Wednesday, April 24, 2019

Sofolotar Poth-Pothantor: ইহকাল ও পরকালে সফলতার পথ-পথান্তর

Bangla Golpo,Bangla Story,বাংলা গল্প,বাংলা কাহিনী,দেশ-স্থান পরিচিতি,বাংলা বই,গল্পের বই,জীবনী,BD Golpo,Bangla Kahini,Country Introduction,Jiboni,Ebook,PDF,Bangla Book
রহমান রহীম আল্লাহ্‌ তায়ালার নামে-
সাফল্য, চূড়ান্ত লক্ষ্য ঈমানদার  মুসলিমবৃন্দ যার দিকে ছুটে চলে অবিরাম জ্ঞানী বুদ্ধিমান মানুষেরা যা হাসিলকরার জন্য সচেষ্ট থাকে অবিরত মহান আল্লাহও যার প্রতি সাহ মূলক নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, এরূপ সাফল্যেরজন্যই আমলকারীদের আমল করা উচিত [ সূরা সাফ্ফাত: ৬১ ] সাফল্যের আরবি শব্দরূপ হচ্ছে,‘ফওয’, লিসানুল আরব অভিধানে এর অর্থ করা হয়েছে, কল্যাণ  কাঙ্খিত লক্ষ্য সাধনের মাধ্যমে কৃতকার্য হওয়া প্রখ্যাতভাষাবিদ ইমাম রাগেব বলেছেন, ‘ফওয অর্থ, শান্তি  নিরাপত্তাসহ কল্যাণ সাধনের মাধ্যমে কৃতকার্য হওয়া
সাফল্যের উপায়উপকরণ, এক: ঈমান  নেক আমল
মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, অতপর যারা ঈমান এনেছে এবং কাজ করেছে তাদের রব পরিণামে তাদেরকেস্বীয় রহমতে প্রবেশ করাবেন এটিই সুস্পষ্ট সাফল্য [সূরা জাসিয়া: ৩০] নিশ্চয় যারা ঈমান আনে এবং কর্মকরে তাদের জন্য রয়েছে জান্নাত যার তলদেশে প্রবাহিত হবে নহরসমূহ এটাই বিরাট সফলতা [সূরা বুরূজ:১১]
সেই নেক আমলটি কী, সাফল্য পাবার আশায় আসহাবে উখদূদ যা পেশ করেছিল? তা হচ্ছে দ্বীনের উপরঅবিচলতা এবং আল্লাহর রাস্তায় শাহাদতবরণ
দুই : সততা
আল্লাহ তাআলা বলেন, আল্লাহ বলবেন, ‘এটা হল সেই দিন যেদিন সত্যবাদীগণকে তাদের সততা উপকার করবেতাদের জন্য আছে জান্নাতসমূহ যার নীচে প্রবাহিত হবে নদীসমূহ সেখানে তারা হবে স্থায়ী আল্লাহ তাদের প্রতিসন্তুষ্ট হয়েছেন, তারাও তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছে এটা মহাসাফল্য [সূরা মায়েদা:১১৯]
স্মর্তব্য, মহান আল্লাহ জানিয়ে দিলেন, পৃথিবীতে সত্যবাদীদের সততা কেয়ামতের দিন মহা উপকারে আসবে[তাফসিরে রাযি, /২০৫]
তিন : মুমিনদের পারস্পরিক বন্ধুত্ব
ইরশাদ হচ্ছে, আর মুমিন পুরুষ  মুমিন নারীরা একে অপরের বন্ধু, তারা ভাল কাজের আদেশ দেয় আর অন্যায়কাজ থেকে নিষেধ করে, আর তারা সালাত কায়েম করে, জাকাত প্রদান করে এবং আল্লাহ  তাঁর রাসূলেরআনুগত্য করে এদেরকে আল্লাহ শীঘ্রই দয়া করবেন, নিশ্চয় আল্লাহ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময় আল্লাহ মুমিন পুরুষও মুমিন নারীদেরকে জান্নাতের ওয়াদা দিয়েছেন, যার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হবে নহরসমূহ, তাতে তারা চিরদিন থাকবেএবং (ওয়াদা দিচ্ছেন) স্থায়ী জান্নাতসমূহে পবিত্র বাসস্থানসমূহের আর আল্লাহর পক্ষ থেকে সন্তুষ্টি সবচেয়ে বড়এটাই মহাসাফল্য [সূরা তাওবা:৭১৭২]
