Sunday, April 14, 2019

পহেলা বৈশাখ: আসুন জেনে নিই 'পহেলা বৈশাখ' সম্পর্কে

Bangla Golpo

পহেলা বৈশাখ/পয়লা বৈশাখ
ঢাকায় পহেলা বৈশাখ উদযাপন
আনুষ্ঠানিক নাম
পহেলা বৈশাখ
পালনকারী
বাঙালি জাতি
উদযাপন
হাল খাতা,বৈশাখী মেলা
পালন
বাংলাদেশ (১৪ এপ্রিল) 
ভারত ( ১৫ এপ্রিল)
সংঘটন
বার্ষিক

বঙ্গের সংস্কৃতি
বিষয় সম্পর্কিত ধারাবাহিক
ইতিহাস
জনগোষ্ঠী
·         বাঙালি জাতি
·         বাঙালিদের তালিকা
ভাষা
·         লিপি
উপভাষা
·         রাঢ়ী
·         বাঙ্গালি
·         বরেন্দ্রী
·         ঝাড়খণ্ডী
·         কামরূপী/রাজবংশী
·         শব্দতালিকা
ব্যাকরণ
·         সন্ধি
·         সমাস
·         প্রত্যয়
·         বিশেষণ
·         সর্বনাম
·         ক্রিয়ার কাল
·         ধাতু
·         কারক
·         বাংলা ভাষা আন্দোলন
·         বাংলা ভাষা আন্দোলন (বরাক উপত্যকা)
ভাষাতত্ত্ব
·         ধ্বনিতত্ত্ব
·         স্বরসংগতি
·         অভিশ্রুতি
·         ধ্বনিবিপর্যয়
·         দল
·         অপিনিহিতি
·         সমীভবন
বর্ণমালা
·         স্বরবর্ণ
·         ব্যঞ্জনবর্ণ
·         যুক্তাক্ষর
ঐতিহ্য
বাঙালি বিবাহ
·         বাঙালি হিন্দু বিবাহ
·         গায়ে হলুদ
·         ওয়ালিমা
·         ভদ্রলোক
·         ঘটকালি
·         ছাদনাতলা
·         সিন্দুরদান
·         পঞ্জিকা
রান্না
·         বাংলা খাবার
ধান
·         পান্তা ভাত
·         খিচুড়ি
·         বিরিয়ানি
·         পায়েস
রুটি
·         লুচি
·         বাকরখানি
·         পরোটা
মাছ
·         ইলিশ মাছের পাতুরী
·         চিংড়িমাছের মালাইকারী
·         রুইমাছের কালিয়া
·         চিতলমাছের মুইঠ্যা
·         মুড়িঘন্ট

মিষ্টান্ন

·         রসগোল্লা
·         সন্দেশ
·         ল্যাংচা
·         পান্তুয়া
·         জলভরা সন্দেশ
·         ছানার পায়েস
·         মিহিদানা
·         চমচম
·         মিষ্টি দই
·         সীতাভোগ
·         কমলাভোগ
·         ক্ষীরমালাই

খাবার
·         ফুচকা
·         ঘুগনি
·         সিঙ্গারা
·         ঝালমুড়ি
সস
·         রায়তা
·         কাসুন্দি
অনুষ্ঠান
·         পহেলা বৈশাখ
·         অমর একুশে গ্রন্থমেলা
·         নবান্ন
·         পুণ্যাহ
·         কলকাতা পুস্তকমেলা
·         পৌষমেলা
·         দুর্গাপূজা
শিল্প
·         বাংলা আর্ট স্কুল
·         কালিঘাট পটচিত্র
সাহিত্য

