Bangla Golpo, Country Introducing
ভারতের নৌটঙ্কি ও রামলীলা,মহারাষ্ট্রের তামাশা,অন্ধ্রপ্রদেশের বুরাকথা, তামিলনাড়ুর তেরুককুত্তু ও কর্ণাটকের যক্ষগণ
উল্লেখযোগ্য। ভারতের প্রাচীনতম সাহিত্য প্রথমে
মৌখিকভাবে ও পরে লিখিত আকারে প্রচলিত হয়। এই রচনাগুলির মধ্যে
উল্লেখযোগ্য বেদ, ভারতীয় মহাকাব্য রামায়ণ ও মহাভারত, নাটক অভিজ্ঞান
শকুন্তলম্ ইত্যাদি সংস্কৃত সাহিত্যের ধ্রুপদী
কীর্তিসমূহ এবং তামিলে রচিত সঙ্গম সাহিত্য। আধুনিক
কালের ভারতীয় সাহিত্যিকদের মধ্যে সর্বাগ্রগণ্য হলেন ১৯১৩ সালে দেশের প্রথম সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী
কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। এছাড়াও ইংরেজি ভাষায় সাহিত্যরচনার জন্য
ভারতীয় অথবা ভারতীয় বংশোদ্ভুত যেসকল লেখকগণ সারা বিশ্বে খ্যাতি অর্জন করেছেন
তাঁরা হলেন অমিতাভ ঘোষ,মার্কিন-প্রবাসী বাঙালি
সাহিত্যিক ঝুম্পা লাহিড়ী,নোবেলজয়ী ব্রিটিশ-ভারতীয়
সাহিত্যিক ভি এস নাইপল প্রমুখ।
চলচ্চিত্র
ভারতীয় প্রজাতন্ত্র
ভারত
|
||
নীতিবাক্য: "সত্যমেব জয়তে" (সংস্কৃত)
"সত্যই জয়লাভ করে" |
||
জাতীয় স্তোত্র
বন্দে মাতারম বন্দনা করি মায়ে |
||
|
||
রাজধানী
|
নয়া দিল্লি ২৮°৩৪′ উত্তর ৭৭°১২′ পূর্ব
|
|
বৃহত্তম শহর
|
মুম্বাই
|
|
সরকারি ভাষাসমূহ
|
কেন্দ্রীয় স্তরে:
·
হিন্দি
·
ইংরেজি (রাজ্য স্তরে এবং অষ্টম তফসিল)
|
|
স্বীকৃত রাষ্ট্র ভাষাসমূহ
|
নেই
|
|
জাতীয়তাসূচক বিশেষণ
|
ভারতীয়
|
|
সরকার
|
যুক্তরাষ্ট্রীয়
প্রজাতন্ত্র
|
|
•
|
রাষ্ট্রপতি
|
রাম নাথ কোবিন্দ
|
•
|
প্রধানমন্ত্রী
|
নরেন্দ্র মোদি
|
আইন-সভা
|
সংসদ
|
|
•
|
উচ্চকক্ষ
|
রাজ্যসভা
|
•
|
নিম্নকক্ষ
|
লোকসভা
|
স্বাধীনতা যুক্তরাজ্য থেকে
|
||
•
|
ঘোষিত
|
১৫ আগস্ট ১৯৪৭
|
•
|
প্রজাতন্ত্র
|
২৬ জানুয়ারি ১৯৫০
|
আয়তন
|
||
•
|
মোট
|
৩২,৮৭,৫৯০ কিমি২(৭ম) (১২,৬৯,৩৪৬ বর্গ মাইল)
|
•
|
পানি (%)
|
৯.৫৬
|
জনসংখ্যা
|
||
•
|
২০১২ আদমশুমারি
|
১,২১০,১৯৩,
৪২২(2nd)
|
মোট দেশজ উৎপাদন
(ক্রয়ক্ষমতা সমতা) |
২০১২ আনুমানিক
|
|
•
|
মোট
|
$৩.৬৬৬ ট্রিলিয়ন (৯ম)
|
•
|
মাথা পিছু
|
$৩,৮৫১
(১২৯তম)
|
মোট দেশজ উৎপাদন (নামমাত্র)
|
২০১২ আনুমানিক
|
|
•
|
মোট
|
$১.৯৪৭ ট্রিলিয়ন (১০তম)
|
•
|
মাথা পিছু
|
$১৫৯২ (১৪০তম)
|
জিনি সহগ (২০১০)
|
৩৩.৯ মধ্যম
|
|
মানব উন্নয়ন সূচক(২০১২)
|
০.৫৫৪ মধ্যম · ১৩৬ তম
|
|
মুদ্রা
|
||
সময় অঞ্চল
|
ভারতীয় প্রমাণ সময়(ইউটিসি+৫:৩০)
|
|
•
|
গ্রীষ্মকালীন (ডিএসটি)
|
পর্যবেক্ষণ করা হয়নি (ইউটিসি+৫:৩০)
|
কলিং কোড
|
৯১
|
|
ইন্টারনেট টিএলডি
|
.in
|
ভারত দক্ষিণ এশিয়ার একটি রাষ্ট্র। দেশটির সরকারি নাম ভারতীয় প্রজাতন্ত্র। ভৌগোলিক আয়তনের বিচারে এটি দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম
এবং বিশ্বের সপ্তম বৃহত্তম রাষ্ট্র। অন্যদিকে জনসংখ্যার বিচারে এই দেশ বিশ্বের
দ্বিতীয় সর্বাধিক জনবহুল তথা বৃহত্তম গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। ভারতের পশ্চিম
সীমান্তে পাকিস্তান উত্তর-পূর্বে চীন,নেপাল ও ভূটান এবং
পূর্বে বাংলাদেশ ও মায়ানমার অবস্থিত।
এছাড়া ভারত মহাসাগরে অবস্থিত শ্রীলঙ্কা,মালদ্বীপ ও ইন্দোনেশিয়া ভারতের
নিকটবর্তী কয়েকটি দ্বীপরাষ্ট্র। দক্ষিণে ভারত মহাসাগর,পশ্চিমে আরব সাগর ও
পূর্বে বঙ্গোপসাগর দ্বারা
বেষ্টিত ভারতের উপকূলরেখার সম্মিলিত দৈর্ঘ্য ৭,৫১৭ কিলোমিটার (৪,৬৭১
মাইল)।
সুপ্রাচীন কাল থেকেই ভারতীয় উপমহাদেশ অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি
ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের
জন্য সুপরিচিত। ঐতিহাসিক সিন্ধু সভ্যতা এই
অঞ্চলেই গড়ে উঠেছিল। ইতিহাসের বিভিন্ন পর্বে এখানেই স্থাপিত হয়েছিল বিশালাকার
একাধিক সাম্রাজ্য। নানা ইতিহাস-প্রসিদ্ধ বাণিজ্যপথ এই অঞ্চলের সঙ্গে বিশ্বের
অন্যান্য সভ্যতার বাণিজ্যিক ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক রক্ষা করত। হিন্দু,বৌদ্ধ,জৈন ও শিখ—বিশ্বের এই চার ধর্মের উৎসভূমি ভারত। খ্রিষ্টীয় প্রথম
সহস্রাব্দে জরথুষ্ট্রীয় ধর্ম (পারসি
ধর্ম),ইহুদি ধর্ম,খ্রিষ্টধর্ম ও ইসলাম এদেশে
প্রবেশ করে ও ভারতীয় সংস্কৃতিতে বিশেষ প্রভাব বিস্তার করে। অষ্টাদশ শতাব্দীর
প্রথমার্ধ থেকে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া
কোম্পানি ধীরে ধীরে ভারতীয় ভূখণ্ডের অধিকাংশ অঞ্চল
নিজেদের শাসনাধীনে আনতে সক্ষম হয়। ঊনবিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগে এই দেশ পুরোদস্তুর
একটি ব্রিটিশ উপনিবেশে
পরিণত হয়। অতঃপর এক সুদীর্ঘ স্বাধীনতা সংগ্রামের মাধ্যমে
১৯৪৭ সালে ভারত একটি স্বতন্ত্র রাষ্ট্ররূপে আত্মপ্রকাশ করে। ১৯৫০ সালে সংবিধান প্রণয়নের
মাধ্যমে ভারত একটি সার্বভৌম গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রে পরিণত হয়।
বর্তমানে ভারত ২৯টি রাজ্য ও সাতটি
কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল বিশিষ্ট একটি সংসদীয় সাধারণতন্ত্র। ভারতীয় অর্থব্যবস্থা বাজারি বিনিময় হারের
বিচারে বিশ্বে দ্বাদশ ও ক্রয়ক্ষমতা সমতার বিচারে
বিশ্বে চতুর্থ বৃহত্তম। ১৯৯১ সালে ভারত সরকার গৃহীত আর্থিক সংস্কার নীতির ফলশ্রুতিতে
আজ আর্থিক বৃদ্ধিহারের বিচারে ভারত বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনৈতিক
ব্যবস্থাগুলির মধ্যে দ্বিতীয়। তবে অতিমাত্রায় দারিদ্র্য, নিরক্ষরতা ও অপুষ্টি এখনও ভারতের অন্যতম
প্রধান সমস্যা। সাংস্কৃতিক দৃষ্টিভঙ্গিতে ভারত একটি বহুধর্মীয়,বহুভাষিক ও বহুজাতিক রাষ্ট্র। আবার বন্যপ্রাণী ও উদ্ভিদ জগতের
নানা বৈচিত্র্যও এদেশে পরিলক্ষিত হয়।
উৎপত্তি
ভরত রবি বর্মা অঙ্কিত
ভারত নামটির উৎপত্তি চন্দ্রবংশীয় পৌরাণিক রাজা ভরতের নামানুসারে।
কথিত আছে এই বর্ষ বা অঞ্চলটি রাজা ভরতকে দান
করা হয়েছিল বলে এর নাম ভারতবর্ষ। ইংরেজি ইন্ডিয়া (India) শব্দটি এসেছে সিন্ধু নদের আদি ফার্সি নাম হিন্দু থেকে। এছাড়াও প্রাচীন গ্রিকরা
ভারতীয়দের ইন্দোই (Ινδοί;
অর্থাৎ ইন্দাস (সিন্ধু)
নদী অববাহিকার অধিবাসী) নামে অভিহিত করতেন। স্বাধীনতার পর ভারতের সংবিধানে ও
লোকমুখে ভারত নামটিই প্রচলিত হয়। এছাড়া
মধ্যযুগে উত্তর ভারত অর্থে ফার্সি হিন্দুস্তান (বা হিন্দুস্থান; সিন্ধুনদের দেশ) শব্দটিও
ব্যবহৃত হত। কোনো কোনো ক্ষেত্রে এই শব্দটি সমগ্র ভারত অর্থেও ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
ইতিহাস
প্রাচীন
ভারত
মধ্যপ্রদেশ রাজ্যের ভীমবেটকা প্রস্তর ক্ষেত্র ভারতে
মানববসতির প্রাচীনতম নিদর্শন। এক লক্ষ বছর আগেও এখানে মানুষের বসবাস ছিল।প্রায় ৯০০০ বছর আগে এদেশে
