর তিনি আরো ৪ রাকাত সালাত আদায় করতেন-এর সৌন্দর্য ও দৈর্ঘ্য সম্পর্কে প্রশ্ন করবেন না (অর্থা তা এতই সুন্দর ও দীর্ঘ হত)। এরপর তিনি ৩ রাকাত সালাত আদায় করতেন।আমি বলতাম:ইয়া রাসূলুল্লাহ! আপনি কি বিতির পড়ার আগে ঘুমিয়ে যাবেন?”তিনি বলতেন:
হে আয়েশা!আমার চোখ দুটি ঘুমালেও অন্তর ঘুমায় না।
[হাদিসটি বর্ণনা করেছেন ইমাম বুখারী (১৯০৯) ও ইমাম মুসলিম (৭৩৮)]
তারা বলেন:এই হাদিসটি নির্দেশ করছে যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমজানে ও রমজানের বাইরে রাতের বেলা নিয়মিত এভাবেই সালাত আদায় করতেন। আলেমগণ এ হাদিস দিয়ে দলীলের বিপক্ষে বলেন যে, এই হাদিসটি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আমল সাব্যস্ত করছে। কিন্তু কোন আমল দ্বারা তো ওয়াজিব সাব্যস্ত করা যায় না। আর রাতের সালাত (এর মধ্যে তারাবীর নামাযও শামিল) যে কোন সংখ্যার মধ্যে সুনির্দিষ্ট নয় এ ব্যাপারে বর্ণিত স্পষ্ট দলীলগুলোর মধ্যে একটি হলো ইবনে উমর (রাঃ) এর হাদিস-এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লামকে রাতের সালাত সম্পর্কে প্রশ্ন করলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম বললেন:রাতের সালাত দুই রাকাত,দুই রাকাত। আপনাদের মধ্যে কেউ যদি ফজরের ওয়াক্ত হয়ে যাওয়ার আশংকা করেন তবে তিনি যেন আরো এক রাকাত নামায পড়ে নেন।যাতে করে এ রাকাতটি পূর্বে আদায়কৃত সংখ্যাকে বিতির (বেজোড়) করে দেয়।”[হাদিসটি বর্ণনা করেছেন,ইমাম বুখারী (৯৪৬)ও ইমাম মুসলিম (৭৪৯)] বিভিন্ন গ্রহণযোগ্য ফিক্বহী মাজহাবের আলেমগণের মতামতের দিকে দৃষ্টি দিলে পরিষ্কার হয় যে, এ বিষয়ে প্রশস্ততা আছে। ১১ রাকাতের অধিক রাকাত তারাবী পড়তে দোষের কিছু নেই। হানাফী মাজহাবের আলেম ইমাম আস্‌সারখাসী বলেন:
আমাদের মতে বিতির ছাড়া তারাবী ২০ রাকাত ।”[আল্‌মাবসুত (২/১৪৫)]
ইবনে ক্বুদামাহ বলেন:আবু-আবদুল্লাহ অর্থা ইমাম আহমাদ (রাহিমাহুল্লাহ) এর কাছে পছন্দনীয় মত হলো তারাবী ২০ রাকাত। এই মতে আরো রয়েছেন ইমাম ছাওরী,ইমাম আবু-হানীফা ও ইমাম শাফেয়ী।আর ইমাম মালেক বলেছেন:তারবীহ ৩৬ রাকাত।”[আলমুগনী (১/৪৫৭)]
ইমাম নববী বলেছেন:
আলেমগণের ইজমা অনুযায়ী তারাবীর সালাত পড়া সুন্নত। আর আমাদের মাজহাব হচ্ছে- তারাবীর নামায ১০ সালামে ২০ রাকাত। একাকী পড়াও জায়েয,জামাতের সাথে পড়াও জায়েয।”[আল-মাজমূ (৪/৩১)]
এই হচ্ছে তারাবী নামাযের রাকাতের সংখ্যার ব্যাপারে চার মাজহাবের অভিমত। তাঁদের সবাই ১১ রাকাতের বেশী পড়ার ব্যাপারে বলেছেন। সম্ভবত যে কারণে তাঁরা ১১ রাকাতের বেশি পড়ার কথা বলেছেন সেটা হলো:
১.তাঁরা দেখেছেন যে,আয়েশা(রাদিয়াল্লাহু আনহা) এর হাদিস নির্দিষ্ট কোন সংখ্যা নির্ধারণ করে না।
২.পূর্ববর্তী সাহাবী ও তাবেয়ীগণের অনেকের কাছ থেকে ১১ রাকাতের বেশি তারাবী পড়ার বর্ণনা পাওয়া যায়।[আল-মুগনী (২/৬০৪)ও আল-মাজমূ (৪/৩২)]
