Saturday, April 6, 2019

বাংলা হাসির গল্প: মেয়ে মানুষের আটকলা

বাংলা গল্প

রহিম শেখ বড়ই রাগী মানুষ।কোন কাজে একটু এদিক-ওদিক হইলেই সে তার বউকে ধরিয়া বেধম মারে।রোজ তাদের বাড়িতে মারামারি লাগিয়াই আছে।সেদিনের একটি ঘটনা বলিতেছি ।
বউ সকালে উঠিয়া ঘর-দোর ঝাঁট দিতেছে,রহিম ঘুম হইতে উঠিয়া বলিলআমার হুঁক্কায় পানি ভরিয়াছ?”বউ বলিল,“ তুমি তো ঘুমাইতেছিলে তাই হুঁক্কায় পানি ভরি নাই।এই এখনই ভরিয়া দিতেছিরহিম চোখ গরম করিয়া বলিল,“এতো বেলা হইয়াছে,তবু হুক্কায় পানি ভর নাই!দাঁড়াও দেখাইতেছি তোমায় মজাটাএই বলিয়া সে যখন বউকে মারিতে উঠিয়াছে,বউ বলিল,“যখন তখন তুমি আমাকে মার-ধর কর,আমি কিছুই বলি না।জান আমরা মেয়ে জাত?আটকলা হেকমত আমাদের মনে মনেফের যদি মার তবে  আটকলা হেকমত দেখাইয়া দিব
Bangla Golpo
এই কথা শুনিয়া রহিম শেখের রাগ আরো বাড়িয়া গেল।সেএকটা লাঠি লইয়া বউকে মারিতে মারিতে বলিল,“ওরে শয়তানী,দেখি তোর আটকলা কেমন?তুই কি ভবিয়াছিস আমি তোর আটকলাকে ডরাই?”
বহুক্ষণ বউকে মারিয়া রহিম মাঠের কাজ করিতে বাহির হইয়া গেল।অনেক্ষণ কাঁদিয়া কাঁদিয়া বউ মনে মনে একটি মতলব আটিল।বউ-সোয়ামীর ঝগড়া সহজেই মিটিয়া যায়দুপুরে রহিম বাড়ি আসিলে বউ রহিমের কাছে জানিয়া লইল,কাল সে কোন ক্ষেতে হাল বাহিবে।বিকাল হইলে বউ বাড়ির কাছের এক জেলেকে ডাকিয়া আনিয়া বলির?“জেলে ভাই!কাল ভোর হওয়ার কিছু আগে তুমি আমাকে একটি তাজা শোলমাছ আনিয়া দিবে।আমি তোমাকে এক টাকা আগাম দিলাম।আরও যদি লাগে তাও দিব।শেষ রাতে আমি জাগিয়া খিরকির দরজার সামনে দাড়াইয়া থাকিব।তখন তুমি গোপনে শোল মাছ আমাকে দিয়া যাইবে
পাড়াগাঁয়ে একটি শোল মাছের দাম বড় জোর আট আনা।এক টাকা পাইয়া জেলে মনের খুশীতে বাড়ি ফিরিল।সে এ-পুকুরে জাল ফেলে ওপুকুরে জাল ফেলেকত টেংরা,পুঁটি,পাবদা মাছ আটকায়;কিন্তু শোলমাছ আর আটকায় না।রাত যখন শেষ হইয়া আসিয়াছে তখন সত্যি সত্যি একটি শোলমাছ তার জালে ধরা পড়িলতাড়াতারি মনে খুশীতে সে মাছটি লইয়া রহিম শেখের বাড়ির খিড়কি-দরজায় আসিলবউত আগেই সেখানে আসিয়া দাঁড়াইয়া আছে।মাছটি লইয়া বউ তারতাড়ি যে খেতে রহিম আজ লাঙল বাহিবে সেখানে পুতিয়া রাখিয়া আসিল।
সকাল হইলে রহিম খেতে আসিয়া লাঙল জুড়িল।সে এদিক হইতে লাঙল ফড়িয়া দিয়া ও দিকে যায়,ও দিক হইতে এদিকে আসে।হঠা তাহার লাঙলেরতলা হইতেএকটি শোল মাছ লাফইয়া উঠিল।রহিম আশ্চর্য হইয়া মাছটি ধরিয়া লইয়া বাড়ি ফিরিয়া আসিল।তারপর বউকে বলির,“লাঙলের তলায় এই তাহা শোলমাছটি পাইলাম।খোদার কি কুদরত!এই মাছের কিছুট ভাজা করিবে,আর কিছুটা তরকারি করিবে।অনেকদিন মাছ ভাত খাই না।আজ পেট ভরিয়া মাছ ভাত খাইবএ বলিয়া রহিম ক্ষেতের কাজে চালিয়া গেল।দুপুর হইতে না হইতেই বাড়ি ফিরিয়া আসিয়া সে বউ এর কাছে খাইতে চাহিল।বউ এক থাল ভাত আর কয়েকটা মরিচ পোড়া আনিয়া তাহার সামনে ধরিল ।
একে তো ক্ষুধায় তাহার শরীরে আগুন উঠিয়াছে,তাহার উপর এই মরিচ পোড়া আর ভাত দেখিয়া রহিমের মাথায় খুন চাপিয়া গেল।সে চোখ গরম করিয়া বলির,“সেই শোল মাছ কি করিয়াছিস শীগ্‌গীর বল?”বউ যেন আকাশ হইতে পড়িল,এমনি ভাব দেখাইয়া বলিল,“কই,মাছ কোথায়?তুমি কি আজ বাজার হইতে মাছ কিনিয়াছ?