স্থায়ী মানববসতি গড়ে উঠে;
যা কালক্রমে পশ্চিম ভারতের ইতিহাস-প্রসিদ্ধ সিন্ধু সভ্যতার রূপ ধারণ করে।এই সভ্যতার আনুমানিক
সময়কাল ৩৩০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ। এরপর ভারতে বৈদিক যুগের সূত্রপাত
হয়। এই যুগেই হিন্দুধর্ম তথা
প্রাচীন ভারতীয় সমাজের অন্যান্য সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্যগুলির আবির্ভাব ঘটে। বৈদিক
যুগের সমাপ্তিকাল আনুমানিক ৫০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ। আনুমানিক ৫৫০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ
নাগাদ ভারতে প্রতিষ্ঠিত হয় মহাজনপদ নামে
অনেকগুলি স্বাধীন রাজতান্ত্রিক ও গণতান্ত্রিক রাজ্য।
অজন্তা গুহাচিত্র ঔরঙ্গাবাদ মহারাষ্ট্র খ্রিষ্টীয় ষষ্ঠ শতক
খ্রিষ্টপূর্ব তৃতীয় শতকে চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য প্রতিষ্ঠিত
ও মহামতি অশোকের শাসিত মৌর্য সাম্রাজ্যের অধীনে
দক্ষিণ এশিয়ার সিংহভাগ অঞ্চল একত্রিত হয়।
মধ্যযুগীয়
ভারত
খ্রিষ্টীয় তৃতীয় শতকে গুপ্ত সম্রাটদের শাসনকাল প্রাচীন ভারতের সুবর্ণ যুগ নামে
আখ্যাত হয়।এছাড়া পূর্ব ভারতে পাল এবং দাক্ষিণাত্যে চালুক্য,চোল ও বিজয়নগর প্রভৃতি
সাম্রাজ্য গড়ে ওঠে। এই সকল রাজাদের পৃষ্ঠপোষকতায় বিজ্ঞান, প্রযুক্তি,শিল্পকলা,সাহিত্য,জ্যোতির্বিদ্যা ও দর্শন সমৃদ্ধি
লাভ করে।
খ্রিষ্টীয় দশম থেকে দ্বাদশ শতাব্দীর মধ্যবর্তী সময়ে মধ্য
এশিয়া থেকে ভারতে ইসলামের অনুপ্রবেশ
ঘটে। এর ফলে সমগ্র উত্তর ভারত প্রথমে সুলতানি ও
পরে মুঘল সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত
হয়। মহামতি আকবরের রাজত্বকালে
দেশে একাধারে যেমন সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক অগ্রগতির সূচনা হয়,তেমনই প্রতিষ্ঠিত হয়
হিন্দু-মুসলমানের ধর্মীয় সম্প্রীতি। ক্রমে ক্রমে মুঘল সম্রাটগণ
উপমহাদেশের এক বৃহৎ অংশে নিজেদের কর্তৃত্ব স্থাপনে
সক্ষম হন। যদিও উত্তর-পূর্বাঞ্চলে প্রাধান্যকারী অসমের অহোম রাজশক্তি
এবং আরও কয়েকটি রাজ্য মুঘল আগ্রাসন সফলভাবে প্রতিহত করতে সক্ষম হয়েছিল।
প্রারম্ভিক
আধুনিক ভারত
ষোড়শ শতক থেকে পর্তুগাল,নেদারল্যান্ডস,ফ্রান্স ও ব্রিটিশ যুক্তরাজ্যের মতো ইউরোপীয় শক্তিগুলি
ভারতে বাণিজ্যকুঠি স্থাপন করতে শুরু করে। পরবর্তীকালে দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক
গোলযোগের সুযোগ নিয়ে তারা ভারতে উপনিবেশ স্থাপন করতেও সক্ষম হয়।
আধুনিক
ভারত
১৮৫৬ সালের মধ্যেই ভারতের অধিকাংশ অঞ্চল ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া
কোম্পানির হস্তগত হয়েছিল। এর এক বছর পরেই ঘটে
ভারতীয় সিপাহি ও দেশীয় রাজ্যগুলির সম্মিলিত এক জাতীয় গণ-অভ্যুত্থান। ভারতের
ইতিহাসে এই ঘটনা ভারতের প্রথম স্বাধীনতা যুদ্ধ বা সিপাহি বিদ্রোহ নামে
পরিচিত। এই বিদ্রোহ ব্যর্থ হলেও তা দেশে কোম্পানির শাসনের দুর্বলতার দিকগুলি
উন্মোচিত করে দেয়। তাই ভারতকে আনা হয় ব্রিটিশ রাজতন্ত্রের প্রত্যক্ষ
শাসনাধীনে।
মহাত্মা গান্ধীর (ডানদিকে)
সঙ্গে জওহরলাল নেহেরু ১৯৩৭। ১৯৪৭ সালে নেহেরু
ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী হন
বিংশ শতকে ভারতীয়
জাতীয় কংগ্রেস ও অন্যান্য রাজনৈতিক সংগঠনগুলি দেশজুড়ে স্বাধীনতা
আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটায়। ভারতীয় নেতা মহাত্মা গান্ধী লক্ষাধিক
মানুষকে সঙ্গে নিয়ে অহিংস গণ-আইন অমান্য জাতীয় আন্দোলন শুরু করেন। স্বাধীনতা
আন্দোলনের শেষলগ্নে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু ও
তাঁর আজাদ হিন্দ ফৌজের সংগ্রাম
ভারতের ইতিহাসে এক গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়। ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ১৫ আগস্ট ভারত
ব্রিটিশ শাসনজাল থেকে মুক্তিলাভ করে। একই সঙ্গে দেশের পূর্ব ও পশ্চিম প্রান্তের
মুসলমান-অধ্যুষিত অঞ্চলগুলি বিভক্ত হয়ে গঠন করে পাকিস্তান রাষ্ট্র। ১৯৫০
সালের ২৬ জানুয়ারি নতুন সংবিধান প্রবর্তনের মধ্য দিয়ে ভারতে গণতান্ত্রিক
প্রজাতন্ত্র স্থাপিত হয়।
স্বাধীনতার পরে ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা,জাতপাত,নকশালবাদ,সন্ত্রাসবাদ এবং জম্মু ও কাশ্মীর,পাঞ্জাব ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের আঞ্চলিক
বিচ্ছিন্নতাবাদীদের অভুত্থান দেশে মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে। ১৯৯০-এর দশক থেকে ভারতের
শহরাঞ্চলগুলি এই হানাহানির শিকার হতে থাকে। ১৯৬২
সালের ভারত-চীন যুদ্ধের ফলে চীনের সঙ্গে
এবং ১৯৪৭,১৯৬৫,১৯৭১ ও ১৯৯৯ সালে
পাক-ভারত যুদ্ধের ফলে পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের সীমান্ত নিয়ে বিরোধ তীব্র হয়।
ভারত রাষ্ট্রসংঘ (ব্রিটিশ ভারত হিসাবে)
ও জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনের অন্যতম
প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। ১৯৭৪ সালে একটি ভূগর্ভস্থ পারমাণবিক পরীক্ষণ ও
১৯৯৮ সালে আরও পাঁচটি পরমাণু
পরীক্ষা চালিয়ে ভারত নিজেদের একটি পরমাণু শক্তিধর রাষ্ট্র হিসেবে প্রকাশ করে। ১৯৯১
সালে শুরু হওয়া অর্থনৈতিক সংস্কারের ফলে বর্তমানে
পৃথিবীর অতিদ্রুত-বর্ধনশীল এক অর্থব্যবস্থা হিসাবে ভারত সারা বিশ্বে ব্যাপক প্রভাব
বিস্তার করতেও সক্ষম হয়েছে।
ভূগোল
হিমালয় পর্বতমালা উত্তর সিক্কিমের ক্রো'স হ্রদ
ভারতীয় উপমহাদেশের সিংহভাগ
নিয়ে গঠিত ভারতীয় ভূখণ্ডটি ভারতীয় টেকটোনিক পাত ও ইন্দো-অস্ট্রেলীয় পাতের মধ্যস্থিত
একটি গৌণ পাতের উপর অবস্থিত। এই ভূখণ্ড গঠনের প্রধান
ভূতাত্ত্বিক প্রক্রিয়াটি শুরু হয় আজ থেকে ৭৫ কোটি বছর পূর্বে,যখন দক্ষিণের অতিমহাদেশ গন্ডোয়ানার অংশ
হিসাবে ভারতীয় উপমহাদেশ উত্তর-পূর্ব দিকে সরতে শুরু করে। তৎকালীন অসংগঠিত ভারত মহাসাগরব্যাপী এই
সরণ স্থায়ী হয় ৫০ কোটি বছর। এর পরে উপমহাদেশটির সঙ্গে ইউরেশীয় পাতের সংঘর্ষ
ঘটে এবং উপমহাদেশের পাতটি ইউরেশীয় পাতের তলায় অবনমিত হয়ে পৃথিবীর উচ্চতম
পর্বতমালা হিমালয়ের উত্থান
ঘটায়। এই পর্বতমালা বর্তমানে ভারতের উত্তর ও উত্তর-পূর্ব দিক বেষ্টন করে আছে। উত্থানশীল হিমালয়ের
দক্ষিণ পাদদেশে অবস্থিত সমুদ্রে পাতসঞ্চরণের ফলে একটি বৃহৎ খাত সৃষ্টি হয় এবং কালক্রমে নদীর পলি জমে এই খাতটি গাঙ্গেয় সমভূমি
অঞ্চলে পরিণত হয়। এই সমভূমির পশ্চিমে আরাবল্লী পর্বতশ্রেণী কর্তৃক
বিচ্ছিন্ন হয়ে অবস্থান করছে থর মরুভূমি। মূল ভারতীয় পাতটি আজ
ভারতীয় উপদ্বীপ রূপে অবস্থান করছে। এটিই ভারতের প্রাচীনতম ও ভৌগোলিকভাবে সর্বাপেক্ষা