৩.নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে ১১ রাকাত সালাত আদায় করতেন তা এত দীর্ঘ করতেন যে এতে পুরো রাতই লেগে যেত।এমনও ঘটেছে এক রাতে নবী সাল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর সাহাবীদেরকে নিয়ে তারাবীর সালাত আদায় করতে করতে ফজর হওয়ার অল্প কিছুক্ষণ আগে শেষ করেছিলেন। এমনকি সাহাবীগণ সেহেরী খেতে না-পারার আশঙ্কা করেছিলেন। সাহাবীগণ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পিছনে সালাত আদায় করতে পছন্দ করতেন এবং এটা তাঁদের কাছে দীর্ঘ মনে হতনা। কিন্তু আলেমগণ খেয়াল করলেন ইমাম যদি এভাবে দীর্ঘক্ষণ ধরে সালাত আদায় করেন তবে মুসল্লিদের জন্য তা কষ্টকর হবে।যা তাদেরকে তারাবীর নামায থেকে বিমুখ করতে পারে।তাই তাঁরা তেলাওয়াত সংক্ষিপ্ত করে রাকাত সংখ্যা বাড়ানোর পক্ষে মত দিলেন। সার কথা হলো- যিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত পদ্ধতিতে ১১ রাকাত সালাত পড়েন সেটা ভাল এবং এতে সুন্নাহ পালন হয়। আর যিনি তেলাওয়াত সংক্ষিপ্ত করে রাকাতের সংখ্যা বাড়িয়ে পড়েন সেটাও ভাল। যিনি এই দুইটির কোন একটি করেন তাঁকে নিন্দা করার কিছু নেই। শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়্যাহ বলেছেন:
যিনি ইমাম আবু হানীফা,শাফেয়ী ও আহমাদের মাজহাব অনুসারে ২০ রাকাত তারাবী সালাত আদায় করল অথবা ইমাম মালেকের মাজহাব অনুসারে ৩৬ রাকাত তারাবী আদায় করল অথবা ১৩ বা ১১ রাকাত তারাবী আদায় করল প্রত্যেকেই ভাল আমল করল। এ ব্যাপারে সুস্পষ্ট নির্দেশনা না থাকার কারণে ইমাম আহমাদ এ মতই পোষণ করতেন। তাই তেলাওয়াত দীর্ঘ বা সংক্ষিপ্ত করার অনুপাত অনুযায়ী রাকাত সংখ্যা বেশি বা কম হবে।”[আল-ইখতিয়ারাত, পৃষ্ঠা- ৬৪]
আস-সুয়ুতী বলেছেন:
রমজানে ক্বিয়াম তথা রাতের নামায আদায় করার আদেশ দিয়ে ও এ ব্যাপারে উসাহিত করে অনেক সহীহ ও হাসান হাদিস বর্ণিত হয়েছে।এক্ষেত্রে কোন সংখ্যাকে সুনির্দিষ্ট করা হয়নি। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ২০ রাকাত তারাবী পড়েছেন বলে সাব্যস্ত হয়নি। বরং তিনি রাতে সালাত আদায় করেছেন।কিন্তু কত রাকাত আদায় করেছেন এই সংখ্যা উল্লেখিত হয়নি। এরপর ৪র্থ রাতে দেরি করলেন এই আশঙ্কায় যে তারাবীর সালাত তাঁদের উপর ফরয করে দেয়া হতে পারে,পরে তাঁর উম্মততা পালন করতে অসমর্থ হবেন।
ইবনে হাজার হাইসামী বলেছেন:
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছ থেকে তারাবীর সালাত ২০ রাকাত হওয়ার ব্যাপারে কোন সহীহ বর্ণনা পাওয়া যায়নি। আর এই ব্যাপারে যা বর্ণিত হয়েছে- তিনি ২০ রাকাত সালাত আদায় করতেন; তা অত্যন্ত জয়ীফ (দুর্বল)।”[আল্‌ মাওসূ আহ আল-ফিক্বহিয়্যাহ (২৭/১৪২-১৪৫)]
অতএব, আপনি তারাবীর সালাত ২০ রাকাত হওয়ার ব্যাপারে অবাক হবেন না। কারণ এর আগে ইমামগণ প্রজন্মের পর প্রজন্ম তা পালন করেছেন। আর তাঁদের সবার মধ্যেই কল্যাণ রয়েছে।
আল্লাহই সবচেয়ে ভাল জানেন।