·         ইতিহাস
·         চর্যাপদ
·         মঙ্গলকাব্য
·         বৈষ্ণব পদাবলি
ধরণ
·         কবিতা
·         উপন্যাস
·         কল্পবিজ্ঞান সাহিত্য
·         লোক সাহিত্য
·         তরজা
প্রতিষ্ঠান
·         সাহিত্য প্রতিষ্ঠান
·         বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ
·         পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি
·         বাংলা একাডেমি
পুরস্কার
·         সাহিত্য পুরস্কার
·         রবীন্দ্র পুরস্কার
·         বাংলা একাডেমি পুরস্কার
·         আনন্দ পুরস্কার
খেলাধুলা
·         কাবাডি
·         বলীখেলা
·         লাঠি খেলা
·         চতুরঙ্গ
·         খো খো
 বঙ্গ প্রবেশদ্বার
পয়লা বৈশাখ বা পহেলা বৈশাখ (বাংলা পঞ্জিকার প্রথম মাস বৈশাখের ১ তারিখ) বঙ্গাব্দের প্রথম দিন,তথা বাংলা নববর্ষদিনটি সকল বাঙালী জাতির ঐতিহ্যবাহী বর্ষবরণের দিন। দিনটি বাংলাদেশ এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গে নববর্ষ হিসেবে বিশেষ উসবের সাথে পালিত হয়। ত্রিপুরায় বসবাসরত বাঙালিরাও এই উসবে অংশ নিয়ে থাকে। সে হিসেবে এটি বাঙালিদের একটি সর্বজনীন লোকউসব হিসাবে বিবেচিত।
গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জি অনুসারে বাংলাদেশের প্রতি বছর ১৪ই এপ্রিল এই উসব পালিত হয়। বাংলা একাডেমী কর্তৃক নির্ধারিত আধুনিক বাংলা পঞ্জিকা অনুসারে এই দিন নির্দিষ্ট করা হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে চান্দ্রসৌর বাংলা পঞ্জিকা অনুসারে ১৫ই এপ্রিল পহেলা বৈশাখ পালিত হয়। এছাড়াও দিনটি বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের সরকারি ছুটির দিন হিসেবে গৃহীত। বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যবসায়ীরা দিনটি নতুনভাবে ব্যবসা শুরু করার উপলক্ষ হিসেবে বরণ করে নেয়।
এই উসব শোভাযাত্রা,মেলা,পান্তাভাত খাওয়া,হালখাতা খোলা ইত্যাদি বিভিন্ন কর্মকান্ডের মধ্য দিয়ে উদযাপন করা হয়। বাংলা নববর্ষের ঐতিহ্যবাহী শুভেচ্ছা বাক্য হল "শুভ নববর্ষ"। নববর্ষের সময় বাংলাদেশে মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়। ২০১৬ সালে,ইউনেস্কো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক আয়োজিত এই উসব শোভাযাত্রাকে "মানবতার অমূল্য সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য" হিসেবে ঘোষণা করে।
বাংলা দিনপঞ্জীর সাথে হিজরী এবং খ্রিস্টীয় সনের মৌলিক পার্থক্য হলো হিজরী সন চাঁদের হিসাবে এবং খ্রিস্টীয় সন আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী নির্ধারিত হয়। এ কারণে হিজরী সনে নতুন তারিখ শুরু হয় সন্ধ্যায় আকাশে নতুন চাঁদ দৃশ্যমান হওয়ার পর আর খ্রিস্টীয় সনে নতুন দিন শুর হয় ইউটিসি±০০:০০ অনুযায়ী। পহেলা বৈশাখ রাত ১২ টা থেকে শুরু না সূর্যোদয় থেকে শুরু এ নিয়ে ভিন্নমত রয়েছে,ঐতিহ্যগত ভাবে সূর্যোদয় থেকে বাংলা দিন গণনার রীতি থাকলেও ১৪০২ সালের ১ বৈশাখ থেকে বাংলা একাডেমী এই নিয়ম বাতিল করে আন্তর্জাতিক রীতির সাথে সামঞ্জস্য রাখতে রাত ১২.০০টায় দিন গণনা শুরুর নিয়ম চালু করে।
