ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
|
|||||||||||||||||||||||||||||
|
|||||||||||||||||||||||||||||
|
|
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (সংক্ষেপে ঢাবি) ঢাকার শাহবাগে অবস্থিত বাংলাদেশের একটি
স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়; যা বহু-অনুষদভিত্তিক গবেষণা বিশ্ববিদ্যালয়
হিসেবে পরিচিত। ১৯২১ সালে
তদানীন্তন ব্রিটিশ ভারতে অক্সব্রিজ
শিক্ষা ব্যবস্থা অনুসরণে এটি স্থাপিত হয়। সূচনালগ্নে বিভিন্ন প্রথিতযশা
বৃত্তিধারী ও বিজ্ঞানীদের দ্বারা কঠোরভাবে মান নিয়ন্ত্রিত হবার প্রেক্ষাপটে এটি প্রাচ্যের
অক্সফোর্ড নামে স্বীকৃতি পায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের
একটি বিশেষত্ব হলো বাংলাদেশ স্বাধীন করতে এর বিশেষ অবদান ছিল। যেখানে দেশের সরকার
বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে সেখানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করতে
বিশেষ অবদান রেখেছিল।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকবৃন্দ সবচেয়ে বেশিসংখ্যক
বাংলাদেশ বিজ্ঞান একাডেমি পদক লাভ করেছেন। এছাড়াও,এটি বাংলাদেশের একমাত্র
বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে এশিয়াউইকের পক্ষ
থেকে শীর্ষ ১০০ বিশ্ববিদ্যালয়ে জায়গা করে নেয়।এটি এশিয়ার সেরা ১০০টি
বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ৬৪তম। এখানে প্রায় ৩৮,০০০ ছাত্র-ছাত্রী এবং ১,৮০৫ জন শিক্ষক রয়েছে৷
ইতিহাস
ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের তথা পূর্ব বাংলার
প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়। ১৯২১ সালের ১লা জুলাই এ বিশ্ববিদ্যালয়ের
শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়। পূর্ববঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ
অবদান হল একটি মুসলমান মধ্যবিত্ত সমাজ সৃষ্টি করা। এই মুসলিম মধ্যবিত্ত সমাজই
পরবর্তীকালে পূর্ব বঙ্গের সমাজ ব্যবস্থা পরিবর্তনে নেতৃত্ব দান করে। বঙ্গভঙ্গের সময় থেকে পূর্ব বঙ্গে
মুসলিম সমাজে যে নবজাগরণ শুরু হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তারই ফল।
সূচনা
প্রতিষ্ঠার
প্রেক্ষাপট
ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয় কমিটি,১৯২১। বাম
থেকে ডানে উপবিষ্ট: মি.জি.ডব্লু কোচলার,ডক্টর রাসবিহারী ঘোষ,মি.আর নাথান,নওয়াব সিরাজুল ইসলাম। বাম
থেকে ডানে দন্ডায়মান: ডক্টর এস সি বিদ্যাভূষণ,মিস্টার সি ডব্লু পিক,মি.ডব্লু এ জে
ওর্চয়োল্ড,সামসুল ওলেমান এন এ ওয়াহেদ,বাবু লোহিত মোহন চ্যাটার্জী,বাবু আনন্দচন্দ্র
রায়,মাওলানা মোহাম্মদ আলী,মি.ডি.এস.ফ্রেসার। (ছবিটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের
বিশ্ববিদ্যালয় দিবস, ২০০৭ উপলক্ষে প্রকাশনা শাশ্বতী থেকে নেয়া।)
১৯০৫ সালের অক্টোবর ১৬ বঙ্গভঙ্গে ঢাকাকে রাজধানী করে নতুন ‘পূর্ব বাংলা’ ও ‘আসাম’ প্রদেশ সৃষ্টি করা হয়। বঙ্গভঙ্গের ফলে
পূর্ব বাংলায় শিক্ষার সবচেয়ে উন্নতি ঘটে। কিন্তু ১৯১১ সালের ১ নভেম্বর দিল্লির দরবারে ঘোষণার মাধ্যমে ১২ ডিসেম্বর বঙ্গভঙ্গ রদ করা হয়।
বঙ্গভঙ্গের ফলে পূর্ব বঙ্গে শিক্ষার যে জোয়ার এসেছিল,তাতে অচিরেই
ঢাকাতে একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা অবধারিত ছিল। বঙ্গভঙ্গ রদের ফলে সে সম্ভবনা
শেষ হয়ে যায়। ১৯১২ সালের ২১ জানুয়ারি ভারতের ভাইসরয় লর্ড হার্ডিঞ্জ ঢাকা সফরে আসেন এবং
ঘোষণা করেন যে, তিনি সরকারের কাছে ঢাকায় একটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের সুপারিশ করবেন। ১৯১২ সনের মে মাসে ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ব্যারিস্টার রবার্ট
নাথানের নেতৃত্বে নাথান
কমিটি গঠন করা হয়। এ কমিটির ২৫ টি সাবকমিটির রিপোর্টের ভিত্তিতে ভারত সরকার প্রস্তাবিত ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য রুপরেখা স্থির করে। ভারত
সচিব ১৯১৩ সালে নাথান কমিটির
রিপোর্ট অনুমোদন দেন। কিন্তু,প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়ে গেলে,ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা পথে প্রতিবন্ধকতা দেখা দেয়। ১৯১৭ সালের মার্চ মাসে ইমপেরিয়াল লেজিসলেটিভ
কাউন্সিলে টাঙ্গাইলের ধনবাড়ীর নবাব সৈয়দ
নওয়াব আলী চৌধুরী সরকারের কাছে অবিলম্বে ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয় বিল পেশের আহ্ববান জানান। ১৯১৭সালে কলকাতা
বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর লর্ড চেমস্ফোর্ড কলকাতা
বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্যাসমূহ তদন্তের জন্য একটি কমিটি গঠন করেন। সেই কমিশনের উপরই
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে পরামর্শ দেবার দায়িত্ব প্রদান করা হয়। এই কমিশনের
প্রধান ছিলেন মাইকেল স্যাডলার। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কমিশন (স্যাডলার
কমিশন) ঢাকায় একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সুপারিশ করে। কিন্তু, এ কমিশন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে সরকারি বা স্টেট বিশ্ববিদ্যালয় করার
নাথান কমিটির প্রস্তাব সমর্থন করেনি। কিন্তু,ঢাকা কলেজের আইন বিভাগের সহঅধ্যক্ষ ড.নরেশচন্দ্র সেনগুপ্ত পূর্ণ স্বায়ত্বশাসনকে
বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল শক্তিরূপে অভিহিত করেন। একই কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও
অর্থনীতির অধ্যাপক টি সি উইলিয়ামস অর্থনৈতিক বিষয়ে ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্ন স্বাধীনতা দাবি করেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কমিশন ঢাকা
শহরের কলেজ গুলোর পরিবর্তে বিভিন্ন আবাসিক হলকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইউনিটরুপে
গন্য করার সুপারিশ করে। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় কাউন্সিল হাউসের পাঁচ মাইল
ব্যাসার্ধ এলাকাকে ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয়ের অওতাভুক্ত এলাকায় গন্য করার কথাও
বলা হয়। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কমিশন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে
তেরটি সুপারিশ করেছিল এবং কিছু রদবদল সহ তা ১৯২০ সালের ভারতীয় আইন
সভায় গৃহীত হয়। ভারতের তদানীন্তন গভর্ণর জেনারেল ১৯২০ সালের ২৩ মার্চ তাতে সম্মতি প্রদান
করেন। স্যাডলার কমিশনের অন্যতম সদস্য ছিলেন লন্ডন
বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক রেজিস্টার পি.জে.হার্টগ। তিনি ১৯২০ সালের ১ ডিসেম্বর ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ প্রাপ্ত হন। ১৯২১ সালের ১ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
আনুষ্ঠানিক ভাবের কার্যক্রম শুরু করে।
প্রতিবন্ধকতা
ভারতের ভাইসরয় লর্ড হার্ডিঞ্জ তার ঢাকা সফর শেষে কলকাতা
প্রত্যাবর্তন করলে ১৯১২ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি ড.রাশবিহারী ঘোষের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল তার সাথে
সাক্ষাৎ এবং ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের বিরোধিতামূলক একটি স্মারকলিপি
পেশ করেন।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
প্রতিষ্ঠার সবচেয়ে বিরোধী ছিলেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য স্যার আশুতোষ
মুখোপাধ্যায় আর রাজনীতিক সুরেন্দ্রনাথ ব্যানার্জী। ভারতের গভর্ণর জেনারেল
লর্ড হার্ডিঞ্জ স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের কাছে জানতে চেয়েছিলেন,কি মূল্যে
অর্থাৎ কিসের বিনিময়ে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের বিরোধিতা থেকে বিরত
থাকবেন? শেষ পর্যন্ত স্যার আশুতোষ
মুখোপাধ্যায় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য
চারটি নতুন অধ্যাপক পদ সৃষ্টির বিনিময়ে তার বিরোধিতার অবসান করেছিলেন। ড.রমেশচন্দ্র
মজুমদার তার আত্মস্মৃতিতে লিখেছিলেন ১৯১৯ সালের নতুন আইন
অনুসারে বাংলার শিক্ষামন্ত্রী প্রভাসচন্দ্র মিত্র শিক্ষকদের বেতন কমানোর
নির্দেশ দেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয প্রতিষ্ঠার সময় রিজার্ভ ফান্ডে পঞ্চাশ লক্ষ টাকা
ছিল। বাংলা সরকার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রদত্ত সরকারি ভবন বাবদ সেগুলো কেটে নেয়
এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য প্রতিবছর মাত্র পাঁচ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করে। ফলে
শিক্ষকদের বেতন কমিয়ে দিতে হয়।
ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সময় পূর্ব বঙ্গের
বিভিন্ন বিশিষ্ট ব্যক্তি ও শিক্ষাবিদ নানাপ্রকার প্রতিকুলতা অতিক্রম করতে বিশেষ
ভূমিকা পালন করেন। বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য ঢাকার নবাব নবাব স্যার
সলিমুল্লাহ। কিন্তু,হঠাৎ করে ১৯১৫ সালে নবাব
সলিমুল্লাহের মৃত্যু ঘটলে নবাব
সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরী শক্ত হাতে এই উদ্দ্যেগের হাল
ধরেন। অন্যান্যদের মধ্যে আবুল কাশেম
ফজলুল হক উল্লেখযোগ্য।
বিভিন্ন
বিভাগের শিক্ষক নিয়োগ ও প্রশাসন ব্যবস্থা
ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম উপাচার্য পি.জে.হার্টগ তার কার্যভার গ্রহণ
করেন। প্রস্তাবিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগে তাকে সাহায্য করেন মি.ডাব্লিউ হোরনেল,স্যার নীলরতন সরকার,স্যার আশুতোষ মুখপাধ্যায়,নবাব
স্যার শামসুল হুদা ও নবাবজাদা খান বাহাদুর কে
এম আফজাল। ১৯২১ সালে খান বাহাদুর নাজিরুদ্দীন আহমেদ প্রথম রেজিস্টার
হিসেবে নিযুক্ত হন। বিভিন্ন বিভাগে শিক্ষক নিয়োগে মোট দশটি সিলেকশন কমিটি গঠন করা
হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম লাইব্রেরিয়ান হিসেবে নিয়োগ পান ঢাকা কলেজে
সাবেক অধ্যক্ষ মি এফ সি টার্নার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের উপর বিশেষ
গুরুত্ব প্রদান করা হয়। ঢাকা সিনিয়র মাদ্রাসার অধ্যক্ষ শামসুল ওলামা আবু নছর ওয়াহিদ অস্থায়ীভাবে
ঐ বিভাগের প্রধান হন। তিনি একই সাথে ঢাকা মাদ্রাসার অধ্যক্ষের পদেও বহাল ছিলেন।
পরে ঐ পদে ১৯২৪ সালের ১ জুলাই ড.আবদুস সাত্তার
সিদ্দিকী যোগদান করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম স্বতন্ত্র সংস্কৃত ও বাংলা
বিভাগ খোলা হয়। এর আগে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা ছিলো ওরিয়েন্টাল ল্যাঙ্গুয়েজেস বিভাগের অন্তর্গত।
সংস্কৃত ও বাংলা বিভাগের প্রথম অধ্যাপক হিসেবে যোগদান করেন প্রখ্যাত প্রাচ্যবিদ্যা
বিশারদ, বাংলা সাহিত্যের প্রাচীনতম নিদর্শন ‘বৌদ্ধ গান
ও দোহা’র আবিষ্কারক কলকাতা সংস্কৃত কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ
মহামহোপাধ্যায় হরপ্রসাদ
শাস্ত্রী (সিআইই)। এ
বিভাগের লেকচারার হিসেবে যোগদেন ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের প্রথম কমপারেটিভ ফিললজি বা
তুলনামূলক ভাষাতত্ত্ব বিভাগের প্রথম ছাত্র ও এম এ রিসার্চ এসিসটেন্ট মুহম্মদ
শহীদুল্লাহ ও বিশিষ্ট লিপি বিশারদ শ্রী
রাধাগোবিন্দ বসাক। ইতিহাস বিভাগে যোগদান করেছিলেন ড.রমেশচন্দ্র
মজুমদার ও এ এফ রহমান। পদার্থবিদ্যা ও রসায়ন
বিভাগে উপমহাদেশের বিশিষ্ট বিজ্ঞানীদের নিয়োগ দেওয়া হয়। এদের মধ্যে সত্যেন্দ্রনাথ
বসু,সুরেন্দ্রনাথ ঘোষের নাম উল্লেখযোগ্য।
রসায়ন বিজ্ঞান বিভাগের প্রথম প্রধান ছিলেন ড.জ্ঞানচন্দ্র। অধ্যাপক নরেশচন্দ্র
সেনগুপ্ত প্রথম আইন বিভাগের প্রধান হিসেবে
নিয়োগ পান। ১৯২১ সালের ১জুলাই ২৮ জন কলা,১৭ জন বিজ্ঞান
এবং ১৫ জন আইনের শিক্ষক নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু হয়। ইংরেজি,
সংস্কৃত ও বাংলা,আরবি ও ইসলামিক
স্টাডিজ,ফার্সি ও উর্দু,ইতিহাস,অর্থনীতি ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান,দর্শন,অঙ্ক বা গণিত,পদার্থ বিজ্ঞান,রসায়ন আইন এবং শিক্ষা এই ১২ টি বিভাগ নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তার
ঐতিহাসিক যাত্রা শুরু করে। বিভিন্ন বিভাগের বিএ,বিএসসি ও
অনার্স এবং এমএ ক্লাসে মোট ৮৭৭ জন ছাত্র নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস শুরু
হয়। সকল ছাত্রকে কোন না কোন হলে আবাসিক বাস সংশ্লিষ্ট থাকতে হত। ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম তিন বছরের অনার্স চালু হয় যা কলকাতা
বিশ্ববিদ্যালয়ে চালু ছিল দুইবছরের।
নবাব
আলী চৌধুরী সিনেট ভবন,ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কোর্টের (বর্তমানে সিনেট) প্রথম বার্ষিক সভা
অনুষ্ঠিত হয় ১৯২১ সালের ১৭ আগস্ট অপরাহ্ন ৩.৩০ মিনিটে
কোর্ট হাউসে (পুরাতন গভর্ণর হাউস বা হাইকোর্ট ভবন)। প্রথম বার্ষিক অধিবেশনের
মুলতবি সভা বসে ১৮ আগস্ট ১৯২১ সালে। এ সভায় ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয় আইন বিবেচনা করা হয়। এই আইনের খসড়া বিশ্ববিদ্যালয় আনুষ্ঠানিক
ভাবে চালু হবার পূর্বেই রচনা করেছিলেন টার্নার, ল্যাংলি এবং জেনকিনস্ সাহেব।
কোর্টের এক বিশেষ সভায় (১০ সেপ্টেম্বর; ১৯২১) সভাপতিত্ব করেন উপাচার্য। এই সভায় ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয় “এক্সিকিউটিভ কাউন্সিল” (বর্তমানে সিন্ডিকেট) গঠিত হবার কথা ঘোষিত হয়। এর দুই দিন পর ১২ সেপ্টেম্বর ফিনান্স কমিটগঠন করা হয়। ১৯২১ সালে সেপ্টেম্বরে একাডেমিক কাউন্সিলের প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয়। ১৯২২ সালের ৭ মার্চ একাডেমিক কাউন্সিলের
এক সভায় বিশ্ববিদ্যালয় নির্বাচনী কেন্দ্র থেকে বেঙ্গল লেজিসলেটিভ
কাউন্সিলে একজন সদস্য নির্বাচনের ব্যবস্থার জন্য সরকারের কাছে প্রস্তাব রাখা
হয়। ১৯২৩ সালের ২৩ মার্চ একাডেমিক কাউন্সিল তিন
বছরের অনার্স কোর্সের প্রথম চূড়ান্ত পরীক্ষার তারিখ নির্ধারণ করে। ১৯২৩ সালের ১৭ আগস্ট একাডেমিক কাউন্সিলের
এক সভায় এ বিশ্ববিদ্যালয়ের মটো বা লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয় Truth
shall prevail অর্থাৎ সত্যের জয় সুনিশ্চিত।
ক্যাম্পাস
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে শুরু থেকেই সুপরিকল্পিত ভাবে একটি আবাসিক
বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে গড়ে তোলা হয়। অধুনালিপ্ত পূর্ববাংলা ও আসাম প্রদেশের
রাজধানীর জন্য ঐতিহাসিক বাগ-এ-পাতশাহীতে গড়ে উঠেছিলো
রমনীয় রমনা। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের
মনোলোভা দৃশ্যাবলী একদিকে যেমন ছিলো প্রগতিশীলতার ধারক,তেমনি
তারুণ্যের উন্মত্ততাকে যেনো হাতছানি দিয়েছিলো এক উদাত্ত আহবানে। বিশ্ববিদ্যালয়
ক্যাম্পাসকে কেন্দ্র করে তার পূর্ব পাশে অবস্থিত ঢাকা হল (বর্তমান শহীদুল্লাহ হল),লিটন হল,কার্জন হল,বিজ্ঞান ভবন সমূহ, ঢাকা হল এর পূর্ব পাশে বিরাট দীঘি,অপর পাশে
ফজলুল হক মুসলিম হল। বিশ্ববিদ্যালয় মাঠে প্রধান প্রবেশ পথ ছিলো ঢাকা হল (বর্তমান
শহীদুল্লাহ হল)-এর দিক থেকে,মাঠে ঢুকতেই ডানে
জিমনেসিয়াম আর বামে একটি পুকুর; বিশ্ববিদ্যালয় মাঠটি
ত্রিকোণাকৃতি এবং তাতে দুটি ফুটবল গ্রাউন্ড ছিলো। মাঠের উত্তর দক্ষিণ পূর্ব তিনদিক
দিয়েই বৃক্ষশোভিত রাজপথ প্রসারিত; বিশ্ববিদ্যালয় মাঠের
দক্ষিণদিকের রাস্তাটি ইউকেলিপটাস শোভিত,যে রাস্তাটি
মুসলিম হল পর্যন্ত সম্প্রসারিত এবং মুসলিম হলের সামনে শিরিষ বা রেইনট্রি জাতীয়
বৃক্ষ শোভিত; পুরাতন রেললাইনের সঙ্গে সমান্তরাল সাবেক পূর্ববাংলা ও আসাম সরকারের
সেক্রেটারিয়েট ভবন,সামনে ইউকেলিপটাস শোভিত প্রশস্ত
রাজপথ এবং বিশ্ববিদ্যালয় ময়দান। ঐ সেক্রেটারিয়েট ভবনের দোতলায় প্রথমে মুসলিম
হল এবং একতলায় বিজ্ঞান ছাড়া অন্যান্য বিভাগ বিশেষত কলা অনুষদের বিভাগ এবং
ক্লাশরুম প্রতিষ্ঠিত হয়। দ্বিতীয়
মহাযুদ্ধের সময় এ বিশাল ভবনটির পূর্বাংশ
ব্যতীত সবটুকুই সামরিক হাসপাতালে এবং দেশবিভাগের পূর্বে মেডিকেল কলেজে রূপান্তরিত
হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলার মাঠের উত্তর দিকে প্রবাহিত রাজপথের পাশে ছিলো দুটি কি
তিনটি বিরাট লাল ইটের দোতলা বাংলো,যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকেরাই বাস
করতেন। এ বাংলোগুলোর পেছনে রমনা রেসকোর্সের দিকে মুখ করে বর্ধমান হাউস ও তখন ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবাস এবং সংশ্লিষ্ট শিক্ষক নিবাস। দেশবিভাগের পরে যা
হয়েছিলো, পূর্ব বাংলার প্রধানমন্ত্রী প্রথমে খাজা নাজিমউদ্দিন এবং পরে নূরুল
আমীনের বাসভবন। ১৯৫৪ সালের সাধারণ
নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের জয়লাভের পর ১৯৫৭ সালে একুশ দফার এক দফা