একে অপরের বন্ধু: ভালবাসা, হৃদ্যতা, সম্পর্ক  সাহায্য সহযোগিতায় কল্যাণ সাধন  অনিষ্ট দূরিকরণ এইকর্মদ্বয় বাস্তবায়নের জন্য পারস্পরিক ভালবাসা, সহযোগিতা  আন্তরিকতার প্রয়োজন মুসলিম জাতির এমনরূপটিই আলকোরআন প্রত্যাশা করে
চার : খাশয়াতুল্লাহ তথা আল্লাহভীতি  তাকওয়া
আল্লাহ বলেন, আর যে কেউ আল্লাহ  তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে, আল্লাহকে ভয় করে এবং তাঁর তাকওয়াঅবলম্বন করে, তারাই সফল  কৃতকার্য [সূরা আননূর:৫২]
খাশয়াত বলা হয় ভক্তি মাখা ভয়কে এমন ভীতি যার সাথে সম্মান জড়িত আর এই গুণাগুন অর্জিত হবার জন্যজ্ঞান  ইলমের প্রয়োজন আল্লাহ সম্বন্ধে যে ব্যক্তি জানবে, তাঁর অবস্থাঅবস্থান বিষয়ে জ্ঞান লাভ করবে তারভেতরে অবস্থিত চেতনা  বোধ সেই আল্লাহকে সম্মান  ভয় করতে তাগিদ করবে তাইতো  গুণগুন বিষয়েওলামাদেরকে বিশেষায়িত করা হয়েছে, মহান আল্লাহ বলেন, আল্লাহকে তাঁর বান্দাদের মাঝে কেবল জ্ঞানীরাই ভয়করে [সূরা ফাতির:২৮]
অর্থা এমন ভয় যা কেবল তার সম্বন্ধে ধারনা লাভ হলেই সম্ভব হয় আর ভয় হবে তার সম্মানের সাথে যথাযথ ওসঙ্গতিপূর্ণ ফলশ্রুতিতে তিনি যা নিষেধ করেছেন তা ত্যাগ করবে এবং নিজেকে প্রবৃত্তির চাহিদা চরিতার্থ করা হতেনিয়ন্ত্রণ করবে এজন্যই আল্লাহ বলেছেন, وَيَتَّقْهِ অর্থা তাকে ভয় করবে নিষিদ্ধ বিষয়াদি পরিত্যাগ করার মাধ্যমে কেননা সাধারণভাবে তাকওয়া শব্দনির্দেশিত বিষয়াদি বাস্তবায়ন  নিষিদ্ধ বিষয়াদি পরিত্যাগ করাকে সন্বিবেশিত করে আর তার (তাকওয়ার) সাথেযদি আনুগত্য কিংবা নেক কাজকে মিলিয়ে ব্যবহার করা হয় যেমনটি আমাদের এখানে হয়েছে
তখন অর্থ হয় আল্লাহর অবাধ্যতা  পাপকাজ পরিত্যাগ করার মাধ্যমে তাঁর শাস্তি থেকে পরিত্রাণ লাভ করা [ তাফসির আসসাদি : ৫৭২]
তাকওয়া খাশিয়াত থেকে ব্যাপক, তাকওয়া হচ্ছে ছোটবড় যাবতীয় পাপ সম্পাদন কালে আল্লাহর ধ্যান  তাঁরঅস্তিত্ব মনে উপলব্ধি করে অপসন্দীয় কাজ বাস্তবায়িত হয়ে যাওয়াতে মানসিক যন্ত্রনা  সঙ্কট অনুভব করা আরতা হবে আল্লাহর সম্মান, মর্যাদা  তাঁর প্রতি লজ্জা বোধের কারণে তাছাড়া ভয় আর খাশিয়ত তো আছেই [ফীজিলালিল কোরআন: /২৯১]
পাঁচ : সম্পদ  জীবন দ্বারা জিহাদ করা
মহান আল্লাহ বলেন, যারা ঈমান এনেছে, হিজরত করেছে আর আল্লাহর পথে নিজদের মাল  জান দিয়ে জিহাদকরেছে, আল্লাহর কাছে তারা বড়ই মর্যাদাবান আর তারাই সফলকাম [ সূরা তাওবা: ২০]