দৃঢ় অংশ। উত্তরদিকে মধ্য ভারতে অবস্থিত সাতপুরা ও বিন্ধ্য পর্বতমালা
পর্যন্ত এই উপদ্বীপ বিস্তৃত। এই সমান্তরাল পর্বতমালাদুটি পশ্চিমে গুজরাটের আরব সাগর উপকূল
থেকে পূর্বে ঝাড়খণ্ডের কয়লা-সমৃদ্ধ ছোটনাগপুর মালভূমি পর্যন্ত ব্যাপ্ত। দক্ষিণে উপদ্বীপীয় ভূখণ্ডে দাক্ষিণাত্য মালভূমি বামে
ও ডানে যথাক্রমে পশ্চিমঘাট ও
পূর্বঘাট পর্বতমালাদ্বয় দ্বারা উপকূলীয় সমভূমি থেকে বিচ্ছিন্ন। এই মালভূমিতেই ভারতের
প্রাচীনতম প্রস্তরগঠনটি পরিলক্ষিত হয়; যার কিয়দংশের বয়স ১০০ কোটি বছরেরও বেশি।
এইভাবে ভারত বিষুবরেখার উত্তরে ৬°৪৪' ও ৩৫°৩০' উত্তর অক্ষাংশ ও ৬৮°৭' ও ৯৭°২৫' পূর্ব দ্রাঘিমাংশে অবস্থিত।
লাক্ষাদ্বীপ
ভারতীয় উপকূলরেখার দৈর্ঘ্য ৭,৫১৭ কিলোমিটার (৪,৬৭১ মাইল)। এর মধ্যে ৫,৪২৩ কিলোমিটার (৩,৩৭০ মাইল) ভারতীয় উপদ্বীপের এবং ২,০৯৪ কিলোমিটার (১,৩০১ মাইল) আন্দামান,নিকোবর ও লাক্ষাদ্বীপের
অন্তর্গত। ভারতীয় নৌবাহিনীর
হাইড্রোগ্রাফিক চার্ট অনুসারে মূল অঞ্চলের উপকূলভূমি ৪৩% বালুকাময় সৈকত,১১% পাথুরে উপকূল ও ভৃগু
(উঁচু খাড়া পাড় বা ক্লিফ),৪৬% জলাজমিপূর্ণ উপকূল দ্বারা
গঠিত।
সুন্দরবন জাতীয় উদ্যান বিশ্বের বৃহত্তম নদী-বদ্বীপ
গাঙ্গেয় বদ্বীপ অঞ্চলে অবস্থিত এই বনাঞ্চলটি ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে প্রসারিত
হিমালয় থেকে উৎপন্ন নদনদীগুলির মধ্যে প্রধান গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্র। উভয়েই বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়েছে। গঙ্গার প্রধান উপনদীগুলি
হল যমুনা ও
কোশী নদী। কোশী নদীতে নাব্যতা অত্যন্ত কম থাকায় প্রতি বছর ভয়াল বন্যা দেখা দেয়।
উপদ্বীপের প্রধান নদীগুলি হল গোদাবরী,মহানদী,কৃষ্ণা ও কাবেরী। এই নদীগুলির খাত অত্যন্ত নাব্য হওয়ায় বন্যা
কম হয়ে থাকে। এই নদীগুলিও বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়েছে। অন্যদিকে নর্মদা ও তাপ্তি পতিত
হয়েছে আরব সাগরে। ভারতীয় উপকূলভূমির অন্যতম
একটি বৈশিষ্ট্য হল পশ্চিম ভারতে কচ্ছের রাণ ও পূর্বভারতে সুন্দরবনের পলিগঠিত
বদ্বীপ অঞ্চল,যা ভারত ও বাংলাদেশে বিস্তৃত। ভারতে দুটি দ্বীপপুঞ্জ
দেখা যায়: ভারতের দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলভাগের নিকটে প্রবালদ্বীপ লাক্ষাদ্বীপ এবং আন্দামান সাগরের আগ্নেয়
দ্বীপমালা আন্দামান ও নিকোবর
দ্বীপপুঞ্জ।
জলবায়ু
ভারতের বৈচিত্র্যময় ভৌগোলিক ও ভূতাত্ত্বিক উপাদানগুলি
দেশের জলবায়ুকে অনেকাংশেই
প্রভাবিত করে। কর্কটক্রান্তি রেখা ভারতের মাঝবরাবর প্রসারিত। কিন্তু দেশের উত্তর
সীমান্ত বরাবর অবস্থিত হিমালয় পর্বতমালা মধ্য
এশিয়া থেকে আগত ক্যাটাবেটিক বায়ুপ্রবাহকে প্রতিরোধ করে দেশে ক্রান্তীয় জলবায়ু
বজায় রাখতে সহায়তা করে। হিমালয় পর্বতমালা ও থর মরুভূমি দেশে মৌসুমি বায়ুপ্রবাহকেও নিয়ন্ত্রণ
করে। থর মরুভূমি গ্রীষ্মকালীন
আর্দ্র দক্ষিণ-পূর্ব মৌসুমি বায়ুকে আকর্ষণ করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা
গ্রহণ করে। জুন থেকে অক্টোবর মাসের মধ্যবর্তী সময়ে আগত এই বায়ুপ্রবাহই ভারতে
বর্ষার মূল কারণ। ভারতে চারটি প্রধান ঋতু দেখা যায়: শীত (জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি),গ্রীষ্ম (মার্চ
থেকে মে),বর্ষা (জুন
থেকে সেপ্টেম্বর) এবং শরৎ ও হেমন্ত (অক্টোবর
থেকে ডিসেম্বর)।
ক্রান্তীয় জলবায়ুর বৈশিষ্ট্য অনুসারে বর্ষা ও অন্যান্য
আবহাওয়াগত পরিস্থিতি দেশে খরা,বন্যা,সাইক্লোন ও
অন্যান্য প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের জন্য দায়ী। এর ফলে প্রতি বছর দেশটি লক্ষ লক্ষ
মানুষের মৃত্যু ও সম্পত্তিহানির কারণ হয়। বর্তমানে বিশ্ব উষ্ণায়ণের ফলে ভারতের
জলবায়ুতে নানাপ্রকার অস্থিরতা দেখা দিচ্ছে।
জীববৈচিত্র্য
বেঙ্গল টাইগার ভারতের জাতীয় পশু
ইন্দোমালয় পরিবেশক্ষেত্রে অবস্থিত ভারত জীববৈচিত্র্যের
একটি গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন। ১৮টি মহাবৈচিত্র্যপূর্ণ রাষ্ট্রের একটি এই দেশ পৃথিবীর
৭.৬% স্তন্যপায়ী,১২.৬% পাখি,৬.২% সরীসৃপ,৪.৪% উভচর,১১.৭% মাছ ও ৬.০% সপুষ্পক উদ্ভিদের
বাসস্থান। পশ্চিমঘাট পর্বতমালার শোলা
বর্ষণারণ্যের মতো ভারতের অনেক অঞ্চলেই স্বাভাবিক উদ্ভিদের প্রাচুর্য দেখা যায়।
৩৩% ভারতীয় বৃক্ষপ্রজাতি স্বাভাবিক উদ্ভিদশ্রেণীর অন্তর্গত। ভারতের প্রধান
অরণ্যক্ষেত্রগুলি আন্দামান দ্বীপপুঞ্জ,পশ্চিমঘাট পর্বতমালা ও উত্তর-পূর্ব ভারতের বিষুবীয়
বর্ষণারণ্য থেকে হিমালয়ের চিরহরিৎ অরণ্যক্ষেত্র পর্যন্ত বিস্তৃত। এছাড়া পূর্ব
ভারতের শাল-অধ্যুষিত,মধ্য ও দক্ষিণ ভারতের টিক-অধ্যুষিত ও মধ্য
দাক্ষিণাত্য ও গাঙ্গেয় সমভূমির বাবুল অধ্যুষিত বনাঞ্চলও উল্লেখযোগ্য। গ্রামীণ ভারতে নিম গাছ
ওষধি রূপে ব্যবহৃত হয়। পিপল গাছ মহেঞ্জোদাড়োর প্রতীকচিহ্নে
দেখা গাছে। এই গাছের তলাতেই গৌতম বুদ্ধ সিদ্ধিলাভ
করেছিলেন।
ভারতের জাতীয় পাখি ময়ূর
বহু ভারতীয় প্রজাতি গন্ডোয়ানায় জাত টেক্সা থেকে উদ্ভূত। উপদ্বীপীয় ভারতের ক্রমসরণ
ও ইউরেশীয় ভূমিভাগের সঙ্গে সংঘর্ষের ফলে প্রজাতিগুলির মধ্যে ব্যাপক পরিবর্তন দেখা
দেয়। যদিও অগ্ন্যুৎপাত ও অন্যান্য জলবায়ুগত পরিবর্তনের কারণে বিগত
২ কোটি বছরে বহু দেশজ প্রজাতিই অবলুপ্ত হয়ে যায়। এর ঠিক পরেই দুটি
প্রাণীভৌগোলিক পথে উত্থানশীল হিমালয়ের দুই পাশ দিয়ে ভারতে স্তন্যপায়ী প্রাণীরা
প্রবেশ করে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ভারতের মোট স্তন্যপায়ী ও
পাখিদের যথাক্রমে মাত্র ১২.৬% ও ৪.৫% দেশজ; যেখানে দেশের
সরীসৃপ ও উভচরদের ক্ষেত্রে এই সংখ্যা যথাক্রমে ৪৫.৮% ও ৫৫.৮%। উল্লেখযোগ্য দেশীয় প্রাণী
হল নীলগিরি লেঙ্গুর,পশ্চিমঘাট পর্বতমালার বাদামি
ও গাঢ় লাল রঙের বেডোমি ব্যাং। ভারত ১৭২টি (২.৯%) আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘ-গণিত লুপ্তপ্রায় প্রাণীর
আবাসস্থল। এর মধ্যে রয়েছে এশীয় সিংহ,বাংলা বাঘ,ভারতীয় শ্বেতপৃষ্ঠ শকুন
(বর্তমানে প্রায় অবলুপ্ত)।
বিগত দশকগুলিতে মানুষের অরণ্য আগ্রাসন বন্যপ্রাণী অবলুপ্তির
অন্যতম প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ফলে ১৯৩৫ সালে চালু হওয়া জাতীয় উদ্যান ও
সংরক্ষিত স্থানের ব্যবস্থাটিকে ব্যাপ্ত করা হয়। ১৯৭২ সালে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইন ও বাঘ সংরক্ষণের জন্য ব্যাঘ্র প্রকল্প চালু
হয়। এর সঙ্গে ১৯৮০ সালে প্রবর্তিত হয় অরণ্য সংরক্ষণ আইন ভারতে অভয়ারণ্যের সংখ্যা
পাঁচশোর অধিক। সঙ্গে দেশে ১৩টি জৈবক্ষেত্র সংরক্ষণও করা হয়। এর মধ্যে চারটি বিশ্ব
