আথেন্সের দুই রাজকণ্যা প্রক্নি ও
ফিলোমেলা। বড় বোন প্রক্নির বিয়ে হয় থ্রেস-এর রাজা টিরিউসের সঙ্গে। এই টিরিউস
ছিল যুদ্ধদেবতা অ্যারিসের পুত্র। পিতার সবগুলো বদস্বভাব বর্তেছিল
টিরিউসের পরিত্রে, তার মধ্যে লাম্পট্যই প্রধান।প্রক্নির
গর্ভে জন্ম নেয়
এক পুত্র, নাম আইটিস। শিশুটির যখন পাঁচ
বছর বয়ষ, তখন প্রকৃনি স্বামী টিরিউসকে অনুরোধ করে,
তার ছোট বোন ফিলোমেলাকে থ্রেস-এ নিয়ে আসার ব্যবস্থঅ করার জন্য।
টিরিউস রাজি হয়, এবং বলে যে, সে
নিজে আথেন্সে গিয়ে ফিলোমেলাকে সংঙ্গে নিয়ে আসবে। ফিলোমেলা ছিল জলপরীর মতো
অনিন্দ্যসুন্দরী: তাকে দেখেই প্রেমে পড়ে যায় টিরিউস। শ্বশুরের অনুমতি নিয়ে
ফিলোমেলাকে সাথে নিয়ে থ্রেসের উদ্দেশ্যে নেৌকা ভাসালো টিরিউস। ফিলোমেলাও খুব খুশি,
দীর্ঘদিন পর বড় বোনের সাথে দেখা হবে বেভে। সমুদ্র যাত্রা কাটল
ভালই, স্বদেশের বন্দরে ভিরেই নিজের মনে কুমতলব আটল
টিরিউস। সে মিথ্যা করে ফিলোমেলাকে বলে, আমার প্রসাদ থেকে
এক দূত এসে এই মাত্র আমাকে বলেছে যে তোমার বোন প্রক্নি বেচে নেই। এই কথা শুনে
ফিলোমেলা খুব কাঁদল। একপর্যায়ে মিথ্যো বিবাহের ভান করে ফিলোমেলাকে সম্ভোগ করল টিরিউস। কিন্তু
অচিরেই ফিলোমিলা বুঝতে
পারল সে, প্রতারণার শিকার হয়েছে। সে চিৎকার
করে বলতে লাগল- আপনার এই অন্যায় আমি পৃথিবীর সকল মানুষকে জানাব। নরকুলে আপনি হবেন
ব্রাত্য, কলঙ্কিত। এসব শুনে
যুগপৎ
ক্রুদ্ধ ও ভীত হল টিরিউস। সে ফিলোমেলাকে ধরে তার জিহবা কেটে দিল। তারপর এক নির্জন
বাড়িতে শক্ত প্রহরায় তারে রেখে টিরিউস চলল নিজের প্রসাদে। সেখানে পৌছে প্রকনিকে
বলল- তোমার বোন ফিলোমেলা জাহাজে মারা গিয়েছে।
ঘর বন্দি ফিলোমেলার অবস্থা শোচনীয়।
সে কথা বলতে পারে না, আর তখনকার দিনে
লেখাপড়াও ছিল অজানা। দুঃখিনী ফিলোমেলা দুঃখের কাহিনী মানুষকে জানানোর জন্য বেছে
নিল এক বুদ্ধি। যে ঘরে সে বন্দি চিল সেখানে ছিল একটি তাঁত এবং বস্ত্রবয়নের সুতা,
ফিলোমেলা সেই তাঁতে বসে কঠোর পরিশ্রম করে বুনতে লাগল এক দীর্ঘ
ট্যপেস্ট্রি, আর তাতে ফুটিয়ে তুলতে লাগল তার জীবনের
কাহিনী। সেখানে সুতার নকশায় ফুটে উঠল কী করে টিরিউসের হাতে ধর্ষিতা হয়েছে সে,
কী ভাবে কেটে দেয়া হয়েছে তার জিব। বয়ন শেষ হলে সেই অর্পূর্ব
সূচীকর্মটি বৃদ্ধা পরিচারিকার হতে তুলে দিয়ে বলল- এটি তোমার রাণীকে দিয়ে এসো।