এখানে মালকে জানের আগে উল্লেখ করার কারণ হচ্ছে, যে ব্যক্তি মাল ব্যয় করতে পারে না তার দ্বারা জান ব্যয়করার আশাও করা যায় না প্রকৃত মুজাহিদ দুনিয়া  পার্থিব সামগ্রীকে একেবারে তুচ্ছ জ্ঞান করে, এর অসারতাতার কাছে দিবালোকের মত পরিষ্কার থাকে তাই নিজ জান  মাল ধ্বংস হয়ে যাওয়ার জন্য পেশ করা তার কাছেকোনো ব্যাপারই না যদি পার্থিব জীবন  তার ভোগ সামগ্রীর কোনো মূল্য তার কাছে থাকতো তাহলে এতঅনায়াসে এমনটি করতে পারতো না [ তাফসির আররাযি: /৪৮২]
ছয় : নির্যাতন, নিপীড়ন  তিরস্কারের মুখে ধৈর্য্যধারন করা
আল্লাহ তাআলা বলেন, নিশ্চয় আমি তাদের ধৈর্যের কারণে আজ তাদেরকে পুরস্কৃত করলাম, নিশ্চয় তারাই হলসফলকাম ( সূর মুমিনূন : ১১১)
আল্লাহ তাআলা তাঁর ওলী  নেককার বান্দাদেরকে যে পুরস্কার দান করবেন সে সম্বন্ধে জানিয়ে বলছেন, ﭽﮉﮊﮋﮌﮍﭼঅর্থা হে মুজরিম সম্প্রদায় তোমরা তাদের উপর নানা নির্যাতন, নিপীড়ন চালিয়েছিলে এবং বিভিন্নভাবেতাদেরকে তিরস্কার করেছিলে আর তারা ধৈর্য্য ধারন করেছিল আজ সেই ধৈর্য্যের পুরস্কার আমি তাদের দান করলামযে, তারাই সফলকাম [ তাফসির ইবন কাসির : /৪৯৯]
সাত : আল্লাহর সাথে কৃত আনুগত্যের প্রতিশ্রুতি পূরণ করা
মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, নিশ্চয় আল্লাহ মুমিনদের থেকে তাদের জান  মাল ক্রয় করে নিয়েছেন ( এরবিনিময়ে) যে, তাদের জন্য রয়েছে জান্নাত তারা আল্লাহর পথে লড়াই করে অতএব তারা মারে  মরে তাওরাত, ইঞ্জিল  কোরআনে  সম্পর্কে সত্য ওয়াদা রয়েছে আর নিজ ওয়াদা পূরণে আল্লাহর চেয়ে অধিক কে হতে পারে? সুতরাং তোমরা (আল্লাহর সঙ্গে) যে সওদা করেছ, সে সওদার জন্য আনন্দিত হও এবং সেটাই মহাসাফল্য [ সূরাতাওবা : ১১১]
হাসান আলবসরি  কাতাদা রাহিমাহুমাল্লাহ বলেন, আল্লাহ তাআলা তাদের সাথে চুক্তি করে তাদের মূল্য অনেকবাড়িয়ে দিয়েছেন
শামির ইবন আতিয়্যাহ বলেন, প্রতিটি মুসলিমের ঘাড়েই আল্লাহর সাথে সম্পাদিত একটি চুক্তির দায় রয়েছে সেসেটি পূরণ করুক কিংবা তার উপর মৃত্যু বরণ করুক অর্থা, যে ব্যক্তি সেই চুক্তির চাহিদা বাস্তবায়ন করবে এবংপ্রতিজ্ঞা পূরণ করবে সে যেন মহাসফলতা  চিরস্থায়ী নিয়ামতের সুসংবাদ গ্রহণ করে আনন্দিত হয় [ তাফসিরইবন কাসির : /২১৮]
প্রিয় পাঠক, এই চুক্তি  বাণিজ্যের মূল্য  মর্যাদা সম্বন্ধে যদি জানতে চান তাহলে একটু লক্ষ্য করুন, এই চুক্তিতেক্রেতা কে? ক্রেতা হচ্ছেন মহিয়ান গরিয়ান মহান আল্লাহ বিনিময়ের প্রতি দৃষ্টি দিন, যা কিনা সর্বোচ্চ পর্যায়েরবিনিময়; জান্নাতুন নায়ীম লগ্নিকৃত পুঁজির দিকে তাকান, আর তা হচ্ছে জান  মাল যা প্রতিটি মানুষের সর্বাধিকপ্রিয় জিনিস এবার লক্ষ্য করুন  চুক্তি কার হাতে সম্পাদিত হয়েছে, তিনি হচ্ছেন সর্বোচ্চ পর্যায়ের সম্মানিত, সর্বাধিক মর্যাদাবান, সর্ব শ্রেষ্ঠ রাসূল আর কোন কিতাবে তা লেখা হয়েছে, তা হচ্ছে মহান আল্লাহর নাজিলকৃত সবচেয়ে মর্যাদাসম্পন্ন কিতাব যা নাজিল হয়েছে সর্বশ্রেষ্ঠ মাখলুকের উপর [ তাফসির সাদি: ৩৫২]