                                                    মঙ্গল শোভাযাত্রা,ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়এলাকা
                                                              মঙ্গল শোভাযাত্রা,টিএসসি
                                                 বৈশাখী মেলা ঐতিহ্যবাহী বৈশাখী মেলার একটি স্টল
                                      ঢাকার ইসলামপুরের এক কাপড়ের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের হালখাতা অনুষ্ঠান
               পহেলা বৈশাখ বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে পান্তা ভাতের সাথে ইলিশ মাছ,বিভিন্ন ধরনের ভর্তা এবং কাচা মরিচ পরিবেশন
ইতিহাস
সৌর পঞ্জিকা অনুসারে বাংলা বার মাস অনেককাল আগে থেকেই পালিত হতো। এই সৌর পঞ্জিকার শুরু হতো গ্রেগরীয় পঞ্জিকায় এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি সময় হতে। সৌর বছরের প্রথম দিন আসাম,বঙ্গ,কেরল,মনিপুর,নেপাল,উড়িষ্যা,পাঞ্জাব,তামিল নাড়ু এবং ত্রিপুরার সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে অনেক আগে থেকেই পালিত হত। এখন যেমন নববর্ষ নতুন বছরের সূচনার নিমিত্তে পালিত একটি সর্বজনীন উসবে পরিণত হয়েছে,এক সময় এমনটি ছিল না। তখন নববর্ষ বা পহেলা বৈশাখ আর্তব উসব তথা ঋতুধর্মী উসব হিসেবে পালিত হত। তখন এর মূল তাপর্য ছিল কৃষিকাজ,কারণ প্রাযুক্তিক প্রয়োগের যুগ শুরু না হওয়া পর্যন্ত কৃষকদের ঋতুর উপরই নির্ভর করতে হত।
ভারতবর্ষে মুঘল সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার পর সম্রাটরা হিজরী পঞ্জিকা অনুসারে কৃষি পণ্যের খাজনা আদায় করত। কিন্তু হিজরি সন চাঁদের উপর নির্ভরশীল হওয়ায় তা কৃষি ফলনের সাথে মিলত না। এতে অসময়ে কৃষকদেরকে খাজনা পরিশোধ করতে বাধ্য করতে হত। খাজনা আদায়ে সুষ্ঠুতা প্রণয়নের লক্ষ্যে মুঘল সম্রাট আকবর বাংলা সনের প্রবর্তন করেন। তিনি মূলত প্রাচীন বর্ষপঞ্জিতে সংস্কার আনার আদেশ দেন। সম্রাটের আদেশ মতে তকালীন বাংলার বিখ্যাত জ্যোতির্বিজ্ঞানী ও চিন্তাবিদ ফতেহউল্লাহ সিরাজি সৌর সন এবং আরবি হিজরী সনের উপর ভিত্তি করে নতুন বাংলা সনের নিয়ম বিনির্মাণ করেন। ১৫৮৪ খ্রিস্টাব্দের ১০ই মার্চ বা ১১ই মার্চ থেকে বাংলা সন গণনা শুরু হয়। তবে এই গণনা পদ্ধতি কার্যকর করা হয় আকবরের সিংহাসন আরোহণের সময় (৫ই নভেম্বর,১৫৫৬) থেকে। প্রথমে এই সনের নাম ছিল ‘ফসলি সন,’পরে "বঙ্গাব্দ" বা বাংলা বর্ষ নামে পরিচিত হয়।