 [৭] বেশি বেশি কুরআন তিলাওয়াত করা: এটি কুরআনের মাস। তাই এ মাসে অন্যতম কাজ হলো বেশি বেশি কুরআন তিলাওয়াত করা। হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: ‘‘যে ব্যক্তি কুরআনের একটি হরফ পাঠ করে, তাকে একটি নেকি প্রদান করা হয়। প্রতিটি নেকি দশটি নেকির সমান। আমি বলি না যে, আলিফ-লাম-মীম একটি হরফ। বরং আলিফ একটি হরফ, লাম একটি হরফ এবং মীম একটি হরফ’’ [সুনান আত-তিরমিযী: ২৯১০, সহীহ]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমাদান ব্যতীত কোন মাসে এত বেশি তিলাওয়াত করতেন না। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: ‘‘রমাদান ব্যতীত অন্য কোনো রাত্রিতে আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লামকে পূর্ণ কুরআন তিলাওয়াত করতে, কিংবা ভোর অবধি সালাতে কাটিয়ে দিতে অথবা পূর্ণ মাস রোযা পালন করে কাটিয়ে দিতে দেখি নি’’ [সহীহ মুসলিম : ১৭৭৩]

 [৮] শুকরিয়া আদায় করা: রমাদান মাস পাওয়া এক বিরাট সৌভাগ্যের বিষয়। সেজন্য আল্লাহ তাআলার বেশি বেশি শুকরিয়া আদায় করা এবং আগামী রমাদান পাওয়ার জন্য তাওফীক কামনা করা। রমাদান সম্পর্কে কুরআনে বলা হয়েছে: ‘‘আর যাতে তোমরা সংখ্যা পূরণ কর এবং তিনি তোমাদেরকে যে হিদায়াত দিয়েছেন, তার জন্য আল্লাহর বড়ত্ব ঘোষণা কর এবং যাতে তোমরা শোকর কর।’’ [সূরা আল-বাকারাহ : ১৮৫]
‘‘আর যখন তোমাদের রব ঘোষণা দিলেন, ‘যদি তোমরা শুকরিয়া আদায় কর, তবে আমি অবশ্যই তোমাদের বাড়িয়ে দেব, আর যদি তোমরা অকৃতজ্ঞ হও, নিশ্চয় আমার আজাব বড় কঠিন’’ [সূরা ইবরাহীম : ৭]
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিয়ামাতের শুকরিয়া আদায় করে বলতেন অর্থা সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য [সুনান আত-তিরমিযী : ২৭৩৮]

[৯] কল্যাণকর কাজ বেশি বেশি করা: এ মাসটিতে একটি ভাল কাজ অন্য মাসের চেয়ে অনেক বেশি উত্তম। সেজন্য যথাসম্ভব বেশি বেশি ভাল কাজ করতে হবে। আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: ‘‘এ মাসের প্রত্যেক রাতে একজন ঘোষণাকারী এ বলে আহবান করতে থাকে যে, হে কল্যাণের অনুসন্ধানকারী তুমি আরো অগ্রসর হও! হে অস কাজের পথিক, তোমরা অন্যায় পথে চলা বন্ধ কর। (তুমি কি জান?) এ মাসের প্রতি রাতে আল্লাহ তায়ালা কত লোককে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিয়ে থাকেন’’ [সুনান আত-তিরমিযী : ৬৮৪]

 [১০] সালাতুত তাহাজ্জুদ পড়া: রমাদান মাস ছাড়াও সালাতুত তাহাজ্জুদ পড়ার মধ্যে বিরাট সাওয়াব এবং মর্যাদা রয়েছে। রমাদানের কারণে আরো বেশি ফজিলত রয়েছে। যেহেতু সাহরী খাওয়ার জন্য উঠতে হয় সেজন্য রমাদান মাসে সালাতুত তাহাজ্জুদ আদায় করার বিশেষ সুযোগও রয়েছে। আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হাদীসে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: ‘‘ফরয সালাতের পর সর্বোত্তম সালাত হল রাতের সালাত অর্থা তাহাজ্জুদের সালাত’’ [সহীহ মুসলিম : ২৮১২]

