Saturday, April 20, 2019

Bangla Golpo: ভূতলোকে নতুন অতিথি Ghost

Bangla Golpo

ছবি: শিল্পী এফএস কোবার্ন
ভূতদের বহুল প্রচারিত দৈনিক ভূতের আলোর প্রধান শিরোনাম দেখে সবারই চোখ কপালে উঠল। বাচ্চা থেকে যুবা ভূত, যুবা থেকে প্রবীন ভূত সবার চোখ কপালে উঠেছে।
যদিও ভূতদের চোখ থাকে না, চক্ষু কোটর থাকে, তবে ধারণা করা যায় চোখ থাকলে ঠিকই কপালে উঠত। ভূতদের শরীরে মানুষের মতো ত্বক কিংবা অঙ্গ-প্রতঙ্গ না থাকার কারণে তাদের মুখভঙ্গি প্রকাশ করা মানবিয় শব্দ দ্বারা সম্ভব নয়। তাই মানুষ নিজের গুণাগুণ দিয়েই ভূতের সবকিছু বর্ণনা করতে চায়। আমিও তার ব্যতিক্রম নই।
যদিও আমি স্বীয়সাধনা বলে ভৌতিক গুণাবলীর কিছু কাঠামো তৈরির চেষ্টা করছি, কিন্তু সেটা একেবারেই নগন্য। তবে আমার প্রত্যাশা ভবিষ্য প্রজন্ম ভৌতত্বের সঠিক বিশ্লেষণের মাধ্যমের এ গ্রহের জ্ঞানলোককে আরও সমৃদ্ধ করবে। এওকি সম্ভব! ভূতলোকে নতুন অতিথি, বিজ্ঞানীদের ঘুম হারাম। এমন শিরোনাম সাধারণত ভূতলোকের সংবাদপত্রে বিরল।
বিজ্ঞানীদের ঘুম হারাম মানে অনেকটা রেডএলার্ট জারির মতো। চারদিকের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। সকল ভূতকে বিনা দরকারে বাসার বাইরে বেরুনোর ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। ভূতরাজ কিছুক্ষণ পরেই জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেবেন এবং পরবর্তী করণীয় সম্পর্কে নির্দেশনা দেবেন। ইতোমধ্যেই প্রধান ভূতরক্ষককে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে দায়িত্বে অবহেলার জন্য।
ত্রিলোকের সকল বুদ্ধিমান জীবই তাদের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত থাকে! ইতর প্রাণির নিরাপত্তা নিয়ে কোনো অজুহাত নেই। কোটি কোটি তেলাপোকা এবং মশা-মাছি প্রতিনিয়ত অন্য বুদ্ধিমান জীবকর্তৃক নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার হলেও তারা তাদের সুরক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে একেবারেই উদাসীন। তাদের ভয়-শঙ্কা কিছুই নেই। জীবন নিয়ে তারা বড়ই নির্লিপ্ত। এ কারণেই বুদ্ধিহীন প্রানীরা সবচেয়ে সুখি হয়। এবং তাদের ভেতর দার্শনিকতাবোধও প্রবল। প্রতিটি আরশোলাই একেকজন ক্ষুদ্র দার্শনিক। এই থিয়োরিটি বিখ্যাত ভূতজার্নাল গোস্টলজিতে বহুবছর আগেই প্রকাশিত হয়েছে। এতো ঘটনা কেন ঘটল এবার সে সংবাদে যাওয়া যাক।
বানরসদৃশ চারটি জীব ভূতকাননের ভূতরাজের আবক্ষমূর্তির উপর ওঠে লাফালাফি করছিল আজ ভোরে। ভূতরাজের আবক্ষমূর্তির উপর লাফানো কোনো অমার্জনীয় অপরাধ নয়- অপরাধও নয়। সমস্যাটা হচ্ছে এমন অদ্ভূত জীব অতীতে কখনো ভূতলোকে দেখা যায়নি। দেখতে অনেকটা বানরের মতো হলেও পেছনে কোনো লেজ নেই, এ আরেক বিস্ময়! বানরের মতো সারা শরীরে কোনো পশমও নেই। ভূতলোকে বানর পৌছেছিল একশত ভূতবর্ষ আগে। ‍সে কাহিনীর বর্ণনা এখানে নিষ্প্রয়োজন।