আকবরের সময়কাল থেকেই পহেলা বৈশাখ উদ্‌যাপন শুরু হয়। তখন প্রত্যেককে বাংলা চৈত্র মাসের শেষ দিনের মধ্যে সকল খাজনা,মাশুল ও শুল্ক পরিশোধ করতে বাধ্য থাকত। এর পর দিন অর্থা পহেলা বৈশাখে ভূমির মালিকরা নিজ নিজ অঞ্চলের অধিবাসীদেরকে মিষ্টান্ন দ্বারা আপ্যায়ন করতেন। এ উপলক্ষে বিভিন্ন উসবের আয়োজন করা হত। এই উসবটি একটি সামাজিক অনুষ্ঠানে পরিণত হয় যার রূপ পরিবর্তন হয়ে বর্তমানে এই পর্যায়ে এসেছে। তখনকার সময় এই দিনের প্রধান ঘটনা ছিল একটি হালখাতা তৈরি করা। হালখাতা বলতে একটি নতুন হিসাব বই বোঝানো হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে হালখাতা হল বাংলা সনের প্রথম দিনে দোকানপাটের হিসাব আনুষ্ঠানিকভাবে হালনাগাদ করার প্রক্রিয়া। গ্রাম,শহর বা বাণিজ্যিক এলাকা,সকল স্থানেই পুরনো বছরের হিসাব বই বন্ধ করে নতুন হিসাব বই খোলা হয়। হালখাতার দিনে দোকানদাররা তাদের ক্রেতাদের মিষ্টান্ন দিয়ে আপ্যায়ন করে থাকে। এই প্রথাটি এখনও অনেকাংশে প্রচলিত আছে,বিশেষত স্বর্ণের দোকানে।
আধুনিক নববর্ষ উদযাপনের খবর প্রথম পাওয়া যায় ১৯১৭ সালে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ব্রিটিশদের বিজয় কামনা করে সে বছর পহেলা বৈশাখে হোম কীর্তন ও পূজার ব্যবস্থা করা হয়। এরপর ১৯৩৮ সালেও অনুরূপ কর্মকান্ডের উল্লেখ পাওযা যায়। পরবর্তীকালে ১৯৬৭ সনের পূর্বে ঘটা করে পহেলা বৈশাখ পালনের রীতি তেমন একটা জনপ্রিয় হয় নি।
পহেলা বৈশাখ উদ্‌যাপন
বাংলাদেশ
নতুন বছরের উসবের সঙ্গে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর কৃষ্টি ও সংস্কৃতির নিবিড় যোগাযোগ। গ্রামে মানুষ ভোরে ঘুম থেকে ওঠে,নতুন জামাকাপড় পরে এবং আত্মীয়স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবের বাড়িতে বেড়াতে যায়। বাড়িঘর পরিষ্কার করা হয় এবং মোটামুটি সুন্দর করে সাজানো হয়। বিশেষ খাবারের ব্যবস্থাও থাকে। কয়েকটি গ্রামের মিলিত এলাকায়,কোন খোলা মাঠে আয়োজন করা হয় বৈশাখী মেলারমেলাতে থাকে নানা রকম কুটির শিল্পজাত সামগ্রীর বিপণন,থাকে নানারকম পিঠা পুলির আয়োজন। অনেক স্থানে ইলিশ মাছ দিয়ে পান্তা ভাত খাওয়ার ব্যবস্থা থাকে। এই দিনের একটি পুরনো সংস্কৃতি হলো গ্রামীণ ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আয়োজন। এর মধ্যে নৌকাবাইচ,লাঠি খেলা কিংবা কুস্তি একসময় প্রচলিত ছিল। বাংলাদেশে এরকম কুস্তির সবচেয়ে বড় আসরটি হয় ১২ বৈশাখ,চট্টগ্রামের লালদিঘী ময়দানে,যা জব্বারের বলি খেলা নামে পরিচিত।
মঙ্গল শোভাযাত্রা
ঢাকার বৈশাখী উসবের একটি আবশ্যিক অঙ্গ মঙ্গল শোভাযাত্রা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের উদ্যোগে পহেলা বৈশাখের সকালে এই শোভাযাত্রাটি বের হয়ে শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে পুনরায় চারুকলা ইনস্টিটিউটে এসে শেষ হয়। এই শোভাযাত্রায় গ্রামীণ জীবন এবং আবহমান বাংলাকে ফুটিয়ে তোলা হয়। শোভাযাত্রায় সকল শ্রেণী-পেশার বিভিন্ন বয়সের মানুষ অংশগ্রহণ করে। শোভাযাত্রার জন্য বানানো হয় বিভিন্ন রঙের মুখোশ ও বিভিন্ন প্রাণীর প্রতিকৃতি। ১৯৮৯ সাল থেকে এই মঙ্গল শোভাযাত্রা পহেলা বৈশাখ উসবের একটি অন্যতম আকর্ষণ হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।
ঢাকায় রমনার বটমূলে ছায়ানটের বর্ষবরণ ও মঙ্গল শোভাযাত্রা
বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় পহেলা বৈশাখের মূল অনুষ্ঠানের কেন্দ্রবিন্দু সাংস্কৃতিক সংগঠন ছায়ানটের সঙ্গীতানুষ্ঠানের মাধ্যমে নতুন বছরের সূর্যকে আহ্বান। পহেলা বৈশাখ সূর্যোদয়ের পর পর ছায়ানটের শিল্পীরা সম্মিলিত কণ্ঠে গান গেয়ে নতুন বছরকে আহ্বান জানান। স্থানটির পরিচিতি বটমূল হলেও প্রকৃতপক্ষে যে গাছের ছায়ায় মঞ্চ তৈরি হয় সেটি বট গাছ নয়, অশ্বত্থ গাছ। ১৯৬০-এর দশকে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর নিপীড়ন ও সাংস্কৃতিক সন্ত্রাসের প্রতিবাদে ১৯৬৭ সাল থেকে ছায়ানটের এই বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের সূচনা।
বউমেলা
ঈশা খাঁর সোনারগাঁওয়ে ব্যতিক্রমী এক মেলা বসে যার নাম বউমেলা, এটি স্থানীয়ভাবে "বটতলার মেলা" নামেও পরিচিত। জয়রামপুর গ্রামের মানুষের ধারণা, প্রায় ১০০ বছর ধরে পহেলা বৈশাখে শুরু হওয়া এই মেলা পাঁচ দিনব্যাপী চলে। প্রাচীন একটি বটবৃক্ষের নিচে এই মেলা বসে, যদিও সনাতন ধর্মাবলম্বীরা সিদ্ধেশ্বরী দেবীর পুজোর জন্য এখানে সমবেত হয়। বিশেষ করে কুমারী,নববধূ,এমনকি জননীরা পর্যন্ত তাঁদের মনস্কামনা পূরণের আশায় এই মেলায় এসে পূজা-অর্চনা করেন। সন্দেশ-মিষ্টি-ধান দূর্বার সঙ্গে মৌসুমি ফলমূল নিবেদন করে ভক্তরা। পাঁঠাবলির রেওয়াজও পুরনো। বদলে যাচ্ছে পুরনো অর্চনার পালা। এখন কপোত-কপোতি উড়িয়ে শান্তির বার্তা পেতে চায় ভক্তরা দেবীর কাছ থেকে।
ঘোড়ামেলা
এ ছাড়া সোনারগাঁ থানার পেরাব গ্রামের পাশে আরেকটি মেলার আয়োজন করা হয়। এটির নাম ঘোড়ামেলা। লোকমুখে প্রচলিত যামিনী সাধক নামের এক ব্যক্তি ঘোড়ায় করে এসে নববর্ষের এই দিনে সবাইকে প্রসাদ দিতেন এবং তিনি মারা যাওয়ার পর ওই স্থানেই তাঁর স্মৃতিস্তম্ভ বানানো হয়। প্রতিবছর পহেলা বৈশাখে স্মৃতিস্তম্ভে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা একটি করে মাটির ঘোড়া রাখে এবং এখানে মেলার আয়োজন করা হয়। এ কারণে লোকমুখে প্রচলিত মেলাটির নাম ঘোড়ামেলা। এ মেলার অন্যতম আকর্ষণ হচ্ছে নৌকায় খিচুড়ি রান্না করে রাখা হয় এবং আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা সবাই কলাপাতায় আনন্দের সঙ্গে তা ভোজন করে। সকাল থেকেই এ স্থানে লোকজনের আগমন ঘটতে থাকে। শিশু-কিশোররা সকাল থেকেই উদগ্রীব হয়ে থাকে মেলায় আসার জন্য। এক দিনের এ মেলাটি জমে ওঠে দুপুরের পর থেকে। হাজারো লোকের সমাগম ঘটে। যদিও সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কারণে এ মেলার আয়োজন করা হয়। তথাপি সব ধর্মের লোকজনেরই প্রাধান্য থাকে এ মেলায়। এ মেলায় শিশু-কিশোরদের ভিড় বেশি থাকে। মেলায় নাগরদোলা,পুতুল নাচ ও সার্কাসের আয়োজন করা হয়। নানারকম আনন্দ-উসব করে পশ্চিমের আকাশ যখন রক্তিম আলোয় সজ্জিত উসবে,যখন লোকজন অনেকটাই ক্লান্ত,তখনই এ মেলার ক্লান্তি দূর করার জন্য নতুন মাত্রায় যোগ হয় কীর্তন। এ কীর্তন হয় মধ্যরাত পর্যন্ত। এভাবেই শেষ হয় বৈশাখের এই ঐতিহ্যবাহী মেলা।