এটি একটি সম্পাদিত চুক্তি সুসম্পন্ন বাণিজ্য ক্রেতার স্বাধীনতা এখানে অবিসংবাদিত যা ইচ্ছা তাই করতে পারেনযে কোনো শর্ত আরোপ করতে পারেন যে কোনো সীমাবদ্ধতায় আবদ্ধ করতে পারেন তবে বিক্রেতার কোনোস্বাধীনতা নেই এখানে তার করণীয় শুধু নির্দেশিত  নির্ধারিত রাস্তায় সম্মুখপানে চলতে থাকা এদিক সেদিকতাকানোর সুযোগ নেই, নেই কোনো এখতিয়ার আলোচনা, বাদানোবাদ বা জিজ্ঞাসা করারও কোনো সুযোগ নেইমান্যতা, আনুগত্য  কাজ ছাড়া তার কোনো ভূমিকা নেই এখানে মূল্য হচ্ছে, জান্নাত আর রাস্তা জিহাদ  লড়াইচূড়ান্ত ফলাফল, হয়ত সাহায্য না হয় শাহাদাত
মুজাহিদের হারানোর কি আছে? কি হাতছাড়া হয় তার? যে মুমিন নিজ জান  মাল জান্নাত প্রাপ্তির আশায় আল্লাহরজন্য সপর্দ করেছে, তার হারানোর কী আছে? আল্লাহর শপথ, তার কিছুই হাতছাড়া হয় না, কোনো কিছুই তারহারাবার নেই জান, সে তো মৃত্যুপানের অভিযাত্রী আর সম্পদ, সেওতো ফুরিয়ে যাবার জন্যই চাই (এদের) মালিকআল্লাহর রাস্তায় শেষ করে কিংবা অন্য কারো রাস্তায়
আট : আল্লাহ  রাসূলের আনুগত্য এবং সত্য  ন্যায়সঙ্গত কথা বলা
আল্লাহ তাআলা বলেন, হে ঈমানদারগণ, তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং সঠিক কথা বল তিনি তোমাদের জন্যতোমাদের কাজগুলোকে শুদ্ধ করে দেবেন এবং তোমাদের পাপগুলো ক্ষমা করে দেবেন আর যে ব্যক্তি আল্লাহ ওতাঁর রাসূলের আনুগত্য করে, সে অবশ্যই এক মহা সাফল্য অর্জন করল [সূরা আহযাব : ৭০৭১]
সুতরাং যে ব্যক্তি আল্লাহর আদেশ বাস্তবায়ন করে আর তিনি যা নিষেধ করেন তা থেকে বিরত থাকে এবং সঠিক ওসত্য কথা বলে    {সে অবশ্যই মহা সাফল্য অর্জন করল} অর্থা আল্লাহর পক্ষ হতে মহা সম্মানে সম্মানিত হল[ তাফসির তাবারি: /২৩৬]
আনুগত্য তো নিজেই এক মহা সাফল্য আনুগত্য হচ্ছে, আল্লাহর নির্দেশিত পথে অবিচল থাকা আর আল্লাহরনির্দেশিত পথে অবিচল থাকা হলো স্বস্তি  প্রশান্তি  আর স্বচ্ছসঠিক রাস্তার দিশা পাওয়া  সে পথে পরিচালিতহওয়া পরম সৌভাগ্য [ ফী জিলালিল কোরআন: /১০২]
বিপরীতধর্মী দুইটি বস্তুর মাঝে সামঞ্জস্য  সমতা প্রত্যাখ্যান করা মহান আল্লাহর অপার হিকমত
আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, জাহান্নামবাসী  জান্নাতবাসীরা সমান নয়; জান্নাতবাসীরাই সফলকাম ( সূরা হাশর: ২০)