অনুযায়ী বর্ধমান হাউস বাংলা একডেমিতে রূপান্তরিত হয়।
বিশ্ববিদ্যালয় মাঠের ভেতরে সে কালে একটি পুকুর (উত্তর পূর্বকোণে) ছাড়াও একটি
জঙ্গলাকীর্ণ পুরাতন কবরস্থান ছিলো,যা এখন নেই।
আবাসিক
পরিবেশ
১৯২১ সালের ১ জুলাই ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হয়েছিল ঢাকা হল (পরে শহীদুল্লাহ হল),জগন্নাথ হল এবং মুসলিম হল (পরে সলিমুল্লাহ
মুসলিম হল) নিয়ে।
হলগুলো শুধু ছাত্রাবাস রুপেই নয় সঙ্গে সঙ্গে ছাত্রদের শিক্ষা,সমাজ ও সাংস্কৃতিক জীবনে উপযুক্তভাবে গড়ে তোলার জন্য শিক্ষা ও অনুশীলন
কেন্দ্ররূপেও পরিকল্পিত হয়েছিল। পরিকল্পনায় ছিল,বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্যেক শিক্ষক কোন
না কোন হলের সঙ্গে যুক্ত থাকবেন,ছাত্রদের উপদেষ্টারুপে এবং অনুশীলনী ক্লাস
নিবেন। প্রত্যেকটি হলকে চারটি হাউসে বিভক্ত করা হয়েছিল চারশত ছাত্রের জন্য আর
প্রতি পঁচাত্তরজন ছাত্রের তত্ত্ববধানের জন্য একজন করে আবাসিক শিক্ষক বা হাউস
টিউটরের ব্যবস্থা ছিল। হিন্দু ছাত্রদের জন্য জগন্নাথ হল,মুসলমান ছাত্রদের জন্য সলিমুল্লাহ
মুসলিম হল আর সবধর্মের ছাত্রদের জন্য ঢাকা হল স্থাপিত হয়েছিল।
ঢাকা হলের প্রথম প্রভোস্ট ছিলেন ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ এফ.সি.সি.টার্নার। শুরুতে একমাত্র ঢাকা হলেরই নিজস্ব ভবনে ছিল; কার্জন হল মিলনায়তনটি তার
অধিকারভুক্ত ছিল সে কারণে একটি আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের শিক্ষা বহির্ভূত
সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে ঢাকা হল ছাত্র সংসদের ভূমিকা ছিল অগ্রগণ্য। দেশ
বিভাগের পর ঢাকা হলই ছিল প্রগতিশীল বামপন্থী ছাত্র আন্দোলনের সূতিকাগার, ১৯৬৯ সালের গণআন্দোলন মহান
গণঅভ্যুত্থানে পরিনত হয়েছিল ঢাকা হলের প্রগতিশীল ছাত্রনেতা আসাদুজ্জামানের
শাহাদাতের বিনিময়ে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শুধু মুসলিম ছাত্রদের জন্য স্থাপিত প্রথম হল “সলিমুল্লাহ
মুসলিম হল”। এ হলের প্রথম প্রোভস্ট
নিযুক্ত হন ইতিহাস বিভাগের রিডার স্যার এ এফ রাহমান। ১৯২৯ সালের ২২ আগস্ট বাংলার গভর্ণর ও ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর স্যার স্ট্যানলি জ্যাকসন ঢাকার প্রয়াত নবাব বাহাদুর
স্যার সলিমুল্লাহ্র নামানুসারে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘সলিমুল্লাহ
মুসলিম হলের’ এর ভিত্তি প্রস্থর স্থাপন করেন। ১৯৩১-৩২ শিক্ষাবর্ষে এর ভবন
নির্মাণের কাজ শেষ হয়।
জগন্নাথ হলের নামকরণ হয় ঢাকার
বলিয়াদির জমিদার কিশোরীলাল রায় চৌধুরীর দানে তার পিতা জগন্নাথ রায় চৌধুরীর
নামে। জগন্নাথ রায় চৌধুরীর নামেই ঢাকার জগন্নাথ কলেজের নামকরণ করা হয়েছিল। জগন্নাথ হলের প্রথম
প্রভোস্ট ছিলের আইন বিভাগের প্রথম অধ্যাপক নরেশচন্দ্র
সেনগুপ্ত। অধ্যাপক নরেশচন্দ্র সেনগুপ্তের উৎসাহে জগন্নাথ হলের প্রথম
বার্ষিক সাহিত্যপত্র ‘বাসন্তিকা’ ১৯২৩ সালের প্রথম প্রকাশিত
হয়। নরেশচন্দ্র সেনগুপ্তের পর প্রভোস্ট হন ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড.রমেশচন্দ্র মজুমদার।
প্রতিষ্ঠালগ্নে ঢাকা সমাজের রক্ষণশীলতার জন্য ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ছাত্রী ভর্তির ব্যাপারে
খুব দ্বিধান্বিত ছিলেন। কিন্তু কলকাতা বেথুন কলেজের গ্রাজুয়েট লীলা নাগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে
ভর্তির ব্যাপারে ছিলেন নাছোড়বান্দা। ১৯২১ সালে লীলা নাগ ইংরেজিতে এমএ ক্লাসে
ভর্তি হন এবং ১৯২৩ সালের এই
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম এমএ ডিগ্রিধারী হিসেবে বের হন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের
দ্বিতীয় ছাত্রী সুষমা সেনগুপ্তা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম মুসলিম ছাত্রী
ছিলেন গণিত বিভাগের ফজিলতুন্নেসা। ধীরে ধীরে ছাত্রীর
সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকলে ছাত্রী হোস্টেলের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। এই উদ্দেশে ১৯২৬ সালের ২৮ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৭
নং বাংলো ‘চামেরি হাউস’-এ (বর্তমানে সিরডাপ ভবন) প্রথম উইমেনস হাউস প্রতিষ্ঠা করা হয়।
উইমেনস হাউস মাত্র তিন জন ছাত্রী নিয়ে যাত্রা শুরু করে। মিসেস পি. নাগ এই হাউসের
হাউস টিউটর নিযুক্ত হন। ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত
উইমেনস হাউস চামেরি হাউসে ছিল পরে ১৯২৮ সালে তা ১০ নং বাংলোতে
(বর্তমানে এস্থানে বিজ্ঞান গ্রন্থাগার অবস্থিত) স্থানান্তরিত হয়। ঐ সময় চামেরি
বাংলোটিকে মুসলিম হলের এক্সটেনশন করা হয়। পরবর্তীকালে যে কোন বাংলোতেই হোক না কেন
তাকে “চামেরি হাউস” বলে ডাকা হত। ১৯৩৮ সালে মেয়েদের হোস্টেল
পুনরায় চামেরি হাউসে নিয়ে যাওয়া হয়।
১৯৪০ সালের ১ জুলাই অবিভক্ত বাংলার
তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী এ.কে.ফজলুক
হকের নামানুসারে “ফজলুল হক মুসলিম
হল” প্রতিষ্ঠিত হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ভবনের (বর্তমান ঢাকা মেডিকেল কলেজ) যে অংশে
সলিমুল্লাহ হলের বর্ধিতাংশ ছিল সেখানে ফজলুল হক হল যাত্রা শুরু করে। ১৯৪২ সালে বিশ্ববিদ্যালয়
কেন্দ্রীয় ভবনে সামরিক হাসপাতাল স্থাপিত হলে ১৯৪৩ সালে ফজলুল হক হল
বর্তমান অবস্থানে স্থানান্তরিত হয়,পূর্বে যা ছিল ঢাকা ইন্টারমেডিয়েট
কলেজ হোস্টেল। ড.মুহম্মদ
শহীদুল্লাহ ফজলুল হক হলের প্রথম প্রভোস্ট আর
প্রথম দুইজন হাউস টিউটর কাজী মোতাহার
হোসেন এবং আব্দুস সামাদ।
বিশের
দশক
ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয়ে রবীন্দ্রনাথ
ঠাকুর (একদম ডানে অধ্যাপক
রমেশচন্দ্র মজুমদার)
জগন্নাথ হলের বার্ষিক সাহিত্যপত্র বাসন্তিকার জন্য
কবির নিজ হাতে লেখা কবিতা 'এই কথাটি মনে
রেখ'
১৯২৬ সালের ফেব্রুয়ারি
মাসে ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয়ের আমন্ত্রনে রবীন্দ্রনাথ
ঠাকুর ঢাকা আসেন এবং কার্জন হলে ১০ ফেব্রুয়ারি দি মিনিং অফ আর্ট এবং ১৩ ফেব্রুয়ারি দি বিগ এ্যান্ড দি
কমপ্লেক্স বিষয়ে বক্তৃতা প্রদান করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম তিনটি হল
থেকে রবীন্দ্রনাথকে সংবর্ধণা জানানোর আয়োজন করা হয়েছিল। কিন্তু অসুস্থতার কারণে
রবীন্দ্রনাথ কেবল মুসলিম হলের সংবর্ধণা সভায় যোগদান করতে পেরেছিলেন। বাঙালি
মুসলমান সমাজে মুক্ত বুদ্ধির চর্চা তথা বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটে
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তথা মুসলিম হল থেকেই এবং তা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের
মাত্র কয়েক বছরের মধ্যেই। মুসলিম হল ইউনিয়নের কক্ষে ডঃ মুহম্মদ
শহীদুল্লাহর সভাপতিত্বে এক সভায় ১৯২৫ সালের ১৯ জ়ানুয়ারি মুসলিম
সাহিত্য সমাজ গঠিত হয়। এ প্রতিষ্ঠানের
প্রতিষ্ঠা ছিলেন অধ্যাপক আবুল হোসেন,তার সঙ্গে ছিলেন আবদুল কাদির,কাজী আবদুল ওদুদ,কাজী আনোয়ারুল কাদির,শামসুল হুদা,কাজী মোতাহার
হোসেন,আবুল ফজল প্রমুখ শিক্ষক ও
ছাত্র। এ প্রতিষ্ঠানের মূল মন্ত্র ছিল '"বুদ্ধির মুক্তি”। মুসলিম
সাহিত্য সমাজের মুখপাত্র ছিল 'শিখা' নামক বার্ষিকী। বিদ্রোহী কবি
কাজী নজরুল ইসলাম সাহিত্য সমাজের প্রথম বার্ষিক
সম্মেলনের উদ্বোধন করেন ১৯২৭ সালে। ১৯৩৬ সালে কথাসাহিত্যিক শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় মুসলিম সাহিত্য সমাজের
দশম ও শেষ অধিবেশনের সভাপতি ছিলেন।
"১৯২৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আমন্ত্রনে
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ঢাকা আসেন এবং কার্জন হলে ১০ ফেব্রুয়ারি দি মিনিং অফ আর্ট এবং
১৩ ফেব্রুয়ারি দি বিগ এ্যান্ড দি কমপ্লেক্স বিষয়ে বক্তৃতা প্রদান করেন। "
ত্রিশের
দশক
১৯৩৫-৩৬ সালে শ্রীমতী করুণাকণা গুপ্তা ইতিহাস বিভাগে ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম মহিলা শিক্ষিকা হিসেবে নিযুক্ত হন (প্রতিষ্ঠার ১৪ বছর পর)।
তিনি ঐ সময় ছাত্রী সংসদ গঠনের উদ্যোগ নিলেও পরে তিনি কলকাতা বেথুন
কলেজে চলে যান। এ সময় চারুপমা বসু ইংরেজি বিভাগের সহকারী
লেকচারার হিসেবে যোগদেন। তিনি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় মহিলা
অধ্যাপক। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী সংক্রান্ত যাবাতীয় দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ১৯৩৭ সালে প্রথম ছাত্রী
সংসদ গঠিত হয় এবং শ্রীমতী চারুপমা বসু তার সভাপতি, সরমা দত্ত মজুমদার এবং অনুভা সেন
যথাক্রমে সাধারণ সম্পাদক ও সাহিত্য সম্পাদক নির্বাচিত হন। এই ছাত্রী সংসদ “সূপর্ণা” নামে ম্যাগাজিন প্রকাশ করে।
ত্রিশের দশকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতি বছরই সমাবর্তন অনুষ্ঠিত
হয়। এই দশকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ছিলেন যথাক্রমে ডাব্লুউ. এ.জেনকিন্স্,জর্জ হ্যারি
ল্যাংলি,এ.এফ.রাহমান ও রমেশচন্দ্র
মজুমদার। এই দশকে প্রায় প্রতি বছরই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে
ছাত্রী সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকে। ১৯৩৬ সালের সমাবর্তনে স্যার
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর,স্যার আবদুর
রহিম,স্যার জগদীশ
চন্দ্র বসু,স্যার
প্রফুল্লচন্দ্র রায়,স্যার যদুনাথ
সরকার,স্যার মোহাম্মদ
ইকবাল এবং শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়কে সম্মানসূচক ডক্টরেট
ডিগ্রি দেওয়া হয়। ১৯৩৮ সালে ‘সংস্কৃত ও
বাংলা বিভাগ’ ভেঙ্গে দুইটি আলাদা ‘সংস্কৃত’ ও ‘বাংলা’
বিভাগ খোলা হয়। ১৯৪০ সালে ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ১,৫৬৯ আর ছাত্রী সংখ্যা ৯৬।
চল্লিশের
দশক
১৯৪০ এর মার্চে লাহোর প্রস্তাব উত্থাপনের পর মুসলমান
সমাজের ছাত্রদের মধ্যে পাকিস্তান আন্দোলন সাড়া জাগায়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুসলমান ছাত্রগণ এই প্রথম দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক আন্দোলনের
সাথে সক্রিয় ভাবে যুক্ত হয়। দেশ বিভাগের আগে ঢাকা শহর হিন্দুস্তান,পাকিস্তান এলাকায় বিভক্ত হয়ে
উঠে। ঢাকার হিন্দুরা কংগ্রেস,ফরওয়ার্ড ব্লক,আরএসপি,হিন্দু মহাসভার অনুগামী ছিল,কিছু কিছু
হিন্দু ছিল বামপন্থী। মুসলমান অধিবাসীদের কিছু ছিল মুসলিম লীগের সমর্থক আর বাকিরা শেরে বাংলা
এ.কে.ফজলুক হকের অনুসারী।
১৯৪৩ সালের ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের এক অনুষ্ঠানে সাজসজ্জার
প্রতিবাদের মুসলমান ছাত্ররা বিক্ষোভ প্রদর্শন করে ফলে হিন্দু ও মুসলমান ছাত্রদের
মধ্যে সাম্প্রদায়িক সংঘাত দেখা যায়। ১৯৪৩ সালের ২ ফেব্রুয়ারি এরকম এক দাঙ্গায়
ছুরিকাঘাতে নিহত হন 'পাক্ষিক পাকিস্তান' পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা
মুসলিম লীগ ও সাহিত্য সংসদের কর্মী নজির আহমেদ। বিশ্ববিদ্যালয়
প্রাঙ্গণের দক্ষিণ গেটের কাছাকাছি এক স্থানে মারামারি চলছিল। নজির আহমেদ সেটা
থামাতে গিয়ে নজির আহমেহ নিজেই আঘাত পান। তাকে মিটফোর্ড হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া
হয়। সন্ধ্যার দিকে তিনি মারা যান। কবি জসীমউদ্দীন হাসপাতালে সর্বক্ষণ
তার পাশে ছিলেন। এসময়ে আরও একজন মুসলমান ছাত্র মোতাহার হোসেন ক্যাম্পাসে
ছুরিকাবিদ্ধ হয়ে প্রাণ হারান।
দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময় ক্যাম্পাসের অধিকাংশ ভবন সেনাবাহিনীর
হুকুম দখলে চলে যায়। ফলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংকুচিত হয়ে পড়ে ঢাকা হল (বর্তমান শহীদুল্লাহ হল),ফজলুল হক হল এবং কার্জন হল এলাকার ভবনগুলোতে।
তেতাল্লিশের মন্বন্তরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রসংখ্যা সর্বনিন্ম
পর্যায়ে নেমে আসে। দুর্ভিক্ষ শেষ হয়,যুদ্ধ থামে কিন্তু সাম্প্রদায়িক শক্তির কালো
থাবা ধীরে ধীরে ভয়ঙ্কর হতে থাকে। ১৯৪৬ থেকে ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে কেন্দ্র করে প্রগতি লেখক সংঘের কর্মকান্ড বিকশিত হয়।
এ সংঘের সক্রিয় কর্মীদের মধ্যে ছিলেন মুনীর চৌধুরী,শামসুর রহমান খান,সুলতানুজ্জামান খান,অরবিন্দ সেন,মদনমোহন বসাক,কল্যান দাশগুপ্ত,আবদুল্লাহ
আল-মুতী শরফুদ্দিন প্রমুখ।
ভারত
বিভাগ ও চল্লিশের দশকের শেষ অংশ
আওয়ামী
মুসলিম লীগ
১৯৪৩ সালের শেষ দিকে
বঙ্গীয় প্রাদেশিক মুসলিম
লীগের কাউন্সিলে আবুল হাশিম সাধারণ সম্পাদক
নির্বাচিত হন। ১৯৪৪ সালে আবুল হাশিম ঢাকায়
আসেন এবং ১৫০ নং মোগলটুলীতে ৯ এপ্রিল শামসুল
হকের নেতৃত্বে মুসলিম লীগ কর্মী-শিবির স্থাপিত হয়। এই কর্মী শিবির
থেকেই পরবর্তীকালে পূর্ব পাকিস্তানের রাজনীতিতে বিরোধী দলের সূচনা হয়েছিল,জন্ম হয়েছিল ‘ছাত্রলীগ’ ও ‘আওয়ামী
মুসলিম লীগের’। এই কর্মী শিবিরের অধিকাংশ কর্মী
ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের। ১৯৪৬ নির্বাচনে মুসলিম লীগ
শতকরা ৯৭ ভাগ আসন গ্রহণ করেছিল। ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট নতুন রাষ্ট্র
পাকিস্তানের জন্ম হয়। কিন্তু,ধীরে ধীরে মুসলিম লীগ খাজা
নাজিমুদ্দিন,নুরুল আমিন ও ইউসুফ আলী চৌধুরীর পকেট প্রতিষ্ঠানে
পরিনত হয়। এর প্রতিবিধানের জন্য ১৯৪৮ সালের জানুয়ারিতে ১৫০
নং মোগলটুলিতে শামসুল হক,শেখ মুজিবুর
রহমান,খন্দকার
মোশতাক আহমেদ এক কর্মী সম্মেলন আহ্ববান করেন।
মূলত,এই সম্মেলনেই আওয়ামী
মুসলিম লীগের সূচনা হয়। সূচনা পর্বে যারা
নেতৃত্ব দেন তাদের অধিকাংশই ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র।
ভাষা
আন্দোলন
পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পূর্বেই আলিগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের ডা: জিয়াউদ্দিন
উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার প্রস্তাব করলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ড.শহীদুল্লাহ্ পাল্টা বাংলা ভাষার প্রস্তাব
দিয়েছিলেন। একই সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবুল কাসেমের নেতৃত্বে ‘তমুদ্দুন মজলিস’
পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষার দাবিতে প্রচারাভিযান শুরু করে।
পাকিস্তানের গনপরিষদে বাংলা ভাষার স্থান না হওয়ায় ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের
ছাত্র সমাজ প্রতিবাদ সভা,সাধারণ ধর্মঘট ও বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। ঐ দিন পুলিশ ছাত্রদের
বাধা দেয় এবং বহু ছাত্রকে গ্রেফতার করে। বন্দী নেতাদের মধ্যে ছিলেন শামসুল হক,শেখ মুজিবুর
রহমান,অলি আহাদ,শওকত আলি,কাজী
গোলাম মাহবুব প্রমুখ। এরপরও ছাত্র আন্দোলন চলতে থাকে। শেষ পর্যন্ত ১৫ মার্চ প্রধানমন্ত্রী খাজা
নাজিমুদ্দিন ছাত্রদের সাথে একটি চুক্তি পত্র
সাক্ষার করেন। এর চার দিন পর পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা মুহাম্মদ
আলী জিন্নাহ ঢাকা শহরে আসেন এবং ২১ মার্চ তারিখে ঢাকা ঘোড়দৌড়
ময়দানে এক বিরাট জনসভায় বক্তৃতা করেন এবং উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার
স্পষ্ট ঘোষণা দেন। মার্চ ২৪ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে
এক সমাবর্তন অনুষ্ঠানে জিন্নাহ ভাষণ দেন। এখানে তিনি
বলেন,
রাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রদেশের যোগাযোগের ভাষা হিসেবে একটি ভাষা থাকবে
এবং সে ভাষা হবে উর্দু অন্য কোন ভাষা নয়। কাজেই স্বাভাবিকভাবে রাষ্ট্রভাষা হবে
উর্দু,যা এই উপমহাদেশের লক্ষ লক্ষ মুসলমানের দ্বারা পুষ্ট হয়েছে,যা পাকিস্তানের এক থেকে অন্য প্রান্ত সকলেই বোঝে এবং সর্বোপরি যার
মধ্যে অন্য যে কোন প্রাদেশিক ভাষা থেকে অধিক ইসলামী সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্য বাস্তব
রুপ লাভ করেছে এবং যে ভাষা অন্যান্য ইসলামী দেশগুলিতে ব্যবহৃত ভাষার সর্বাপেক্ষা
কাছাকাছি
মার্চ ২৪ তারিখে রাষ্ট্রভাষা
কর্ম পরিষদের একটি প্রতিনিধিদল জিন্নাহ্র সাথে সাক্ষাৎ করেন ও বাংলাকে পাকিস্তানের
অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবি জানিয়ে একটি স্মারকলিপি পেশ করেন। এই প্রতিনিধিদলে ছিলেন শামসুল হক,কামরুদ্দিন আহমেদ,আবুল কাশেম,তাজউদ্দিন আহমেদ,মোহাম্মদ তোয়াহা,আজিজ আহমদ,অলি আহাদ,নঈমুদ্দিন আহমদ,শামসুল আলম এবং নজরুল ইসলাম। ১৯৪৮ সালের ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হলে এক সভায় পূর্ব পাকিস্তানের প্রথম সরকার বিরোধী
সংগঠন ‘পূর্ব পাকিস্তান মুসলীম ছাত্রলীগ’ গঠিত হয়।
১৯৪৮ এর ২৭ নভেম্বর পাকিস্তানের
প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলি খান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
