সাধারণত কোমরের
নিচের দিকে ব্যথা অনুভূত হয়। আমাদের দেহে ২৯টি মেরুদণ্ডের হাড় আছে,
যার মধ্যে কোমরে আছে পাঁচটি। এই পাঁচটি হাড় থেকে আবার ছয় জোড়া
নার্ভ শরীরের নিচের অংশে থাকে। সাধারণত এই অংশটিতে যদি কোনো সমস্যা দেখা দেয়,
তাহলেই কোমর ব্যথা হয়। আসুন বিশেষজ্ঞের কাছ থেকে জেনে নিই এর
কারণ ও প্রতিকার।
কেন
হয় ব্যথা :
* ভারী বস্তু তোলার কাজ করলে
* সাইকেল চালালে
* কোমরে চোট পেলে
* পিছিল খেয়ে পড়লে
* অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে বা বসে কাজ বা সামনের দিকে ঝুঁকে অনেকক্ষণ কাজ করলে
* তিন থেকে পাঁচ বছর নিয়মিত শক্ত বিছানায় ঘুমালে
* নিয়মিত গাড়ি চালালে
* সাধারণত কুঁজো হয়ে হাঁটলে বা বসলে
* ওজন উচ্চতা অনুযায়ী বেশি হলে
* গর্ভকালীন।
কী
করবেন :
* নিচ থেকে বা মাটি থেকে কিছু তুলতে হলে না ঝুঁকে হাঁটু ভাঁজ করে বসুন ও
তারপর তুলুন।
* চেয়ারে বসার সময় কোমর সোজা রেখে বসুন।এ জন্য দু-একটি ছোট কুশন কোমরের
নিচের অংশে রেখে বসতে পারেন।এতে কোমর সোজা থাকবে।দীর্ঘ সময় ধরে বসে থাকবেন না।হেঁটে আসুন কিছু সময়ের জন্য বা দাঁড়িয়েও থাকতে পারেন।চেয়ার টেবিল থেকে বেশি দূরে
রাখবেন না।সামনে ঝুঁকে কাজ করবেন না।কোমরের পেছনে সাপোর্ট দিন।এমনভাবে বসুন,যেন হাঁটু ও ঊরু মাটির সমান্তরালে থাকে।
* নরম গদি বা স্প্রিংযুক্ত চেয়ার বাদ দিন।চেয়ারে বসলে পা সামান্য উঁচুতে
রাখুন।
* ঘাড়ে ভারী কিছু ওঠাবেন না।ভারী জিনিস শরীরের কাছাকাছি রাখুন।পিঠে
ভারী কিছু বহন করতে হলে সামনে ঝুঁকে বহন করুন।
* ৩০ মিনিটের বেশি একনাগাড়ে দাঁড়িয়ে বা বসে থাকবেন না।হাঁটু না ভেঙে
সামনের দিকে ঝুঁকবেন না।দীর্ঘ সময় হাঁটতে হলে উঁচু হিল পরবেন না।অনেকক্ষণ
একনাগাড়ে দাঁড়িয়ে থাকতে হলে কিছুক্ষণ পর পর শরীরের ভর এক পা থেকে অন্য পায়ে নিন।
* গাড়ি চালানোর সময় স্টিয়ারিং হুইলে সোজা হয়ে বসুন।
* ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন।স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলুন।
* নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম,ব্যায়াম বা হাঁটুন।
* কাটা,রান্না,মসলা
পেষা,ঘর মোছা,কাপড় কাচা,ঝাঁট দেওয়া বা নলকূপ চাপার সময় মেরুদণ্ড স্বাভাবিক অবস্থায় এবং
কোমর সোজা রাখুন।