[১১] বেশি বেশি দান-সদাকাহ করা: এ মাসে বেশি বেশি দান-সাদাকাহ করার জন্য চেষ্টা করতে হবে। ইয়াতীম, বিধবা ও গরীব মিসকীনদের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া ও বেশি বেশি দান খয়রাত করা। হিসাব করে এ মাসে যাকাত দেয়া উত্তম। কেননা রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ মাসে বেশি বেশি দান খয়রাত করতেন। আবদুল্লাহ ইবনে আববাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত: ‘‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন মানুষের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দানশীল আর রমাদানে তাঁর এ দানশীলতা আরো বেড়ে যেত’’ [সহীহ আল-বুখারী : ১৯০২]

[১২] উত্তম চরিত্র গঠনের অনুশীলন করা: রমাদান মাস নিজকে গঠনের মাস। এ মাসে এমন প্রশিক্ষণ নিতে হবে যার মাধ্যমে বাকি মাসগুলো এভাবেই পরিচালিত হয়। কাজেই এ সময় আমাদেরকে সুন্দর চরিত্র গঠনের অনুশীলন করতে হবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: ‘‘তোমাদের মধ্যে কেউ যদি রোযা রাখে, সে যেন তখন অশস্নীল কাজ ও শোরগোল থেকে বিরত থাকে। রোযা রাখা অবস্থায় কেউ যদি তার সাথে গালাগালি ও মারামারি করতে আসে সে যেন বলে, আমি রোযাদার’’ [সহীহ মুসলিম : ১১৫১]

[১৩]তিকাফ করা: তিকাফ অর্থ অবস্থান করা। অর্থা মানুষদের থেকে পৃথক হয়ে সালাত, সিয়াম, কুরআন তিলাওয়াত, দোয়া, ইসতিগফার ও অন্যান্য ইবাদাতের মাধ্যমে আল্লাহ তাআলার সান্নিধ্যে একাকী কিছু সময় যাপন করা। এ ইবাদাতের এত মর্যাদা যে, প্রত্যেক রমাদানে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমাদানের শেষ দশ দিন নিজে এবং তাঁর সাহাবীগণ ইতিকাফ করতেন। আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত: ‘‘প্রত্যেক রমাযানেই তিনি শেষ দশ দিন ইতিকাফ করতেন। কিন্তু জীবনের শেষ রমযানে তিনি ইতিকাফ করেছিলেন বিশ দিন’’ দশ দিন ইতেকাফ করা সুন্নাত। [সহীহ আলবুখারী : ২০৪৪]

[১৪] দাওয়াতে দ্বীনের কাজ করা: রমাদান মাস হচ্ছে দ্বীনের দাওয়াতের সর্বোত্তম মাস। আর মানুষকে আল্লাহর দিকে ডাকাও উত্তম কাজ। এজন্য এ মাসে মানুষকে দ্বীনের পথে নিয়ে আসার জন্য আলোচনা করা, কুরআন ও হাদীসের দারস প্রদান, বই বিতরণ, কুরআন বিতরণ ইত্যাদি কাজ বেশি বেশি করা। আলকুরআনের ঘোষণা : ‘‘ঐ ব্যক্তির চাইতে উত্তম কথা আর কার হতে পারে যে আল্লাহর দিকে ডাকলো, নেক আমল করলো এবং ঘোষণা করলো, আমি একজন মুসলিম’’ [সূরা হা-মীম সাজদাহ : ৩৩]
হাদীসে এসেছে:‘‘ভাল কাজের পথ প্রদর্শনকারী এ কাজ সম্পাদনকারী অনুরূপ সাওয়াব পাবে’’ [সুনান আত-তিরমীযি : ২৬৭০]

 [১৫] সামর্থ্য থাকলে উমরা পালন করা: এ মাসে একটি উমরা করলে একটি হাজ্জ আদায়ের সমান সাওয়াব হয়। আবদুল্লাহ ইবনে আববাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: ‘‘রমাদান মাসে উমরা করা আমার সাথে হাজ্জ আদায় করার সমতুল্য’’ [সহীহ আলবুখারী : ১৮৬৩]