জৈবক্ষেত্র সংরক্ষণ নেটওয়ার্কের অন্তর্গত। রামসর কনভেনশন অনুসারে ভারতে পঁচিশটি
জলাভূমি আছে;
যার একটি কলকাতা মহানগরীর পূর্বভাগে অবস্থিত।
রাজনীতি ও সরকার
রাজনীতি
নর্থ ব্লক নতুন দিল্লি ভারত সরকারের প্রধান কার্যালয়
বিধানসৌধ বেঙ্গালুরুতে স্থিত কর্ণাটকের নয়নাভিরাম
বিধানসভা ভবন
ভারতীয় প্রজাতন্ত্র বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। স্বাধীনোত্তর কালে অধিকাংশ
সময় জুড়েই এদেশের শাসনকর্তৃত্ব ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের আওতাধীন। অন্যদিকে ভারতের
রাজ্য-রাজনীতিতে প্রাধান্য বিস্তার করেছে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস, ভারতীয় জনতা পার্টি(বিজেপি), ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি
(মার্কসবাদী) (সিপিআই(এম)) প্রভৃতি জাতীয় দল ও একাধিক
আঞ্চলিক পার্টি। দুটি সংক্ষিপ্ত পর্যায় বাদে ১৯৫০ সাল থেকে ১৯৯০ সাল অবধি জাতীয়
কংগ্রেস সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের মর্যাদা ভোগ করেছে। প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী ঘোষিত জরুরি অবস্থা-জনিত গণঅসন্তোষকে কাজে
লাগিয়ে ১৯৭৭ থেকে ১৯৮০ সালের মধ্যবর্তী সময়ে কংগ্রেসকে ক্ষমতাচ্যুত করে জনতা পার্টি সরকার
গঠন করে। ১৯৮৯ সালে জনতা দলের নেতৃত্বে জাতীয় ফ্রন্ট বামফ্রন্টের সহযোগিতায়
নির্বাচনে জয়লাভ করে দু-বছর ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত থাকে। ১৯৯১ সালে কোনও পার্টি
সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ না করতে পারায় কংগ্রেস পি ভি নরসিমা রাওয়ের প্রধানমন্ত্রিত্বে
একটি সংখ্যালঘু সরকার গঠন করে। এই সরকার অবশ্য পূর্ণ মেয়াদে ক্ষমতায় টিকে থাকতে
সক্ষম হয়।
১৯৯৬-১৯৯৮ সালটি কেন্দ্রীয় সরকারের অস্থিরতার যুগ। এই সময়
একাধিক স্বল্পকালীন জোট কেন্দ্রে সরকার গঠন করে। ১৯৯৬ সালে সংক্ষিপ্ত সময়কালের
জন্য বিজেপি সরকার গঠন করে। তারপর কংগ্রেস ও বিজেপি-বিরোধী যুক্তফ্রন্ট ক্ষমতায়
অধিষ্ঠিত হয়। ১৯৯৮ সালে বিজেপির নেতৃত্বে জাতীয় গণতান্ত্রিক জোট (এনডিএ) ক্ষমতা
দখল করে। এই সরকারই ভারতের প্রথম পূর্ণ সময়কালের অকংগ্রেসি সরকার। ২০০৪ সালের সাধারণ
নির্বাচনে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন সংযুক্ত প্রগতিশীল জোট (ইউপিএ) লোকসভায় বিপুল
সংখ্যক আসনে জয়লাভ করে এবং বিজেপি-বিরোধী বাম সাংসদদের সহায়তায় সরকার গঠন করে।
ইউপিএ ২০০৯ সালের সাধারণ নির্বাচনে পুনরায় ক্ষমতায় আসে। তবে বামদলগুলি আর এই
জোটের সমর্থক নয়।
সরকার
রাষ্ট্রপতি ভবন
ভারতীয় রাষ্ট্রপতির সরকারি বাসভবন
১৯৫০ খ্রিস্টাব্দের ২৬ জানুয়ারি প্রবর্তিত ভারতীয় সংবিধান বিশ্বের
বৃহত্তম ও সর্বাধিক বিস্তারিত ব্যাখ্যাসমৃদ্ধ সংবিধান সংবিধানের প্রস্তাবনা অংশে
ভারতীয় প্রজাতন্ত্রকে একটি সার্বভৌম, সমাজতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক সাধারণতন্ত্র রূপে
বর্ণিত হয়েছে। ভারতে প্রচলিত
দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ ওয়েস্ট মিনিস্টার-ধাঁচের
একটি সংসদ ব্যবস্থা। এদেশের সরকার প্রথাগতভাবে ‘আধা-যুক্তরাষ্ট্রীয়’ সরকার ব্যবস্থা হিসাবে বর্ণিত হয়; যার বৈশিষ্ট্য হল
একটি শক্তিশালী কেন্দ্রীয় সরকার ও অপেক্ষাকৃত দুর্বল একাধিক রাজ্য সরকারের
সহাবস্থান। যদিও ১৯৯০-এর দশকের শেষভাগ
থেকে রাজনৈতিক ও আর্থ-সামাজিক সংস্কার ও পরিবর্তনের ফলে রাজ্য সরকারগুলির ক্ষমতার
ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি দেশকে চালিত করছে একটি যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার দিকে।
ভারতের রাষ্ট্রপ্রধান হলেন রাষ্ট্রপতি। তিনি পরোক্ষভাবে একটি
নির্বাচক মণ্ডলী কর্তৃক পাঁচ বছরের সময়কালের ব্যবধানে নির্বাচিত হন। অন্যদিকে ভারতের সরকার
প্রধান হলেন প্রধানমন্ত্রী। অধিকাংশ শাসনক্ষমতা ন্যস্ত থাকে তাঁর হাতেই। রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিযুক্ত প্রধানমন্ত্রীকে
প্রথাগতভাবে সংসদের নিম্নকক্ষে সংখ্যাগরিষ্ট আসনপ্রাপ্ত রাজনৈতিক দল বা জোটের
সমর্থন লাভ করতে হয়। রাষ্ট্রপতি,উপরাষ্ট্রপতি ও
প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে মন্ত্রী পরিষদ (যার কার্যনির্বাহী সমিতি হল ক্যাবিনেট)—এই নিয়ে গঠিত ভারতের
শাসনবিভাগ। দপ্তরযুক্ত মন্ত্রীদের সকলকেই সংসদের কোনও না কোনও কক্ষের সদস্য হতে
হয়। ভারতীয় সংসদীয় ব্যবস্থায় শাসনবিভাগ আইনবিভাগের অধস্তন। সেই কারণে
প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর মন্ত্রী পরিষদকে সংসদের নিম্নকক্ষের কাছে
দায়বদ্ধ থাকতে হয়।
ভারতীয় সংসদ
ভারতের আইনবিভাগ হল দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ। এটি গঠিত হয়েছে রাজ্যসভা নামক
একটি উচ্চকক্ষ ও লোকসভা নামক
একটি নিম্নকক্ষ নিয়ে। রাজ্যসভার সদস্যসংখ্যা ২৪৫; এঁদের দপ্তরকাল ছয় বছর। এঁদের অধিকাংশই রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত
অঞ্চলগুলির বিধানসভা থেকে রাজ্যের জনসংখ্যার ভিত্তিতে
পরোক্ষভাবে নির্বাচিত হয়ে আসেন। অন্যদিকে লোকসভার ৫৪৫ জন
সদস্যের মধ্যে ৫৪৩ জন পাঁচ বছরের মেয়াদে নিজ নিজ নির্বাচন কেন্দ্র থেকে প্রত্যক্ষ
ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত হন। এছাড়া রাষ্ট্রপতি যদি মনে
করেন যে সংসদে অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান সম্প্রদায়ের
যথেষ্ট সংখ্যক প্রতিনিধি নেই,তবে তিনি দুই জন সদস্যকে উক্ত সম্প্রদায়
থেকে সাংসদ মনোনীত করতে পারেন।
ভারতে এককেন্দ্রিক ত্রি-স্তর বিচারব্যবস্থা প্রচলিত। এই
বিচারব্যবস্থা প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে সুপ্রিম কোর্ট,২১টি হাইকোর্ট ও
অসংখ্য বিচারবিভাগীয় আদালতের সমন্বয়ে গঠিত। মৌলিক অধিকার, কেন্দ্র ও রাজ্যগুলির মধ্যে
বিবাদ ও হাইকোর্টের আপিল বিচার এলাকা সংক্রান্ত মামলাগুলির ক্ষেত্রে সুপ্রিম
কোর্টের মূল বিচার এলাকার অন্তর্গত। এই বিচারব্যবস্থা
স্বতন্ত্র এবং আইন ঘোষণা এবং
সংবিধান-বিরোধী কেন্দ্রীয় বা রাজ্য আইন প্রতিহত করার ক্ষমতাযুক্ত। সংবিধানের অভিভাবকত্ব ও
ব্যাখ্যাদান সুপ্রিম কোর্টের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার অন্তর্গত।
রাজনৈতিক
বিভাগ
ভারত ২৯টি রাজ্য ও সাতটি
কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলবিশিষ্ট একটি যুক্তরাষ্ট্রীয়
সাধারণতন্ত্র। ভারতে প্রত্যেক রাজ্যে নির্বাচিত রাজ্য সরকার অধিষ্ঠিত রয়েছে; নির্বাচিত সরকার রয়েছে
কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল পুদুচেরি ও দিল্লিতেও। অপর পাঁচটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল রাষ্ট্রপতির
প্রত্যক্ষ শাসনাধীন;
এই অঞ্চলগুলিতে কেন্দ্রীয় সরকার প্রশাসক নিয়োগ করে থাকেন। ১৯৫৬
সালে রাজ্য পুনর্গঠন আইন বলে
ভাষার ভিত্তিতে রাজ্যগুলি স্থাপিত হয়। তারপর থেকে এই কাঠামোটি
মোটামুটি অপরিবর্তিত রয়েছে। তৃণমূল স্তরে শাসন ও প্রশাসন পরিচালনার লক্ষ্যে রাজ্য
ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলি মোট ৬১০টি জেলায় বিভক্ত। জেলাগুলি আবার মহকুমা বা
তহসিলে এবং গ্রামে বিভক্ত।
ভারতের ২৯টি রাজ্য এবং ৭টি কেন্দ্রশাসিত
অঞ্চলের একটি মানচিত্র
রাজ্য (১–২৯) ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল (ক-ছ)
|
|
১. অন্ধ্রপ্রদেশ
|
১৯. নাগাল্যান্ড
|
২. অরুণাচল প্রদেশ
|
২০. ওড়িশা
|
৩. আসাম
|
২১. পাঞ্চাব
|
৪. বিহার
|
২২. রাজস্থান
|
৫. ছত্তীসগড়
|
২৩. সিক্কিম
|
৬. গোয়া
|
২৪. তামিলনাড়ু
|
৭. গুজরাট
|
২৫. তেলঙ্গানা
|
৮. হরিয়াণা
|
২৬. ত্রিপুরা
|
৯. হিমাচল প্রদেশ
|
২৭. উত্তরপ্রদেশ
|
১০. জম্মু ও
কাশ্মীর
|
২৮. উত্তরাখণ্ড
|
১১. ঝাড়খণ্ড
|
২৯. পশ্চিমবঙ্গ
|
১২. কর্ণাটক
|
ক. আন্দামান
ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ
|
১৩. কেরল
|
খ. চণ্ডীগড়
|
১৪. মধ্যপ্রদেশ
|
গ. দাদরা ও নগর
হাভেলি
|
১৫. মহারাষ্ট্র
|
ঘ. দমন ও দিউ
|
১৬. মণিপুর
|
ঙ. লাক্ষাদ্বীপ
|
১৭. মেঘালয়
|
চ. দিল্লি
জাতীয় রাজধানী অঞ্চল
|
১৮. মিজোরাম
|
ছ. পুদুচেরি
|
বৈদেশিক সম্পর্ক ও সামরিক
বাহিনী
সুখোই-৩০ এমকেআই ভারতীয় বায়ুসেনার একটি
অঙ্গ
১৯৪৭ সালে স্বাধীনতার পর থেকেই বিশ্বের অধিকাংশ রাষ্ট্রের
সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক আন্তরিক। ১৯৫০-এর দশকে ভারত আফ্রিকা ও এশিয়ার ইউরোপীয়
উপনিবেশগুলির স্বাধীনতার স্বপক্ষে সওয়াল করে। শ্রীলঙ্কায় ভারতীয়
শান্তিরক্ষী বাহিনী প্রেরণ ও মালদ্বীপে অপারেশন ক্যাকটাস—এই দুই ক্ষেত্রে ভারত তার
প্রতিবেশী রাষ্ট্রে সামরিক মধ্যস্থতায় অংশ নেয়। কমনওয়েলথের এক
সদস্য ভারত,জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনেরও প্রতিষ্ঠাতা
সদস্য। ভারত-চীন যুদ্ধ ও ১৯৬৫
সালের পাক-ভারত যুদ্ধের পর সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে
ভারতের সম্পর্ক আন্তরিক হয়ে ওঠে। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে
ভারতের সম্পর্কের অবনতি হয়। ঠান্ডা যুদ্ধের সমাপ্তি
পর্যন্ত সেই সম্পর্ক একই রকম থাকে। কাশ্মীরকে কেন্দ্র
করে ভারতের সঙ্গে পাকিস্তানের তিনটি যুদ্ধ হয়। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা
যুদ্ধে ভারতীয় মিত্র বাহিনী বাংলাদেশকে সহায়তা করে। এছাড়াও ১৯৮৪ সালে সিয়াচেন হিমবাহ ও
১৯৯৯ সালে কার্গিলকে কেন্দ্র
করে দুই দেশের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে।
ভারতের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি জর্জ ডব্লিউ বুশ করমর্দনরত,মার্চ ২০০৬
সাম্প্রতিককালে
ভারতের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের উন্নতি হয়েছে।
বর্তমানকালে,ভারত যে সকল প্রতিষ্ঠানে নিজ প্রভাব
বিস্তারে সক্ষম হয়েছে সেগুলি হল অ্যাসোসিয়েশন অব সাউথ-ইস্ট এশিয়ান নেশনস(আসিয়ান),সাউথ এশিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর রিজিওন্যাল
কো-অপারেশন (সার্ক) ও বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (ডব্লিউটিও)। ভারত চারটি মহাদেশে
রাষ্ট্রসংঘের ৩৫টি শান্তিরক্ষা অভিযানে প্রায় ৫৫,০০০ সেনা ও পুলিশ প্রেরণ
করেছে। ব্যাপক সমালোচনা ও সামরিক
অনুমোদন সত্ত্বেও পরমাণু কর্মসূচির উপর সার্বভৌমত্ব রক্ষার খাতিরে ভারত কম্প্রিহেনসিভ নিউক্লিয়ার-টেস্ট-ব্যান ট্রিটি (সিটিবিটি)
ও নিউক্লিয়ার
নন-প্রলিফারেশন ট্রিটি (এনপিটি)-তে সই করতে
উপর্যুপরি অস্বীকার করছে। ভারত সরকারের সাম্প্রতিক প্রচেষ্টার ফলে যুক্তরাষ্ট্র,পাকিস্তান ও চীনের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের
উন্নতি হয়েছে। অন্যদিকে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে দক্ষিণ আমেরিকা,এশিয়া ও আফ্রিকার উন্নয়নশীল
দেশগুলির সঙ্গেও ভারত সুসম্পর্ক বজায় রেখেছে।
পাঁচটি রাষ্ট্রের নৌবহর মালাবার ২০০৭ ভারত আয়োজিত বিশ্বের বৃহত্তম যুদ্ধক্রীড়া
স্থলসেনা,বায়ুসেনা ও নৌসেনা নিয়ে
গঠিত ভারতের সামরিক বাহিনী বিশ্বে
তৃতীয় বৃহত্তম সামরিক বাহিনী। এই সামরিক বাহিনীর
সমান্তরালে কাজ করে থাকে একাধিক সহকারী বাহিনী; যথা: আধাসামরিক বাহিনী, উপকূলরক্ষী বাহিনী ও স্ট্রাটেজিক ফোর্সেস
কম্যান্ড। রাষ্ট্রপতি ভারতীয়
সেনাবাহিনীর সর্বাধিনায়ক। রাশিয়া,ফ্রান্স ও ইসরায়েল ভারতের
প্রধান অস্ত্রসরবরাহকারী রাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা সহকারী দেশ। প্রতিরক্ষা গবেষণা ও
উন্নয়ন সংগঠন (ডিফেন্স রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট
অর্গ্যানাইজেশন বা ডিআরডিও) ব্যালিস্টিক মিসাইল, যুদ্ধবিমান, যুদ্ধট্যাঙ্ক সহ দেশজ অত্যাধুনিক অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম উৎপাদনের কাজ তত্ত্ববধান করে,যাতে সামরিক সরঞ্জামের
ক্ষেত্রে ভারতকে অধিক মাত্রায় বিদেশি আমদানির উপর নির্ভর করতে না হয়। ১৯৭৪ সালে স্মাইলিং বুদ্ধ ও
১৯৯৮ সালে পোখরান-২ নামে
মোট ছয়টি প্রাথমিক পরমাণু পরীক্ষণের মাধ্যমে ভারত পরমাণু শক্তিধর রাষ্ট্রে পরিণত
হয়। যদিও ভারতের ঘোষিত পরমাণু নীতি হল “প্রথম প্রয়োগ নয়”। ১০ অক্টোবর,২০০৮ তারিখে ভারত-মার্কিন বেসামরিক
পরমাণু চুক্তি সাক্ষরিত হয়। তার পূর্বেই আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি
সংস্থা ও নিউক্লিয়ার সাপ্লায়ারস
গ্রুপ ভারতের উপর থেকে পরমাণু প্রযুক্তি
ক্রয়বিক্রয়ের নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়। ফলে ভারত কার্যত পরিণত হয় বিশ্বের ষষ্ঠ
পরমাণু শক্তিধর রাষ্ট্রে।
অর্থনীতি
ড. অমর্ত্য সেন নোবেলজয়ী ভারতীয়
অর্থনীতিবিদ তথা জনকল্যাণ অর্থনীতির প্রবক্তা
১৯৫০-এর দশক থেকে ১৯৮০-এর দশক পর্যন্ত ভারত সমাজতান্ত্রিক-ধাঁচের অর্থনৈতিক নীতি
অনুসরণ করে চলে। স্বাধীনতা-উত্তর যুগের অধিকাংশ সময় জুড়ে ভারতে যে
আধা-যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা প্রচলিত ছিল, তাতে বেসরকারি উদ্যোগ, বৈদেশিক বাণিজ্য ও প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের ওপর কঠোর সরকারি বিধিনিষেধ
আরোপিত থাকত। ১৯৯১ সালে অর্থনৈতিক সংস্কারের মাধ্যমে
ক্রমান্বয়ে ভারত তার বাজার উন্মুক্ত করে দেয়। বিদেশি বাণিজ্য ও বিনিয়োগের উপর সরকারি