খেলার মাঠে এক ছাত্র সভায় ভাষণ দেন। এই সভায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র ইউনিয়নেরতরফ থেকে বাংলা ভাষার দাবি পুনরায় উত্থাপন করা
হয়। কিন্তু লিয়াকত আলি খান কোন মন্তব্য করা থেকে
বিরত থাকেন।
ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয় নিম্ন কর্মচারী আন্দোলন
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিম্ন কর্মচারীদের দাবি-দাওয়া আদায়ের
উদ্দেশ্যে ১৯৪৮ সালের ৩ মার্চ থেকে ধর্মঘট শুরু হয়।
ছাত্ররা তাদের সমর্থন করেন এবং ৫ মার্চ পর্যন্ত ছাত্র ধর্মঘট
চালিয়ে যাবার সিদ্ধান্ত হয়। কর্তৃপক্ষের মৌখিক আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে ১০ মার্চ থেকে ধর্মঘট
প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়, কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ
অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দেয়। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ২৭
জন ছাত্রছাত্রীর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে। শেখ মুজিবুর
রহমানের শাস্তি হয় ১৫ টাকা জরিমানা। তিনি জরিমানা না দেওয়ায়
বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিস্কৃত হন। এই সময়ই শেখ মুজিব
গ্রেফতার হন এবং বায়ান্ন সালের ফেব্রুয়ারি মাসের আন্দোলনের সময় কারাগারে অনশন
ধর্মঘট করেন।
আরবি
হরফে বাংলা
১৯৪৮ সালে করাচীতে অনুষ্ঠিত নিখিল
পাকিস্তান শিক্ষক সম্মেলনে পাকিস্তানের শিক্ষামন্ত্রী ফজলুর রহমান ইসলামী আদর্শের
খাতিরে বাংলা ভাষার জন্য ‘আরবি হরফ’ গ্রহণের
প্রস্তাব উত্থাপন করেন। বাংলায় আরবি হরফ প্রচলনের জন্য ড. মুহম্মদ
শহীদুলাহ্কে নিয়োগ দেবার জন্য তাকে একটি পত্র
প্রেরণ করা হয়। ড. শহীদুল্লাহ এই প্রস্তাব প্রত্যাক্ষান করেন। ১৯৪৯ সালের ১১ ডিসেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
কলাভবন ও ইকবাল হলে ছাত্রদের প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়। পাকিস্তান সরকার এই
চেষ্টা কিছুদিন যাবৎ করলেও পরে সফল হতে পারেননি।
পঞ্চাশের
দশক
বায়ান্নর
ভাষা আন্দোলন
১৯৫২ সালের ২৬ জানুয়ারি পাকিস্তানের
প্রধানমন্ত্রী খাজা
নাজিমুদ্দিন ঢাকায় নিখিল
পাকিস্তান মুসলিম লীগের অধিবেশনে সভাপতির ভাষণে ঘোষণা
করেন উর্দুই হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা,তখন ঢাকায় ছাত্রসমাজ ফেটে পড়ে।
প্রতিবাদস্বরুপ ৩০ জানুয়ারি ঢাকায় ছাত্র ধর্মঘট
পালিত হয় এবং আতাউর রহমান
খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় আওয়ামী মুসলিম লীগ,যুবলীগ,ছাত্রলীগ,বিশ্ববিদ্যালয় সংগ্রাম পরিষদ, খিলাফতে রব্বানী পার্টির প্রতিনিধিদের নিয়ে ‘সর্বদলীয়
কর্মপরিষদ’ গঠিত হয়। ৪ ফেব্রুয়ারি পুনরায় ছাত্র ধর্মঘট
পালিত হয় এবং স্থির হয় ২১ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রভাষা দিবসরুপে
পালিত হবে। ২০ ফেব্রুয়ারি সন্ধায় নুরুল আমিন সরকার ঢাকায় ১৪৪ ধারা
জারি করে। নবাবপুরে আওয়ামী লীগ অফিসে আবুল হাশিমের সভাপতিত্বে ১৪৪ ধারা
না ভাঙ্গার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু,বিশ্ববিদ্যালয় সংগ্রাম পরিষদ ১৪৪ ধারা ভঙ্গ
করতে বদ্ধপরিকর ছিল। সংগ্রাম পরিষদের সভায় আবদুল মতিন,অলি আহাদ ও গোলাম মওলা ১৪৪ ধারা ভাঙ্গার
পক্ষে ভোট দেন। ছাত্ররা ১০ জনের অসংখ্য দলে বিভক্ত হয়ে শৃঙ্খলার সঙ্গে ১৪৪ ধারা
ভঙ্গের সিদ্ধান্ত নেয়। ২১ ফেব্রুয়ারি ছাত্ররা ১১৪ ধারা
ভাঙ্গা শুরু করলে ছাত্রদের সাথে পুলিশের খন্ডযুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। ও দিকে বিকাল
তিনটার দিকে আইন পরিষদে বাজেট অধিবেশন শুরু হবার কথাছিল। ছাত্ররা ভাষার দাবিতে
পরিষদ ভবনের দিকে যেতে শুরু করে,কিন্তু পুলিশ বাধা দেয় ও একপর্যায়ে গুলি বর্ষন
শুরু করে। প্রথম দফা গুলিতে রফিকউদ্দিন ও জব্বার নিহত হয়। দ্বিতীয়
দফা গুলিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবুল বরকত আহত হয় ও রাতে নিহত
হন।২২ ফেব্রুয়ারি ঢাকা মেডিকেল
কলেজ প্রাঙ্গনে গায়েবি জানাজা অনুষ্ঠিত হয় এবং ছাত্ররা এক বিরাট শোক
শোভাযাত্রা বের করে।হাইকোর্ট ও কার্জন হলের মাঝামাঝি রাস্তায়
পুলিশ ছাত্রদের বাধা দেয় এবং গুলি চালায়। এ সময় শফিউর রহমান ও রিকশাচালক আউয়াল
নিহত হন। ২৩ ফেব্রুয়ারি ছাত্ররা একটি শহীদ মিনার নির্মাণ করে। ২৪ ফেব্রুয়ারি সকালে অনানুষ্ঠানিক
ভাবে শহীদ শফিউর রহমানে পিতা আর ২৬ ফেব্রুয়ারি আবুল কালাম
শামসুদ্দিন আনুষ্ঠানিক ভাবে
শহীদ মিনারের উদ্বোধন করেছিলেন। ইতিমধ্যে পুলিশ নিরাপত্তা আইনে আবুল হাশিম,আবদুল
হামিদ খান ভাসানী,অধ্যাপক মুনীর
চৌধুরী,অধ্যাপক অজিতকুমার
গুহ,পুলিন
দে,অধ্যাপক পৃথ্বিশ
চক্রবর্তী,অলি আহাদ প্রমুখকে গ্রেফতার
করে। নুরুল আমিন সরকার ভাষা
আন্দোলনকারীদের ‘ভারতের চর’,‘হিন্দু’,‘কমিউনিস্ট’ ইত্যাদি আখ্যা দেয়।
বায়ান্ন
পরবর্তী পঞ্চাশ দশক
১৯৫৩ সালে ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল ইউনিয়নের বাৎসরিক নির্বাচলে ‘গনতান্ত্রিক
যুক্তফ্রন্ট’ গঠিত হয়। সেবারেই প্রথম মুসলিম লীগের অঙ্গ
ছাত্র সংগঠন ‘নিখিল পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের’ মনোনীত প্রার্থীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি হল ইউনিয়ন ও ডাকসর
নির্বাচলে ‘গনতান্ত্রিক যুক্তফ্রন্ট’ প্রার্থীদের নিকট শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয়। সরকার ১৯৫৫ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ‘শহীদ দিবস’
পালনে বাধা দেয়। সেদিন কেউ হতাহত না হলেও এত অধিক সংখ্যাক
ছাত্রছাত্রীকে গ্রেফতার করা হয়েছিল যে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থান সংকুলান না
হওয়ায় তাদের লালবাগ কেল্লায় অবস্থিত তদানিন্তন পুলিশ হেড কোয়ার্টারে তাবু
খাটিয়ে আটক করে রাখা হয়েছিল। ১৯৫৭ সাল থেকে কেন্দ্রীয়
শহীদ মিনার নির্মাণ শুরু হয় যা শেষ হয় ১৯৬৩ সালে। সার্বিক
তত্ত্বাবধায়ন করেছিল ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড.মাহমুদ হোসেনের
নেতৃত্বে গঠিত কমিটি।
পঞ্চাশ
দশকে সমাবর্তন
১৯৫০ সালের ২৩ ডিসেম্বর সমাবর্তন অনুষ্ঠানে
ভাষণ দেন উপাচার্য ড. সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন। এই দশকে ১৯৫০,৫২,৫৪,৫৫,৫৭, ৫৮,৫৯ সালে মোট সাতটি সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৫২ সালের সমাবর্তনের
তারিখ নির্দিষ্ট ছিল ২৪ ফেব্রুয়ারি,কিন্তু ২১ ফেব্রুয়ারির ঘটনায় তা হতে পারেনি।
সে বছর ১৭ ডিসেম্বর সমাবর্তন অনুষ্ঠিত
হয়।
ষাটের
দশক
১৯৬১ সালে পূর্ব পাকিস্তানে
রবীন্দ্র জন্মশতবার্ষিকী পালনে বাধা দেওয়া হয়। কিন্তু আইয়ুব সরকারের সব ভয়ভীতি
উপেক্ষা করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শিক্ষকদের উদ্যোগে বিচারপতি
মাহবুব মোর্শেদ ও অধ্যাপক খান সারওয়ার মোর্শেদের
নেতৃত্বে গঠিত ডু কেন্দ্রিক রবীন্দ্র জন্মশতবার্ষিকী কমিটি মহাসমারোহে রবীন্দ্র
জন্ম-শতবার্ষিকী উদ্যাপন করে। এই দশকেই পাকিস্তানের দুই অংশের জন্য পৃথক
অর্থনীতি প্রবর্তনের প্রয়োজনীয়তাও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতিবিদরা প্রচার
করতে থাকেন। ১৯৬২ সালে পাকিস্তানের
পূর্ব অংশে প্রচন্ড ছাত্র বিক্ষোভের সূচনা ঘটে। ১৯৬২-৬৩ সালে ছাত্র বিক্ষোভ
এমন আকার ধারণ করে যে সে বছর সর্বমোট ২৭ দিনের বেশি ক্লাস হয়নি। এই আন্দোলনের
নেতৃত্বে ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ ও ছাত্র ইউনিয়নের মেনন ও মতিয়া গ্রুপের
ছাত্রছাত্রীরা। ১৯৬২ সালের অক্টোবর মাসে
আবদুল মোনায়েম খান পূর্ব পাকিস্তানের গভর্ণর হয়ে আসেন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের
উপাচার্য ড.মাহমুদ হোসেন মোনায়েম খানের কথা মত ছাত্র আন্দোলন বন্ধে উদ্যোগ না
নিয়ে পদত্যাগ করেন। এরপর ময়মনসিংহ
কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক এম ওসমান গনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের
উপাচার্য হয়ে আসেন। ঐ সময় আইয়ুব বিরোধী ছাত্র আন্দোলন দমন করার জন্য মোনায়েম
খান ‘জাতীয় ছাত্র ফেডারেশন’ (এনএসএফ) নামে একটি
সশস্ত্র ক্যাডার বাহিনী গঠন করে। এনএসএফ ১৯৬৩ সাল থেকে ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয়ে এক ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল। ১৯৬৪ সালের ২২ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের
সমাবর্তনে ছাত্ররা চান্সেলর মোনেম খানের কাছ থেকে ডিগ্রি নিতে অস্বীকার করে। এতে
সমাবর্তন পন্ড হয়ে যায়। ১৯৬৬ সালে এনএসএফ সন্ত্রাসীরা
অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড.আবু মাহমুদকে আহত করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র
ও শিক্ষক সমাজ এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ গড়ে তোলেন।
ষাটের
দশকে সমাবর্তন
১৯৬০ সালের সমাবর্তন
অনুষ্ঠিত হয় ১১ জানুয়ারি। এই সমাবর্তনের
উপাচার্য ছিলেন বিচারপতি হামুদুর
রহমান ও প্রধান অতিথি ছিলেন পাকিস্তানের সামরিক শাসক আইয়ুব খান। ১৯৬১ সালে সমাবর্তনে
চ্যান্সেলর ছিলেন লেফটেনেন্ট
জেনারেল আযম খান। ষাটের দশকের শুরুতে আইয়ুব খানের সামরিক শাসনামলে
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন কাজ শুরু হয় উপাচার্য ড.মাহমুদ হোসেন ও
চ্যান্সেলর জেনারেল আযম খানের তত্ত্বাবধানে। ১৯২১ সালের পর এই প্রথম
উন্নয়ন কার্য শুরু হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। এই সময়ই ১৯৫৮ সাল থেকে অসমাপ্ত
অবস্থায় পড়ে থাকা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের কাজ শেষ হয়। গভর্ণর জেনারেল আযম খান
ড.মাহমুদ হোসেনকে সভাপতি এবং অধ্যাপক মুনীর চৌধুরীকে সদস্য সম্পাদক করে যে কমিটি
গঠন করে,সে কমিটির সুপারিশ ক্রমেই শহীদ মিনারের কাজ শেষ হয়। । ১৯৬৪ সালের সমাবর্তনে উপাচার্য
ছিলেন অধ্যাপক ড.এম ওসমান
গনি ও চ্যান্সেলর আবদুল মোনায়েম খান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে
এবারই প্রথম কোন সমাবর্তনে চ্যান্সেলর ও ভাইস চ্যান্সেলর উভয়ই ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র ছিলেন। কিন্তু,মোনায়েম খানের কাছ থেকে ডিগ্রি
নিতে ছাত্র ছাত্রীরা অস্বীকার করলে এই সমাবর্তন পন্ড হয়ে যায়। এই ঘটনার পর ১৯৬৯ সাল পর্যন্ত আর ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাবর্তন হয় নি।
আগরতলা
ষড়যন্ত্র মামলা
১৯৬৭ সালে আইয়ুব সরকার
পূর্ব পাকিস্তানের কয়েকজন সামরিক ও বেসামরিক ব্যক্তির বিরুদ্ধে লেফেটেন্যান্ট
কর্ণেল মোয়াজ্জেম হোসেনকে আসামী রুপে ‘আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা’ করে।কয়েকদিন পর শেখ মুজিবকে প্রধান আসামী করা হয়।এই মামলার প্রতিক্রিয়ায় সমগ্র পূর্ব বাংলা ফেটে পরে এবং এই আন্দোলনের নেতৃত্ব
দেয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১১ দফার ভিত্তিতে গঠিত ‘সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদ’।
৬৯’এর গনআন্দোলন
মুক্তিযুদ্ধ
ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
১৯৭১ সালে স্বাধীনতা
সংগ্রামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এক গুরুত্বপূর্ণ দলিল। একাত্তরে পাকিস্তান
সশস্ত্রবাহিনী বাঙালি সৈনিক,বৈমানিক ও ছাত্রছাত্রীগনকে একই পর্যায়ভুক্ত
করে আক্রমণ চালিয়েছিল। এই অপারেশনের নাম ছিল “অপারেশন
সার্চ লাইট”। এইচ আওয়ার নির্ধারিত হয়েছিল ২৬ মার্চ রাত ১ টা।
ক্যান্টনমেন্ট থেকে সেনাবাহিনী প্রথম প্রতিরোধের সম্মুখীন হয় ফার্মগেটে। রাস্তায়
পড়ে থাকা একটি বিশাল গাছ বাহিনীর গতিরোধ করে,রাস্তার পাশের এলাকা পুরানো গাড়ি
আর স্টিম রোলার দিয়ে বন্ধ ছিল। ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয়ের মুসলিম হলের ছাত্ররা হলের সামনে
একটি বড় গাছের গুড়ি ফেলে রেখে সেনাবাহিনীকে বাধাঁ দেয়। সকাল ৪টার মধ্যে
বিশ্ববিদ্যালয় ভবন গুলো দখল করে নেয় তারা। ১৮ নং পাঞ্জাব,২২ নং বেলুচ
এবং ৩২ নং পাঞ্জাব রেজিমেন্টের বিভিন্ন ব্যাটেলিয়ন নিয়ে গঠিত বিশেষ মোবাইল
বাহিনী লেফটেনেন্ট কর্ণেল তাজের নেতৃত্বে স্বয়ংক্রিয় রাইফেল,ট্যাংক বিধ্বংসী বিকয়েললেস রাইফেল,রকেট
লাঞ্চার,মর্টার,ভারি ও হাল্কা
মেশিনগানে সজ্জিত হয়ে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ থেকে ২৭ মার্চ সকাল পর্যন্ত ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ঘেরাও করে আক্রমণ,পাইকারি হত্যা,লুন্ঠন,অগ্নিসংযোগ এবং ধ্বংস যজ্ঞ চালায়। ঐ রাতে দৈবক্রমে পাকিস্তানী
আক্রমণ থেকে বেঁচে যাওয়া অধ্যাপক ড.মফিজুল্লাহ্ কবির তার ১৯৭১-৭২ সালের বার্ষিক
রিপোর্টে লেখেন,ঐ রাতে ছাত্র সহ প্রায় ৩০০ ব্যক্তি
বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় নিহত হয়। সেই সাথে ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০ জন শিক্ষক ও
২৬ জন অন্যান্য কর্মচারী। নিহত শিক্ষকদের মধ্যে ছিলেন,ড.ফজলুর রহমান (মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগ), অধ্যাপক এ.আর.খান খাদিম (গণিত বিভাগ),অধ্যাপক শরাফত আলী,ড.গোবিন্দচন্দ্র দেব (প্রাক্তন প্রোভস্ট জগন্নাথ হল),অধ্যাপক মনিরুজ্জামান,ড.জ্যোতির্ময়
গুহঠাকুরতা (প্রোভস্ট জগন্নাথ হল),অনুদ্বৈপায়ন
ভট্টাচার্য,অধ্যাপক মুহম্মদ মুকতাদির (ভূতত্ত্ব) প্রমুখ।
সবচেয়ে নারকীয় ঘটনা ঘটে জগন্নাথ হলে, সেই রাতে ৩৪ জন
ছাত্র শুধু সেই হলেই নিহত হয়। ২৬ মার্চ রমনা কালীবাড়িও
আক্রান্ত হয়। সেস্থলে নিহত হয় জগন্নাথ হলের ৫/৬ জন ছাত্র। হানাদার বাহিনী হত্যা
করে মধুর ক্যান্টিন খ্যাত মধুসূদন দে’কেও (মধুদা)। মুক্তিযুদ্ধ কালীন পাকিস্তানী
সৈন্যরা মধুর ক্যান্টিন ডিনামাইট দিয়ে
উড়িয়ে দিতে শুরু করলে উর্দু বিভাগের শিক্ষক আফতাব আহমদ সিদ্দিকী খবর পেয়ে তাদের
বাধাঁ দেন এবং জানান যে এই ভবনেই ১৯০৬ সালে মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। ১০ নভেম্বর সশস্ত্র সৈন্যরা
রোকেয়া হলে প্রবেশ করে এবং ত্রিশজন ছাত্রীর উপর নির্যাতন করে। তারা প্রোভোস্ট
বাংলোও অবরোধ করে রাখে।
একাত্তরের মার্চ মাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য বিচারপতি আবু
সাঈদ চৌধুরী জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের
অধিবেশনে যোগদানের জন্য জেনেভা যান। সেখানে জেনেভার একটি পত্রিকায় দু’জন ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রের মৃত্যু সংবাদ দেখে বিচলিত হয়ে ২৫ মার্চ পূর্ব পাকিস্তান
প্রাদেশিক শিক্ষা সচিবকে পাকিস্তান দূতাবাসের মাধ্যমে
প্রেরিত এক পত্রে লেখেন,
“আমার নিরস্ত্র ছাত্রদের উপর গুলি চালানোর পর আমার ভাইস
চ্যান্সেলর থাকার কোন যুক্তিসংগত কারণ নেই। তাই আমি পদত্যাগ করলাম”। ফলে
মার্চের সেই কালরাত্রীতে ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয় ছিল উপাচার্য বিহীন। পরে মুজিবনগর
সরকার বিচারপতি সাঈদকে “প্রবাসী সরকারের বিশেষ প্রতিনিধি” হিসেবে
নিয়োগ দেয়। পাকিস্তান বাহিনী রাজশাহী
বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য ড.সৈয়দ
সাজ্জাদ হোসায়েনকে তাদের কনভয়ে করে ঢাকায় নিয়ে
এসে ১৯ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের
উপাচার্যের পদে বসান। তাকে সহায়তা করেন ড.হাসান জামান,ড.মেহের আলি।
স্বাধীনতার পর তিনজনই গ্রেফতার হন এবং মুক্তির পর দেশ ত্যাগ করেন। ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয়ের অসংখ্য ছাত্রছাত্রী মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহণ করেন। এদের
অনেকেই পরবর্তীকালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে কমিশন লাভ করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের
অনেক শিক্ষক মুক্তিযুদ্ধকালীন মুজিবনগর যান এবং প্রবাসী সরকারে গুরুত্বপূর্ণ
ভূমিকা পালন করেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ে ধ্বংসযজ্ঞ চালাবার পরে টিক্কা খান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের
সকল বিভাগীয় প্রধানদের ২১ এপ্রিল ও সকল শিক্ষকদের ১ জুন কাজে যোগ দিতে বলেন।
টিক্কা খান ২ আগস্ট থেকে সকল ক্লাস চালু করারও আদেশ জারি করেন।
মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগে কয়েকজন শিক্ষককে গ্রেফতার করে ঢাকা
ক্যান্টনমেন্টে বন্দী করা হয় এবং ইন্টারোগেশনের মাধ্যমে নির্যাতন করা হয়। এদের
মধ্যে ছিলেন ড.আবুল খায়ের,ড.রফিকুল
ইসলাম,কে এ এম
সাদউদ্দিন,আহসানুল হক এবং এম শহীদুল্লাহ। টিক্কা খান অধ্যাপক মুনীর
চৌধুরী,ড.নীলিমা
ইব্রাহিম,ড.সিরাজুল
ইসলাম চৌধুরী,ড.এনামুল হককে লিখিত ভাবে সতর্ক করে
দেন। ড.আবু মোহাম্মদ হাবিবুল্লাহকে পদচ্যুত করা হয়।