[১৬] লাইলাতুল কদর তালাশ করা: রমাদান মাসে এমন একটি রাত রয়েছে যা হাজার মাসের চেয়ে উত্তম। আল-কুরআনের ঘোষণা: ‘‘কদরের রাত হাজার মাসের চেয়েও উত্তম’’ [সূরা কদর : ৪]
হাদীসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: ‘‘যে ব্যক্তি ঈমান ও সাওয়াব পাওয়ার আশায় ইবাদাত করবে তাকে পূর্বের সকল গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে’’ [সহীহ আল-বুখারী : ৩৫]
এ রাত পাওয়াটা বিরাট সৌভাগ্যের বিষয়। এক হাদীসে আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন: ‘‘রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অন্য সময়ের তুলনায় রমদানের শেষ দশ দিনে অধিক হারে পরিশ্রম করতেন’’ [সহীহ মুসলিম : ১১৭৫]
 লাইলাতুল কদরের দোআ: আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বললেন, হে আল্লাহর নবী ! যদি আমি লাইলাতুল কদর পেয়ে যাই তবে কি বলব ? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, বলবেঃ ‘‘হে আল্লাহ আপনি ক্ষমাশীল, ক্ষমাকে ভালবাসেন, তাই আমাকে ক্ষমা করে দিন।’’ [সুনান আত-তিরমিযী : ৩৫১৩]

[১৭] বেশি বেশি দোআ ও কান্নাকাটি করা: দোআ একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদাত। এজন্য এ মাসে বেশি বেশি দোআ করা ও আল্লাহর নিকট বেশি বেশি কান্নাকাটি করা। হাদীসে এসেছে: ‘‘ইফতারের মূহূর্তে আল্লাহ রাববুল আলামীন বহু লোককে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিয়ে থাকেন। মুক্তির এ প্রক্রিয়াটি রমাদানের প্রতি রাতেই চলতে থাকে’’ [আল জামিউস সাগীর : ৩৯৩৩]
অন্য হাদীসে এসেছে: ‘‘রমযানের প্রতি দিবসে ও রাতে আল্লাহ তাআলা অনেককে মুক্ত করে দেন। প্রতি রাতে ও দিবসে প্রতি মুসলিমের দোআ কবূল করা হয়’’ [সহীহ আত-তারগীব ওয়াত তারহীব : ১০০২]

 [১৮] ইফতার করা: সময় হওয়ার সাথে সাথে ইফতার করা বিরাট ফজিলাতপূর্ণ আমল। কোন বিলম্ব না করা । কেননা হাদীসে এসেছে: ‘‘যে ব্যক্তি সিয়াম পালন করবে, সে যেন খেজুর দিয়ে ইফতার করে, খেজুর না পেলে পানি দিয়ে ইফতার করবে। কেননা পানি হলো অধিক পবিত্র ’’ [সুনান আবু দাউদ : ২৩৫৭, সহীহ]
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন ইফতার করতেন তখন বলতেন : পিপাসা নিবারিত হল, শিরা উপশিরা সিক্ত হল এবং আল্লাহর ইচ্ছায় পুরস্কারও নির্ধারিত হল।” [সুনান আবূ-দাউদ: ২৩৫৯, সহীহ]
অপর বর্ণনায় যে এসেছে- হে আল্লাহ! তোমার জন্য রোযা রেখেছি, আর তোমারই রিযিক দ্বারা ইফতার করছি।এর সনদ দুর্বল। আমাদের উচিত সহীহ হাদীসের উপর আমল করা। [সুনান আবু দাউদ :২৩৫৮] 

 [১৯] ইফতার করানো: অপরকে ইফতার করানো একটি বিরাট সাওয়াবের কাজ। প্রতিদিন কমপক্ষে একজনকে ইফতার করানোর চেষ্টা করা দরকার। কেননা হাদীসে এসেছে: ‘‘যে ব্যক্তি কোন রোযাদারকে ইফতার করাবে, সে তার সমপরিমাণ সাওয়াব লাভ করবে, তাদের উভয়ের সাওয়াব হতে বিন্দুমাত্র হ্রাস করা হবে না’’ [সুনান ইবন মাজাহ : ১৭৪৬, সহীহ]