কর্তৃত্ব শিথিল করা হয়। এর ধনাত্মক প্রভাবে মার্চ
১৯৯১ সালে ৫.৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে
বৈদেশিক মুদ্রা সঞ্চয় ৪ জুলাই,২০০৮ তারিখে বেড়ে দাঁড়ায় ৩০৮ বিলিয়ন
মার্কিন ডলারে। ঘাটতি কমে আসে কেন্দ্রীয়
ও রাজ্য বাজেটগুলিতে। যদিও সরকারি মালিকানাধীন
সংস্থাগুলির বেসরকারিকরণ এবং কোনও কোনও সরকারি খাত বেসরকারি ও বৈদেশিক অংশীদারদের
নিকট মুক্ত করে দেওয়ায় রাজনৈতিক বিতর্ক সৃষ্টি হয়।
ভারতের মোট স্থুল আভ্যন্তরীক উৎপাদন বা জিডিপি ১.২৪৩ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার যা ক্রয়ক্ষমতা সমতার (পিপিপি)
পরিমাপে ৪.৭২৬ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের সমতূল্য। জিডিপি'র মানদণ্ডে ভারত বিশ্বের
চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতি। চলতি মূল্যে ভারতের মাথাপিছু আয় ৯৭৭
মার্কিন ডলার (বিশ্বে ১২৮তম) যা ক্রয়ক্ষমতা সমতা (পিপিপি)
ভিত্তিক পরিমাপে ২,৭০০ মার্কিন ডলারের সমতূল্য (বিশ্বে ১১৮তম)। বিংশ শতাব্দীর প্রথমভাগে কৃষি
প্রধান দেশ হিসাবে পরিচিত ভারতের বর্তমান জিডিপিতে পরিষেবা খাতের অবদান ৫৪ শতাংশ ;
ইতিমধ্যে কৃষিখাতের অবদান হ্রাস পেয়ে ২৮ শতাংশে দাঁড়িয়েছে এবং
শিল্পখাতের অবদান মাত্র ১৮ শতাংশ। বিগত দুই দশকে বিশ্বের অন্যতম দ্রুত বর্ধনশীল
অর্থনীতি ভারতের গড় বার্ষিক জিডিপি বৃদ্ধির হার ছিল ৫.৭ শতাংশ।
বোম্বাই শেয়ার বাজার মুম্বাই-ভারতের বৃহত্তম তথা এশিয়ার প্রাচীনতম স্টক এক্সচেঞ্জ
৫১৬.৩ মিলিয়ন জনসংখ্যা অধ্যুষিত ভারত পৃথিবীর দ্বিতীয়
বৃহত্তম শ্রমশক্তির দেশ। এই শক্তির ৬০ শতাংশ নিয়োজিত কৃষিখাতে ও কৃষিসংক্রান্ত
শিল্পগুলিতে,
২৮ শতাংশ পরিষেবা ও পরিষেবা-সংক্রান্ত শিল্পে এবং ১২ শতাংশ নিযুক্ত
শিল্পখাতে। প্রধান কৃষিজ ফসলগুলি হল ধান,গম,তৈলবীজ,তুলা,পাট,চা,আখ ও আলু। প্রধান শিল্পগুলি হল অটোমোবাইল,সিমেন্ট,রাসায়নিক,বৈদ্যুতিন ভোগ্যপণ্য,খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ,যন্ত্রশিল্প,খনি,পেট্রোলিয়াম,ভেষজ,ইস্পাত,পরিবহণ উপকরণ ও বস্ত্রশিল্প। ভারতের
প্রাকৃতিক সম্পদগুলি হল আবাদি জমি, বক্সাইট,ক্রোমাইট,কয়লা,হিরে,আকরিক লৌহ,চুনাপাথর,ম্যাঙ্গানিজ,অভ্র,প্রাকৃতিক গ্যাস,পেট্রোলিয়াম ও আকরিক টাইটানিয়াম।ভারতের দ্রুত অর্থনৈতিক
প্রবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে শক্তির চাহিদাও দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এনার্জি ইনফরমেশন
অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের মতে,
ভারত পেট্রোলিয়ামজাত পণ্যের ষষ্ঠ বৃহত্তম ও কয়লার তৃতীয় বৃহত্তম
ভোক্তা।
বিগত দুই দশকের উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি সত্ত্বেও
ভারত বিশ্বের সর্বাপেক্ষা দারিদ্র্যপীড়িত রাষ্ট্র। শিশু-অপুষ্টির হারও বিশ্বের
অন্যান্য দেশগুলির তুলনায় ভারতে সর্বাধিক: ২০০৭ সালের হিসেব অনুযায়ী ৪৬ শতাংশ)। তবে বিশ্বব্যাঙ্ক
নির্ধারিত দৈনিক ১.২৫ মার্কিন ডলারের আন্তর্জাতিক দারিদ্র্যরেখার (২০০৪ সালের
হিসেব অনুযায়ী,ক্রয়ক্ষমতা সমতা নামমাত্র
হিসেবে নগরাঞ্চলে দৈনিক ২১.৬ টাকা ও গ্রামাঞ্চলে দৈনিক ১৪.৩ টাকা) নিচে বসবাসকারী
মানুষের সংখ্যা ১৯৮১ সালে ৬০ শতাংশ থেকে ২০০৫ সালে ৪২ শতাংশে নেমে এসেছে। সাম্প্রতিক দশকগুলিতে ভারত
মন্বন্তর প্রতিরোধ করতে পারলেও দেশের অর্ধেক শিশু ওজন ঘাটতিতে ভুগছে। এই
হার সারা বিশ্বের নিরিখে কেবল উচ্চই নয়, এমনকী সাব-সাহারান
আফ্রিকার হারের প্রায় দ্বিগুণ।
সাম্প্রতিককালে, ভারতের বহুসংখ্যক শিক্ষিত ইংরেজি-পটু প্রশিক্ষিত পেশাদারগণ বিভিন্ন বহুজাতিক
সংস্থা, মেডিক্যাল
ট্যুরিজমে ও আউটসোর্সিং-এর কাজে নিযুক্ত হয়েছেন। বর্তমানে ভারত সফটওয়্যার ও
অর্থসংক্রান্ত,গবেষণাসংক্রান্ত ও প্রকৌশলগত পরিষেবার এক বৃহৎ রপ্তানিকারক।
২০০৭ সালে রপ্তানি ও আমদানির পরিমাণ ছিল যথাক্রমে ১৪৫
বিলিয়ন মার্কিন ডলার ও ২১৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। বস্ত্র,রত্ন, ইঞ্জিনিয়ারিং
দ্রব্যাদি ও সফটওয়্যার ভারতের প্রধান রপ্তানি পণ্য। প্রধান প্রধান আমদানি পণ্যের
মধ্যে রয়েছে অপরিশোধিত তেল, যন্ত্রপাতি,সার ও রাসায়নিক দ্রব্য।
ভারতের প্রধানতম বাণিজ্য সহযোগী হল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র,ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও চীন। ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংকের সদর
দপ্তর দেশের বাণিজ্যিক রাজধানী নামে খ্যাত মুম্বই মহানগরীতে
অবস্থিত।
জনপরিসংখ্যান
দাক্ষিণাত্যের তোডা
উপজাতির কুটির
ভারত বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বাধিক জনবহুল রাষ্ট্র। ২০১৮ সালে
দেশটির আনুমানিক জনসংখ্যা প্রায় ১৩৫ কোটি। ভারতের জনসংখ্যা পৃথিবীর মোট জন
সংখ্যার প্রায় ১৭.৭৪ শতাংশ। সাম্প্রতিক কালে বার্ষিক জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার প্রতি
হাজার জনে ১১.১০ জন বা ১.১১ শতাংশ। গড়ে প্রতি দুই সেকেণ্ডে জনসংখ্যা একজন করে
বাড়ে। যদিও সাম্প্রতিক দশকগুলিতে গ্রাম থেকে শহরে অভিবাসনের হার বৃদ্ধি পাওয়ায়
ভারতে শহরাঞ্চলীয় জনসংখ্যা বহুল পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছে, তথাপি প্রায় ৬৬.৮০ শতাংশ
ভারতবাসী গ্রামাঞ্চলে বাস করেন। জনসংখ্যার ৩৩.২০ শতাংশ শহরে বসবাস করে। এ দেশে
প্রতি বর্গকিলোমিটারে জনবসতি ৪৫৫ জন। ভারতের বৃহত্তম
মহানগরগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল মুম্বাই (পূর্বনাম
বম্বে বা বোম্বাই),নতুন দিল্লি,বেঙ্গালুরু (পূর্বনাম
ব্যাঙ্গালোর),কলকাতা,হায়দ্রাবাদ ও আহমদাবাদ। ২০১৩-১৫ কালপর্বে জাতীয় পর্যায়ে লিঙ্গানুপাত
প্রতি হাজার পুরুষের বিপরীতে ৯০০ জন নারী। ২০১১-এর জনমিতি অনুযায়ী
ভারতে সাক্ষরতার হার ৭৪.০৪ শতাংশ, যা পুরুষদের মধ্যে ৮২.১৪ শতাংশ এবং নারীদের
মধ্যে ৬৫.৪৬ শতাংশ। সাক্ষরতার সর্বনিম্ন হার বিহার রাজ্যে: ৬৩.৮২ শতাংশ। শহর-গ্রাম স্বাক্ষরতার
পার্থক্য ২০০১ সালে ছিল ২১.২ শতাংশ, যা ২০১১ সালে নেমে আসে ১৬.১ শতাংশে।
গ্রামীন অঞ্চলগুলোতে স্বাক্ষরতা বৃদ্ধির হার শহর এলাকার তুলনায় দ্বিগুণ। সাক্ষরতার হার সর্বাধিক কেরল রাজ্যে
(৯১%)।
ভাষা
ভারতের দুটি প্রধান ভাষাগোষ্ঠী হল ইন্দো-আর্য (মোট
জনসংখ্যার ৭৪%) ও দ্রাবিড় (মোট
জনসংখ্যার ২৪%)। অপরাপর ভাষাগোষ্ঠীগুলি হল অস্ট্রো-এশিয়াটিক ও তিব্বতি-বর্মী ভাষাগোষ্ঠী। ভারতের বৃহত্তম জনগোষ্ঠীয় ভাষা হিন্দি যা কি-না কেন্দ্রীয়
সরকারের দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে নির্ধারিত। “সহকারী দাপ্তরিক ভাষা” ইংরেজি প্রশাসন