স্বাধীনতা
পরবর্তী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সত্তরের দশক
১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে
পাকিস্তান বাহিনীর আত্মসমর্পনের মধ্যে দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে “স্বাধীন বাংলাদেশ” রাষ্ট্রের যাত্রা শুরু হয়। স্বাধীন
বাংলাদেশ রাষ্ট্রের স্বপ্ন বাস্তবায়নের “ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয়ের’ যে
অবদান অপর কোনো সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের একক অবদান তার সমকক্ষ নয়। দেশ স্বাধীন
হবার পর ১৭ ডিসেম্বরথেকে আল-বদর বাহিনী কর্তৃক অপহৃত শিক্ষকদের
অনুসন্ধান শুরু হয়। মিরপুর,রায়ের বাজার,মোহাম্মদপুরের বধ্যভূমি থেকে যে
সব শিক্ষকের লাশ শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছিল তাদের দাফন করা হয় বিশ্ববিদ্যালয়
মসজিদ প্রাঙ্গনে। মসজিদ প্রাঙ্গনেই শহীদ শিক্ষদের জানাজা অনুষ্ঠিত হয় এতে যোগ দেন
বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী
তাজউদ্দিন আহমেদ। স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথম উপাচার্য হন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ড.মোজাফফর আহমদ চৌধুরী। পদাধিকার বলে তিনি
ছিলেন স্বাধীনতার পর ডাকসুর প্রথম সভাপতি। আ স ম আবদুর রব ও আবদুল কুদ্দুস
মাখন ছিলেন যথাক্রমে ডাকসুর নির্বাচিত ভিপি ও জিএস। স্বাধীনতার পর ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ছাত্র সমস্যা দেখা দেয় মুক্তিযুদ্ধের দোহাই দিয়ে অটো
প্রমোশনের দাবিতে একাডেমির কাউন্সেলের সদস্যদের ঘেরাও করার ঘটনায়। এ সময়
বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক শেখ মুজিবুর
রহমানের সাথে দেখা করেন। শেখ মুজিব তাদের সাথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়তে আসেন
এবং শিক্ষকদের মুক্ত করে ছাত্রদের তিরস্কার করেন। ১৯৭২ সালের এপ্রিল মাসে
কলকাতা রবীন্দ্রসদন সম্মুখস্ত মাঠে আয়োজিত হয় প্রথম ‘বাংলাদেশ-ভারত
মৈত্রী মেলা’। ডাকসুকে আমন্ত্রন জানানো হয়
ছাত্রছাত্রীদের অভিনীত একটি নাটক মৈত্রী মেলায় মঞ্চস্থ করার জন্য। সেখানে মুনীর চৌধুরীর বাণার্ড শ’য়ের ‘নেভার ক্যান টেল’ এর বাংলা রুপান্তর ‘কেউ কিছু বলতে পারে না’ নাটকটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রছাত্রীরা মঞ্চস্থ
করে। ১৯৭২ সালের ৬ মে প্রধানমন্ত্রী
শেখ মুজিবুর রহমান আনুষ্ঠানিকভাবে ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয় সফরে আসেন। ডাকসু থেকে তাকে আজীবন সদস্য
পদ দেওয়া হয়,সেই সাথে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ১৯৪৯ সালের নিম্ন
কর্মচারীদের ধর্মঘটের সময় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিস্কৃত শেখ মুজিবুর
রহমানের বহিস্কার আদেশ প্রত্যাহার করে।
১৯৭৩ সালের ২০ এপ্রিল মুক্তিযুদ্ধের সময় ইউরোপে বাংলাদেশের বড়
শুভাকাঙ্খি ফরাসি দার্শনিক আঁদ্রে মালরো বাংলাদেশে আসেন। ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শিক্ষক কেন্দ্রে তাকে উষ্ণ সংবর্ধনা জ্ঞাপন করা হয়। ১৯৭৪ সালের ৯ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক
বিশেষ সমাবর্তনে অধ্যাপক সত্যেন্দ্রনাথ
বসু (মরণোত্তর), ড. মুহম্মদ
শহীদুল্লাহ (মরণোত্তর),কাজী নজরুল
ইসলাম,ওস্তাব আলী আকবর খান,ড.হিরেন্দ্রলাল দে,ড.মুহম্মদ
কুদরত-ই-খুদা,অধ্যাপক কাজী
মোতাহার হোসেন ও অধ্যাপক আবুল ফজলকে সম্মানসূচক ডক্টরেট
ডিগ্রি দান করা হয়।
গনপ্রজান্ত্রী বাংলাদেশ সরকার ১৯৭৫ সালে জাতীয় অধ্যাপক
পদ প্রচলন করে এবং ঐ বছর ১৮ মার্চ তিনজনকে ঐ পদে নিযুক্ত
করা হয়। এরা ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কাজী
মোতাহার হোসেন,অধ্যাপক
আবদুর রাজ্জাক আর শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন।
১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট সকাল ১০ টায় ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয় চ্যান্সেলর রাষ্ট্রপতি শেখ
মুজিবুর রহমানের আনুষ্ঠানিক ভাবে ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয় পরিদর্শন এবং টিএসসিতে শিক্ষকদের উদ্দেশে ভাষণ প্রদানের কথা ছিল।
কিন্তু তার কয়েক ঘণ্টা পূর্বে শেখ মুজিবুর
রহমান তার ৩২ নং ধানমন্ডি রোডের বাড়িতে সপরিবারে নিহত হন। খন্দকার
মোশতাক আহমদের সরকার ১৯৭৫ এর ২৩ সেপ্টেম্বর ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড.মতিন চৌধুরীকে অব্যহতি প্রদান ও পরে গ্রেফতার
করে। ১৯৭৫ এর ৭ নভেম্বর প্রথম প্রধান ও পরে উপ
প্রধান সামরিক প্রশাসক রুপে জেনারেল জিয়াউর
রহমান দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৭ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব
গ্রহণ করেন। এর আগে ১৯৭৬ এর ২৯ আগস্ট বিদ্রোহী কবি
কাজী নজরুল ইসলাম ঢাকার পিজি হাসপাতালে শেষ
নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। এবং ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদ প্রাঙ্গনে তাকে দাফন করা
হয়। সেদিন অপরাহ্নে জানাজা নামাজ আদায়ের পর রাষ্ট্রপতি সায়েম,মেজর জেনারেল
জিয়াউর রহমান,রিয়াল
এডমিরাল এম এইচ খান,এয়ার ভাইস মার্শাল এ জি মাহমুদ,
মেজর জেনারেল দস্তগীর জাতীয় পতাকা মন্ডিত নজরুলের মরদেহ
সোহরাওয়ার্দী ময়দান থেকে বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদ প্রাঙ্গনে নিয়ে যান। বিকেল
পাঁচটায় কবির লাশ দাফন করা হয়। জেনারেল জিয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের
অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক ড.মুজাফফর আহমদকে বাংলাদেশ সরকারের বস্ত্র উপদেষ্টা
নিয়োগ করেন। জিয়ার শাসনামলে ১৯৭৬ সালে ছাত্র ইউনিয়ন
তার সাথে পুরাতন ব্রম্মপুত্র নদ খনন কার্যে অংশ গ্রহণ করেন। জেনারেল জিয়া
বাংলাদেশে একুশে পদক প্রবর্তন করেন ও কাজী নজরুল
ইসলামকে (মরণোত্তর) সেই পুরস্কার প্রথম প্রদান করেন। ১৯৭৮ সালের ২৮ অক্টোবর রাষ্ট্রপতি ও
বিশ্ববিদ্যালয় চ্যান্সেলর জিয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আগমন করেন। জেনারেল জিয়া
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষককে তার মন্ত্রী সভায় স্থান দেন।
আশির
দশক
রাউফুন
বাসুনিয়া স্মৃতিতে নির্মিত তোরণ,ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
১৯৮১ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে
ধর্মঘট পালিত হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ধর্মঘট শুরু হয় ১৪ ফেব্রুয়ারি; শেষ পর্যন্ত ১৮ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়
অর্ডিন্যান্স সংশোধনী গৃহীত হলে শিক্ষক ধর্মঘটের অবসান ঘটে। এ দিকে ১৯৮১ সালের ৩০ মে চট্টগ্রাম সার্কিট
হাউসে সেনাবাহিনীর কতিপয় বিদ্রোহী অফিসারের এক অভ্যুত্থানে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর
রহমান নিহত হন। ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ হুসেইন
মুহাম্মদ এরশাদ ক্ষমতা গ্রহণ করেন। এতে ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররা প্রতিবাদ কর্মসূচী পালন করে। সামরিক সরকার ছাত্র আন্দোলন
বাধা দিতে চেষ্টা করে ও অনেক ছাত্রকে গ্রেফতার করে। ১৯৮২ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর ‘শিক্ষা দিবসে’
সামরিক সরকার ছাত্রদের শহীদ মিনারে ফুল দিতে বাধা দেয় এবং একজন
ছাত্রকে গ্রেফতার করে। ৮ নভেম্বর ‘সিপাহী বিপ্লব
দিবস’ পালন উপলক্ষে কলা ভবন প্রাঙ্গণে জাসদ
ছাত্রলীগের শোভাযাত্রার ওপর পুলিশ হামলা
চালায় ফলে ছাত্র পুলিশ সংঘর্ষ বেধে যায়। ১৯৮২ সালের ১৪ নভেম্বর অপরাজেয় বাংলার
পাদদেশে ছাত্র সমাবেশে ২৯ নভেম্বর দেশব্যাপি দাবি দিবস
পালনের সিদ্ধান্ত ঘোষিত হয়। ঐ দিবসে ছাত্রনেতারা সামরিক স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে
ঐক্যবদ্ধ হবার জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্ববান জানায়। ১৯৮৩ সালের ১৮ মার্চ ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফজলুল
হালিম চৌধুরীকে অব্যাহতি প্রদান করা হয়। ঐ বছর ৮ ডিসেম্বর সকাল সন্ধ্যা
দেশব্যাপি সর্বাত্মক হরতাল পালিত হয়। ছাত্রনেতা রাউফুল বাসুনিয়া অজ্ঞাত আততায়ীর
গুলিতে স্যার এ এফ রাহমান হলের নিকটে নিহত হন। ১৯৮৫ সালের ১৫ অক্টোবর জগন্নাথ হল মিলনায়তনে (পাকিস্তান
আমলে পূর্ব বাংলা এসেম্বলির জন্য সংস্কারকৃত) টেলিভিশন অনুষ্ঠান দেখতে গিয়ে ছাঁদ
ভেঙ্গে পড়লে ৩৪ জন ছাত্রের তৎক্ষনাৎ মৃত্যু হয়। পরে এই সংখ্যা আরো বৃদ্ধি পায়। ১৯৮৬ এর ৩০ নভেম্বর বাকশালের ছাত্র সংঘঠন জাতীয়
ছাত্রলীগ নেতা রাউফুল বাসুনিয়া হত্যা মামলা সরকার তুলে নেয়,প্রতিবাদে ঐ
দিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে হরতাল পালিত হয়। ঐ বছর ১ ডিসেম্বর এরশাদ দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রাজনীতি
নিষিদ্ধ করে।
মূলতঃ সম্পূর্ণ আশির দশক ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয় অস্থিতিশীল ছিল। এই দশকে ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ এরশাদ ক্ষমতা গ্রহণের পর
থেকে ১৯৮৭ সাল পর্যন্ত ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয় অবাঞ্ছিত কারণে মোট ৩৪৮ দিন বন্ধ
ছিল।
নব্বইয়ের
দশক
এসময়ে সৈরাশাসকের বিরুদ্ধে সাধারণ জনসাধারণের সাথে সোচ্চার হয়ে
ওঠে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। ১০ অক্টোবর গনতন্ত্রের মুক্তির দাবীতে মিছিলে যোগদান করে
পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারায় হাজার হাজার ছাত্র-জনতা। পুলিশের গুলিতে শহীদ হন ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয়ের জেহাদ নামের একজন ছাত্র। পুলিশ এসে তাঁর লাশ সরিয়ে ফেলার আগেই
কয়েকজন ছাত্র জেহাদের লাশ উদ্ধার করে নিয়ে আসতে সক্ষম হয়। সেই লাশ এনে রাখা হয় অপরাজেয়
বাংলার সামনে। শত শত ছাত্র-ছাত্রী জড়ো
হয় লাশ দেখার জন্য। এবং সেই মূহুর্তে উপস্থিত সকল ছাত্র গনতন্ত্রের মুক্তির পক্ষে
একাত্মতা ঘোষণা করে। ছাত্রদল ও ছাত্রলীগ একত্রিত হয়ে সৃষ্টি করে সর্বদলীয় ছাত্র জোট। সর্বদলীয় ছাত্র জোটের
প্রধান ছিলেন ১১ জন ছাত্র। ২৬ নভেম্বর শহীদ মিনারে আয়োজিত একটি সভায় এই ১১ জন
এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজার হাজার ছাত্র একত্র হয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার
প্রতিষ্ঠায় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়। পরবর্তী বিজয়দিবস তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই
অনুষ্ঠিত হয়েছিলো।
বিশ
শতক
ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয় আইন
১৯২১ থেকে ১৯৪৭ পর্যন্ত ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয় “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এ্যক্ট ১৯২০” দ্বারা
পরিচালিত হয়েছে। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর
বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক চরিত্র বদলে যায় এবং পূর্ব বাংলার কলেজগুলি এই
বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভূক্ত হয়। বিশ্ববিদ্যালয় এখন মঞ্জুরি প্রদানের ক্ষমতা লাভ
করে আগে যা ঢাকা শহরের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। “The east Bengal education ordinance” এর বলে কলকাতা
বিশ্ববিদ্যালয় অধিভূক্ত ৫৫টি প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণী কলেজের মঞ্জুরি প্রদান ও
তত্ত্বাবধানের কর্তৃত্ব লাভ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। যার ফলে এক্সিকিউটিভ
কাউন্সিল,একাডেমিক কাউন্সিল,ফ্যাকাল্টি ও কোর্ট
পুনর্গঠন ও সম্প্রসারণ করতে হয়,প্রথম শ্রেণীর কলেজ
প্রিন্সিপালদের অর্ন্তভুক্ত করার জন্য। ১৯৬১ সালে পাকিস্তানের
সামরিক সরকারের আজ্ঞাবহ পূর্ব পাকিস্তান সরকার “ঢাকা ইউনিভার্সিটি অর্ডিন্যান্স
১৯৬১” দ্বারা “ঢাকা ইউনিভার্সিটি
এ্যক্ট ১৯২০” বাতিল করে। নতুন অর্ডিন্যান্সে বিশ্ববিদ্যালয়ের
গনতান্ত্রিক ও স্বায়ত্তশাসিত চরিত্রের পরিবর্তন করা হয়,কোর্ট বাতিল করা হয়,একাডেমিক কাউন্সিলকে
মনোনীত সংস্থায় রুপান্তর করা হয়,নির্বাচিত ডিন এবং
উপাচার্যের নিযুক্তি প্রক্রিয়া বাতিল করা হয়। এ সময় এক্সিকিউটিভ কাউন্সিলের নাম
সিন্ডিকেট এবং তা পদাধিকার বলে ও চ্যান্সেলর মনোনীত সদস্যদের নিয়ে গঠিত সর্বোচ্চ
নির্বাহী পরিষদ হয়ে যায়। এই সময় থেকেই উপাচার্যের নিয়োগ কোর্টের পরিবর্তে
সরকার দ্বারা করবার ব্যবস্থা করা হয়। ““ঢাকা
ইউনিভার্সিটি অর্ডিন্যান্স ১৯৬১” এর সম্পর্কে শিক্ষকদের
ক্ষোভ ছিল। ষাটের দশকে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বায়ত্বশাসনের জন্য আন্দোলন হয়েছে।
স্বাধীনতার পর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকে অধ্যাপক মোজাফফর আহমেদ
চৌধুরী, অধ্যাপক আবু মোহাম্মদ হাবিবুল্লাহ,অধ্যাপক খান সরওয়ার মোর্শেদ শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে একটি নতুন
বিশ্ববিদ্যালয় আইনের খসড়া উপস্থাপন করেন। খসড়াটি প্রায় অপরিবর্তীত অবস্থায় ‘The
Dacca University order 1973’ নামে প্রধানমন্ত্রী
শেখ মুজিবের পরামর্শ ক্রমে রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবু
সাঈদ চৌধুরী ১৯৭৩ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি অধ্যাদেশ জারি করেন। সেই থেকে বিশ্ববিদ্যালয় এই
আইন দ্বারা পরিচালিত হয়ে আসছে। ১৯৭৩ এর অর্ডিন্যান্স চালু
হওয়ার পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকবৃন্দ নীল,সাদা ও গোলাপী এই তিন রঙের
প্যানেলে বিভক্ত হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন।
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি হল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের স্বীকৃত পেশাজীবী
প্রতিষ্ঠান,এই সমিতির কর্মকর্তারাও প্রতি বছর নির্বাচিত
হন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশের সাথে সঙ্গতি রেখে ১৯৭৩-এর ১৩ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয়
মঞ্জুরী কমিশন গঠন করা হয় এবং প্রবীণ শিক্ষাবিদ ড. মুহম্মদ
এনামুল হককে তার চেয়ারম্যান নিযুক্ত করা হয়।
নবাব সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরী,ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
প্রতিষ্ঠার অন্যতম প্রধান প্রস্তাবক
ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনকালে স্বাধীন জাতিসত্ত্বার বিকাশের
লক্ষ্যে বিশ শতকের দ্বিতীয় দশকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়া শুরু
হয়। ব্রিটিশ ভারতে তৎকালীন শাসকদের অন্যায্য সিদ্ধান্তে
পূর্ববঙ্গের মানুষের প্রতিবাদের ফসল হচ্ছে এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। এ সম্পর্কে
প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ মুনতাসীর মামুন ঢাকা
স্মৃতি বিস্মৃতির নগরী গ্রন্থে লিখেছেন,
বঙ্গভঙ্গ রদের ক্ষতিপূরণ হিসেবে প্রতিষ্ঠা
করা হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। লর্ড লিটন যাকে বলেছিলেন স্পেল্নডিড
ইম্পিরিয়াল কমপেনসেশন। পূর্ববঙ্গ শিক্ষাদীক্ষা,অর্থনীতি সব ক্ষেত্রেই পিছিয়ে ছিল।
বঙ্গভঙ্গ হওয়ার পর এ অবস্থার খানিকটা পরিবর্তন হয়েছিল,বিশেষ
করে শিক্ষার ক্ষেত্রে।
১৯১২ সালের ২ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার
প্রতিশ্রুতি দেন তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের ভাইসরয় লর্ড হার্ডিঞ্জ। এর মাত্র তিন দিন পূর্বে ভাইসরয় এর সাথে
সাক্ষাৎ করে বিশ্ববিদ্যালয়
প্রতিষ্ঠার আবেদন জানিয়ে ছিলেন ঢাকার নবাব স্যার সলিমুল্লাহ,ধনবাড়ীর নবাব সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরী,শেরে বাংলা এ.কে.ফজলুল হক এবং
অন্যান্য নেতৃবৃন্দ। ২৭ মে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য প্রস্তাব করেন ব্যারিস্টার
আর.নাথানের নেতৃত্বে ডি আর কুলচার,নবাব সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরী,নওয়াব সিরাজুল ইসলাম,ঢাকার প্রভাবশালী নাগরিক আনন্দচন্দ্র রায়,জগন্নাথ কলেজ (বর্তমানে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়)-এর অধ্যক্ষ ললিত মোহন চট্টোপাধ্যায়,ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ ডব্লিউ.এ.টি.আচির্বল্ড,ঢাকা মাদ্রাসার (বর্তমান কবি নজরুল সরকারি কলেজ) তত্ত্বাবধায়ক শামসুল
উলামা আবু নসর মুহম্মদ ওয়াহেদ,মোহাম্মদ আলী (আলীগড়),প্রেসিডেন্সি কলেজের অধ্যক্ষ
এইচ.এইচ.আর.জেমস,প্রেসিডেন্সি কলেজের অধ্যাপক সি.ডব্লিউ.