চট্টগ্রামে বর্ষবরণ
                                              চট্টগ্রামের ডিসি হিল প্রাঙ্গনে পহেলা বৈশাখ উদযাপন
বন্দরনগরী চট্টগ্রামে পহেলা বৈশাখের উসবের মূল কেন্দ্র ডিসি হিল পার্কসম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের আয়োজনে প্রতিবছর এখানে পুরনো বছরকে বিদায় ও নতুন বছরকে বরণ করার জন্য দুইদিনের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়ে থাকে। মুক্ত মঞ্চে নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পাশাপাশি থাকে নানা গ্রামীণ পন্যের পশরা। এছাড়াও থাকে পান্তা ইলিশের ব্যবস্থা।
চট্টগ্রামে সম্মিলিত ভাবে পহেলা বৈশাখ উদযাপনের উদ্যোগ ১৯৭৩,১৯৭৪ ও ১৯৭৫ সালে রাজনৈতিকগণের চেষ্টায় ইস্পাহানী পাহাড়ের পাদদেশে এই অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়। ১৯৭৮ সালে প্রথমবাবের মতো এই উসব এখনকার ডিসি হিল পার্কে সরিয়ে নেওযা হয়। প্রথম দিকে প্রত্যেক সংগঠন থেকে দুইজন করে নিয়ে একটি স্কোয়াড গঠন করা হত এবং সেই স্কোয়াডই সম্মিলিত সঙ্গীত পরিবেশন করতো। ১৯৮০ সাল থেকে সংগঠনগুলো আলাদাভাবে গান পরিবেশন শুরু করে। পরে গ্রুপ থিয়েটার সমন্বয় পরিষদ যুক্ত হওয়ার পর অনুষ্ঠানে নাটকও যুক্ত হয়েছে।
নগরীর অন্যান্য নিয়মিত আয়োজনের মধ্যে রয়েছে শিশু সংগঠন ফুলকীর তিনদিন ব্যাপী উসব যা শেষ হয় বৈশাখের প্রথম দিবসে। নগরীর বাংলাদেশ মহিলা সমিতি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে বর্ষবরণ মেলার আয়োজন হয়ে থাকে। এছাড়া কেন্দ্রিয় রেলওয়ে ভবন বা সিআরবি তে মুক্ত মঞ্চে আয়োজন হয়ে থাকে সঙ্গীতানুষ্ঠানের ।
চট্টগ্রাম চারুকলা ইনস্টিটিউটের বাদশা মিয়া রোডস্থ ক্যাম্পাসে বর্ষবরণকে কেন্দ্র করে হয়ে থাকে বণাঢ্য সাঙ্গস্কৃতিক অনুষ্ঠান।এবং এই অনুষ্ঠানে উঠে আসে,বাঙ্গালীর ঐতিহ্য,সংস্কৃতি,কৃষ্টি এবং একি সাথে আঞ্চলিক নানা বিষয় আশয় ও।চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়,চারুকলা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা প্রতিবছর এই অনুষ্ঠান আয়োজন করে আসছে ।
পার্বত্য জেলায়, আদিবাসীদের বর্ষবরণ
বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকার প্রধান তিনটি ক্ষুদ্র জাতিসত্তা রয়েছে যাদের প্রত্যেকেরই বছরের নতুন দিনে উসব আছে। ত্রিপুরাদের বৈসুক,মারমাদের সাংগ্রাই  চাকমাদের বিজু সব। বর্তমানে তিনটি জাতিসত্তা একত্রে এই উসবটি পালন করে। যৌথ এই উসবের নাম বৈসাবি উসবএই উসবের নানা দিক রয়েছে,এর মধ্যে একটি হলো মারমাদের পানি উসব।
পশ্চিমবঙ্গ