আল্লামা ইবনুল কায়্যিম রাহিমাহুল্লাহ বলেন, মহান আল্লাহ আপন হুকুম  হিকমতে বিপরীতধর্মী দুইটি বস্তুরহুকুমের ক্ষেত্রে সমতাকে প্রত্যাখ্যান করেছেন বলেছেন, উভয়ের মাঝে সমতার হুকুম প্রদান করা তো বিবেক ওসুস্থ স্বভাবের বিবেচনায়ই বাতিল, সুতরাং এর নিসবত মহান আল্লাহর দিকে করা কোনো বিবেচনায়ই সঙ্গত নয় ( ইলামুল মুআক্কিয়ীন : /১৩২)
পবিত্র আলকোরআনে সাফল্যের কিছু চিত্র:
প্রথমত: জাহান্নাম থেকে মুক্তিলাভ  জান্নাতে প্রবেশ
আল্লাহ তাআলা বলেন, সুতরাং যাকে জাহান্নাম থেকে দূরে রাখা হবে এবং জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে সেইসফলতা পাবে ( সূরা আলে ইমরান : ১৮৫)
অর্থা যাকে জাহান্নাম থেকে দূরে সরিয়ে মুক্তিদেয়া হবে এবং জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে, সে মুক্তি পেয়ে গেলএবং মহা সম্মানে পুরস্কৃত হয়ে উচ্চতর সফলতা লাভ করল ( তাফসির তাবারি : /৪৫২)
সাহাবি সাহল বিন সা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, জান্নাতে তোমাদের লাঠি রাখার সমপরিমাণ জায়গা দুনিয়া  তাতে যা আছে তার থেকে অনেক উত্তম অত:পর এইআয়াত তেলাওয়াত করেছেন, সুতরাংযাকেজাহান্নামথেকেদূরেরাখা হবে এবং জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে সেইসফলতা পাবে (সহিহ আলবোখারি : ৩০১১)
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন, যে ব্যক্তি কামনা করে যে, তাকে জাহান্নাম থেকে দূরে রাখাহবে এবং জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে, তার কাছে মৃত্যু যেন এমতাবস্থায় উপস্থিত হয় যে, আল্লাহ  পরকালেরপ্রতি তার ঈমান আছে  এবং মানুষের সাথে এমন আচরণই করে, তাদের থেকে সে নিজে যেমনটি আশা করে ( সহিহ মুসলিম : ৬৯৬৪)
হাদিসে নির্দেশিত বিষয়দ্বয়ের প্রথমটি আল্লাহর অধিকার সংরক্ষণ সম্পর্কিত আর দ্বিতীয়টি বান্দার অধিকারসংরক্ষণ সম্পর্কিত অর্থা, যদি কোনো লোক হক্কুলুল্লাহ  হক্কুল ইবাদের প্রতি বিশেষ যত্নবান থেকে পার্থিবজীবন অতিবাহিত করে, তাহলে পরকালীন জীবনে জাহান্নাম থেকে মুক্তি  জান্নাত লাভের কাঙ্খিত আশা তারপূরণ হওয়াতে আর কোনো বাধা থাকবে না আর সে হবে মহা সফলতায় সফল
দ্বিতীয়ত: আল্লাহর পক্ষ হতে সন্তুষ্টির ঘোষণা 
আল্লাহ মুমিন পুরুষ  মুমিন নারীদেরকে জান্নাতের ওয়াদা দিয়েছেন, যার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হবে নহরসমূহ, তাতেতারা চিরদিন থাকবে এবং (ওয়াদা দিচ্ছেন) স্থায়ী জান্নাতসমূহে পবিত্র বাসস্থানসমূহের আর আল্লাহর পক্ষ থেকেসন্তুষ্টি সবচেয়ে বড় এটাই মহাসফলতা (সূরা তাওবা : ৭২)