পিক এবং সংস্কৃত কলেজের অধ্যক্ষ সতীশ্চন্দ্র আচার্য। ১৯১৩ সালে প্রকাশিত হয় নাথান কমিটির ইতিবাচক
রিপোর্ট এবং সে বছরই ডিসেম্বর মাসে সেটি অনুমোদিত হয়। ১৯১৭ সালে গঠিত স্যাডলার
কমিশনও ইতিবাচক প্রস্তাব দিলে ১৯২০ সালের ১৩ মার্চ ভারতীয় আইন সভা পাশ
করে 'দি ঢাকা
ইউনিভার্সিটি অ্যাক্ট (অ্যাক্ট নং-১৩) ১৯২০'। লর্ড রোনাল্ডসে ১৯১৭ হতে ১৯২২ সাল পর্যন্ত বাংলার গভর্নর থাকা
কালে নবাব সৈয়দ শামসুল হুদা কে
বিশ্ববিদ্যালয়ের আজীবন সদস্য ঘোষণা করেন। সৈয়দ শামসুল হুদার সুপারিশে স্যার এ.এফ.রাহমান কে
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভোস্ট মনোনীত করা হয়, তিনি ইতিপূর্বে আলীগড় মুসলিম
বিশ্ববিদ্যালয়ে কার্যরত ছিলেন। পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহ
সম্পর্কে রফিকুল ইসলামের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮০ বছর গ্রন্থ থেকে জানা যায়, নাথান কমিটি রমনা
অঞ্চলে ৪৫০ একর জায়গায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের প্রস্তাব দেয়। এই জায়গায়
তখন ছিল ঢাকা কলেজ,গভর্নমেন্ট হাউস,সেক্রেটারিয়েট ও
গভর্নমেন্ট প্রেসসমূহ।
সৃষ্টির শুরুতেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নানা প্রতিকূলতার মুখে
পড়ে। এ ছাড়া ১৯১৪ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু
হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দেয়। এর ফলে পূর্ব
বাংলার মানুষ হতাশা প্রকাশ করে। ১৯১৭ সালের মার্চ মাসে ইম্পেরিয়াল লেজিসলেটিভ
কাউন্সিলে সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরী সরকারের কাছে অবিলম্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বিল
পেশের আহ্বান জানান। ১৯২০ সালের ২৩ মার্চ গভর্নর জেনারেল এ বিলে সম্মতি দেন। এ
আইনটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠার ভিত্তি। এ আইনের বাস্তবায়নের ফলাফল
হিসেবে ১৯২১ সালের ১ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যাত্রা শুরু করে।
ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বার উন্মুক্ত হয়
১৯২১ সালের ১ জুলাই। সে সময়ের ঢাকার সবচেয়ে
অভিজাত ও সৌন্দর্যমণ্ডিত রমনা এলাকায়
প্রায় ৬০০ একর জমির উপর পূর্ববঙ্গ এবং আসাম প্রদেশের
পরিত্যক্ত ভবনাদি এবং ঢাকা কলেজের (বর্তমান কার্জন হল) ভবনসমূহের সমন্বয়ে মনোরম পরিবেশে গড়ে উঠে
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। প্রতিষ্ঠার এই দিনটি প্রতিবছর "ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দিবস" হিসেবে পালন করা
হয়।
তিনটি অনুষদ ও ১২টি বিভাগ নিয়ে একটি আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়
হিসেবে এর যাত্রা শুরু হয়। ঢাকা কলেজ ও জগন্নাথ কলেজের(বর্তমান জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়) ডিগ্রি ক্লাসে অধ্যয়নরত
ছাত্রদের নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যাত্রা শুরু করে। শুধু ছাত্র নয়,শিক্ষক এবং লাইব্রেরির বই ও
অন্যান্য উপকরণ দিয়েও এই দুটি কলেজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠায় সহযোগিতা
করে। এই সহযোগিতা দানের কৃতজ্ঞতা হিসেবে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের দু’টি হলের নামকরণ করা হয় ঢাকা হল (বর্তমানে ড.মুহম্মদ শহীদুল্লাহ হল) ও জগন্নাথ হল।
কলা,বিজ্ঞান ও আইন অনুষদের অন্তর্ভুক্ত ছিল সংস্কৃত ও বাংলা,ইংরেজি,শিক্ষা,ইতিহাস,আরবি,ইসলামিক স্টাডিজ,ফারসী ও উর্দু,দর্শন,অর্থনীতিও রাজনীতি,পদার্থবিদ্যা,রসায়ন,গণিত এবং আইন।
প্রথম শিক্ষাবর্ষে বিভিন্ন বিভাগে মোট ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা
ছিল ৮৭৭ জন এবং শিক্ষক সংখ্যা ছিল মাত্র ৬০ জন। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ছাত্রী লীলা নাগ (ইংরেজি
বিভাগ; এমএ-১৯২৩)।
যে সব প্রথিতযশা শিক্ষাবিদ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠালগ্নে শিক্ষকতার সাথে জড়িত
ছিলেন তারা হলেনঃ হরপ্রসাদ শাস্ত্রী,এফ.সি.টার্নার,মুহম্মদ শহীদুল্লাহ,জি.এইচ.ল্যাংলি,হরিদাস ভট্টাচার্য,ডব্লিউ.এ.জেনকিন্স,রমেশচন্দ্র মজুমদার,স্যার এ.এফ.রাহমান,সত্যেন্দ্রনাথ বসু,নরেশচন্দ্র সেনগুপ্ত,জ্ঞানচন্দ্র ঘোষ প্রমুখ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন অস্থিরতা
ও ভারত বিভক্তি আন্দোলনের কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অগ্রযাত্রা কিছুটা ব্যাহত
হয়। ১৯৪৭ সালে ভারত ও পাকিস্তান নামক
দুইটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়। তৎকালীন পূর্ববঙ্গ তথা পূর্ব পাকিস্তানের রাজধানী
ঢাকায় অবস্থিত প্রদেশের একমাত্র বিশ্ববিদ্যালয়-ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে কেন্দ্র
করে এ দেশের মানুষের আশা-আকাঙ্খা উজ্জীবিত হয়। নতুন উদ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের
কর্মকাণ্ড শুরু হয়। তৎকালীন পূর্ববাংলার ৫৫ টি কলেজ এ
বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত হয়। ১৯৪৭-৭১ সময়ের মধ্যে ৫টি নতুন অনুষদ,১৬টি নতুন বিভাগ ও ৪টি
ইন্সটিটিউট প্রতিষ্ঠিত হয়।
১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন থেকে
শুরু করে ১৯৭১ এর স্বাধীনতা যুদ্ধ পর্যন্ত
বিশ্ববিদ্যালয়ের রয়েছে গৌরবময় ভূমিকা। স্বাধীনতা যুদ্ধে এ বিশ্ববিদ্যালয়
পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আক্রমণের শিকার হয়। এতে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের
শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং ছাত্র-ছাত্রী সহ অনেকে শহীদ হয়েছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও ছাত্রছাত্রীদের কঠোর নিয়ন্ত্রণে রাখার লক্ষ্যে ১৯৬১
সালে স্বৈরাচারী আইয়ুব খানের সরকার
প্রবর্তিত অর্ডিন্যান্স বাতিলের জন্য ষাটের দশক থেকে শিক্ষকদের দাবির
পরিপ্রেক্ষিতে স্বাধীনতার পর গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ উক্ত
অর্ডিন্যান্স বাতিল করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অর্ডার-১৯৭৩ জারি করে। বর্তমানে
বিশ্ববিদ্যালয় এই অর্ডার দ্বারা পরিচালিত হয়ে আসছে। ১৯৩০-৩৪ জগন্নাথ কলেজ-এর অধ্যক্ষ ললিত মোহন চট্টোপাধ্যায়,ঢাকা মাদ্রাসার (বর্তমান কবি নজরুল সরকারি কলেজ) তত্ত্বাবধায়ক শামসুল উলামা আবু নসর মুহম্মদ ওয়াহেদ,মোহাম্মদ আলী (আলীগড়),প্রেসিডেন্সি কলেজের অধ্যক্ষ এইচ.এইচ.আর.জেমস,প্রেসিডেন্সি কলেজের অধ্যাপক সি.ডব্লিউ.পিক এবং সংস্কৃত কলেজের অধ্যক্ষ সতীশ্চন্দ্র আচার্য। ১৯১৩ সালে প্রকাশিত হয় নাথান কমিটির ইতিবাচক
রিপোর্ট এবং সে বছরই ডিসেম্বর মাসে সেটি অনুমোদিত হয়। ১৯১৭ সালে গঠিত স্যাডলার
কমিশনও ইতিবাচক প্রস্তাব দিলে ১৯২০ সালের ১৩ মার্চ ভারতীয় আইন সভা পাশ করে 'দি ঢাকা ইউনিভার্সিটি অ্যাক্ট
(অ্যাক্ট নং-১৩) ১৯২০'। পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহ সম্পর্কে রফিকুল ইসলামের ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮০ বছর গ্রন্থ থেকে জানা যায়,নাথান কমিটি রমনা
অঞ্চলে ৪৫০ একর জায়গায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের প্রস্তাব দেয়। এই জায়গায়
তখন ছিল ঢাকা কলেজ,গভর্নমেন্ট হাউস,সেক্রেটারিয়েট ও গভর্নমেন্ট
প্রেসসমূহ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্গত
প্রতিষ্ঠান
দেশের সর্ব প্রাচীন এই বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে ১৩টি অনুষদ,৮২টি বিভাগ,১১টি ইনস্টিটিউট এবং ৩৯টি গবেষণা কেন্দ্র রয়েছে। এছাড়া ছাত্র-ছাত্রীদের
থাকার জন্যে রয়েছে ২০টি আবাসিক হল ও হোস্টেল।
অনুষদসমূহ
ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে ১৩টি অনুষদে ৮৪টি বিভাগ
রয়েছে।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুষদ ও এর অন্তর্গত বিভাগগুলো হল:
কলা
অনুষদ
কলা
অনুষদ
লেকচার
থিয়েটার ভবন
অপরাজেয় বাংলা,ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবনের সামনে অবস্থিত একটি ভাস্কর্য
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কলা অনুষদ প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯২১ সালে। এ
অনুষদের অন্তর্গত বিভাগসমূহ হল:
বাংলা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকেই বাংলা বিভাগ এর
কার্যক্রম শুরু করে। এ বিভাগের প্রথম অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান ছিলেন
মহামহোপাধ্যায় হরপ্রসাদ
শাস্ত্রী। মুহম্মদ
শহীদুল্লাহও (পরে ডক্টর) তখন
থেকেই এই বিভাগের প্রভাষক হিসেবে নিয়োগ লাভ করেন। ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনের সময়
এই বিভাগের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। অধ্যাপক মুহম্মদ আবদুল
হাইয়ের সম্পাদনায় প্রকাশিত (১৯৫৮ থেকে) "সাহিত্য পত্রিকা" বিভাগের গবেষণার
ঐতিহ্য এখন পর্যন্ত ধরে রেখেছে। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধে এই বিভাগের শিক্ষক
অধ্যাপক মুনীর চৌধুরী, মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী ও আনোয়ার
পাশা এবং কয়েকজন ছাত্র শহীদ হন। অধ্যাপক মুনীর চৌধুরী আবিষ্কৃত মুনীর
অপটিমা নামক টাইপরাইটার বাংলা বিভাগের আরেকটি অবদান।
ইংরেজি
ইংরেজি বিভাগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাকালীন বিভাগ। বর্তমানে
এই বিভাগে ৩৬ জন পূর্ণকালীন শিক্ষক,১ জন অনারারি অধ্যাপক,১ জন খণ্ডকালীন অধ্যাপক এবং ১ জন খণ্ডকালীন শিক্ষক রয়েছেন। ইংরেজি
বিভাগের ইতিহাসকে তিনটি সুনির্দিষ্ট পর্যায়ে ভাগ করা যায়। বৃটিশ পর্যায়ে প্রথম
বিভাগীয় প্রধান নিযুক্ত হয়েছিলেন সি.এল.রেন। ১৯৪৭-এর দেশ বিভাগের পর পুরোনো শিক্ষকদের অনেকে
ইংরেজি বিভাগ ত্যাগ করেন। তবে পরবর্তীতে অধ্যাপক
এ.জি.স্টক এর মত পণ্ডিত ব্যক্তি এই বিভাগে
যোগ দেন। সাহিত্যের এবং ভাষার অন্যবিধ উন্নয়নে বড় অবদান রাখার মতো ছাত্র তৈরি
করার ঐতিহ্যবাহী ভূমিকাও এ-বিভাগ সব সময় পালন করেছে। ইংরেজি বিভাগের অনেক শিক্ষক
ও ছাত্র ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন। দু'জন শিক্ষক ডঃ জ্যোতির্ময়
গুহঠাকুরতা এবং জনাব রাশিদুল হাসান এবং ৭ জন
ছাত্র ১৯৭১-এ শহীদ হন।
ফারসি
ভাষা ও সাহিত্য
১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যে কয়টি বিভাগ নিয়ে কার্যক্রম
শুরু করে ফারসি ভাষা ও সাহিত্য ও উর্দু তার অন্যতম। তখন ফার্সিতে স্নাতকোত্তর এবং
উর্দু সাবসিডিয়ারি হিসেবে শিক্ষাদান করা হত। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর
উর্দুতে স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতকোত্তর কোর্স শুরু হয়। এই বিভাগের প্রথম বিভাগীয়
প্রধান খান বাহাদুর ফিদা আলী খান। বিভাগের উল্লেখযোগ্য শিক্ষকের মধ্যে ছিলেন ড:আন্দালিব শাদানী,ডঃশওকত সবজওয়ারী,ড.হানিফ আফতাব আহমেদ সিদ্দিকী। বাংলাদেশে ফার্সি ও উর্দু চর্চা
এবং এর বিশাল ও বৈচিত্র্যময় সাহিত্য ভাণ্ডার থেকে রস আস্বাদনের ক্ষেত্রে এ
বিভাগটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। ২০০৭ সাল থেকে ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগ
আলাদা বিভাগ নামে কার্যক্রম শুরু করে।
উর্দু
১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যে কয়টি বিভাগ নিয়ে কার্যক্রম
শুরু করে ফারসি ভাষা ও সাহিত্য ও উর্দু তার অন্যতম। তখন ফার্সিতে স্নাতকোত্তর এবং
উর্দু সাবসিডিয়ারি হিসেবে শিক্ষাদান করা হত। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর
উর্দুতে স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতকোত্তর কোর্স শুরু হয়। এই বিভাগের প্রথম বিভাগীয়
প্রধান খান বাহাদুর ফিদা আলী খান। বিভাগের উল্লেখযোগ্য শিক্ষকের মধ্যে ছিলেন ড: আন্দালিব শাদানী, ডঃ শওকত সবজওয়ারী,
ড. হানিফ আফতাব আহমেদ সিদ্দিকী। বাংলাদেশে ফার্সি ও উর্দু চর্চা
এবং এর বিশাল ও বৈচিত্র্যময় সাহিত্য ভাণ্ডার থেকে রস আস্বাদনের ক্ষেত্রে এ
বিভাগটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
দর্শন
দর্শন বিভাগের শুরু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকে।
১৯৫২-৫৩ শিক্ষাবর্ষে দর্শন বিভাগ "দর্শন ও মনোবিজ্ঞান" বিভাগ নামে
পরিচিতি লাভ করে। ১৯৬৫ সালের আগস্ট মাসে মনোবিজ্ঞান বিভাগ দর্শন বিভাগ থেকে আলাদা হয়ে
যায়। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সূচনালগ্নে শহীদ হন দর্শন বিভাগের অধ্যাপক ও তৎকালীন বিভাগীয় প্রধান ড.গোবিন্দ
চন্দ্র দেব। প্রতিষ্ঠা লগ্নে এর বিভাগীয় প্রধান ছিলেন জর্জ হ্যারি
ল্যাংলি। শহীদ ড.গোবিন্দ চন্দ্র দেব তার মৃত্যুর পূর্বে দর্শন
গবেষণা,বিশেষ করে মানব কল্যাণ,সামাজিক প্রগতি,বিশ্বভ্রাতৃত্ব ও বিশ্বশান্তির জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের
রেজিস্ট্রারের অনুকূলে তার স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তির ৫০% উইল করে দিয়ে যান। তার
উইলকৃত অর্থে ১৯৮০ সালের ডিসেম্বর মাসে দর্শন বিভাগে প্রতিষ্ঠিত হয় "দেব সেন্টার ফর ফিলসফিক্যাল স্টাডিজ"। এই কেন্দ্রের উদ্যোগে
নিয়মিত ভাবে "দর্শন ও প্রগতি" নামে একটি বাংলা এবং Phylosophy and Progress নামে একটি ইংরেজি জার্নাল
প্রকাশিত হয়। কেন্দ্রের উদ্যোগে মাসিক সেমিনার এবং প্রতিবছর দেব স্মারক বক্তৃতা
অনুষ্ঠিত হয়।
ইতিহাস
১৯২১ সালের ১ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথেই ইতিহাস বিভাগের
যাত্রা শুরু হয়। শুরুতে মাত্র ৭ জন স্নাতক সম্মান শ্রেণীর শিক্ষার্থী থাকলেও ১৯২৩
সালে স্নাতকোত্তর শেষ পর্বে ১৪ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হয়। শুরুতে বিভাগে শিক্ষক
ছিলেন মাত্র ৫ জন। বর্তমানে ২৯ জন নিয়মিত শিক্ষক ও ২ জন সংখ্যাতিরিক্ত শিক্ষক, ১ জন অনারারি
শিক্ষক এবং ৫ জন খণ্ডকালীন শিক্ষক রয়েছেন। স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে
শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৬০০ জন। শুধু শিক্ষা ক্ষেত্রে নয়, সাংস্কৃতিক
কর্মকাণ্ডে ও খেলাধুলায় এ বিভাগের উজ্জ্বল ভূমিকা রয়েছে। ত্রিশের দশক থেকে আজ
পর্যন্ত বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামে এই বিভাগের ভূমিকা অপরিসীম। মুক্তিযুদ্ধে এই বিভাগের ৩ জন
শিক্ষক ও ৩ জন ছাত্র শহীদ হন।
আরবি
১৯২১ সালে আরবি ও ইসলামী স্টাডিজ বিভাগ হিসেবে ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয়ে আরবি শিক্ষা শুরু হয়। শামসুল ওলামা আবু নসর অহীদ ছিলেন আরবি
বিভাগের প্রথম বিভাগীয় প্রধান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এর ছাত্রদের মধ্য থেকে মধ্য
থেকে প্রথম উপাচার্য এই বিভাগেরই ছাত্র ও
শিক্ষক ডঃ এস.এম.হুসাইন। ১৯৮০ সালে আরবি বিভাগ
স্বতন্ত্র বিভাগে পরিণত হয়। প্রতিষ্ঠাকালে বিভাগের শিক্ষক ছিলেন মাত্র চার জন।
বর্তমানে (২০০৬) একুশ জন শিক্ষক আছেন এবং ছাত্র/ছাত্রী সংখ্যা প্রায় পাঁচ শতাধিক।
প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে এ বিভাগের শিক্ষার্থীরা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে
গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে।
ইসলামী
শিক্ষা
১৯২১ সালে প্রতিষ্ঠিত আরবি ও ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ ১৯৮০ সালে বিভক্ত হয়ে
স্বতন্ত্র "ইসলামিক স্টাডিজ" বিভাগ হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। বর্তমানে এই
বিভাগে প্রায় ১৭ জন শিক্ষক রয়েছেন। বিভাগটি কলাভবনের দ্বিতীয় তলায় অবস্থিত
হলেও বিভাগীয় সেমিনার লাইব্রেরি চতুর্থ তলায় অবস্থিত। সেমিনার লাইব্রেরীর পাশেই
রয়েছে বিভাগীয় শিক্ষকদের নিজস্ব অর্থায়নে তৈরি ছাত্রছাত্রীদের জন্য কম্পিউটার
ল্যাব। বর্তমানে বিভাগটিতে সেমিস্টার পদ্ধতির শিক্ষা ব্যবস্থা প্রবর্তিত আছে।
ইসলামের
ইতিহাস ও সংস্কৃতি
মাত্র তিন জন শিক্ষক নিয়ে ১৯৪৮ সালে ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ
প্রতিষ্ঠিত হয়। ইতিহাস বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক আব্দুল হালিম শুরুতে এই
বিভাগের অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। ১৯৫০ সালে অধ্যাপক আবু মাহমেদ হাবিবুল্লাহ বিভাগীয় প্রধানের
দায়িত্ব নিলে পূর্ণাঙ্গ বিভাগ হিসেবে যাত্রা শুরু হয় এই বিভাগের। আবু মাহমেদ
হাবিবুল্লাহ ছাড়াও বিভিন্ন সময়ে এই বিভাগে শিক্ষকতা করেছেন অধ্যাপক মমতাজুর
রহমান তরফদার,অধ্যাপক মুহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম,অধ্যাপক এস এম
ইমামুদ্দিন, অধ্যাপক আগা মাহদি হুসায়ন,অধ্যাপক এস.এ.কিউ.হুসায়নী প্রমুখ বিখ্যাত পণ্ডিতবর্গ।
সংস্কৃত
ও পালি
সংস্কৃত ও পালি ভাষা-সাহিত্য এ উপ-মহাদেশের প্রাচীন শিক্ষা,সংস্কৃতি,ধর্ম,দর্শন ও ইতিহাসের প্রধান বাহন। এ অঞ্চলের
অতীত ঐতিহ্যময় সঙ্গে সংস্কৃত ও পালির সম্পর্ক অবিচ্ছেদ্য। ১৯২১ সাল থেকেই ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয়ে সংস্কৃত ও পালি বিষয়ক শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়। তারপর বিভিন্ন
নামে বিভিন্ন সময়ে এ বিভাগ পরিচিতি লাভ করে। ১৯৫০ সালে বাংলা ও সংস্কৃত বিভাগ এবং
১৯৭০ সালে সংস্কৃত ও পালি বিভাগ। বর্তমানে শেষোক্ত নামই অব্যাহত আছে। এ উপমহাদেশের
প্রথিতযশা পণ্ডিতদের অনেকেই এই বিভাগের শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
তাঁদের মধ্যে মহামহোপাধ্যায়
হরপ্রসাদ শাস্ত্রী,ড. সুশিলকুমার
দে,ড. মুহাম্মদ
শহীদুল্লাহ প্রমুখের নাম উল্লেখযোগ্য। এই
বিভাগের স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রির সাথে সাথে এম.ফিল. ও পিএইচ.ডি
ডিগ্রির কার্যক্রমও শুরু হয়।
তথ্যবিজ্ঞান
ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা
তথ্যবিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা বিভাগের সূচনা ১৯৫৯ সালে,যদিও তখন এর
নাম ছিল 'গ্রন্থাগার বিজ্ঞান বিভাগ'। সে সময় এটি শুধু ডিপ্লোমা কোর্সে শিক্ষাদান করত। পরবর্তীকালে
গ্রন্থাগার বিজ্ঞানে স্লাতকোত্তর ডিগ্রি প্রদান শুরু হয়। ১৯৮৭ সালে বিভাগের নাম
পরিবর্তন করে 'গ্রন্থাগার ও তথ্যবিজ্ঞান বিভাগ' রাখা হয় এবং এটি তিন বছরের স্নাতক ডিগ্রি প্রদান শুরু করে। পরবর্তী
সময়ে বিভাগের নাম আবার পরিবর্তন করে রাখা হয় 'তথ্যবিজ্ঞান
ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা বিভাগ'। ২০০৪ সালের জুলাই থেকে
বিভাগে এম.এ (ইভনিং) ডিগ্রি প্রদান শুরু হয়।
ভাষাবিজ্ঞান
১৯৯২ সালে ভাষাবিজ্ঞান বিভাগ প্রতিষ্ঠিত হয়,যদিও ১৯৮০ সাল
থেকে বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থীরা স্নাতকোত্তর পর্যায়ে ভাষাবিজ্ঞান বিষয়ে অধ্যয়ন