রহিম বলিল,“কেন,আমি যে আজ ইটা ক্ষেত হইতে শোলমাছটা ধরিয়া আনিলামবউ উত্তর করিলমবল কি?ইটা ক্ষেতে কেহ কখনো শোল মাছ ধরিতে পারে?কখন তুমি আমাকে শোল মাছ আনিয়া দিলে?তোমার কি মাথা খারাপ হইয়াছে?”
তখন রহিমের মাথা দাউ দাউ করিতেছে।সে চিকার করিয়া উঠিল,“ওরে শয়তানী!এমন মাছটা তুই নিজে রাধিয়া খাইয়া আমার জন্য রাখিয়াছিস মরিচ-পোড়া আর ভাত!দেখাই তোর মজাটাএই বলিয়া রহিম বউকে বেদম প্রহার করিতে লাগিল।বউ চিকার করিয়া সমস্ত পাড়ার লোক  জড় করিয়া ফেলিল,“ওরে তোমরা দেখরে,আমার সোয়ামী পাগল ইয়াছে,আমাকে মারিয়া ফেলিল
বউ এর চিকার শুনিয়া এপাড়া ওপাড়া  হইতে বহুলোক আসিয়া জড় হইল।তাহার জিজ্ঞাসা করিল,“তোমরা এতো চেঁচামেচি করিতেছ কেন?”তোমাদের কি হইছে?রহিম বলিল,“দেখ ভাই সকলরা,আজ আমি একটা তাজা শোলমাছ ধরিয়া আনিয়া বউকে দিলাম পাক করিতে।এই রাক্ষসী সেটা নিজেই খাইয়া ফেলিয়াছে।আর আমার থালায় রাখিয়াছে এই মরিচ-পোড়া আর ভাত।আপনারাই বিচার করেন এখন বউ এর কি শাস্তি হইতে পারে?”
বউ তখন হাত জোর করিয়া বলিল,“দোহাই আপনাদের সকলের।আপনারা ভাল মত পরীক্ষা করিয়া দেখেন আমার সোয়ামীর মাথা খারাপ হইয়া সে যাতা বলিতেছে কিনা?ওর  কাছে আপনারা জিজ্ঞাসা করেন,ও কোথা হইতে মাছ আনিল,আর কখন আনিল?”
রহিম বলিল,“আজ সকালে ঐ ইটাক্ষেতে যখন লাঙল দিতেছিলাম তখন একটি এত বড় শোলমাছ আমার লাঙলের তলে লাফাইয়া উঠিয়াছিল।সেইটি ধরিয়া আনিয়া বউকে পাক করিতে দিয়াছিলাম
বউ পাড়ার সবাইকে বলিল“আপনারা সবাই বলুন,শুকনা মাঠে তাজা শোলমাছ কেমন করিয়া আসিবে?আমার সোয়ামী পাগল না হইলে এমন কথা বলিতে পারে
গায়ের লোকেরা সকলেই বলাবলি করিল,“রহিম শেখের ইটাক্ষেতের ধারে পারে কোন ইদারা-পুকুর নাই।সেখানে শোলমাছ আসিবে কোথা হইতে?রহিম পাগল হইয়াছেতথন তাহারা পরামিশ করিয়া রহিমকে দড়ি দিয়া বাধিতে গেলসে যখন বাধা দিতেছিল,সকলে তখন তাহাকে কিল-থাপর মারিতেছিল।একজন বলিল,“পানিতে চুবাইলে পাগলের পাগলামীসারে।চল ভাই,একে পুকুরে লইয়া গিয়া কিছুটা চুবাইয়া আনিযেই কথা সেই কাজসকলে ধরিয়া রহিমকে পুকুরে লইয়া গিয়া চুবাইতে লাগিল।রহিম বাধা দিল।কার বাধা কে মানে।সে যতই বাধা দেয়,তাহারা তাকে ততই চুবায়।চুবাইতে চুবাইতে আধরা করিয়া রহিমকে তাহার ঘরে লইয়া আসিল।রহিম রাগে শোষাইতে লাগিল।তখন একজন বলিল,“উহাকে আজই পাগলা গারদে লইয়া যা।নতুবা রাগের মাথায় কাকে খুন করিয়া ফেলে বলা যায় না
রহিমের বউ বলিল,“আপনারা আজকের মতো ওকে ঘরের খাটের সাথে বাধিয়া রাখিয়া যান।কাল যদি না সারে পাগলা গারদে লইয়া যাইবেন
গায়ের লোক তাহাই করিল।রহিমকে ঘরের খাটের সাথে কষিয়া বাধিয়া যে যার বাড়ি চলে গেল ।
সবলোক চালিয়া গেলে বউ রহিমের হাতের পায়ের বাধন খুলিয়া দিয়া হাসিতে হাসিতে মাছ ভাতের থালা আনিয়া তাহার সামনে ধরিল।গরম গরম পাক করা মাছের তরকারির গন্ধ সারাদিন না খাওয়া রহিমের নাকে আসিয়া লাগিল।সে মাথা নিচু করিয়া ভাত খাইতে শুরু করিল।পাখার বাতাস করিতে করিতে বউ বলিল,“দেখ,আমরা মেয়ে জাত আটকলা বিদ্য জানি;তারই এক কলা আজ তোমাকে দেখাইলাম।তাতেই এক কান্ড আর বাকি সাত কলা দেখাইলে কি যে হইত বুঝিতে পার
রহিম বলিল,“দোহাই তোমার আর সাতকলার ভয় দেখাই না।এই আমি কছম কাটিলাম।এখন হইতে আর যদি তোমার গায়ে হাত তুলি তখন যাহা হয় করিও”

No comments:

Post a Comment