 [২০] তাওবাহ ও ইস্তেগফার করা: তাওবাহ শব্দের আভিধানিক অর্থ ফিরে আসা, গুনাহের কাজ আর না করার সিদ্ধান্ত নেয়া। এ মাস তাওবাহ করার উত্তম সময়। আর তাওবাহ করলে আল্লাহ খুশী হন। আল-কুরআনে এসেছে: ‘‘হে ঈমানদারগণ, তোমরা আল্লাহর কাছে তাওবা কর, খাটি তাওবা; আশা করা যায়, তোমাদের রব তোমাদের পাপসমূহ মোচন করবেন এবং তোমাদেরকে এমন জান্নাতসমূহে প্রবেশ করাবেন যার পাদদেশে নহরসমূহ প্রবাহিত’’ [সূরা আত-তাহরীম : ৮]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: ‘‘হে মানবসকল! তোমরা আল্লাহর নিকট তাওবাহ এবং ক্ষমা প্রার্থনা কর, আর আমি দিনে তাঁর নিকট একশত বারের বেশি তাওবাহ করে থাকি’’ [সহীহ মুসলিম : ৭০৩৪]
 তবে তাওবাহ ও ইস্তেগফারের জন্য উত্তম হচ্ছে, মন থেকে সাইয়্যেদুল ইস্তেগফার পড়া, আর তা হচ্ছে ‘‘হে আল্লাহ, তুমি আমার প্রতিপালক, তুমি ছাড়া প্রকৃত এবাদতের যোগ্য কেউ নাই। তুমি আমাকে সৃষ্টি করেছ, আর আমি তোমার গোলাম আর আমি সাধ্যমত তোমার সাথে কৃত অঙ্গীকারের উপর অবিচল রয়েছি। আমার কৃত-কর্মের অনিষ্ট থেকে তোমার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। আমাকে যত নেয়ামত দিয়েছে সেগুলোর স্বীকৃতি প্রদান করছি। যত অপরাধ করেছি সেগুলোও স্বীকার করছি। অত:এব, তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও। কারণ, তুমি ছাড়া ক্ষমা করার কেউ নেই।’’

ফযিলত: ‘‘যে কেউ দৃঢ় বিশ্বাসের সাথে দিনের বেলা এই দুআটি (সাইয়েদুল ইসতিগফার) পাঠ করবে ঐ দিন সন্ধ্যা হওয়ার আগে মৃত্যু বরণ করলে সে জান্নাতবাসী হবে এবং যে কেউ ইয়াকিনের সাথে রাত্রিতে পাঠ করবে ঐ রাত্রিতে মৃত্যুবরণ করলে সে জান্নাতবাসী হবে।’’ [সহীহ আল-বুখারী : ৬৩০৬]


 [২১] তাকওয়া অর্জন করা: তাকওয়া এমন একটি গুণ, যা বান্দাহকে আল্লাহর ভয়ে যাবতীয় পাপকাজ থেকে বিরত রাখে এবং তাঁর আদেশ মানতে বাধ্য করে। আর রমাদান মাস তাকওয়া নামক গুণটি অর্জন করার এক বিশেষ মৌসুম। কুরআনে এসেছে: ‘‘হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর রোযা ফরয করা হয়েছে যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর। যাতে করে তোমরা এর মাধ্যমে তাকওয়া অবলম্বন করতে পারো’’ [সূরা আলবাকারাহ : ১৮৩]
যে আল্লাহকে ভয় করে, তিনি তার জন্য উত্তরণের পথ তৈরী করে দেন। [সূরা তালাক : ০২]

 [২২] ফজরের পর সূর্যোদয় পর্যন্ত মাসজিদে অবস্থান করা:ফজরের পর সূর্যোদয় পর্যন্ত মাসজিদে অবস্থান করা। এটি একটি বিরাট সাওয়াবের কাজ। এ বিষয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: যে ব্যক্তি ফজর জামাআত আদায় করার পর সূর্য উদয় পর্যন্ত মাসজিদে অবস্থান করবে, অতঃপর দুই রাকাআত সালাত আদায় করবে, সে পরিপূর্ণ হাজ্জ ও উমারাহ করার প্রতিদান পাবে। [সুনান আত-তিরমিযী : ৫৮৬]

 [২৩] ফিতরাহ দেয়া: এ মাসে সিয়ামের ত্রুটি-বিচ্যুতি পূরণার্থে ফিতরাহ দেয়া আবশ্যক। ইবনে উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদের সালাত আদায়ের পুর্বে ফিতরাহ আদায় করার আদেশ দিলেন। [সহীহ আল-বুখারী :১৫০৩]

