বই: ফঞ্চিতো ইয়ে লা লুনা/ চাঁদের দেশে ফাঞ্চিতো, লেখক: মারিও বার্গাস ইয়োসা, অলঙ্করণ: মার্তা চিচত জুইজ, প্রকাশক: আলফাগুয়ারা ইনিফানটিল-মেক্সিকো, প্রকাশকাল: ২০১০, শিশুদের নিয়ে এটিই লেখকের প্রথম বই।
দক্ষিণ আমেরিকার একটি দেশ পেরু,তার রাজধানী লিমা।সেই লিমা শহরের এক স্কুলে পড়াশোনা করে ফঞ্চিতো।
ফঞ্চিতো যে স্কুলের ছাত্র সেই স্কুলে পড়ে অসম্ভব সুন্দরী এক মেয়ে,তার নাম নেরিদা।একসঙ্গে পড়াশোনা করে ফঞ্চিতো আর নেরিদা।
একদিন ফঞ্চিতো পড়লো ভারি মিষ্টি এক বিপদে।বিপদ আবার মিষ্টি হয় নাকি!কখনও কখনও হয় হয়তো।ফঞ্চিতোর বিপদটা ছিলো তেমনই মিষ্টি।এখন তার বিপদটা কী জানতে চাও? তাহলে শোনো।
ফঞ্চিতো তার সুন্দরী ক্লাসমেট নেরিদার প্রেমে পড়ে গেছে।এখন এই ভালোবাসার কথা সে কীভাবে নেরিদাকে বলবে?
আচ্ছা যাই হোক,ফঞ্চিতো কিন্তু মোটেও ভীতু টাইপের ছেলে নয়,মেয়েদের সঙ্গে কথা বলতে তার একটুও হাত-পা কাঁপে না,সে যতই সুন্দরীই হোক না কেনো।
একদিন দুদিনের চেষ্টায় একদিন ফঞ্চিতো ঠিকই নেরিদার সামনে গেলো।নেরিদা তখন স্কুলের মাঠে বেঞ্চিতে বসে তার বান্ধবীদের সঙ্গে গল্প করছিলো।
নেরিদা তার কাছে গিয়ে হরহর করে সব বলে দিলো।জানিয়ে দিলো তার ভালোবাসার কথা।
কিন্তু যেমন তেমন নয় সেসব কথা, তোমরা হয়তো ভাবছো ফঞ্চিতো নেরিদার সামনে রোবটের মতো দাঁড়িয়ে বলেছে,‘নেরিদা, আমি তোমাকে ভালোবাসি,’আর তা শোনে নেরিদার চোখ দুটো রাগে ফেটে পড়েছে।না,ঘটনা মোটেও এতো সাধারণ নয়।ফঞ্চিতো যে কথাটা বললো তা শোনে তোমরাও হয়তো লজ্জা পাবে।শোনো তাহলে কী বলেছে ফঞ্চিতো।
ফঞ্চিতো বলেছে,‘নেরিদা, আমি তোমার গালে একটা চুমু খেতে চাই’।
এই কথা শোনে নেরিদা মোটেও ঘাবড়ে যায়নি।সেও টপাটপ পাল্টা উত্তর দিয়েছে,‘আচ্ছা যাও, এক শর্তে আমাকে তুমি চুমো খেতে পারো’।কী সেই শর্ত?ফঞ্চিতো জিজ্ঞেস করলো।নেরিদা বললো,‘আকাশের ওই চাঁদটা আমাকে পেড়ে দিতে হবে’।
হায় খোদা,আকাশের চাঁদ কখনও পেড়ে আনা সম্ভব?আম গাছে উঠে আম পাড়া যায়,জাম গাছের জাম,লিচু পাড়া যায়,এমনিক ডাবও পাড়া যায়।কিন্তু চাঁদ এতো উঁচুতে থাকে তাকে কী করে পৃথিবীতে পেড়ে আনা সম্ভব!
এদিকে লিমার আকাশ সব সময়ই মেঘাচ্ছন্ন থাকে,রাতের বেলায়ও চাঁদটাকে স্পষ্ট দেখা যায় না।আমরা যখন ভাবছি এটা কোনোভাবেই সম্ভব নয়,ফঞ্চিতো ততোক্ষণে অনেক ভাবনা শুরু করে দিলো।হাল ছাড়ার পাত্র সে নয়।বাড়ি এসে সে আরও ভাবনা-চিন্তা করতে লাগলো।ভাবতে ভাবতে সে হেঁটে চলে গেলো বাগানে। বাগানে গিয়েই তার মাথায় এলো দারুণ এক বুদ্ধি।কী বুদ্ধি!শোনো তাহলে।
পরদিন স্কুলে গিয়ে নেরিদাকে ফঞ্চিতো জানালো তার শর্তে সে রাজি।কিন্তু এর জন্য একদিন রাতে ফঞ্চিতোকে নেরিদার বাড়িতে নিতে হবে।নেরিদা রাজি হয়ে গেলো,তার বাড়িতে যেতে আমন্ত্রণ জানালো ফঞ্চিতোকে।
সেদিন রাতে নেরিদার বাবা-মা দুজনই এক আত্মীয়ের বাসায় বেড়াতে গিয়েছিলেন,তাই বাসা ছিলো ফাঁকা।ফঞ্চিতো ও নেরিদা বাগানে গেলো।খোলা আকাশের নিচে এক বড় গামলায় পানি ঢালতে শুরু করলো ফঞ্চিতো,আর নেরিদাকে কাছে ডেকে নিয়ে সেই পানির দিকে তাকাতে বললো।
দেখে তো নেরিদা অবাক,ওমা!গামলার জলে টলটল করছে চাঁদ।খুশিতে নিজের গালটা ফঞ্চিতোর দিকে বাড়িয়ে দিলো নেরিদা,আর ফঞ্চিতোও তার পাওনা চুমুটা খেয়ে নিলো,চুকুস করে শব্দ হলো একটা, আমরা সে শব্দ শুনতে পেলাম।
No comments:
Post a Comment