এদিকে প্রাসাদে প্রক্নি তখনো কাঁদছে
তার প্রিয়তমা বোনটির জন্যে। দাসীর কাছ থেকে বস্ত্রখন্ডটি নিয়ে সেটি মেলে ধরল তার
চোখের সম্মুখে। এ কী ! বস্ত্রখন্ডে যাদের চেহারা ফুটিয়ে তোলা হয়েছে তার তা চেনা।
ঐতো ফিলোমেলা, চিনতে ভুলে হওয়ার
কোন কারণ নেই। টিরিউসেও চেনা যায় নিভুলভাবে। প্রক্নি পরিষ্কার বুঝতে পারল কী
ঘটেছে ফিলোমেলার ভাগ্যে। ক্রোধে ও দুঃখে পূর্ণ হলো তার হৃদয়; কিন্তু শোক করার সময় নয়। শাস্তি দিতে হবে দুর্বৃত্ত স্বামীকে। মনে
মনে কৌশল আটল প্রক্নি। প্রথমেই সে ঐ বৃদ্ধা দাসীর সাহায্য নিয়ে চলে এল ফিলোমেলা
যেখানে বন্দী সেই বাড়িতে। তাকে মুক্ত করে নিয়ে এল প্রাসাদে। বোনকে জড়িয়ে থরে
কাঁদতে লগল ফিলোমেলা। কিন্তু প্রক্নি বলল-কাঁদার সময় আমরা পরেও পাব। এখন
প্রতিশোধ নেবার সময়। সেই মুহুর্তে ঘরে ঢুকল প্রক্নি ও টিরিউসের সন্তান, পাঁচ বছরের পুত্র ইটিস। তাকে দেখেই জ্বলে উঠল প্রক্নির চোখ। ধীরে ধীরে
বলল সে, ঠিক তোর বাপের চেহার পেয়েছিস তুই। এর পর সে যা
করল গ্রীক মিথে কেবল আরকজন তা করেছিল। মিডিআ যেমন স্বামী জেসনের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ
নেয়ার জন্য নিজের সন্তানদের হত্যা করেছিল, প্রক্নিও তাই
করল। সে শিশু আইটিসকে হত্যা করে টুকরো টুকরো করে সেই মাংস রান্না করে স্বামী টিরিউসকে
খাওয়াল। টিরিউসের খাওয়া শেষ হলে সে তাকে বলল কীসের মাংস সে খেয়েছ।
এই ভয়াবহ কথা শুনে স্তম্ভিত হয়ে গেল
টিরিউস। কিছুক্ষণ সে নড়তে পারল না। এই সুযোগে পালাল দুই বোন। কিন্তু বেশিদুর যেতে
পারল না। ডাউলিস নামক স্থানে টিরিউস ধরে ফেলল তাদের। টিরিউস প্রক্নি আর
ফিলোমেলাকে হত্যা করতে উদ্যত হতেই দেবতারা তাদেরকে রূপান্তরিত করলেন দুটি পাখিতে।
প্রক্নি হলো একটি নাইটিঙ্গেল; ফিলোমেলা
একটি সোয়ালো পাখি। নাইটিঙ্গেল গান গায়, কিন্তু জিব্
কাটা বলে ফিলোমেলা অর্থাৎ সোয়ালে গান গাইতে পারে না।
শুধু কিচির মিচির করে নিজের দুঃখ জানায়। প্রক্নি তার সুকরুন ও সুমধুর গানের
মাধ্যমে জানায় সেই শিশুর করা যাকে সে নিষ্করুণভাবে হত্য করেছিল।
দুর্বৃত্ত টিরিউসকেও দেবতারা
রূপান্তরিত করেন একটি কুৎসিত পাখিতে । লোকে
বল সেই পাখিটি হলো বাজপাখি। নাইটিঙ্গেল আর সোয়ালোকে এখনো তাড়া করে সে।
No comments:
Post a Comment