 [২৪] অপরকে খাদ্য খাওয়ানো: রমাদান মাসে লোকদের খাওয়ানো, বিশেষ করে সিয়াম পালনকারী গরীব, অসহায়কে খাদ্য খাওয়ানো বিরাট সাওয়াবের কাজ । কুরআনে এসেছে: তারা খাদ্যের প্রতি আসক্তি থাকা সত্ত্বেও মিসকীন, ইয়াতীম ও বন্দীকে খাদ্য দান করে। [সূরা আদ-দাহর: ৮]
এ বিষয়ে হাদীসে বলা হয়েছে: ‘‘আবদুল্লাহ ইবন আমর রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, একজন লোক এসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলেন, ইসলামে উত্তম কাজ কোনটি? তিনি বললেন, অন্যদেরকে খাবার খাওয়ানো এবং পরিচিত ও অপরিচিত সকলকে সালাম দেয়া’’ [সহীহ আল-বুখারী : ১২]
অপর বর্ণনায় বর্ণিত আছে যে :‘‘যে কোনো মুমিন কোনো ক্ষুধার্ত মুমিনকে খাওয়াবে, আল্লাহ তাকে জান্নাতের ফল খাওয়াবেন। [বাইহাকী, শুআবুল ইমান : ৩০৯৮, হাসান]

 [২৫] আত্মীয়তার সম্পর্ক উন্নীত করা: আত্মীয়তার সম্পর্ক একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আর তা রক্ষা করাও একটি ইবাদাত। এ বিষয়ে আল্লাহ তাআলা বলেন: ‘‘আর তোমরা আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন কর, যার মাধ্যমে তোমরা একে অপরের কাছে চাও। আরও তাকওয়া অবলম্বন কর রক্ত সম্পর্কিত আত্মীয়ের ব্যাপারে। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের উপর পর্যবেক্ষক। [সূরা আন-নিসা: ১]
আনাস ইবন মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:সালাম বিমিয়ের মাধ্যমে হলেও আত্নীয়তার সম্পর্ক তরতাজা রাখ।” [সহীহ কুনুযুস সুন্নাহ আন-নবওয়িয়্যাহ : ১৩]

 [২৬] কুরআন মুখস্থ বা হিফয করা: কুরআন হিফয করা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কেননা আল্লাহ তাআলা নিজেই কুরআন হিফযের দায়িত্ব নিয়েছেন। তিনি এ দায়িত্ব মূলত বান্দাদেরকে কুরআন হিফয করানোর মাধ্যমেই সম্পাদন করেন। কুরআনে এসেছে: ‘‘নিশ্চয় আমি কুরআন নাযিল করেছি, আর আমিই তার হিফাযতকারী’’ [সূরা আল-হিজর: ৯]
যে যত বেশি অংশ হিফয করতে পারবে তা তার জন্য ততই উত্তম।আবদুল্লাহ ইবন আমর ইবনুল আস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত হাদীসে রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: ‘‘কুরআনের ধারক-বাহককে বলা হবে কুরআন পড়ে যাও, আর উপরে উঠতে থাক, ধীর-স্থিরভাবে তারতীলের সাথে পাঠ কর, যেমন দুনিয়াতে তারতীলের সাথে পাঠ করতে। কেননা জান্নাতে তোমার অবস্থান সেখানেই হবে, যেখানে তোমার আয়াত পড়া শেষ হবে [সুনান আত-তিরমিযী : ২৯১৪]

[২৭] আল্লাহর যিকর করা: এ বিষয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: ‘‘আল্লাহ তাআলা চারটি বাক্যকে বিশেষভাবে নির্বাচিত করেছেন, তাহলো যে ব্যক্তি পড়বে, তার জন্য দশটি সাওয়াব লেখা হয়, আর বিশটি গুনাহ মিটিয়ে দেয়া হয়। যে ব্যক্তি  পড়বে, তার জন্য বিশটি সাওয়াব লেখা হয়, আর বিশটি গুনাহ মিটিয়ে দেয়া হয়। যে ব্যক্তি  পড়বে, তার জন্য বিশটি সাওয়াব লেখা হয়, আর বিশটি গুনাহ মিটিয়ে দেয়া হয়। আর যে ব্যক্তি আন্তরিকভাবে পড়বে, তার জন্য ত্রিশটি সাওয়াব লেখা হয়, আর ত্রিশটি গুনাহ মিটিয়ে দেয়া হয়’’ [মুসনাদ আহমাদ : ১১৩৪৫]