করত। ভাষাবিজ্ঞান বিভাগে স্নাতক শ্রেণিতে ভর্তির কার্যক্রম ১৯৯৬-১৯৯৭ শিক্ষাবর্ষে
শুরু হয়। ভাষাবিজ্ঞান বিভাগ শুরু করার পর থেকেই এম. ফিল. ও পিএইচডি ডিগ্রি চালু
আছে।
নাট্যকলা
ও সঙ্গীত
১লা সেপ্টেম্বর ১৯৯৪ সালে নাট্যকলা ও সঙ্গীত বিভাগ প্রতিষ্ঠিত হয়।
এর পূর্তে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কলা অনুষদের অধীনে নাট্যকলা বিষয় ১৯৮৯ সালে,সঙ্গীত বিষয়
১৯৯৩ শিক্ষাবর্ষে সাবসিডিয়ারি কোর্স এবং ১৯৯৩-৯৪ শিক্ষাবর্ষ হতে নাট্যকলা ও
সঙ্গীত বিষয়ে এম. এ. (প্রিলিমিনারী) কোর্স চালু হয়। ১৯৯৫-৯৬ শিক্ষাবর্ষ হতে
সঙ্গীত বিষয়ে এবং ১৯৯৭-৯৮ শিক্ষাবর্ষ হতে নাট্যকলা বিষয়ে এম. ফিল. কোর্স চালু
হয়। বর্তমানে সঙ্গীত বিষয়ে পিএইচ.ডি. কোর্স চালু আছে। ১৯৯৭-৯৮ শিক্ষাবর্ষ হতে ৪
বছর মেয়াদী বি.এ.অনার্স কোর্স চালু হয়। ১৯৯৮ সালে নাট-মন্ডল নামে বিভাগের একটি
মিলনায়তন প্রতিষ্ঠিত হয়।
বিশ্ব
ধর্মতত্ত্ব
বিভিন্ন ধর্মের অনুসারীদের পরস্পরকে জানা ও উপলব্ধি করা এবং
পারস্পরিক সৌহার্দের পরিবেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৯৯ সালে
তুলনামূলক ধর্ম বিভাগ প্রতিষ্ঠিত হয়। এক বছরের মধ্যেই এর নাম পরিবর্তন করে বিশ্ব
ধর্মতত্ত্ব রাখা হয়। ১৯৯৮-৯৯ শিক্ষাবর্ষ হতে এম.এ. এবং ২০০৫-০৬ শিক্ষাবর্ষ হতে
বি.এ.অনার্স কোর্স চালু হয়।
বিজ্ঞান অনুষদ
কার্জন
হল-মূল ভবন
১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে বিজ্ঞান অনুষদ
এর শিক্ষা ও গবেষণা কার্যক্রম শুরু হয়। প্রথমে পদার্থ বিজ্ঞান,রসায়ন ও গণিত
এই তিনটি বিভাগ নিয়ে এই অনুষদ যাত্রা শুরু করে। বিজ্ঞান অনুষদের অধীনে কয়েকটি
কেন্দ্র আছে। এগুলো হলঃ বোস সেন্টার ফর অ্যাডভান্সড স্টাডিজ অ্যান্ড রিসার্চ,সেমি কন্ডাক্টর টেকনোলজি রিসার্চ সেন্টার,রিনিউয়েবল
এনার্জি রিসার্চ সেন্টার,ব-দ্বীপ গবেষণা কেন্দ্র,দু্র্যোগ গবেষণা প্রশিক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা কেন্দ্র।
পদার্থ
বিজ্ঞান
কার্জনহলের
মূল ভবনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগ
১৯২১ সালে প্রতিষ্ঠিত বারটি বিভাগের একটি হল পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগ।
প্রায় জন্ম লগ্নেই এই বিভাগের শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন কলকাতা
বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণ শিক্ষক ও প্রতিভাবান
বিজ্ঞানী সত্যেন্দ্রনাথ
বসু। দেশ বিভাগের সময় অধিকাংশ কৃতী শিক্ষক এই বিভাগ ত্যাগ করে ভারতে
চলে যান। তারপরও পরবর্তীকালে তাত্ত্বিক পদার্থ বিজ্ঞান,নিউক্লীয় পদার্থ বিজ্ঞান,কঠিনাবস্থার
পদার্থ বিজ্ঞান,জৈব ও চিকিৎসা পদার্থ বিজ্ঞান,সৌরশক্তি,ভূ-পদার্থ বিজ্ঞান,আবহাওয়া বিজ্ঞান ও
লেজার পদার্থ বিজ্ঞানে ক্রমে ক্রমে সক্রিয় গবেষকের কর্মকাণ্ডে এই বিভাগ বর্তমানে
বাংলাদেশের বৃহত্তম বিজ্ঞান বিভাগে পরিণত হয়েছে এবং এর অবদান ও সম্প্রসারণ
অব্যাহত রয়েছে।
গণিত
১৯২১ সালে প্রখ্যাত গণিতবিদ অধ্যাপক ভূপতিমোহন সেন ও ডঃ নলিনীমোহন
বসুর নেতৃত্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গণিত বিভাগের কার্যক্রম শুরু হয়। প্রথমে
পূর্ব বাংলা সরকারের সচিবালয় ভবনের কক্ষে এবং কিছু কাল কার্জন হলের পশ্চিম
দোতালায় গণিত বিভাগ অবস্থিত ছিল। তারপর বর্তমান প্রাণিবিদ্যা বিভাগের নীচতলার
পূর্বদিকের অর্ধাংশে বিভাগটি সাময়িক অবস্থিত ছিল। এরপর একই ভবনের তিন তলার পশ্চিম
দিকের অর্ধেক অংশ গণিত বিভাগকে দেওয়া হয়। সর্বশেষ, ১৯৬৫ সালে সায়েন্স অ্যানেক্স
ভবনের তিন তলা গণিত বিভাগের জন্য ঠিক করা হয়। ১৯৭৪-৭৫ শিক্ষাবর্ষে এম.ফিল. কোর্স
এবং ১৯৯৬-৯৭ শিক্ষাবর্ষে চার বছর মেয়াদী সমন্বিত সম্মান কোর্স চালু হয়। বর্তমানে
এ বিভাগের শিক্ষকের সংখ্যা ৩৬ জন এবং ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ১৫৯৩ জন। বর্তমানে এই বিভাগের
সকল কর্মকান্ড মুজিবর রহমান গণিত বিভাগে চালু আছে।
রসায়ন
ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগ বাংলাদেশের একটি অন্যতম
ঐতিহ্যবাহী বিভাগ। ১৯২১ সালে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সাথেই এই বিভাগের শুরু।
সম্মান,স্নাতক,এম.ফিল. ও পি.এইচ.ডি শল বর্তমানে এই
বিভাগের ছাত্র-ছাত্রী সংখ্যা প্রায় ৯১০ জন ও শিক্ষক ৩৬ জন। এই বিভাগের প্রাক্তন
বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক মোকাররম
হোসেন খোন্দকারের নামানুসারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মোকাররম হোসেন
খোন্দকার বিজ্ঞান ভবন নির্মিত হয়েছে। বিজ্ঞানী মোকাররম
হোসেনের স্মরণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মার্চ ১২, ১৯৮১ থেকে বিজ্ঞান ভিত্তিক
স্মারক বক্তৃতা চালু হয়,যা আজও অব্যাহত রয়েছে। এই বিভাগে প্রাক্তন ছাত্র কর্তৃক বিভাগের
ছাত্র/ছাত্রীদের জন্য দুইটি অভ্যন্তরীণ বৃত্তি প্রচলিত রয়েছে। এগুলো হল যথাক্রমে ফাতেমা-তামিজউদ্দিন
স্কলারশিপ এবং আব্দুল আজিজ পাটোয়ারী মেমোরিয়াল আন্ডারগ্রাজুয়েট স্কলারশিপ।
পরিসংখ্যান
বাংলাদেশের প্রথম একাডেমিক ভাবে স্বীকৃত পরিসংখ্যানবিদ ও সাহিত্যিক
অধ্যাপক ডঃ কাজী
মোতাহার হোসেন বাংলাদেশে পরিসংখ্যান শিক্ষা ও
গবেষণা বিস্তারে সুদূরপ্রসারী চিন্তাভাবনা করে মাত্র একজন সুদক্ষ পরিসংখ্যানবিদ
শহীদ অধ্যাপক এ.এন.এম. মুনিরুজ্জামানকে নিয়ে ১৯৫০ সালে ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিসংখ্যান বিভাগের গোড়াপত্তন করেন। কাজী মোতাহার হোসেন ছিলেন এর
প্রথম বিভাগীয় প্রধান। এই বিভাগের কয়েকজন পরিসংখ্যানবিদ আন্তর্জাতিক খ্যাতি
অর্জনে সক্ষম হয়েছেন। এই বিভাগে স্নাতক (সম্মান),স্নাতকোত্তর, এম.ফিল ও পি.এইচ.ডি পর্যায়ে শিক্ষা ও গবেষণার সুযোগ সুবিধা রয়েছে।
জৈবরাসায়নিক
পদার্থবিদ্যা এবং প্রযুক্তি
কার্জন হল ভবনের পূর্ব পার্শ্বের নিচতলায় দুইটি এবং দোতলায় একটি
কক্ষে মোট ১৫০০ বর্গফুট জায়গায় এ বিভাগের কার্যক্রম চলছে। অধ্যাপক খন্দকার
সিদ্দিক-ই-রাব্বানী এর প্রথম চেয়ারপার্সন হিসাবে
যোগদানের মধ্যদিয়ে বিভাগটির কার্যক্রম ৩ নভেম্বর ২০০৮ সালে শুরু হয়। নিজস্ব
প্রযুক্তি উন্নয়নের মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবায় আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অবদান
তৃতীয় বিশ্ব তথা সমগ্র বিশ্বের বঞ্চিত সাধারণ জনগণের কাছে সহজলভ্য করে দেয়ার
উদ্দেশ্য নিয়ে এ বিভাগ তার গবেষণা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। এ বিভাগ মূলত:
প্রায়োগিক এবং উদ্দেশ্যমূলক গবেষণার উপর জোর দিচ্ছে। বর্তমানে পিএইচডি ও এম ফিল
কার্যক্রম চলছে। বিজ্ঞান,ইঞ্জিনিয়ারিং এবং চিকিৎসাবিজ্ঞানের যে কোন শাখা
থেকে উত্তীর্ণ প্রার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী এ বিভাগে ভর্তি হবার
যোগ্য। অবশ্য তা নির্ভর করবে বিভাগের গবেষণার বিষয়বস্তুর অগ্রাধিকার,তত্ত্বাবধায়ক
এবং ছাত্রের পারস্পরিক পছন্দের সম্মিলনের উপর।
তাত্ত্বিক
পদার্থবিজ্ঞান
তাত্ত্বিক
পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের নামফলক,কার্জনহল,ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয়
তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ,ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ১৯৭৫ সালে
প্রতিষ্ঠিত হয়। কিন্তু প্রয়োজনীয় অনুষদ ও অবকাঠামোর অভাবে তিন বছর পরই বিভাগটি
বন্ধ হয়ে যায়। অধ্যাপক এ এম
হারুন-অর-রশিদ বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান
ছিলেন। পরবর্তীতে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে
২০০৭ সালে এটি পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়।
ফলিত
গণিত
১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর গণিত বিভাগ থেকেই
ফলিত গণিতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী দেওয়া হত। ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষে মুজিবর রহমান গণিত
ভবনে ফলিত গণিত বিভাগটি স্বতন্ত্রভাবে চালু হয়। বর্তমানে এই বিভাগে স্নাতক এবং
স্নাতকোত্তর কোর্স চালু আছে।
আইন
অনুষদ
১৯২১ সালে প্রতিষ্ঠিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যে তিনটি অনুষদ নিয়ে
যাত্রা শুরু করে আইন অনুষদ তাদের অন্যতম। ১৯৭৩ সাল পর্যন্ত আইন অনুষদের অধীনে দু'বছর মেয়াদী
স্নাতক কোর্স এল এল বি (সান্ধ্যকালীন) চালু ছিল। ১৯৭৩-৭৮ শিক্ষাবর্ষ হতে এল এল বি
কোর্স এর পরিবর্তে তিন বছর মেয়াদী এল এল বি অনার্স কোর্স চালু করা হয়। ১৯৭৬-৭৭
শিক্ষাবর্ষ হতে এল এল বি (অনার্স) চার বছর করা হয়। এ অনুষদ থেকে Journal
of the Faculty of Law (The Dhaka University Studies Part-F) নামে একটি বার্ষিক
পত্রিকা নিয়মিত প্রকাশিত হচ্ছে।
আইন
১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যে সকল বিভাগ নিয়ে যাত্রা শুরু করে,আইন বিভাগ
তাদের অন্যতম। ১৯৭৩ সাল পর্যন্ত আইন বিভাগের অধীনে শুধুমাত্র দু'বছর মেয়াদী স্নাতক কোর্স এলএল.বি. (সান্ধ্যকালীন) চালু ছিল। ১৯৭৩-৭৪
শিক্ষাবর্ষ হতে দুই বছর মেয়াদী এলএল.বি. কোর্সের পরিবর্তে তিন বছর মেয়াদী
এলএল.বি. (অনার্স) কোর্স প্রবর্তন করা হয়। ১৯৭৭-৭৮ শিক্ষাবর্ষ হতে এলএল.বি.
(অনার্স) কোর্সের মেয়াদ চার বছরে বর্ধিত করা হয়। ২০০৪-৫ শিক্ষাবর্ষে এলএল.বি.অনার্স-এর পাঠ্যক্রম নতুনভাবে প্রণয়ন করা হয়,যাতে মোট
১৭০০ নম্বরের স্থলে ২৩০০ নম্বরের মোট ২৪টি কোর্স অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। প্রতি
বছর কলা এবং সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের অধীনে
অনুষ্ঠিত ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে ছাত্র-ছাত্রীরা এই বিভাগে ভর্তি হবার সুযোগ পায়।
আইন বিভাগে ১৯৭৬-৭৭ শিক্ষাবর্ষে এলএল.এম. কোর্স খোলা হয়। ২০০৬-০৭ শিক্ষাবর্ষ থেকে
সাধারণ এলএল.এম.-এর পাশাপাশি বিশেষায়িত এলএল.এম. ডিগ্রিও প্রদান করা হচ্ছে।
১৯৯১-৯২ শিক্ষাবর্ষে আইন বিভাগে সর্বপ্রথম এম.ফিল. কোর্স প্রবর্তিত হয়। বর্তমানে
এই বিভাগ থেকে পিএইচ.ডি. ডিগ্রিও প্রদান করা হচ্ছে।
বর্তমানে আইন বিভাগে যে সব ডিগ্রি দেয়া হয়ঃ
বর্তমানে আইন বিভাগে যে সব ডিগ্রি দেয়া হয়ঃ
·
এলএল.বি. (অনার্স)
·
এলএল.এম. (সাধারণ)
·
এলএল.এম. (বিশেষায়িত)
·
এম.ফিল.
·
পিএইচ.ডি.
সামাজিক
বিজ্ঞান অনুষদ
১৯৭৩ সালে এই অনুষদ প্রতিষ্ঠা করা হয়। ২০০৬-০৭ শিক্ষাবর্ষ থেকে
সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদে সেমিস্টার পদ্ধতি এবং জিপিএ-ভিত্তিক গ্রেডিং ব্যবস্থা চালু
করা হয়।
অর্থনীতি
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের যাত্রা ১৯২১ সাল থেকেই
শুরু। শিক্ষা ও গবেষণার প্রসারে এ বিভাগের দীর্ঘ ঐতিহ্য রয়েছে। প্রথম থেকেই উন্নত
শিক্ষা ও আধুনিক জ্ঞান চর্চার একটি কেন্দ্রে পরিণত হয় অর্থনীতি বিভাগ। এ বিভাগ
দেশের মূলধারার অর্থনীতি চর্চার ক্ষেত্রে দিকনির্দেশকের ভূমিকা পালন করে এবং দেশের
অর্থনীতি বিষয়ক ইস্যু গুলো নিয়ে আলোচনা করে। এ বিভাগের শিক্ষক ও ছাত্রদের গবেষণা
পত্র পৃথিবীর বিখ্যাত জার্নাল সমূহে প্রকাশিত হয়েছে। বর্তমানে ৩০ জন শিক্ষক এ
বিভাগে কর্মরত আছেন। বিভিন্ন বর্ষ মিলিয়ে প্রায় ৭৫০ জন ছাত্র ছাত্রী এই বিভাগে
শিক্ষা গ্রহণ করছে।
রাষ্ট্রবিজ্ঞান
১৯৩৮ সালে অর্থনীতি বিভাগ থেকে পৃথক হয়ে একটি স্বতন্ত্র বিভাগ
হিসেবে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের যাত্রা শুরু। দেবেন্দ্রনাথ ব্যানার্জি ছিলেন এই
বিভাগের প্রতিষ্ঠা চেয়ারম্যান। সেই থেকে শুরু করে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ এখন ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম বৃহত্তম বিভাগ। বর্তমানে এই বিভাগে ছাত্র সংখ্যা প্রায় ১,২০০। এর মধ্যে
৯২৫ জন সম্মান শ্রেণীর। ১৯৮৬ সাল থেকে এই বিভাগ পি.এইচ.ডি ডিগ্রি প্রদান শুরু করে।
বর্তমানে (২০০৬) এই বিভাগে শিক্ষক সংখ্যা ৩২ জন। এখানে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের প্রায়
সকল শাখায় শিক্ষা প্রদান করা হয়। এর মধ্যে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের রাষ্ট্রচিন্তা,বাংলাদেশের রাজনীতি, আন্তর্জাতিক
রাজনীতি,মধ্যপ্রাচ্য ও পূর্ব এশিয়ার রাজনীতি বিশেষভাবে
উল্লেখযোগ্য। এই বিভাগের শিক্ষকগণ বেশ কয়েকটি গবেষণা কেন্দ্র পরিচালনা করেছেন।
এগুলো হচ্ছে Center for East Asian Studies,Center for Human
Society এবং Center
for Japan Studies.
আন্তর্জাতিক
সম্পর্ক
১৯৪৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের
যাত্রা শুরু হয়। দক্ষিণ এশিয়ায় আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিদ্যার পাঠদান এই বিভাগটিই
প্রথম শুরু করেছিল। কেবল এম.এস.এস. প্রোগ্রাম দিয়ে যাত্রা শুরু হলেও ১৯৬৮ সাল
থেকে বি.এস.এস. প্রোগ্রাম শুরু হয়। এই বিভাগে একটি সার্টিফিকেট কোর্সও চালু আছে।
২০০৬-২০০৭ সেশন থেকে সেমিষ্টার পদ্ধতি চালু হয়।পোষ্ট প্রাজুয়েট ইন আইআর বা
পিজিডি ইন আইআর চালু রয়েছে। বর্তমানে এটি সামাজিক বিজ্ঞান বিভাগ অনুষদের একটি
উল্লেখযোগ্য বিভাগ।
বর্তমানে এই বিভাগে শিক্ষক সংখ্যা ৩০ জন। বিভাগের প্রধান হিসেবে
বর্তমানে দায়িত্ব পালন করছেন অধ্যাপক আশেকা ইরশাদ । অধ্যাপকদের মধ্যে অন্যতম
হচ্ছেন আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা বিশ্লেষক অধ্যাপক এম শাহিদুজ্জামান,সমুদ্র আইন
বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক মো রমজুল হক,আন্তর্জাতিক সর্ম্পকের
বিশ্লেষক অধ্যাপক ড.ইমতিয়াজ আহমেদ,অধ্যাপক ড.আকমল
হোসাইন,অধ্যাপক মো আব্দুল হালিম,অধ্যাপক ড.দেলোয়ার হোসাইন,অধ্যাপক ড.আমেনা
মহসিন এবং মানবাধিকার,অভিবাসন ও শরণার্থী বিশেষজ্ঞ
অধ্যাপক ড. সি আর আবরার।
Journal of IR (JIR) নামে বিভাগ থেকে একটি নিয়মিত
জার্নাল প্রকাশিত হয়। প্রফেসর ইমতিয়াজ আহমেদ সম্পাদক হিসেবে জার্নালের দায়িত্বে
রয়েছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান ভবনের ৬ষ্ঠ তালায় এই বিভাগটি
অবস্থিত। বিভাগের একটি ওয়েব আছে। বিভাগের একটি
কম্পিউটার ল্যাব ও আধুনিক সেমিনার লাইব্রেরি আছে।
সমাজবিজ্ঞান
প্রয়াত অধ্যাপক এ.কে.নাজমুল করিমের উদ্যোগে ও ইউনিসেফের আর্থিক সহযোগিতায় ১৯৫৭ সালে ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয়ে কলা অনুষদের অধীনে সমাজবিজ্ঞান বিভাগ প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৭৩ সনে সামাজিক বিজ্ঞান
অনুষদ চালু হবার পর বিভাগটি এই অনুষদের অন্তর্ভুক্ত হয়। এই বিভাগে স্নাতক
(সম্মান) ও স্নাতকোত্তর প্রোগ্রামের সাথে সাথে পি.এইচ.ডি ও এম.ফিল. প্রোগ্রাম চালু
আছে। সমাজবিজ্ঞান বিভাগে অধ্যাপক নাজমুল করিম প্রতিষ্ঠিত একটি জাদুঘর আছে যা
বাংলাদেশের সার্বিক সংস্কৃতিকে প্রতিফলিত করে।
লোক
প্রশাসন
ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয় লোক প্রশাসন বিভাগ
স্বাধীন বাংলাদেশে ১৯৭২ সালে ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয়ে লোক প্রশাসন বিভাগ চালু হয়। প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকেই এই বিভাগে
মাস্টার্স কোর্স চালু হয়। এরপর আশির দশকের প্রথম দিকে এম.ফিল. ও পিএইচ.ডি কোর্স
চালু হয়। এই বিভাগ প্রতিষ্ঠার সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধীনতা-উত্তর প্রথম
উপাচার্য অধ্যাপক মোজাফফর আহমেদ চৌধুরী এবং লোক প্রশাসন বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা
অধ্যাপক নুর মুহাম্মদ মিঞার ভূমিকা গুরুত্বের সাথে স্মরণীয়। শুরুতে রাষ্ট্র
বিজ্ঞান বিভাগ থেকে পাঁচজন শিক্ষক লোক প্রশাসন বিভাগে যোগদান করে। স্নাতক (সম্মান)
ডিগ্রির সাথে সাথে এই বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর ও এম.ফিল ডিগ্রি প্রদান করা হয়।
গণযোগাযোগ
ও সাংবাদিকতা
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ চালু হয় ১৯৬২ সালে। প্রথমে এর নাম
ছিল সাংবাদিকতা বিভাগ এবং তখন কেবল এক বছরের ডিপ্লোমা কোর্স ছিল। ১৯৬৮ সালে ডিপ্লোমা কোর্সের
সাথে দুই বছর মেয়াদী মাস্টার্স কোর্স চালু হয়। ১৯৭৮ সালে তিন বছর মেয়াদী
স্নাতক (সম্মান) কোর্স চালু হয়। বর্তমানে চার বছর মেয়াদী সম্মান কোর্স চালু আছে।
বৈশ্বিক পর্যায়ে এবং বাংলাদেশেও মুদ্রণ ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার প্রসারের সাথে সাথে
এই বিভাগের গুরুত্ব দিন দিন বাড়ছে। প্রতিবছর এই বিভাগে ৭০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি
হয়। তত্ত্বীয় অনেক কোর্সের পাশাপাশি ভিডিও,ফটোগ্রাফি ও ডিটিপির মত কারিগরী অনেক কোর্সও
চালু আছে।
নৃবিজ্ঞান
৫ ডিসেম্বর ১৯৯২ সালে ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয়ে সামাজিক বিজ্ঞানের একটি স্বতন্ত্র শাখা হিসেবে নৃবিজ্ঞান বিভাগের
প্রাতিষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়। এর প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান বিশিষ্ট সমাজবিজ্ঞানী
ও নৃবিজ্ঞানী অধ্যাপক ডঃ
আনোয়ারউল্লাহ চৌধুরী। স্বল্পসংখ্যক শিক্ষক নিয়ে ঐ সময় এই বিভাগের
কার্যক্রম শুরু হয় এবং ১৯৯৩ সালের জানুয়ারি মাসে
প্রথম ব্যাচের ক্লাস শুরু হয়। ইতিমধ্যে বিভাগটি দুই যুগ অতিক্রম করেছে।বিভাগের চলমান প্রধান হলেন হাসান আল শাফি।
প্রফেসর আরেফিন, প্রফেসর শাহীন আহমেদ, প্রফেসর জাহিদসহ বিশিষ্ট নৃবিজ্ঞানীগণ যারা বিগত কয়েক দশক সুনামের
সাথে নৃবিজ্ঞান অনুশীলন করে যাচ্ছেন।
জনসংখ্যা
বিজ্ঞান
১৯৯৮ সালে ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয়ে পপুলেশন সাইন্স বিভাগ তার যাত্রা শুরু করে। দেশের জনসংখ্যা
সম্পর্কিত বিষয়গুলো যথাযথভাবে অনুধাবন করে কার্যকর ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে
প্রশিক্ষিত ও দক্ষ জনশক্তি তৈরির জন্য UNFPA- বাংলাদেশ এই বিভাগকে অর্থায়ন করছে। এই বিভাগ
থেকে দুইবছর মেয়াদী সান্ধ্যকালীন "Master of Population Science" (MPS)
Professional Degree Programme প্রদান করা হয়। এই বিভাগে প্রতি বছর ২৫ জন করে
ছাত্রছাত্রী নেওয়া হয়,যার মধ্যে ১০টি আসন মেয়েদের
জন্য সংরক্ষিত।
শান্তি
ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন
৮ জুন ১৯৯৯-এ "শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন" বিভাগ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
উপমহাদেশে শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন বিভাগ একমাত্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েই রয়েছে।এই বিভাগে বছরে দুইটি দিনে দুটি
"লেকচার সেশন" অনুষ্ঠিত হয়। প্রথমতঃ; ৮ জুন Foundation
Day Lecture এবং দ্বিতীয়তঃ; ২১ সেপ্টেম্বর Gan-Sohagi
International Peace Day Lecture.