ও বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে বহুল ব্যবহৃত। উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রেও
ইংরেজির প্রাধান্য প্রশ্নাতীত। ভারতের সংবিধান বাংলা-সহ ২২টি ভাষাকে সরকারি
ভাষার মর্যাদা দিয়েছে। এগুলি হয় প্রচলিত, নয় ধ্রুপদি ভাষা। প্রাচীনকাল থেকেই ভারতে
ধ্রুপদি ভাষার মর্যাদা পেয়ে আসা তামিল ও সংস্কৃত এবং কন্নড় ও তেলুগু ভাষাকে
ভারত সরকার নিজস্ব একটি যোগ্যতাসূচকবলে ধ্রুপদি ভাষার মর্যাদা দান করেছে। ভারতে উপ-ভাষার সংখ্যা ১,৬৫২টি।
ধর্ম
৮০ কোটিরও বেশি (৮০.৫%) ভারতবাসী হিন্দু। অন্যান্য ধর্মসম্প্রদায়গুলির মধ্যে রয়েছে মুসলমান (১৩.৪%),খ্রিস্টান (২.৩%),শিখ (১.৯%),বৌদ্ধ (০.৮%),জৈন (০.৪%),ইহুদি,পারসি ও বাহাই ধর্মাবলম্বী
মানুষ।উল্লেখ্য, ভারতে বিশ্বের বৃহত্তম
হিন্দু,শিখ,জৈন,জরাথ্রুষ্টবাদী ও বাহাই ধর্মাবলম্বী জনসংখ্যা রয়েছে এবং ভারতে মুসলিম জনসংখ্যা
সমগ্র বিশ্বের নিরিখে তৃতীয়-বৃহত্তম এবং অ-মুসলমান প্রধান দেশগুলির মধ্যে
বৃহত্তম। দেশে আদিবাসী জনসংখ্যা ৮.১%।
সংস্কৃতি
আগ্রার তাজমহল
শাহজাহান কর্তৃক
পত্নী মুমতাজ মহলের স্মৃতিতে
নির্মিত ইউনেস্কো এর
“অসামান্য
বিশ্বজনীন মূল্য” বিচার করে এটিকে বিশ্ব ঐতিহ্য ভবন ঘোষণা করেছে।
আফ্রিকা মহাদেশের পরেই ভারত সংস্কৃতি,ভাষা ও জাতিগতভাবে বিশ্বে
সর্বাধিক বৈচিত্র্যপূর্ণ ভৌগোলিক অঞ্চল। "সাংস্কৃতিক
বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য" ভারতীয় সংস্কৃতির প্রধান
বৈশিষ্ট্য। এই সংস্কৃতি স্বকীয় ঐতিহ্য রক্ষার পাশাপাশি বৈদেশিক আক্রমণকারী ও
বহিরাগত জাতিগুলির থেকে গ্রহণ করা রীতিনীতি,ঐতিহ্য ও ধারণা অঙ্গীভূত করে এশিয়ার
অন্যান্য অঞ্চলের সংস্কৃতির ওপর নিজ প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হয়েছে।
স্থাপত্য
ভারতীয় স্থাপত্য এমন
একটি বিষয় যার মধ্যে ভারতীয় সংস্কৃতির এই বৈচিত্র্যময় রূপটি ধরা পড়ে। তাজমহল ও
অন্যান্য মুঘল স্থাপত্য নিদর্শন তথা
দ্রাবিড় স্থাপত্য নিদর্শনগুলির মধ্যে ভারত ও বহির্ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের প্রাচীন
ও স্থানীয় ঐতিহ্যের সম্মিলন লক্ষিত হয়। ভারতের স্থানীয় স্থাপত্যশৈলীগুলিও দেশের
এক গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক স্থাপত্য-বৈচিত্র্যের সাক্ষী।
পরিবেশন
শিল্পকলা
ভারতীয় সঙ্গীতের জগৎটি গঠিত হয়েছে ধ্রুপদি ও আঞ্চলিক সংগীত ধারার
সংমিশ্রণে। ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীত দুটি
ধারায় বিভক্ত –
উত্তর ভারতের হিন্দুস্তানি শাস্ত্রীয় সঙ্গীত এবং দক্ষিণ ভারতের
কর্ণাটিক সংগীত। এই দুই প্রধান সংগীত ধারা থেকে আবার উৎসারিত হয়েছে অনেক উপধারা।
আঞ্চলিক জনপ্রিয় সঙ্গীতের মধ্যে উল্লেখযোগ্য রবীন্দ্র সংগীত,হিন্দি ফিল্মি গান ও
ইন্ডি-পপ এবং বাউল ও
অন্যান্য বিভিন্ন প্রকার লোকসংগীত।
ভারতীয় নৃত্যকলাও “লোক” ও “ধ্রুপদী”—এই দুই প্রধান ভাগে বিভক্ত। ভারতের বিখ্যাত
লোকনৃত্যগুলি হল পাঞ্জাবের ভাংড়া,আসামের বিহু নৃত্য,পশ্চিমবঙ্গের ছৌ নাচ এবং রাজস্থানের ঘুমার। ভারতের সঙ্গীত নাটক অকাদেমি দেশের আটটি
নৃত্যকলাকে ধ্রুপদি ভারতীয় নৃত্য আখ্যা
দিয়েছে। এগুলি হল তামিলনাড়ুর ভরতনট্যম,উত্তর প্রদেশের কত্থক,কেরলের কথাকলি ও মোহিনীআট্টম,অন্ধ্রপ্রদেশের কুচিপুডি,মণিপুরের মণিপুরি,ওডিশার ওডিশি এবং আসামের সত্রিয় নাচ।এই নৃত্যশৈলীগুলি
বর্ণনাত্মক ও পৌরাণিক ঘটনাকেন্দ্রিক।
সাহিত্য
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
এশিয়ার প্রথম সাহিত্যে নোবেল বিজেতা এবং ভারতের জাতীয় সংগীতের রচয়িতা। মণিপুরী নৃত্য সহ
বহু শিল্পকলার পুনরুজ্জীবনে তাঁর ভূমিকা অনস্বীকার্য।
ভারতীয় নাটকের বৈশিষ্ট্য হল সংগীত,নৃত্য ও তাৎক্ষণিক বা লিখিত সংলাপের যুগলবন্দি। এর বিষয়বস্তু কখনও পুরাণ
থেকে,কখনো
মধ্যযুগীয় প্রেমকাহিনিগুলি থেকে,কখনো আবার একালের সামাজিক
ও রাজনৈতিক ঘটনাবলি থেকে গৃহীত। ভারতের লোকনাট্যের মধ্যে গুজরাটের ভাবাই,পশ্চিমবঙ্গের যাত্রা,উত্তর
ভারতের জাতীয় প্রতীকসমূহ
|
|
পতাকা
|
তিরঙ্গা
|
প্রতীক
|
অশোক স্তম্ভ
|
সংগীত
|
জনগণমন-অধিনায়ক জয় হে
|
স্তোত্র
|
বন্দে মাতরম্
|
পশু
|
বাংলার বাঘ
|
ঐতিহ্যবাহী পশু
|
ভারতীয় হাতি
|
পাখি
|
ভারতীয় ময়ূর
|
জলচর প্রাণী
|
গাঙ্গেয় ডলফিন
|
ফুল
|
পদ্ম
|
গাছ
|
বট
|
ফল
|
আম
|
খেলা
|
ফিল্ড হকি
|
সন
|
শকাব্দ
|
নদী
|
গঙ্গা
|
চলচ্চিত্র
ভারতীয় চলচ্চিত্র শিল্প সমগ্র
বিশ্বের বৃহত্তম চলচ্চিত্র শিল্প। বাণিজ্যিক হিন্দি সিনেমা
প্রস্তুতকারক বলিউড বিশ্বের
সর্বাপেক্ষা সৃষ্টিশীল ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি। এছাড়াও বাংলা,কন্নড়,মালয়ালম,মারাঠি,তামিল ও তেলুগু ভাষায়
ঐতিহ্যবাহী চলচ্চিত্র শিল্পের আছে।
রন্ধনশৈলী
ভারতীয় রন্ধনশৈলীর বিশেষত্ব হল বিভিন্ন বৈচিত্র্যপূর্ণ
আঞ্চলিক রন্ধনপ্রণালী এবং ভেষজ ও মশলার অভিজাত প্রয়োগ। দেশের প্রধান খাদ্য ভাত (পূর্ব ও দক্ষিণ ভারতে) ও রুটি (মূলত
উত্তর ভারতে)।
পোশাক
ভারতে পোষাকের ঐতিহ্য রং,ধরন ও জলবায়ুর মতো বিভিন্ন
কারণে অঞ্চলভেদে ভিন্ন ভিন্ন। থানকাপড়ের পোশাক হিসাবে মহিলাদের ক্ষেত্রে শাড়ি ও
পুরুষদের ক্ষেত্রে ধুতি বা লুঙ্গি বিশেষ জনপ্রিয়। এছাড়া সেলাই-করা পোষাকের
মধ্যে মহিলাদের সালোয়ার-কামিজ ও
পুরুষদের কুর্তা-পাজামা বা ইউরোপীয়-ধাঁচে ট্রাউজার্স ও শার্ট বিশেষভাবে
প্রচলিত।
উৎসব
ভারতে উৎসব প্রকৃতিগতভাবে ধর্মীয়। যদিও অনেক ধর্ম ও
জাতি নিরপেক্ষ উৎসবও পালিত হয়ে থাকে। দীপাবলি,গণেশ চতুর্থী,উগাদি, পোঙ্গল,দোলযাত্রা,ওনাম,দশেরা,দুর্গাপূজা,ঈদুল ফিত্র,ঈদুল আজহা,বড়োদিন,বুদ্ধজয়ন্তী,বৈশাখী প্রভৃতি কয়েকটি
জনপ্রিয় উৎসব। ভারতে
তিনটি জাতীয় উৎসব পালিত
হয়; এগুলি হল
স্বাধীনতা দিবস,সাধারণতন্ত্র দিবস ও গান্ধী জয়ন্তী। এছাড়াও বিভিন্ন রাজ্যে বিভিন্ন আঞ্চলিক উৎসবও যথেষ্ট উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে পালিত
হয়। ধর্মাচরণও দৈনন্দিন ও গণজীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হিসেবে গণ্য হয়।
সমাজ-ব্যবস্থা
ভারতে সনাতন পারিবারিক মূল্য বিশেষ সম্মানের অধিকারী।
একাধিক প্রজন্মের মিলনক্ষেত্র পিতৃতান্ত্রিক যৌথ পরিবারগুলিই ভারতীয় পরিবারতন্ত্রের
আদর্শ বলে বিবেচিত হয়। যদিও আজকাল নগরাঞ্চলগুলিতে ছোটো ছোটো নিউক্লিয়ার পরিবারের
উদ্ভব ঘটতে দেখা যায়। ভারতে বিবাহ আয়োজিত হয় পাত্র ও পাত্রীর
পিতামাতা ও অন্যান্য গুরুজনস্থানীয় আত্মীয়বর্গের সম্মতিক্রমে। আয়োজিত বিবাহ