[২৮] মিসওয়াক করা: মেসওয়াকের প্রতি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অশেষ গুরুত্বারোপ করেছেন। হাদীসে এসেছে: অর্থা মেসওয়াক মুখের জন্য পবিত্রকারী, এবং রবের সন্তুষ্টি আনয়নকারী। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রোযা রেখেও মেসওয়াক করতেন বলে বিভিন্ন বর্ণনায় পাওয়া যায়। [সহীহ ইবন খুযাইমাহ : ১৩৫]

 [২৯] একজন অপরজনকে কুরআন শুনানো: রমাদান মাসে একজন অপরজনকে কুরআন শুনানো একটি উত্তম আমল। এটিকে দাওর বলা হয়। ইবনে আববাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হাদীসে এসেছে: জিবরাইল আলাইহিস সালাম রমাদানের প্রতি রাতে রমাদানের শেষ পর্যন্ত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে সাক্ষা করতেন এবং রাসূল তাকে কুরআন শোনাতেন [সহীহ আল-বুখারী : ১৯০২]
ইবনে হাজার রাহেমাহুল্লাহ্ বলেন : জিবরাইল প্রতি বছর রাসূলের সাথে সাক্ষা করে এক রমযান হতে অন্য রমযান অবধি যা নাযিল হয়েছে, তা শোনাতেন এবং শুনতেন। যে বছর রাসূলের অন্তর্ধান হয়, সে বছর তিনি দু বার শোনান ও শোনেন ।

[৩০] কুরআন বুঝা ও আমল করা: কুরআনের এ মাসে কুরআন বুঝা ও আমল করা গুরুত্বপূর্ণ ইবাদাত। কুরআন অনুযায়ী নিজের জীবনকে গড়ে তোলা। এ বিষয়ে কুরআনে নির্দেশ দেয়া হয়েছে: তোমাদের প্রতি তোমাদের রবের পক্ষ থেকে যা নাযিল করা হয়েছে, তা অনুসরণ কর এবং তাকে ছাড়া অন্য অভিভাবকের অনুসরণ করো না। তোমরা সামান্যই উপদেশ গ্রহণ কর [সূরা আল-আরাফ : ৩]
কুরআনের জ্ঞানে পারদর্শী আবদুল্লাহ ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন: আমরা যখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে কুরআনের দশটি আয়াত শিক্ষা গ্রহণ করতাম, এরপর ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা পরবর্তী দশটি আয়াত শিক্ষা করতাম না, যতক্ষণ পর্যন্ত না আমরা এই দশ আয়াতের ইলম ও আমল শিখতাম’ [শরহে মুশকিলুল আছার : ১৪৫০]

যা করণীয় নয়:

রমাদান মাসের ফজিলত হাসিল করার জন্য এমন কিছু কাজ রয়েছে যা থেকে বিরত থাকা দরকার, সেগুলো নিম্নে উপস্থাপন করা হলো :

1. বিলম্বে ইফতার করা
2. সাহরী না খাওয়া
3. শেষের দশ দিন কেনা কাটায় ব্যস্ত থাকা
4. মিথ্যা বলা ও অন্যান্য পাপ কাজ করা
5. অপচয় ও অপব্যয় করা
6. তিলাওয়াতের হক আদায় না করে কুরআন খতম করা
7. জামাআতের সাথে ফরয সালাত আদায়ে অলসতা করা
8. বেশি বেশি খাওয়া
9. রিয়া বা লোক দেখানো ইবাদাত করা
10. বেশি বেশি ঘুমানো
11. সংকট তৈরি করা জিনিস পত্রের দাম বৃদ্ধির জন্য
12. অশ্লীল ছবি, নাটক দেখা
13. বেহুদা কাজে রাত জাগরণ করা
14. বিদআত করা
15. দুনিয়াবী ব্যস্ততায় মগ্ন থাকা

প্রিয় পাঠক!
রমাদান মাস পাওয়ার মত সৌভাগ্যের বিষয় আর কী হতে পারে! আমরা যদি এ মাসের প্রতিটি আমল সুন্নাহ পদ্ধতিতে করতে পারি তবেই আমাদের রমাদান পাওয়া সার্থক হবে।কেননা হাদীসে এসেছে: ‘‘যে ব্যক্তি রমাদান মাস পেলো অথচ তার গুনাহ মাফ করাতে পারল না সে ধ্বংস হোক।’’ [শারহুস সুন্নাহ : ৬৮৯] আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে রমাদান মাসের ফজিলত হাসিল করার তাওফীক দিন। আমীন!