পশ্চিমবঙ্গে মহাসমারোহে সাড়ম্বরে উদযাপিত হয় বাংলা নববর্ষারম্ভ পয়লা বৈশাখ। বঙ্গাব্দের প্রথম দিনটিতে বিপুল উসাহ এবং উদ্দীপনার সাথে বর্ষবরণ অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়ে থাকে সমগ্র পশ্চিম বাংলায়। বাংলার গ্রামীণ এবং নাগরিক জীবনের মেলবন্ধন সাধিত হয়ে সকলে একসূত্রে বাঁধা পড়ে নতুন বছরকে স্বাগত জানানোর আনন্দে। সারা চৈত্র মাস জুড়েই চলতে থাকে বর্ষবরণের প্রস্তুতি। চৈত্র মাসের শেষ দিন অর্থা চৈত্র সংক্রান্তি বা মহাবিষুব সংক্রান্তির দিন পালিত হয় গাজন উসব উপলক্ষ্যে চড়ক পূজা অর্থা শিবের উপাসনা। এইদিনেই সূর্য মীন রাশি ত্যাগ করে মেষ রাশিতে প্রবেশ করে। এদিন গ্রামবাংলার বিভিন্ন অঞ্চলে আয়োজিত হয় চড়ক মেলাএই মেলায় অংশগ্রহণকারী সন্ন্যাসী বা ভক্তগণ বিভিন্ন শারীরিক কসর প্রদর্শন করে আরাধ্য দেবতার সন্তোষ প্রদানের চেষ্টা এবং সাধারণ মানুষের মনোরঞ্জন করে থাকেন।
এছাড়া, বহু পরিবারে বর্ষশেষের দিন টক এবং তিতা ব্যঞ্জন ভক্ষণ করে সম্পর্কের সকল তিক্ততা ও অম্লতা বর্জন করার প্রতীকী প্রথা একবিংশ শতাব্দীতেও বিদ্যমান। পরের দিন অর্থা পয়লা বৈশাখ প্রতিটি পরিবারে স্নান সেরে বয়ঃজ্যেষ্ঠদের প্রণাম করার রীতি বহুলপ্রচলিত। বাড়িতে বাড়িতে এবং সকল ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে চলে মিষ্টান্ন ভোজন। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলির অধিকাংশই এদিন থেকে তাদের ব্যবসায়িক হিসেবের নতুন খাতার উদ্বোধন করে, যার পোশাকি নাম হালখাতা এই উপলক্ষ্যে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলিতে মঙ্গলদাত্রী লক্ষ্মী ও সিদ্ধিদাতা গণেশের আরাধনা করা হয়। নতুন খাতায় মঙ্গলচিহ্ন স্বস্তিক আঁকা হয়ে থাকে।
গ্রামাঞ্চলে এবং কলকাতা শহরের উপকণ্ঠে বিভিন্ন মন্দির ও অন্যান্য প্রাঙ্গনে পয়লা বৈশাখ থেকে আরম্ভ হয় বৈশাখী মেলা। এই মেলা সমগ্র বৈশাখ মাস জুড়ে অনুষ্ঠিত হয়।
কলকাতা
ভারতের সাংস্কৃতিক রাজধানী কলকাতা পয়লা বৈশাখ উদযাপনে একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে। নববর্ষারম্ভ উপলক্ষে শহরের বিভিন্ন পাড়ার অলিতে গলিতে নানা সংগঠনের উদ্যোগে প্রভাতফেরি আয়োজিত হয়। বিগত বছরের চৈত্র মাসে শহরের অধিকাংশ দোকানে ক্রয়ের উপর দেওয়া হয়ে থাকে বিশেষ ছাড়, যার প্রচলিত কথ্য নাম 'চৈত্র সেল'। তাই পয়লা বৈশাখ উপলক্ষে এবং এই ছাড়ের সুবিধা গ্রহণ করতে অর্থনৈতিক অবস্থা নির্বিশেষে কলকাতার সমস্ত মানুষ একমাস ধরে নতুন জামাকাপড়, ইত্যাদি ক্রয় করে থাকে।
পয়লা বৈশাখের দিন উল্লেখযোগ্য ভিড় চোখে পড়ে কলকাতার বিখ্যাত কালীঘাট মন্দিরেসেখানে বিভিন্ন ব্যবসায়ী ভোর থেকে মন্ত্রপাঠপূর্বক গঙ্গাস্নান করে প্রতীক্ষা করে থাকেন দেবীকে পূজা নিবেদন করে হালখাতা আরম্ভ করার জন্য। ব্যবসায়ী ছাড়াও বহু গৃহস্থও পরিবারের মঙ্গল কামনা করে দেবীর আশীর্বাদ প্রার্থনা করতে কালীঘাটে গিয়ে থাকেন। এইদিন বাঙালির ঐতিহ্যবাহী পোশাক হিসাবে নতুন ধুতি-পাঞ্জাবি এবং শাড়ি পরার রেওয়াজ প্রচলিত।
অন্যান্য দেশে পহেলা বৈশাখ
বাংলাদেশ এবং ভারত ছাড়াও পৃথিবীর আরো নানান দেশে পহেলা বৈশাখ উদযাপিত হয়ে থাকে। মূলত প্রবাসী বাঙ্গালীরা সেসব দেশে পহেলা বৈশাখ উদযাপন করে থাকেন।
গ্যালারি
·        
                                           নববর্ষ উদযাপনের জন্য চারুকলা ইনস্টিটিউটের ছাত্রদের প্রস্তুতি