নারী
শিক্ষা
উইমেন্স স্টাডিজ বিভাগ ২০০০ সনের এপ্রিল মাসে
প্রতিষ্ঠিত হয়। অধ্যাপক নাজমা চৌধুরীর চেয়ারম্যান হিসাবে দায়িত্ব গ্রহণের
মাধ্যমে বিভাগীয় কার্যক্রম শুরু হয়। এই বিভাগের সাথে Royal
Netherland Embassy-এর ৫ বছর মেয়াদী চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। এর আর্থিক সহায়তায় কলা
ভবনের পঞ্চম তলায় বিভাগের জন্য বিভিন্ন স্থাপনা গড়ে তোলা হয়েছে।
উন্নয়ন
শিক্ষা
বাংলাদেশের মত উন্নয়নশীল দেশের উন্নয়ন নীতি বিশ্লেষণে তাত্ত্বিক
ও ব্যবহারিক জ্ঞানের সমন্বয়ে দক্ষ জনশক্তি সৃষ্টির লক্ষ্যে ২০০৩ সালে ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয়ে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদে দুই বছর মেয়াদী (চার সেমিস্টার)
মাস্টার্স অব ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম স্টাডিজ প্রোগ্রামে ভর্তি চালু হয়। ডেনিশ সরকার মার্চ ২০০৫ এক বছরের জন্য বিভাগের
উন্নয়নকল্পে "DDS-DANIDA" শীর্ষক একটি প্রকল্প সহায়তা প্রদান করে।
প্রকল্পের আওতায় বিভাগের শিক্ষা কার্যক্রম উন্নয়নের জন্য অবকাঠামোগত উন্নয়ন,শিক্ষকদের গবেষণা ও আনুষঙ্গিক উন্নয়ন কার্যক্রম গ্রহণ করা
হয়েছে।
টেলিভিশন, চলচ্চিত্র ও আলোকচিত্র
টেলিভিশন অ্যান্ড ফিল্ম স্টাডিজ বিভাগের যাত্রা শুরু হয় ২০১২
সালের ২৩শে জানুয়ারী। প্রথমে বিভাগটিতে শুধু
মাস্টার্স কোর্স চালু ছিল। ২০১৪ সাল থেকে চার বছর মেয়াদী অনার্স কোর্স চালু
হয়েছে। দেশের মানসম্পন্ন চলচ্চিত্রকারকের সঙ্কট নিরসনে টেলিভিশন এন্ড ফিল্ম
স্টাডিজ বিভাগ কাজ করছে। বিভাগটিতে চলচ্চিত্র,ডকুমেন্টারিসহ নানা ধরনের
প্রোডাকশনের প্রায়োগিক দিক বিশেষভাবে প্রাধান্য পায়।
অপরাধতত্ব
৩০ এপ্রিল ২০১২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটের অনুমোদনে
সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের একটি স্বতন্ত্র শাখা হিসেবে বিভাগটির যাত্রা শুরু হয়।
অধ্যাপক ড. জিয়া রহমান ২৪ নভেম্বর ২০১৩ সালে
বিভাগটির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হিসেবে যোগদান করেন। বিভাগটি ২০১৩-২০১৪
শিক্ষাবর্ষ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রির কার্যক্রম শুরু করেছে এবং বর্তমানে
বি.এস.এস. (সম্মান) ও এম.এস.এস. ইন ক্রিমিনলজি এ্যান্ড
ক্রিমিনাল জাস্টিস (স্নাতকোত্তর) প্রোগ্রামে শিক্ষার্থীরা অধ্যয়ন
করছেন।
ব্যবসায়
শিক্ষা অনুষদ
বিজনেস
স্টাডিজ অনুষদ
১৯৭০ সালে বাণিজ্য অনুষদ ম্যানেজমেন্ট ও একাউন্টিং নামে ২ টি বিভাগ
নিয়ে যাত্রা শুরু করে। ১৯৭৪ সালে মার্কেটিং ও ফিন্যান্স নামে আরও দুটি নতুন
বিভাগের সূচনা হয়। ১৬ জুলাই ১৯৯৫ তারিখ থেকে নাম পরিবর্তন করে বিজনেস স্টাডিজ
অনুষদ করা হয়। এ বিভাগে এমবিএ বিবিএ প্রোগ্রামে প্রায় ৬০০০ ছাত্রছাত্রী রয়েছে।
এছাড়াও সান্ধ্যকালিন এমবিএ কোর্স চালু রয়েছে।
ব্যবস্থাপনা
শিক্ষা
১৯৭০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ম্যানেজমেন্ট বিভাগ স্থাপিত হয়। জুন
২ ২০০১ পর্যন্ত এই বিভাগের নাম ছিল ব্যবস্থাপনা বিভাগ। জুন ৩, ২০০১ সালে এই
বিভাগের নামকরণ করা হয় ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগ। স্থাপিত হবার পর থেকেই
ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগ দক্ষ মানবসম্পদ উন্নয়নের জন্য যুগোপযোগী সিলেবাস
প্রণয়ন করে বিশেষায়িত শিক্ষা প্রবর্তন ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে আসছে। এই
বিভাগে বিবিএ,এমবিএ,এম. ফিল,পিএইচ.ডি প্রোগ্রাম চালু আছে।
একাউন্টিং
এন্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস
একাউন্টিং এন্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগ ১৯৭০ সালে ১৪০ জন
ছাত্র-ছাত্রী এবং ৮ জন শিক্ষক নিয়ে হিসাব বিজ্ঞান বিভাগ নামে যাত্রা শুরু করে। এর
উদ্দেশ্য বাস্তব ক্ষেত্রে হিসাব বিজ্ঞান পেশা গ্রহণ ও প্রয়োগের লক্ষ্যে
শিক্ষার্থীদের সুনির্দিষ্ট জ্ঞান ও কৌশল শিক্ষাদানের জন্য বিভাগ স্নাতক এবং
স্নাতকোত্তর প্রোগ্রাম চালু করা। দেশের হিসাববিজ্ঞান পেশা,শিক্ষা ও
গবেষণায় বিভাগের অবদান এখনও পর্যন্ত সর্বোচ্চ পর্যায়ে রয়েছে।বর্তমানে আসন
সংখ্যা ১৮০ জন।
মার্কেটিং
মার্কেটিং বিভাগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাণিজ্য অনুষদের অন্তর্গত
একটি বিভাগ যা বাংলাদেশের ব্যবসায় শিক্ষা ক্ষেত্রে একটি আন্তর্জাতিক মানের
প্রতিষ্ঠান হিসাবে স্বীকৃত। ১৯৭৪ সালের ১ জুলাই এই বিভাগ প্রতিষ্ঠিত
হয়। এর প্রথম বিভাগীয় প্রধান ছিলেন প্রয়াত অধ্যাপক ড. আবদুল্লাহ ফারুক। ১৯৭৪-৭৫ শিক্ষাবর্ষে মাত্র চার
জন শিক্ষক ও ৪৯ জন শিক্ষার্থী নিয়ে এই বিভাগ যাত্রা শুরু করে। এই বিভাগ থেকে
প্রতিবছর নিয়মিত ভাগে প্রকাশিত হয় "জার্নাল অফ মার্কেটিং" নামক একটি
স্বীকৃত জার্নাল। ২০০১-০২ শিক্ষাবর্ষে মার্কেটিং
বিভাগে EMBA
(সান্ধ্যকালীন MBA) প্রোগ্রাম
চালু হয়। এই বিভাগ থেকে বিবিএ,এমবিএ,ইএমবিএ,এমফিল ও পিএইচ.ডি প্রদান করা হয়।
অর্থসংস্থান
অর্থসংস্থান বিভাগ প্রতিষ্ঠিত হয় ১ জুলাই ১৯৭৪ সালে। এই বিভাগ থেকে
বিবিএ,এমবিএ,এমফিল ও
পিএইচ.ডি প্রদান করা হয়। সম্প্রতি সান্ধ্যকালীন এমবিএ চালু করা হয়েছে।
প্রতিষ্ঠিত হবার পর থেকেই অর্থসংস্থান বিভাগ দক্ষ মানবসম্পদ উন্নয়নের জন্য
যুগোপযোগী সিলেবাস প্রণয়ন করে বিশেষায়িত শিক্ষা প্রবর্তন ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা
করে আসছে।
ব্যাংকিং
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েই সর্বপ্রথম সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর
মধ্যে বাণিজ্য অনুষদের অধীনে ব্যাংকিং বিভাগ চালু হয়। মুক্ত বাজার অর্থনীতি ও
ব্যবসা-বাণিজ্যে বিশ্বায়ন প্রক্রিয়ার কারণে ব্যাংকিং বিষয়ের শিক্ষা কার্যক্রম
যখন চাহিদার সাথে সংগতি রেখে বাস্তবমুখী ও জটিল হচ্ছে,তখন ব্যাংকিং
বিভাগ সময়ের প্রয়োজনে দেশের ব্যাংক তথা ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনায় সুযোগ ও দক্ষ
মানব সম্পদ তৈরিতে অগ্রণী ভূমিকা পালনের জন্য প্রতিষ্ঠিত হয়। ২০০৪ সালের আগস্ট মাসে এই
বিভাগ প্রতিষ্ঠিত হয়।
ম্যানেজমেন্ট
ইনফরমেশন সিস্টেমস
অধ্যাপক ড.আব্দুল মান্নান চৌধুরীকে প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান
নিয়োগের মাধ্যমে ২০০৫ সালের ১২ এপ্রিল এই বিভাগ প্রতিষ্ঠিত
হয়। এমবিএ প্রোগ্রামের সাথে সাথে এই বিভাগে সান্ধ্যকালীন এমবিএ প্রোগ্রাম চালু
হয়েছে। বিভাগটি বিবিএ ১৩ টি ব্যাচের শিক্ষা কার্যক্রম নিচ্ছে।
আন্তর্জাতিক
ব্যবসা
আন্তর্জাতিক ব্যবসায় বিভাগ ২০০৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এই বিভাগ
ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের অন্তর্ভুক্ত। এটি আন্তর্জাতিক ব্যবসায় স্নাতক এবং
স্নাতকোত্তর শিক্ষা প্রদান করে। আন্তর্জাতিক ব্যবসায় বিভাগ আন্তর্জাতিক
ব্যবসায়ের জন্য দক্ষ মানব সম্পদ তৈরির দায়িত্ব পালন করছে।
পর্যটন
এবং আতিথেয়তা ব্যবস্থাপনা
২০০৭ সালে পর্যটন ও আতিথেয়তা ব্যবস্থাপনা বিভাগ প্রতিষ্ঠিত হয়।
পর্যটন ও আতিথেয়তা শিল্পে যোগ্য এবং প্রশিক্ষিত কর্মীর প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদ এই বিষয়ে ডিগ্রি প্রদানের জন্য এটি
প্রতিষ্ঠা করে।
অর্গানাইজেশন
স্ট্র্যাটেজি এন্ড লিডারশিপ
প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ড.আব্দুল মঈন এর হাত ধরে ২০১৬ সালের ৩০ জুন এই বিভাগটি প্রতিষ্ঠা
লাভ করে।বিজনেস স্টাডিজ অনুষদের একটি গুরুত্বপূর্ণ ও সর্বকনিষ্ঠ বিভাগ এটি। যেকোনো
সংগঠনের প্রাণ হচ্ছে এর লিডার । আমাদের দেশের প্রাইভেট সেক্টরে মিড/টপ লেভেলের
সুদক্ষ ম্যানেজার যোগান দেয়া;যাদের কাজ হবে
প্রতিযোগিতাপূর্ণ বাণিজ্যিক পরিবেশে ক্রমাগত সুপ্রভাব বিস্তার করা।এছাড়া সফল
উদ্যোক্তা তৈরিতে দেশের একমাত্র বিভাগ হিসেবে নিরন্তর গবেষণা কর্ম চালিয়ে যাচ্ছে
বিভাগটি।শুরু থেকেই বৈচিত্র্যময় পাঠ কার্যক্রম,প্রয়োগমুখি
শিক্ষা এবং ধারাবাহিক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ কর্পোরেট লিডার গড়ে তোলার এই
উদ্যোগ দেশের ব্যাবসা-বাণিজ্যের জন্য অন্যতম মাইলফলক।বর্তমানে এই বিভাগে BBA,DBA,MBA,EMBA,MPhil
এবং PhD কোর্স করার
সুযোগ রয়েছে।
জীববিজ্ঞান
অনুষদ
১৯৭৪ সালে উদ্ভিদ বিজ্ঞান,প্রাণিবিদ্যা,মৃত্তিকা
পানি ও পরিবেশ,ফার্মেসি,প্রাণরসায়ন
ও অণুপ্রাণ বিজ্ঞান এবং মনোবিজ্ঞান বিভাগ নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞান
অনুষদ গঠিত হয়। ১৯৭৯ সালে অণুজীব বিজ্ঞান বিভাগ নামে একটি বিভাগ,১৯৯৭ সালে
চিকিৎসা মনোবিজ্ঞান ও মৎসবিজ্ঞান নামে দুটি নতুন বিভাগ এবং
২০০০ সালে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড বায়োটেকনোলজি নামে আরও একটি নতুন বিভাগ এ অনুষদে
অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। বর্তমানে অনুষদে বিভাগ সংখ্যা ৯ টি। প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকে অনুষদের
বিভাগ সমূহ জীববিজ্ঞান বিষয়ক জাতীয় সমস্যা সম্পর্কিত গবেষণায় সক্রিয়ভাবে
অংশগ্রহণ করে আসছে এবং ইতিমধ্যে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি ও প্রশংসা লাভ
করেছে। এ অনুষদের সদস্য সংখ্যা বর্তমানে ১২৫ জন। অনুষদের বিভাগ সমূহ দেশী বিদেশী
বিশ্ববিদ্যালয় এবং গবেষণাগারের সাথে একাধিক যৌথ গবেষণা কার্যক্রমে নিয়োজিত আছে।
অনুষদের অধীনে Biotechnology Research Center ও Advanced Center for Biological Research, center of excellence নামে তিনটি উচ্চতর
গবেষণা কেন্দ্র আছে। এছাড়াও অনুষদের অধীনে The Dhaka University Journal of Biological Sciences
নামে
একটি নিয়মিত জার্নাল প্রকাশিত হয়ে আসছে। অনুষদের বতর্মান ডীন অধ্যাপক ডঃ আনোয়ার
হোসেন।
মৃত্তিকা,পানি ও পরিবেশ
১৯৪৯ সালে বর্তমান বিভাগটি মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগ নামে প্রতিষ্ঠিত
হয়। প্রতিষ্ঠিত হবার পর ১৯৬২ সন পর্যন্ত এই বিভাগ থেকে এম এস সি ডিগ্রি প্রদান
করা হত। ১৯৬৩ সন হতে বি এস সি অনার্স ও এম এস সি উভয় ডিগ্রি প্রদান করা হচ্ছে। ২৩
শে জুলাই ২০০০ সালে বিভাগীয় একাডেমিক কমিটির এক সভায় মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগের
নাম পরিবর্তন করে মৃত্তিকা,পানি ও পরিবেশ বিভাগ করা হয়। তখন থেকেই এই
বিভাগ বি এস সি অনার্স এবং এম.এস ডিগ্রি চালু করেছে। বিভাগের স্বাভাবিক
কার্যক্রমের পাশাপাশি বর্তমানে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের বিভিন্ন
বিশ্ববিদ্যালয় ও সংস্থার সাথে বিভাগ যৌথভাবে গবেষণা কার্যক্রমে নিয়োজিত আছে।
এম.এস.সি ডিগ্রি ছাড়াও পোস্টগ্রাজুয়েট পর্যায়ে এম.ফিল ও পিএইচ.ডি কার্যক্রম ও
গবেষণা সম্পাদিত হচ্ছে।
উদ্ভিদ
বিজ্ঞান
উদ্ভিদ
বিজ্ঞান বিভাগ,ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি প্রাচীনতম বিভাগ
এবং উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিষয়ক দেশের প্রথম বিভাগ। প্রয়াত প্রফেসর পি. মহেশ্বরী
কর্তৃক ১৯৩৯ সালে জীববিজ্ঞান বিভাগ প্রতিষ্ঠিত হয় এবং এই বিভাগেই উদ্ভিদ
বিজ্ঞানের পাঠদান শুরু হয়। ঐ সময় বিএসসি পাস কোর্সে উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিষয় পড়ানো
হত। ১৯৪৮ সালে উদ্ভিদ বিজ্ঞানে প্রথম এম.এস.সি ক্লাস শুরু হয় এবং ১৯৫০ সনে উদ্ভিদ
বিজ্ঞান বিষয়ে এম.এস.সি এর প্রথম ব্যাচ ডিগ্রি প্রাপ্ত হয়। ডঃ মজিদ আহমেদ
বিভাগীয় প্রধান হিসেবে ১৯৪৯ সালে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ১৯৫৪ সালে স্বতন্ত্র
উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগ আত্মপ্রকাশ করে এবং বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা প্রধান হন প্রফেসর
জি. পি. মজুমদার। বর্তমানে এই বিভাগে মোট ৬৫০ জন ছাত্রছাত্রী লেখাপড়া করেছেন।
সংখ্যাতিরিক্ত ও অনারারি শিক্ষকসহ বিভাগের মোট ৩৫ জন শিক্ষক পাঠদান ও গবেষণা
কর্মকান্ডে নিয়োজিত আছেন।
প্রাণিবিদ্যা
বিভাগ,ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
প্রাণিবিদ্যা
১৯৫৪ সালে প্রাণিবিদ্যা বিভাগ চালু হয়। প্রয়াত প্রফেসর ডঃ
হাবিবুল্লাহ খান ইউসুফজাই ছিলেন প্রথম বিভাগীয় প্রধান,এর পূর্বে
বিভাগটি ১৯৩৯ সালে প্রতিষ্ঠিত জীববিজ্ঞান বিভাগের অধীনে ছিল। প্রতিষ্ঠাকালে
প্রাণিবিদ্যা বিভাগটি ছিল মৃত্তিকা,পানি ও পরিবেশ
বিভাগীয় ভবনে এবং ১৯৫৫ সালে তা বর্তমান জায়গায় স্থানান্তরিত হয়। মৎসবিজ্ঞান,কীটতত্ত্ব,বন্যপ্রাণিতত্ত্ব,পরজীবিতত্ত্ব ও
বংশগতি বিদ্যার গবেষণা ও শিক্ষার জন্য এখানে প্রচুর সুবিধা আছে। এ বিভাগ থেকে
প্রাণিবিদ্যার বিভিন্ন শাখায় বি.এস.সি,এম.এস,এম.ফিল এবং পিএইচডি ডিগ্রি প্রদান করা হয়।
প্রাণ
রসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান
১৯৫৭ সালে কার্জন হলের শেষ প্রান্তে অবস্থিত চারতলা বিল্ডিংটিতে
বিভাগটির পথচলা শুরু হয়। প্রফেসর কামালউদ্দিন আহমেদ এর প্রতিষ্ঠাতা। পূর্বে এটি
শুধু প্রাণরসায়ন বিভাগ থাকলেও সম্প্রতি এর নামকরণ করা হয় প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ
বিজ্ঞান বিভাগ এবং সেই অনুযায়ী পাঠতালিকাতেও বিশেষ পরিবর্তন আনা হয়। এই বিভাগে
অধ্যাপনায় নিয়োজিত রয়েছেন একরাশ খ্যাতনামা বিজ্ঞানী ও গবেষক। বিভাগে চার বছর
মেয়াদী অনার্স,এক বছর মেয়াদী মাস্টার্স,এম ফিল ও পিএইচডির
সুবিধা রয়েছে। বিভাগের বর্তমান চেয়ারম্যান প্রফেসর ইশতিয়াক আহমেদ।
মনোবিজ্ঞান
মনোবিজ্ঞান বিভাগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবনের তৃতীয় তলায়
অবস্থিত। এই বিভাগ ১৯৬৫ সালে প্রফেসর ডঃ মীর ফখরুজ্জামানের নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত
হয় এবং তিনিই ছিলেন প্রথম বিভাগীয় প্রধান। প্রথমে এই বিভাগ থেকে এম.এ ডিগ্রি
প্রদান করা হত। ১৯৬৭ সালে মনোবিজ্ঞান বিভাগে স্নাতক কোর্স চালু হয়।
অণুজীব
বিজ্ঞান
১৯৭৯ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হল এলাকায় অবস্থিত
প্রাণিবিদ্যা ভবনের প্রথম তলার একটি অংশে অণুজীব বিজ্ঞান প্রতিষ্ঠিত হয়। এ
বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান মরহুম অধ্যাপক ডঃ আনোয়ারুল আজিম চৌধুরীর নিরলস
প্রচেষ্টায় এবং দেশের খ্যাতনামা অণুজীব বিজ্ঞানীদের সর্বাত্মক সহযোগিতায় মাত্র
১০-১২ জন এম.এস.সি গবেষণা গ্রুপের ছাত্র নিয়ে বিভাগের যাত্রা শুরু হয়।
পর্যায়ক্রমে এই বিভাগের শিক্ষা ও গবেষণার মানোন্নয়ন হয় এবং এর খ্যাতি দেশে ও
বিদেশে বিস্তৃত হয়। এ দেশের কৃষি খাদ্য-পানীয় ও ঔষধ শিল্প, স্বাস্থ্য,পরিবেশ ইত্যাদি ক্ষেত্রের উন্নয়নে অণুজীব বিজ্ঞানীদের বিশেষ
অবদানের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা ব্যাপকভাবে অনুভূত হওয়ায় ১৯৮৮-১৯৮৯ শিক্ষাবর্ষ
থেকে এ বিভাগে বি.এস.সি অনার্স কোর্স শুরু করা হয়।
ড.মোকাররম হোসেন বিজ্ঞান ভবন
বর্তমানে বিভাগটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাইন্স কমপ্লেক্স ভবনের ১ম ও
২য় তলায় বি.এস.সি অনার্স, এম. এস, এম.ফিল ও