﴿ ﯟﯠﯡﯢﯣ﴾ আর আল্লাহর পক্ষ হতে সন্তুষ্টি, যা জান্নাতবাসীদের অর্জিত হবে﴿أَكْبَرُ﴾ সবচেয়ে বড় যেসব স্থায়ীনেয়ামত জান্নাতবাসীরা জান্নাতে ভোগ করবে তার মাঝে আল্লাহর সন্তুষ্টিই সবচেয়ে বড়  কাঙ্খিত কারণ প্রাপ্তনেয়ামতরাজি ততক্ষণ পর্যন্ত তৃপ্তিদায়ক হবে না, তাতে মন ভরবে না, যতক্ষণ না তাদের রবের দর্শন হাসিল হয়এবং তাঁর সন্তুষ্টির ঘোষণা আসে তাছাড়া অনুগতআবেদদের চূড়ান্ত পর্যায়ের আকাঙ্খাতো এটিই এটিই তোআশিকমুহিব্বীনদের অভীষ্ট লক্ষ্য যার চেষ্টায় নিয়োজিত তারা অবিরত সুতরাং আসমান জমিনের মালিক মহানআল্লাহর সন্তুষ্টিই জান্নাতের সর্বশ্রেষ্ঠ নেয়ামত ( তাফসির সাদি : ৩৪৩)
মহান আল্লাহর জান্নাতবাসীদের সাথে কথপোকথন প্রসঙ্গে ইমাম বোখারি উদ্ধৃত করছেন,
সাহাবি আবু সাঈদ খুদরি রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, আল্লাহ তাআলা জান্নাতবাসীদেরকে সম্বোধন করে বলবেন: হে জান্নাতিরা! তারা উত্তর দিবে, লাব্বাইকা রাব্বানা ওয়াসাদাইকা ওয়াল খাইরু বিয়াদাইকা … আল্লাহ বলবেন: তোমরা কি সন্তুষ্ট হয়েছ ? তারা বলবে: কেন হব না… হে রব? অথচ আপনি আমাদের দান করেছেন যা আপনার আর কোনো সৃষ্টিকে করেননি? তখন আল্লাহ বলবেন : আমিকি তোমাদেরকে তার চেয়েও উত্তম (বস্তু) দেব না? তারা বলবে? হে রব, তার চেয়েও উত্তম আর কী আছে ? আল্লাহ বলবেন: আমার সন্তুষ্টি তোমাদের জন্য উন্মুক্তঅবারিত করে দিলাম, আজকের পর থেকে আর কখনোতোমাদের প্রতি অসন্তুষ্ট হব না ( সহিহ আলবোখারি : ৬৯৬৪)
মহা সাফল্য অর্জনে উদ্দীপিত করণ
জান্নাতিদের ভাষায় মহান আল্লাহ বলেন, অত:পর তারা মুখোমুখি হয়ে পরস্পরকে জিজ্ঞাসা করবে ( সূরাসাফফাত: ৫০)
জায়গা হচ্ছে উপভোগ  আনন্দের এটি প্রমাণ করে যে তারা পরস্পরকে এমন বিষয়ে জিজ্ঞেস করবে যে ব্যাপারেকথা বলা তারা উপভোগ করবে আরো আলোচনা করবে এমন সব বিষয়াদি প্রসঙ্গে যা নিয়ে তাদের মাঝে বিতর্কহত হত ইশকালআপত্তি আর  কথা সর্বজন বিধিত, জ্ঞানীরা জ্ঞান  গবেষণা বিষয়ে আলোচনা করে যে মজাপান, এসব তাঁরা যেভাবে উপভোগ করেন, দুনিয়ার আর কোনো বিষয়ে তারা এমন স্বাদ অনুভব করেন নাউপভোগ করেন না আর কিছু জান্নাত প্রসঙ্গেও তাদের গবেষণা  আলোচনার বিস্তর সুযোগ রয়েছে এবং সেসম্পর্কে তত্ব  তথ্যগত দিক দিয়ে এমনসব বিষয়াদি উন্মোচিত হতে পারে যে ব্যাপারে ব্যাখ্যা করা অসম্ভব
সুতরাং মহান আল্লাহ নেয়ামতের প্রশংসা করেছেন এবং সাহীত করেছেন এর প্রতি আমলকারীদেরকেউদ্দীপিত করেছেন আমলের প্রতি বলেছেন: নিশ্চয় এটি মহাসাফল্য (সূরা সাফফাত : ৬০)
কারণ, তাদের পক্ষে আকাশ জমিনের প্রতিপালকের সন্তুষ্টি নিশ্চিত হয়েছে আর তারা আনন্দিত হয়েছে তাঁরসান্নিধ্য পেয়ে ধন্য হয়েছে তাঁর পরিচয় লাভ করে উচ্ছসিত হয়েছে তাঁর দর্শন লাভ করে উল্লসিত হয়েছে তাঁরসাথে কথা বলে এরূপ সাফল্যের জন্যই আমলকারীদের আমল করা উচিত ( সূরা সাফফাত : ৬১)