·        
                                                                নববর্ষ উদযাপন

·        
                                                                 নববর্ষ উদযাপন

·         ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠান,রমনা বটমূল

·        
                                                                  নববর্ষ উদযাপন

·        
                                                                   নববর্ষ উদযাপন
·        
                                                                  বৈশাখী মেলা

·        
                  সুইডেনের বাংলাদেশ শিক্ষার্থী সংস্থা আয়োজিত ১৪১৭ সালের পহেলা বৈশাখে বাংলাদেশি নাচের অনুষ্ঠান।
তথ্যসূত্র
1.   সিরাজুল ইসলাম, সম্পাদক (জানুয়ারি ২০০৩)। "পহেলা বৈশাখ"। [[বাংলাপিডিয়া]] (বাংলা ভাষায়)। ঢাকা: এশিয়াটিক সোসাইটি বাংলাদেশ আইএসবিএন 984-32-0576-6সংগ্রহের তারিখ এপ্রিল ১৪, ২০১৫
2.   হোসেন, মোছাব্বের (১৪ এপ্রিল ২০১৭)। "মঙ্গল শোভাযাত্রার বিশ্ব স্বীকৃতি এল যেভাবে" দৈনিক প্রথম আলোসংগ্রহের তারিখ ১৪ এপ্রিল ২০১৮
3.   "বাংলা বর্ষপঞ্জির জন্ম"
4.   মুহাম্মদ লুফুর হক (এপ্রিল ১৪, ২০০৮)। "প্রথম মহাযুদ্ধে বাংলা বর্ষবরণ"। দৈনিক প্রথম আলো ঢাকা
5.   নওয়াজেশ আহমদ। "রমনার বটমূলে জাতীয় উসবে"। দৈনিক প্রথম আলো ঢাকা
6.   সোনারগাঁয়ে বটমূলে তেল-পান এবং মাটি দিয়ে শুরু হয়েছে সপ্তাহব্যাপী বউমেলা" http://eventbd7.com ঢাকা২০১৬-০৩-১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করাসংগ্রহের তারিখ এপ্রিল ১৬, ২০১৫ 
7.  ফারজানা তুলি (এপ্রিল ১৪, ২০১২)। "ঘোড়ামেলা বউমেলা" দৈনিক কালের কণ্ঠ ঢাকাসংগ্রহের তারিখ এপ্রিল ১৪, ২০১২
8.  মোহাম্মদ খালেদ,সম্পাদক (নভেম্বর ১৯৯৫)। "পহেলা বৈশাখ উদযাপন পরিষদ"। হাজার বছরের চট্টগ্রাম (বাংলা ভাষায়)। চট্টগ্রাম: এম এ মালেক (দৈনিক আজাদী)পৃষ্ঠা ১৬২।
9.  "প্রবাসে বৈশাখী উসব এবং মিনি বাংলাদেশ" বাংলার বার্তাসংগ্রহের তারিখ ১৭ এপ্রিল ২০১৪

No comments:

Post a Comment