Friday, April 5, 2019

বাংলা গল্প: খ্যাতিমানদের মজার ঘটনা-পর্ব ২

বাংলা গল্প

রবীন্দ্রনাথ ও চিনির রস
রবীন্দ্রনাথ রস নিয়ে কী কী লিখছেন, এই নিয়ে আমাদের গবেষনা এখনো শেষ হয়নি। আপাতত আমরা রসের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান চিনি নিয়ে তিনি কী লিখেছেন , আপনাকে জানাই।
মরিস সাহেব শান্তিনিকেতনে ইংরেজি ও ফরাসি ভাষা পড়াতেন। একদিন তিনি তাঁর ছাত্র প্রমথনাথ বিশীকে(বিখ্যাত নাট্যকার) বললেন, ”গুরুদেব সুগার বা চিনি বিষয় একটা গান লিখেছেন। গানটি খুবই মিষ্টি হয়েছে।
প্রমথনাথ বিশী বললেন, ” সুগার নিয়ে গান লিখলে তো মিষ্টি হবেই। গানটা কী রকম একটু গেয়ে শোনান তো !
”I would fly you to the moon and back if you’ll be . . . if you’ll be my baby.
মরিস গাইতে লাগলেন – ” আমি চিনি গো চিনি তোমারে, ওগো বিদেশিনী, তুমি থাক সিন্ধুপারে
প্রমথনাথ বিশী হেসে বললেন, ” গানটাতে বেশ ক চামচ চিনি দিয়েছেন গুরুদেব। তাই একটু বেশি মিষ্টি হয়েছে। তবে এই চিনি যে সুগার, সেটা আপনাকে কে বলল ? ”
কে আবার। স্বয়ং গুরুদেব আমাকে বলেছেন, ”মরিস শোন, আমি সুগার নিয়ে একটা গান লিখেছি।
আলেকজান্ডার ডুমার
ফরাসি লেখক আলেকজান্ডার ডুমার সাক্ষাত্কার নিচ্ছিলেন এক জাঁদরেল সাংবাদিক। তাঁর প্রথম প্রশ্ন, ‘আপনার পূর্বপুরুষ শংকর ছিলেন, এটা কি সত্যি?’ ডুমা উত্তরে বললেন, ‘হ্যাঁ।সাংবাদিক আবার জিজ্ঞেস করলেন, ‘আর আপনার পিতামহ ছিলেন কৃষ্ণাঙ্গ?’ ডুমা শান্তস্বরে বললেন, ‘হ্যাঁ।সাংবাদিক এবার বেশ জোর দিয়ে বললেন, ‘এবং আপনার প্রপিতামহ ছিলেনসাংবাদিক শেষ করার আগে ডুমাই উত্তর দিলেন, ‘বেবুনএবং সঙ্গে যোগ করলেন, ‘আর আপনার যেখানে শেষ সেখান থেকেই আমার পূর্বপুরুষের শুরু।
জাঁ ককতো
ফরাসি লেখক জাঁ ককতোকে একবার স্বর্গ-নরক সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে তিনি বিনীতভাবে বললেন, ‘মাফ করবেন, এ ব্যাপারে আমি কোনো মন্তব্য করতে চাই না; কারণ ওই দুই জায়গাতেই আমার অনেক বন্ধুবান্ধব আছে
রসিনি
ফরাসি ভক্তরা সুরকার রসিনির একটি মূর্তি গড়ছিল। একদিন মূর্তিটি দেখানোর জন্য ভক্তরা তাঁকে নিয়ে গেল। মূর্তিটি দেখে রসিনি জানতে চাইলেন, মূর্তিটি বানাতে কত খরচ হবে?
এক শ কোটি ফ্রাঁ।