তবে জীবগুলো দেখে মনে হয় ভূতের ওপর যেন কোনো মুখোশ চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এটা একটা সম্পূর্ণ স্বতন্ত্রজীব। এ জীবগুলো সোজা হয়ে দুইপায়ে ভরদিয়ে চলে বানরের মতো লাফায় না। হাঁটা-চলায় ভূতদের সাথে একধরনের মিল আছে। তবে দেখতে ভূতদের মতো সুশ্রী না বড়ই কুসি! মিল থাকা স্বত্বেও ভূতদের গণমাধ্যম এ জীবগুলোকে বানরসদৃশ বলেই বর্ণনা করেছে, ভূতসদৃশ বলে নিজেদের মর্যাদা ক্ষুন্ন করেনি।
এসকল বিচিত্র দৃশ্য দেখার পর ভূতকাননের প্রহরী প্রধান প্রহরীকে সংবাদ জানালে, তিনি দ্রুত ছুটে এসে মূর্ছিত হলেন। ভূতদের মূর্ছা খাওয়া খুবই ব্যতিক্রম ঘটনা। এর আগে প্রথম মূর্ছা খাওয়ার ঘটনা ঘটে ভূতকাননে যখন আকস্মিক বানর এসে হাজির হয়। ভূতদের শত্রুর অভাব নেই। ত্রিলোকের অনেক জীবই ভূতদের বিরুদ্ধে নিরবিচ্ছিন্ন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত।
ভূতশাস্ত্রে আছে তাদের সত্যের পথ থেকে বের করার জন্য এসব জীবের জন্ম। কারণ সত্যের পথ থেকে বিচ্যুত হলে তাদের ভৌতত্ব হারিয়ে বাকি জীবন ইউরেনাস গ্রহে কাটাতে হবে। এটা খুবই অসম্মানজনক! যাই হোক বানর আসার পর ভূতলোকে যে সাড়া পড়েছিল এবার তার থেকে আরও বেশি সাড়া পড়ল। এ জীবগুলো শরীরের ওপর কী যেন চাপিয়ে এসেছে। ত্রিলোকের কোনো জীবকে তারা এমন বেঢপ জিনিস দিয়ে শরীর ঢাকতে দেখেনি।
ভূতলোকের বড় বড় বিজ্ঞানী এবং নিরাপত্তা কর্মকর্তারা ছুটে এসেছে। এন্টিভুতিজম ইউনিটের প্রধানও ছুটোছুটি করছে। সবার মনেই উকণ্ঠা এসব জীব কোথা থেকে এলো। তাদের উদ্দেশ্যইবা কী? এরা কি কোনো বুদ্ধিমান প্রাণী? সবচেয়ে মজার ব্যাপার এই উদ্ধার তপরতার ভেতর এ অদ্ভুত জীবগুলো দেখে বহু নিরাপত্তা কর্মী মূর্ছা খেল। আসলে এটা কেমন জীব!
মহাপরাক্রমশালী ভূতেরা পর্যন্ত দেখেই মূর্ছা যাচ্ছে। ভূতদের অভিধানে ভয় বলে কিছু ছিল না, তবে ঘটছে কী! ভাগ্যিস, ভূতদের হৃদযন্ত্র নেই, নইলে অনেক ভূতের হৃদযন্ত্র নষ্ট হয়ে যেত এ দৃশ্য দেখে। একজন ভূত বলেই বসল কি বিদখুটে দেখতেরে বাবা! গা থেকে কেমন যেন উকট গন্ধ বের হচ্ছে। কত ভূততো বমি করতে করতেই অজ্ঞান।
এবার উদ্ধারের পালা, নিরাপত্তা ইউনিটের প্রধান নির্দেশ দিল, প্রথমেই এখানকার তাপমাত্রা কমিয়ে নিতে হবে। তাপমাত্রা কমিয়ে নিলে এ জীবগুলো নিস্তেজ হয়ে যাবে। তারপর বিশাল কাঁচের বোতলে করে তাদের প্রধান বিজ্ঞানীর ল্যাবরেটরিতে পাঠানো হবে। প্রধান বিজ্ঞানী এবং তার দল এ জীবগুলোর সঙ্গে থাকা ক্ষতিকর কিছু থাকলে তা নির্মূল করবে। আগামী এক ভৌতদিনের মধ্যে ভূতরাজের কাছে পরিপূর্ণ প্রতিবেদন প্রেরণ করতে হবে। ভূতলোকের ভৌতিক সব যন্ত্রপাতি দিয়ে আদেশ অনুযায়ী কাজে নেমে পড়ল ভূতদল।