ভারতে এক অতিমাত্রায় লক্ষিত বিবাহরীতি। বিবাহবন্ধন সারাজীবনের
বন্ধন বলে বিবেচিত হয়। তাই এদেশে বিবাহবিচ্ছেদের হারও অত্যন্ত কম। ভারতে
বাল্যবিবাহ প্রথা আজও প্রচলিত যদিও বাল্যবিবাহের হার ক্রমহাসমান। ইউনিসেফের
স্যাম্পেল সার্ভে এবং ভারতের জনগণনা অনুযায়ী ২০০৬-এ যেখানে ৪৭% নারীর বিবাহ হত ১৮
বছর বয়সের আগে,২০১৬ সালে সেই সংখ্যা ২৭%।
বিজ্ঞান
ও প্রযুক্তি
যন্তর-মন্তর,দিল্লি
উনিশ শতকের প্রথম ভাগে
অঙ্কিত প্রতিচিত্র
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিক্ষেত্রে অতি প্রাচীন কাল থেকেই ভারত
তার নিজস্ব স্বাক্ষর রেখে এসেছে। খ্রিষ্টীয় তৃতীয় শতকে ভারতীয় ধাতুবিদগণ দিল্লির লৌহস্তম্ভটি নির্মাণ
করেন। বেদাঙ্গ জ্যোতিষ গ্রন্থে
সেযুগের মহাকাশ পর্যবেক্ষণের বিস্তারিত বিবরণ পাওয়া যায়। কোপারনিকাসের সূর্যকেন্দ্রিকতাবাদ প্রস্তাবনার
১০০০ বছর আগেই ভারতীয় গণিতবিদ তথা জ্যোতির্বিদ আর্যভট্ট প্রাচীন
বিশ্বধারণার ভ্রান্ততা প্রমাণ করেছিলেন। প্রাচীন বিশ্বে একমাত্র ভারতেই গড়ে
উঠেছিল হীরের খনি। ভারতীয় গণিতজ্ঞ শ্রীনিবাস রামানুজন সর্বকালের
সর্বশ্রেষ্ঠ গণিতবিদদের অন্যতম বলে বিবেচিত হন। ১৯২৮ সালে পদার্থবিদ্যায় নোবেল
পুরস্কারে ভূষিত হন ভারতীয় পদার্থবিদ চন্দ্রশেখর ভেঙ্কট রমন।
বেঙ্গালুরুতে ইনফোসিস
গণমাধ্যম কেন্দ্র
স্বাধীনোত্তর ভারতকে একটি দরিদ্র রাষ্ট্র বলে বিবেচনা করা
হলেও,স্বাধীনতা
অর্জনের পাঁচ দশকের মধ্যেই এই দেশ প্রযুক্তিগতভাবে দক্ষিণ এশিয়ার এক মহাশক্তিধর
রাষ্ট্রে পরিণত হয়। সাক্ষরতার হার ও কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি এবং নগরকেন্দ্রের উদ্ভব ভারতের এই
প্রযুক্তিগত উত্থানের কারণ। ১৯৭৫ সালে প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ আর্যভট্টের উৎক্ষেপণ,তার পূর্ববর্তী বছরে স্মাইলিং বুদ্ধ নামে
এক ভূগর্ভস্থ পারমাণবিক পরীক্ষণ, দূরসংযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন,পারমানবিক চুল্লি ও হোমি জাহাঙ্গির ভাবা পরিচালিত বিএআরসি-এর মতো গবেষণা
কেন্দ্রের বিকাশ ভারতের উল্লেখযোগ্য বৈজ্ঞানিক সাফল্য বলে বিবেচিত হয়। লো-আর্থ,মেরু ও জিওস্টেশনারি কক্ষপথে
উপগ্রহ উৎক্ষেপণের এক দেশীয় প্রযুক্তি
উদ্ভাবন করে ভারত। এএসএলভি,পিএসএলভি,জিএসএলভি ও সর্বোপরি ইনস্যাট কৃত্রিম
উপগ্রহ সিরিজগুলি ভারতের সফল মহাকাশ-কর্মসূচির স্বাক্ষর। ২০০৮ সালে চাঁদের মাটিতে
অবতীর্ণ হয় প্রথম ভারতীয় মহাকাশযান চন্দ্রযান-১। চন্দ্রযানের পাঠানো তথ্য থেকে নাসার তত্ত্বাবধানে
ব্রাউন ইউনিভার্সিটিতে মুন মিনারেলজি ম্যাপার যন্ত্রে বিস্ময়করভাবে প্রভূত পরিমাণ
হাইড্রক্সিল আয়ন এবং বরফের অস্তিত্ব ধরা পড়েছে। দেশীয় বিমানশক্তির
ক্ষেত্রে বৈকল্পিক শক্তি হিসেবে অ্যাডভান্সড লাইট হেলিকপ্টার ও এলসিএ তেজস-এর নাম
করা যায়। লারসেন অ্যান্ড টাব্রো,ডিএফএল-এর মতো কোম্পানিগুলির সাহায্যে
আবাসন ও পরিকাঠামো শিল্পেও ভারত আজ উল্লেখযোগ্যভাবে অগ্রসর।
২০০৩ সালে সেন্টার ফর ডেভেলপমেন্ট অফ অ্যাডভান্সড কম্পিউটিং
তৈরি করে ভারতের প্রথম সুপার কম্পিউটার পরম পদ্ম। এটি
পৃথিবীর দ্রুততম সুপারকম্পিউটারগুলির অন্যতম। ১৯৯০-এর দশকে অর্থনৈতিক উদারীকরণ এবং তথ্য প্রযুক্তি বিপ্লব
তথ্যপ্রযুক্তির দুনিয়ায় এক অগ্রণী রাষ্ট্র হিসেবে ভারতকে বিশ্বের মঞ্চে
উপস্থাপিত করে। বর্তমানে আই বি এম,মাইক্রোসফট,সিসকো সিস্টেমস, ইনফোসিস,টাটা কনসালটেন্সি সার্ভিস,উইপ্রো ও অন্যান্য নেতৃস্থানীয় ভারতীয় ও আন্তর্জাতিক কোম্পানিগুলি
ভারতের বেঙ্গালুরু,হায়দ্রাবাদ,চেন্নাই প্রভৃতি
শহরে তাদের প্রধান কার্যালয় স্থাপন করেছে।
খেলাধূলা
বার্লিন অলিম্পিকে সোনা জয়ী ভারতীয় হকি দল
কলকাতার বিবেকানন্দ
যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গন বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম ফুটবল মাঠ
ভারতের জাতীয় খেলা কাবাডি। কাবাডি বিশ্বকাপে ভারত জয়ের
হ্যাটট্রিকও করেছে। ইন্ডিয়ান হকি ফেডারেশনের উপর এদেশের হকি পরিচালনার দায়িত্ব ন্যাস্ত। ভারতীয় হকি দল ১৯৭৫ সালের পুরুষদের হকি বিশ্বকাপ এবং পুরুষদের অলিম্পিক গেমসে
পাঁচবার স্বর্ণপদক বিজয়ী। ফুটবল খেলা ভারতে জনপ্রিয়। ২০১৮-তে কলকাতার বিবেকানন্দ
যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে প্রথম অনূর্ধ্ব ১৭ যুব বিশ্বকাপ ফুটবলের ফাইনাল খেলায়
ইংল্যান্ড বিজয়ী হয়। আয়োজক দেশ হিসেবে ভারত খেলতে পেয়েও উল্লেখযোগ্য ফল
পায়নি। ভারতের ফুটবল প্রতিযোগিতাগুলো হল: জাতীয় ফুটবল সন্তোষ ট্রফি,আইএফএ শিল্ড,ফেডারেশন কাপ,নেহরু কাপ,ডুরান্ড কাপ এবং ইন্ডিয়ান সুপার লিগ। ভারতে ফুটবল খেলা পরিচালনা করে অল ইন্ডিয়া ফুটবল
ফেডারেশন (এআইএফএফ)। যদিও ভারতে সর্বাধিক জনপ্রিয়
খেলা হল ক্রিকেট। ভারতীয় জাতীয় ক্রিকেট দল ১৯৮৩
সালের ক্রিকেট বিশ্বকাপ,২০০৭ সালের আইসিসি বিশ্ব
টোয়েন্টি-২০ এবং ২০১১ সালের ক্রিকেট বিশ্বকাপ বিজয়ী।
এছাড়াও ২০০৩ সালে ক্রিকেট বিশ্বকাপ ও ২০১৪ সালে আইসিসি বিশ্ব টোয়েন্টি-২০ তে
ফাইনালে পরাজিত হয়। ভারতে ক্রিকেট পরিচালিত হয় বোর্ড অফ কন্ট্রোল ফর ক্রিকেট ইন ইন্ডিয়া (বিসিসিআই)
কর্তৃক। ভারতের ঘরোয়া ক্রিকেট প্রতিযোগিতাগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য রঞ্জি ট্রফি,দলীপ ট্রফি,দেওধর ট্রফি,ইরানি ট্রফি ও
চ্যালেঞ্জার সিরিজ। ভারতের জাতীয় দলের ক্রিকেটাররা দেশে প্রভূত জনপ্রিয়তা ও
নানাবিধ বিশ্বরেকর্ডের অধিকারী।
ভারতীয় দলের ডেভিস কাপ বিজয়ের পর থেকে ভারতে টেনিসের জনপ্রিয়তা
বৃদ্ধি পায়। অন্যদিকে ফুটবল পশ্চিমবঙ্গ,উত্তর-পূর্ব ভারত,গোয়া ও কেরলে বেশ
জনপ্রিয়। ভারত জাতীয় ফুটবল দল বহুবার সাউথ এশিয়ান ফুটবল
ফেডারেশন কাপ জিতেছে। ভারত ১৯৫১ ও ১৯৮২ সালে এশিয়ান গেমস আয়োজন
করেছিল। এছাড়াও ভারত ছিল ১৯৮৭ ও ১৯৯৬ সালের ক্রিকেট বিশ্বকাপের সহ-আয়োজক দেশ ছিল; ভারত ২০১১ সালের ক্রিকেট
বিশ্বকাপের সহ-আয়োজক দেশ। দাবা খেলার
উদ্ভবও হয়েছিল ভারতে। দেশে গ্রান্ডমাস্টার দাবাড়ুর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় আজ
দাবা ভারতের অন্যতম জনপ্রিয় একটি খেলা। এছাড়াও দেশের অন্যান্য
ঐতিহ্যবাহী জনপ্রিয় খেলা হল কাবাডি, খো খো ও গুলি ডান্ডা ইত্যাদি। ভারতে প্রাচীন যোগব্যায়াম এবং বিভিন্ন ভারতীয়
মার্শাল আর্ট,কালারিপ্পায়াত্তু,বার্মা
কলাই ইত্যাদি আজও জনপ্রিয়। ভারতের সর্বোচ্চ অসামরিক ক্রীড়া পুরস্কার হল রাজীব গান্ধী খেলরত্ন ও অর্জুন পুরস্কার (খেলোয়াড়দের
জন্য) এব দ্রোণাচার্য পুরস্কার (কোচিং-এর জন্য)।
তথ্যসূত্র
· https://bn.wikipedia.org
No comments:
Post a Comment