তার চেয়ে আমাকে পঞ্চাশ কোটি ফ্রাঁ দিলে আমি বাকি জীবন ওখানে দাঁড়িয়ে থাকতাম।
রুডলফ ক্রিটলিন
পশ্চিম জার্মানির বিখ্যাত রেফারি রুডলফ ক্রিটলিন সব সময় মাঠে নামতেন একটা ফিতা হাতে নিয়ে। গুরুত্বপূর্ণ সব খেলার আগে সেই ফিতা দিয়ে গোলপোস্টের দৈর্ঘ্য, উচ্চতা এবং মাঠের দৈর্ঘ্য, প্রস্থ মেপে নিতেন খুব সতর্কতার সঙ্গে। অনেকের কাছে ব্যাপারটি অতি পণ্ডিতি মনে হতো। কিন্তু আসল খবর কেউ জানত না। ক্রিটলিন পেশায় ছিলেন একজন দর্জি।
স্যামুয়েল জনসন
বিখ্যাত কবি ও সমালোচক স্যামুয়েল জনসন খবর পেলেন তাঁর সময়ের একজন নামকরা রাজনৈতিক নারী কলামিস্ট লেখালেখিতে মনোযোগ কিছু কম দিয়ে ইদানীং রূপচর্চায় মেতেছেন। শুনে জনসন মন্তব্য করলেন, ‘অন্যের চরিত্রে কালিমা লেপনের চেয়ে নিজের গালে কালিমা লেপন উত্তম
সারা বার্নার্ড
ফ্রান্সের সারা বার্নার্ড এক নাটকে ভিখারিণীর চরিত্রে অভিনয় করছিলেন। ক্ষুধার্ত, অবসন্ন, অসহায় ভাব চোখমুখে এবং সমস্ত ভঙ্গিতে ফুটিয়ে তিনি বলছিলেন, ‘হা ঈশ্বর! আর তো এক পাও চলতে পারছি না, তিন দিন পেটে কিছু পড়েনি। আঃ মরে গেলাম
হঠাত্ দু-একজন দর্শকের কৌতুকপূর্ণ দৃষ্টি লক্ষ করে তাঁর খেয়াল হলো, আরে! হাতের সোনার বালা দুটো খুলে রাখতে ভুল হয়ে গেছে। স্পটলাইট পড়ে সেগুলো ঝিলিক মারছে।
সঙ্গে সঙ্গে বালা দুটো খুলে মনগড়া সংলাপ বললেন, ‘এই গিল্টি করা দুই পয়সার গয়নায় আমার একটা রুটিও জুটবে না।বলেই উইংসের এক নিরাপদ কোণে ছুড়ে দিলেন বালা জোড়া।
মার্ক টুয়েন
মার্ক টুয়েনের লাইব্রেরিখানা নাকি দেখবার মত ছিল। মেঝে থেকে ছাত পর্যন্ত বই, বই, শুধু বই। এমনকি কার্পেটের উপরও গাদা গাদা বই স্তূপীকৃত হয়ে পড়ে থাকতপা ফেলা ভার। এক বন্ধু তাই মার্ক টুয়েনকে বললেন, ‘বইগুলো নষ্ট হচ্ছে; গোটাকয়েক শেল্ফ যোগাড় করছ না কেন?’
মার্ক টুয়েন খানিকক্ষণ মাথা নিচু করে ঘাড় চুলকে বললেন, ‘ভাই, বলেছ ঠিকইকিন্তু লাইব্রেরিটা যে কায়দায় গড়ে তুলেছি, শেলফ তো আর সে কায়দায় যোগাড় করতে পারি নে। শেলফ তো আর বন্ধুবান্ধবের কাছ থেকে ধার চাওয়া যায় না।শুধু মার্ক টুয়েনই না, দুনিয়ার অধিকাংশ লোকই লাইব্রেরি গড়ে তোলে কিছু বই কিনে, আর কিছু বই বন্ধুবান্ধবের কাছ থেকে ধার করে ফেরত্ না দিয়ে।

No comments:

Post a Comment