সর্বোত্তম ব্যয় তার জন্যই সাজে বুদ্ধিমান আরেফদের পরতা  কর্মনিষ্ঠা তার তরে হওয়াই যুক্তিযুক্ত শতআফসোস আর সহস্র আক্ষেপ… প্রত্যয়ী  বিচক্ষণ ব্যক্তির সময় ফুরিয়ে যাচ্ছে অথচ সে চিরসুখময় এই চিরন্তনআবাসের সান্নিধ্য অর্জনে এখনো ব্যস্ত হতে পারেনি যোগ্য করে তুলতে পারেনি এখনো নিজেকে সেসব কাজেরমাধ্যমে তারা উপভোগ করে রাতভর প্রশান্তির গালগল্প তাতে আলোচনা করে অতীত  বর্তমান নিয়ে (তাফসিরতাবারি : ২১/৫১)
মহাসাফল্য : অবিশ্বাসী মুনাফেকের দৃষ্টিতে
আল্লাহ বলেন, আর তোমাদের কাছে আল্লাহর পক্ষ থেকে কোনো অনুগ্রহ এসে পৌঁছলে অবশ্যই সে বলবে যেনতোমাদের  তার মধ্যে কোনো হৃদ্যতা ছিল না, হায়! যদি আমি তাদের সাথে থাকতাম, তাহলে আমি মহাসাফল্যঅর্জন করতাম (সূরা নিসা : ৭৩)
অর্থা, তাদের সাথে যদি থাকতাম তাহলে আমারও একটি ভাগ (গনিমত) নিশ্চিত হত পার্থিব ভোগ সামগ্রীই তারমূল লক্ষ্য চূড়ান্ত আকাঙ্খা তার এসবকে ঘিরেই ( তাফসির ইবন কাসির : /৩৫৮)
সে আফসোস আর আক্ষেপ করে যদি উপস্থিত থাকত তাহলে গনিমতে তার ভাগ নিশ্চিত হত তার আগ্রহ কেবলগনিমতের হিস্যা নিশ্চিত করার প্রতিই জেহাদ  লড়াই ইত্যাদিতে তার কোনো আগ্রহ নেই এসবের ইচ্ছাও মনেজাগে না কখনো যেন বলতে চায়, হে মুমিন সম্প্রদায়! আমি তোমাদের দলভুক্ত নই তোমাদের  আমার মাঝেঈমানি কোনো বন্ধন  হৃদ্যতা নেই (তাফসির সাদি : ১৮৬) আমার আশাভরসার কেন্দ্রবিন্দু হচ্ছে গনিমতেরহিস্যা প্রাপ্তির সফলতায় সফল হওয়া  প্রত্যাগমন করা
সফলতা: সাহাবাদের দৃষ্টিতে
সাহাবি আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বনী সুলাইমগোত্রের সত্তর জনের একটি দল বনী আমের গোত্রের প্রতি প্রেরণ করেন তারা সেখানে পৌঁছলে আমার মামাবললেন, তোমাদের আগে আমি যাই, যদি তারা আমাকে রাসূলুল্লাহ সম্বন্ধে বলার সুযোগ  নিরাপত্ত দেয়( তাহলেভাল) আর না হয় তোমরা আমার নিকটবর্তী থাকবে এরপর তিনি অগ্রসর হলেন এবং তারাও নিরাপত্তা দিল তিনিতাদেরকে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্বন্ধে বলছিলেন এরই মাঝে তারা তাদের এক লোককে ইঙ্গিতকরল, আর সে বর্ষা নিক্ষেপ করে তাকে হত্যা করে ফেলল তিনি বললেন, আল্লাহু আকবার, কাবার রবের শপথ, আমি সফল হয়ে গেছি (সহিহ বোখারি, ২৫৯১)
এরপর হত্যাকারী বলল: সেটি কোন সফলতা যার মাধ্যমে সে সফল হয়েছে? বলা হল, শাহাদাত, পরবর্তীতে এইবাক্যটিই তার ইসলাম গ্রহণের কারণ  উপলক্ষ্য হয়েছিল
হে মহামহিম প্রভু , আমাদেরকে তোমার সেইসব সফল বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত করে নাও আমিন
লেখক : তাওফীক আলী যিয়াদি | অনুবাদক : ইকবাল হোছাইন মাছুম

No comments:

Post a Comment