ভূতবিজ্ঞানীরা এ জীবগুলোকে পরিচর্যার মাধ্যমে আবার পূর্বাবস্তায় ফিরে নিয়ে এলো কিন্তু অনেকক্ষণ অচেতন থাকার ফলে তাদেরকে খুব ক্লান্ত দেখাচ্ছে। হয়তো তাদের এখনি খাদ্যের প্রয়োজন। কিন্তু তাদের খাদ্যাভ্যাস সম্পর্কে ভূতদের কোনো ধারণাই নেই।
পরীক্ষামূলকভাবে প্রথমে একগ্লাস চাঁদের আলো খেতে দিল কিন্তু জীবগুলো তা খোলো না। চাঁদের আলো ভূতদের প্রিয় খাবার, খেলেই শরীর চাঙ্গা হয়। কিন্তু এ জীবগুলো তা ছুঁয়েও দেখল না। বড় বিচিত্র এবং বিদখুঁটে এ জীবগুলো। এরপর দেয়া হল একমগ পাখীর কিঁচিরমিচির, তাতেও অনীহা। ক্রমশই দূর্বল হয়ে যাচ্ছে জীবগুলো। বিদখুটে শব্দ করছে। বোতলের গা বেয়ে উঠে যাওয়ার চেষ্টা করছে। বিশাল বোতল ঘুষি মেরে ভাঙার চেষ্টা করছে। ফলে ধীরে ধীরে আরও ক্লান্ত হয়ে পড়ছে।
এবার প্রধান বিজ্ঞানী একটি বড় জগে একগ্লাস অক্সিজেন এবং একগ্লাস হাইড্রোজেন মিশিয়ে নিল। এতে করে নতুন একধরনের তরল তৈরি হল, এটা খেতে দেয়া হল জীবগুলোকে। এ নতুন তরল পেয়ে জীবগুলো ঘটঘট করে খেয়ে নিল। তারপর এই তরলে লবণ-গুড় মিশিয়ে খেতে দিল। এতে করে জীবগুলো আরও প্রাণবন্ত হয়ে উঠলো কিচির-মিচির বাড়িয়ে দিল। তারপর জীবগুলোর রক্ত নমুনা, পাকস্থলী, অন্যান্য জিনিস পরীক্ষা-নীরিক্ষা করে তাদের উপযোগী খাদ্যপ্রস্তুত করা হলো।
অল্প কয়েকদিনেই এ জীবগুলো খুব সুস্থ সবল হয়ে উঠল। ভূতকাননে প্রদর্শনের জন্য একটি বিশেষ ঘর বানানো হলে জীবগুলোর জন্য। তবে সেই ঘরের বাইরে সাবধান বানী লেখা থাকলো, ‘দূর্বল চিত্তের ভূতদের জন্য দেখা নিষিদ্ধ।ভূতলোক থেকে রেডএলার্ট উঠে গেল। পত্র-পত্রিকায় ভূতরাজের জয়ধ্বনি তোলা হল।
মূলত সত্য এবং বিজ্ঞান অধিকাংশ সময় কাছাকাছি থাকলেও মাঝেমাঝে এর মধ্যবর্তী কিছু ঘটনা ঘটে যায়। এ কথাটি বলেছিলেন ভূতস্টাইন নামক একজন বিজ্ঞানী। প্রকৃতি মাঝে মাঝে নিজেই প্রতিশোধ নেয়। অতীতে অসংখ্য ভূতকে মানুষ বিনা অপরাধে বোতলবন্দী করেছিল এমন বর্ণনা মানুষের ইতিহাসে আছে। ধারণা করা হচ্ছে ভূতলোকের অদ্ভূত জীবগুলো মানুষ ছাড়া আর কিছু নয়-ভাগ্যের কী নির্মম পরিহাস মানুষ দেখে ভূতরা মূর্ছা যাচ্ছে, বমি করছে!
একই সময়ে ভূলোকে ঘটেছে আরেকটি ঘটনা, ঘটনা না বলে দুর্ঘটনা বলাই শ্রেয়। গোমতী-১ নামে যে নভোযানটি নেপচুন গ্রহের উদ্দেশ্যে কুমিল্লা থেকে যাত্রা করেছিল তা মহাশূণ্যে বিস্ফোরিত হয়ে চারজন নভোচারি নিখোঁজ হয়েছে। এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে বেরিয়ে এসেছে নভোযানটির ফিটনেস সার্টিফিকেট ছিল না, নভোচারিদেরও কোন লাইসেন্স ছিল না।

No comments:

Post a Comment