* কোমরের ব্যথায় ভুগলে বিছানা থেকে ওঠার সময় সতর্ক থাকুন।চিত হয়ে শুয়ে
প্রথমে হাঁটু ভাঁজ করুন।এবার ধীরে ধীরে একপাশে কাত হোন।পা দুটি বিছানা থেকে
ঝুলিয়ে দিন,কাত হওয়ার দিকে কনুই ও অপর হাতের তালুর ওপর
ভর দিয়ে ধীরে ধীরে উঠে বসুন।
* দীর্ঘ সময় ভ্রমণ করবেন না। দীর্ঘ সময় ধরে ট্রেন বা গাড়িতে বসে থাকলে
ঝাঁকুনিতে কোমর ব্যথা আরো বেড়ে যায়। এ জন্য দীর্ঘ যাত্রাপথের বিরতিতে ট্রেন বা
গাড়ি থেকে নেমে পায়চারি বা হাঁটাহাঁটি করুন।
* শক্ত বিছানায় ঘুমানোর অভ্যাস করুন।এতে পুরো শরীর যেমন সাপোর্ট পায়,তেমনি নিচের দিকের স্পাইনগুলোতে চাপ কমে যায়।শক্ত বিছানা বলতে
কিন্তু খালি কাঠ নয়,আমরা যে তোশক ব্যবহার করি সেটিই,তবে খুব বেশি নরম যেন না হয়।কাত হয়ে অথবা চিত হয়ে শোবেন কিন্তু
উপুড় হয়ে শোবেন না।
ব্যায়াম
কোমর ব্যথার
জন্য সবচেয়ে ভালো প্রতিষেধক হলো ব্যায়াম। সামনের দিকে ঝুঁকে কোনো ব্যায়াম করবেন
না। এতে ব্যথা আরো বেড়ে যাবে। প্রথমে সহজ ব্যায়াম দিয়ে শুরু করুন। প্রতিদিন অল্প
অল্প করে ব্যায়াম করুন। এ ক্ষেত্রে নিচের ব্যায়ামগুলো করা যেতে পারে।
এক
উপুড় হয়ে
শুয়ে পড়ুন। হাত দুটি পাশে রেখে দিন। ২-৩ মিনিট বিশ্রাম করুন।
এবার হাতের
তালুর ওপর ভর দিয়ে শরীরের ওপরের অংশ আস্তে আস্তে ওপরে তুলুন। এভাবে ২-৩ মিনিট
থাকুন। আবার আস্তে আস্তে সোজা হয়ে শুয়ে পড়ুন।
দুই
উপুড় হয়ে
শুয়ে পড়ুন। হাতগুলো শরীরের পাশে রেখে দিন। হাতের ওপর ভর না দিয়ে ডান পা সোজা রেখে
শ্বাস নিতে নিতে আস্তে আস্তে ওপরের দিকে তুলুন। যতটুকু পারেন ওপরে তুলে ধরে রাখুন।
নিঃশ্বাস বন্ধ করে মনে মনে ১০ পর্যন্ত গুনুন। শ্বাস নিতে নিতে আস্তে আস্তে নিচে
নামান। একইভাবে বাঁ পা দিয়েও করুন।
এবার দুই পা
একসঙ্গে সোজা করে ওপরে তুলে ১০ পর্যন্ত গুনুন। আস্তে আস্তে নামান।
এবার হাতের
ওপর ভর না দিয়ে দুই পা ও কোমরের ওপরের অংশ একসঙ্গে ধীরে ধীরে ওপরের দিকে তুলুন। ১০
সেকেন্ড ধরে রেখে ধীরে ধীরে নিচে নামান। এভাবে পাঁচবার করে দিনে তিনবার করুন।
ব্যথা
বেশি হলে
একজন
অর্থপেডিক্স বিশেষজ্ঞ কিংবা একজন ফিজিওথেরাপি বিশেষজ্ঞের কাছে যাবেন।
কৃতজ্ঞতা:
ডাক্তার সানজিদা আজাদ
সূত্র: কালেরকণ্ঠ
সূত্র: কালেরকণ্ঠ
No comments:
Post a Comment