পি.এইচ.ডি কোর্সে প্রায় ২৫০ জন ছাত্রছাত্রী নিয়ে শিক্ষা ও গবেষণা কার্যক্রম
পরিচালনা করছে। এ বিভাগের ২৪ জন শিক্ষকের তত্ত্বাবধানে প্রতিবছর প্রায় ৪০ জন
ছাত্রছাত্রী সফলতার সাথে তাঁদের অধ্যয়ন শেষে দেশের ও বিদেশের খ্যাতিমান
প্রতিষ্ঠানে যোগদান করছে। এপ্রিল ২০০৪ পর্যন্ত পরিসংখ্যানে দেখা যায়,এই বিভাগের ২৮৫ জন এম.এস.সি ডিগ্রীধারী প্রায় ৪৫% ছাত্রছাত্রী বিদেশে
পি.এইচ.ডি করবার জন্য বৃত্তি পেয়েছে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গবেষণা অনুদানে
বিভাগটিতে বিভিন্নক্ষেত্রে যেমন Virology,Microbial biotechnology, Environmental
Microbiology and Molecular Ecology,Environmental Biotechnology,Fermentation
and Enzyme technology,Food and Industrial Microbiology,Pollution control,bioresource technology, Immunology and Clinical Microbiology, Food and
Industrial Microbiology ইত্যাদি ক্ষেত্রে গবেষণা হচ্ছে। বিভাগের সদস্যবৃন্দ বিভিন্ন জাতীয়
ও আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সাথে যৌথভাবে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছে। এগুলোর
মধ্যে অন্যতম হল আইসিডিডিআরবি,বাংলাদেশ পরমাণু গবেষণা কমিশন,বিসিএসআইআর (BCSIR),বাংলাদেশ পাট
গবেষণা ইনস্টিটিউট (BJRI), গণস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট (IPH),আন্তর্জাতিক
পরমাণু শক্তি সংস্থা (IAEA) ইত্যাদি। বর্তমানে অধ্যাপক ডঃ মাহমুদা ইয়াসমিন
এই বিভাগের চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োজিত আছেন।
মৎস্য বিজ্ঞান
অধ্যাপক
মোহাম্মদ শফি মৎস বিজ্ঞান ভবন
বাংলাদেশের অর্থনীতিতে মৎস খাতের গুরুত্ব অনুধাবন করে ১৯৯৭-৯৮ শিক্ষাবর্ষ থেকে ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয়ে অ্যাকুয়াকালচার ও ফিশারিজ বিভাগের কার্যক্রম শুরু হয়। ২৯ মার্চ ২০০৪ তারিখের ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট-এর সভায় এ বিভাগের নাম পরিবর্তন করে মৎসবিজ্ঞান বিভাগ করা হয়।
বাংলাদেশের মৎস সম্পদ সংরক্ষণ ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার জন্য দেশের সমগ্র মৎস খাতের উন্নয়নের মাধ্যমে
দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থার ব্যাপক পরিবর্তনের জন্য প্রয়োজনীয় ও উপযুক্ত মৎস্যবিজ্ঞানী তৈরি করা মৎসবিজ্ঞান বিভাগের প্রধান
লক্ষ্য।চিকিৎসা মনোবিজ্ঞান
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডন-এর সঙ্গে লিংক
প্রোগ্রামের অধীনে ব্রিটিশ Department of International Development (DFID) এর অর্থানাকুল্যে এবং
১২ জন ব্রিটিশ বিশেষজ্ঞের সহায়তায় ১৯৯৬ সনে (১৯৯৩-৯৪ শিক্ষাবর্ষ) ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধীনে ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি কোর্সটি চালু
হয়। ১৯৯৭ সালে এটি একটি স্বতন্ত্র বিভাগ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। বিভাগে বর্তমানে
৫ জন পূর্ণকালীন ও ২ জন খন্ডকালীন শিক্ষক আছেন।
জিন
প্রকৌশল ও জৈব প্রযুক্তি
বিভাগটি কার্জন হলের পিছনে অবস্থিত। ২০১১
সালে অধ্যাপক ডঃ আফতাব আহমেদ এই বিভাগের প্রধান নির্বাচিত হন।
এডুকেশনাল
সাইকোলজি
২০০৬ সালে মনোবিজ্ঞান বিভাগ প্রতিষ্ঠিত হয়। এরই ধারাবাহিকতায়
পরবর্তীতে একটি স্বাধীন বিভাগ হিসেবে ২০১১ সালে শিক্ষা ও কাউন্সেলিং মনোবৈজ্ঞানিক
প্রস্তুতির লক্ষ্যে জীববিজ্ঞান অনুষদের অধীনে এডুকেশনাল এন্ড কাউন্সেলিং সাইকোলজি
বিভাগ প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি মনোবিজ্ঞানে স্নাতকদের স্নাতকোত্তর ডিগ্রি প্রদান করে।
ফার্মেসি অনুষদ
ফার্মেসি
অনুষদ ভবন, কার্জনহল, ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয়
প্রতিষ্ঠা কাল: ১৯৯৫। পূর্বে এটি রসায়ন বিভাগের অন্তর্ভুক্ত ছিল।
এ অনুষদের বর্তমান ডীন হলেন অধ্যাপক ডঃ আব্দুর রহমান। ফার্মেসি অনুষদ চারটি বিভাগ
নিয়ে গঠিত।
ফার্মাসিউটিকাল
রসায়ন
ফার্মেসি অনুষদের অধীনে একটি বিভাগ।এর বর্তমান চেয়ারম্যান অধ্যাপক
ডঃ মেহেদী মাসুদ।
ক্লিনিকাল
ফার্মেসি এন্ড ফার্মাকোলজি
ফার্মেসি
অনুষদ ভবনে ক্লিনিকাল ফার্মেসি এন্ড ফার্মাকোলজি ও অন্যান্য বিভাগের নামফলক
২০০৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ফার্মেসি অনুষদের অধীনে ক্লিনিকাল
ফার্মেসি এন্ড ফার্মাকোলজি বিভাগ প্রতিষ্ঠিত হয়। এই বিভাগের লক্ষ্য হচ্ছে দক্ষ ও
প্রতিভাবান পেশাদারদের শিক্ষিত করা,যারা দেশ-বিদেশে স্বাস্থ্যসেবায় অবদান রাখবে।
এখানে চার বছরের স্নাতক (ফার্মেসি) ডিগ্রি অর্জনকারী শিক্ষার্থীদের এক বছরের এম
ফার্ম ( মাস্টার অফ ফার্মেসি) ডিগ্রী দেওয়া হয়। ফার্মেসি মেডিকেল স্নাতকদের এম
ফিল ( মাস্টার অফ ফিলোসফি) এবং পি এইচ ডি ডিগ্রি দেওয়া হয়।
ফার্মাসিউটিক্যাল
প্রযুক্তি
বর্তমান চেয়ারম্যান ডঃ সেলিম রেজা।
ফার্মেসি
এই বিভাগটি সর্বপ্রথম ১৯৬৪ সালে যাত্রা শুরু করে।বিভাগটির হাত ধরেই
এদেশে ফার্মেসি শিক্ষার প্রচলন শুরু হয়।পরবর্তিতে দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে
ফার্মেসি বিভাগ খোলা হয়।"ফার্মেসি পড়ো,আমেরিকা উড়ে যাও"-এমন একটি
কথার প্রচলন শুরু থেকেই ছিলো।বর্তমানে এতে পাঁচ বছর মেয়াদি অনার্স কোর্স চালু
রয়েছে।বিভাগের চেয়ারম্যান ডঃ সীতেশ চন্দ্র বাছার।
প্রকৌশল ও প্রযুক্তি
অনুষদ
ইঞ্জিনিয়ারিং এবং টেকনোলজী বিষয়ের তিনটি বিভাগ নিয়ে ০১ জুলাই
২০০৮ তারিখে এই অনুষদ প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমানে এই অনুষদের ডীন ড. শাহিদা রফিক।
কার্জন হল প্রাঙ্গণের সায়েন্স ক্যাফেটেরিয়ার দ্বিতীয় তলায় এ অনুষদের কার্যালয়
অবস্থিত। এই অনুষদের অন্তর্ভুক্ত বিভাগগুলো হচ্ছে:
তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক কৌশল
তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক কৌশল বিভাগের নামফলক,কার্জনহল,ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রে বিশব্যাপী যোগাযোগ ও ইলেকট্রনিক এর
বিপ্লবের যুগে ১৯৬৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে
স্নাতকোত্তর পর্যায়ে মাত্র ২৫-জন ছাত্র নিয়ে ফলিত পদার্থবিদ্যা বিভাগের সূচনা
হয়। অধ্যাপক শাহ মোঃ ফজলুর রহমান বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ছিলেন।
বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর দেশে ইলেকট্রনিক্স ও টেলিকমিউনিকেশন শিক্ষার দ্রুত
উন্নয়নের জন্য বিভাগে ধীরে ধীরে বিভিন্ন আধুনিক কোর্স চালু হয়। ১৯৭৪ সালে এই
বিভাগের নাম পরিবর্তন করে ফলিত পদার্থবিজ্ঞান ও ইলেক্ট্রনিক্স রাখা হয় এবং ২০০৫
সালের ৮ অক্টোবর ফলিত পদার্থবিজ্ঞান,ইলেক্ট্রনিক্স ও যোগাযোগ প্রকৌশল রাখা হয়।
এরপর ২০১৪ সালে বিভাগের নতুন নামকরণ করা হয় "তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক কৌশল"
(Electrical and Electronic Engineering)। ১৯৭৪ সালে এই বিভাগে স্নাতক
(সম্মান) কোর্স চালু হয়। বর্তমানে এই বিভাগে স্নাতকোত্তর,এম.ফিল ও
পি.এইচ.ডি কোর্সও চালু আছে।
ফলিত
রসায়ন ও কেমিকৌশল
ফলিত রসায়ন ও কেমি কৌশল বিভাগের জন্ম হয় ১৯৭২ সালে। রসায়ন,রাসায়নিক
প্রযুক্তি ও রসায়ন প্রকৌশল সমন্বয়ে কোর্স
কারিকুলাম এমন ভাবে তৈরি করা হয়েছে যেন এখান থেকে ডিগ্রিপ্রাপ্ত ছাত্র-ছাত্রীরা
শিল্প-কারখানায় তাদের জ্ঞান দক্ষতার সাথে প্রয়োগ করতে পারে।
কম্পিউটার
বিজ্ঞান ও প্রকৌশল
১৯৯২ সালের ১ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে
কম্পিউটার বিভাগ প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রথমে শুধু পোস্ট-গ্রাজুয়েশন কোর্স চালু হলেও
পরে গ্রাজুয়েশন কোর্সও চালু করা হয়। ২০০৪ সালের ২৭ মার্চ বিভাগের নাম পরিবর্তন
করে কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল করা হয়। বিভাগটি মোকাররম ভবনরাজিতে অবস্থিত
মনোরম সায়েন্স কমপ্লেক্স ভবনের তৃতীয় ও চতুর্থ তলায় অবস্থিত। এই বিভাগ গড়ার
ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডঃলুৎফর রহমানের অবদান উল্লেখযোগ্য। এই
বিভাগের ১১টি আধুনিক ল্যাবরেটরী রয়েছে। এই বিভাগের অধ্যাপকগণ বিশ্বের নামকরা
বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চশিক্ষা অর্জন করে এসেছেন। ২০১০ সাল থেকে ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল অনুষদে প্রথম এই বিভাগে সেমিস্টার পদ্ধতি চালু করা হয়।
২০১০ সালের এসিএম আইসিপিসিতে এই বিভাগের ডিইউ ডার্ক নাইট দল অংশগ্রহণ করে। এই বিভাগের একটি
সক্রিয় অ্যালমনাই অ্যাসোসিয়েশন আছে। ২০১২ সালে বিভাগটি তার প্রতিষ্ঠার ২০ বছর
উদযাপন করে। বাংলাদেশের তথ্য প্রযুক্তি শিল্পের একটি বিশেষ অংশ জুড়ে রয়েছে এ
বিভাগের কৃতী শিক্ষার্থীরা। বিশ্বের নামকরা প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান যেমন গুগল,মাইক্রোসফট,মটরোলা,নোকিয়া,সিমেন্স ইত্যাদিতে এই বিভাগের বহু প্রাক্তন শিক্ষার্থী কর্মরত আছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি কার্যক্রম পরিচালনা,জাতীয়
বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি কার্যক্রম পরিচালনার জন্য অটোমেটেড সিস্টেম সহ অনেক
গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তি সহায়তায় এই বিভাগের অবদান রয়েছে।
কম্পিউটার
বিজ্ঞান বিভাগের গৌরব উজ্জ্বল ২০ বছর পূর্তি
এই বিভাগের ল্যাবরেটরিগুলো হলো-
· সফটওয়্যার
ল্যাব-১
· সফটওয়্যার
ল্যাব-২
· হার্ডওয়্যার
ল্যাব
· মাইক্রোপ্রসেসর
ও ইন্টারফেসিং ল্যাব
· অপারেটিং
সিস্টেম ল্যাব
· নেটওর্কিং
ল্যাব
· গ্রাফিক্স
ও মাল্টিমিডিয়া ল্যাব
· হাই
পার্ফোর্ম্যান্স কম্পিউটার ল্যাব (সহযোগিতায়: খুলনা পাওয়ার গ্রিড)
· এম.এস.রিসার্চ ল্যাব
· স্যামসাং
ইনোভেশন ল্যাব (সহযোগিতায়: স্যামসাং আর এন্ড ডি বাংলাদেশ)
· ডেটাবেইজ
ল্যাব
এছাড়াও এ বিভাগের একটি নিজস্ব সার্ভার রুম রয়েছে। আছে একটি
গ্রন্থাগার ও সেমিনার রুম,শিক্ষার্থীদের অবসর কাটানোর জন্য ইনডোর গেম
(টেবিল টেনিস,ডার্টস) রুম।
বাংলাদেশের প্রথম নিজস্ব অনলাইন জাজ ওয়েব সাইট এই বিভাগ তৈরি
করেছে। শিক্ষার্থীদের সার্বিক উন্নয়নের জন্য রয়েছে বিভাগের প্রোগ্রামিং কন্টেস্ট
ক্লাব,কালচারাল ক্লাব,ক্রিকেট ক্লাব,ডিবেটিং ক্লাব,কম্পিউটার ক্লাব। এছাড়াও
আই.সি.টি. সর্ট কোর্সের মাধ্যমে বিভাগ বহির্ভুত শিক্ষার্থীদের জন্য কারিগরী ও
প্রশিক্ষণ সার্টিফিকেট কোর্স প্রোগ্রামও সফলভাবে এই বিভাগ থেকে পরিচালিত হচ্ছে।
শিক্ষার্থীদের সুবিধার জন্য এ বিভাগ পুরোটা ওয়াই-ফাই ইন্টার্নেট সুবিধা সম্পন্ন।
এছাড়া প্রতিটি ল্যাবে রয়েছে উচ্চ গতির ইন্টার্নেট সংযোগ। বিভাগের একটি ল্যাব
শিক্ষার্থীদের সুবিধার জন্য প্রতিদিন রাত ৮ টা পর্যন্ত খোলা রাখা হয়।
পারমাণবিক
প্রকৌশল
পারমাণবিক প্রকৌশল বিভাগ ২০১২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এর প্রথম
চেয়ারম্যান ছিলেন অধ্যাপক ড.খোরশেদ আহমদ কবির। এটি শিক্ষার্থীদের স্নাতক ও
স্নাতকোত্তর ডিগ্রি প্রদান করে।
রোবোটিক্স
ও মেকাট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং
রোবোটিক্স ও মেকাট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগটি ৮ সেপ্টেম্বর ২০১৫
সালে চালু হয়,যার প্রতিষ্ঠাতা চেয়রাপার্সন ড.হাফিজ মোহাম্মদ হাসান বাবু। বর্তমানে
বিভাগটিতে স্নাতক (সম্মান) কোর্স চালু রয়েছে,যা ২০১৫-১৬
শিক্ষাবর্ষে ১৬ জন শিক্ষার্থী নিয়ে তার যাত্রা শুরু করে। বর্তমানে ড.লাফিফা
জামাল এই বিভাগটির চেয়ারপার্সন হিসেবে রয়েছেন।
বিশ্ব ও পরিবেশ বিজ্ঞান
অনুষদ
ভূগোল
ও পরিবেশ
১৯৪৭-৪৮ সালে অধ্যাপক নাফিস
আহমেদের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হয় ভূগোল বিভাগ। প্রথমে এখানে শুধুমাত্র
পোস্ট-গ্রাজুয়েট কোর্স চালু ছিল। ১৯৫৪ সালে ভূগোলে স্নাতক
(সম্মান) কোর্স চালু হয়। সম্মান ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে প্রথমে প্রাকৃতিক ও
মানবিক ভূগোলের বিভিন্ন শাখা চালু হয়। শ্রেণীকক্ষের বাইরে হাতে-কলমে শেখার জন্য
ফিল্ড-ট্রিপ,ফিল্ড-স্টাডিজ ও ফিল্ড-ক্যাম্প সহ মাঠ জরিপ এবং ভূমি ব্যবহার জরিপের
উপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হত। ১৯৯৬ সাল থেকে নাম পরিবর্তন
করে "ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগ" করা হয়। এই বিভাগে স্নাতকোত্তর শ্রেণীর
কোর্সভিত্তিক ডিগ্রির পাশাপাশি মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের থিসিসের মাধ্যমে ডিগ্রি
প্রোগ্রামও চালু আছে।
ভূতত্ত্ব
১৯৪৯ সালে ভূতত্ত্ব বিভাগ প্রতিষ্ঠিত হবার পর প্রথমে সনাতন পাস
কোর্স পদ্ধতিতে বি.এস.সি. ডিগ্রি প্রবর্তন করা হয়। ১৯৫৭ সনে এম.এস.সি.,১৯৬৭ সনে তিন
বছর মেয়াদী স্নাতক (সম্মান) ও ১৯৯৮ সনে চার বছরের সমন্বিত সম্মান কোর্স চালু হয়।
এই বিভাগে বর্তমানে ২৩ জন শিক্ষক রয়েছেন। এই বিভাগে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক
খ্যাতিসম্পন্ন বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানের যৌথভাবে গবেষণা কার্যক্রম চালু রয়েছে। এসব
বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের Columbia
University অন্যতম। এই বিভাগের পঠিত বিষয়ের
মধ্যে Hydrology,Petroleum Geology,Environmental Geology,Fieldwork এবং Geological
Mapping জাতীয় উন্নয়নে যথেষ্ট কার্যকর ভূমিকা রেখে চলেছে।
সমুদ্রবিজ্ঞান
দুর্যোগ
বিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপন'
আবহাওয়া
বিজ্ঞান
চারুকলা অনুষদ
·
অঙ্কন ও চিত্রায়ন
·
গ্রাফিক্স ডিজাইন
·
প্রিন্ট মেকিং
·
প্রাচ্যকলা
·
ভাষ্কর্য
·
কারুশিল্প
·
মৃৎশিল্প
·
শিল্পকলার ইতিহাস
অন্যান্য অনুষদ
·
চিকিৎসা অনুষদ
·
স্নাতকোত্তর চিকিৎসা বিজ্ঞান অনুষদ
·
শিক্ষা অনুষদ
ইনস্টিটিউট
সমূহ
পরিসংখ্যান গবেষণা ও শিক্ষণ ইনস্টিটিউট,ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
1.
শিক্ষা ও গবেষণা ইন্সটিটিউট: দেশের শিক্ষা ক্ষেত্রের
উন্নয়ন ও আধুনিকায়নের জন্য যোগ্য শিক্ষক,শিক্ষাবিদ ও শিক্ষাবিজ্ঞানী গড়ে তোলার
লক্ষ্য নিয়ে ইন্সটিটিউটটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ইন্সটিটিউট হিসেবে USAID এর
অর্থায়নে কলোরাডো স্টেট কলেজের (বর্তমানে ইউনিভার্সিটি অব নর্দার্ন কলোরাডো) টেকনিকাল সহায়তায় ১৯৫৯ সালে প্রতিষ্ঠা
করা হয়।এই ইন্সটিটিউটের বিভিন্ন কোর্সের মধ্যে রয়েছে চার বছরের বি.এড (সম্মান),এক বছরের এম.এড (নিয়মিত),দুই বছরের এম.এড সান্ধ্যকালীন কোর্স,এম.ফিল. ও পিএইচ.ডি.।
2.
পরিসংখ্যান গবেষণা ও
শিক্ষণ ইনস্টিটিউট: ইস্টিটিউটটি সাধারণত আই.এস.আর.টি নামে পরিচিত। ১৯৬৪
সালে এই ইস্টিটিউটটি প্রতিষ্ঠিত হয়। পরিসংখ্যানবিদ ডঃ কাজী মোতাহার হোসেন ছিলেন
এই ইন্সটিটিউটের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক,বর্তমানে এর পরিচালক হলেন মোহাম্মদ
সোয়াইব। এই ইন্সটিটিউটে ফলিত পরিসংখ্যান বিষয়ে চার বছর মেয়াদি বি.এস(সম্মান) ও
এক বছর মেয়াদি এম.এস কোর্সে পাঠদান করা হয়।
3.
ব্যবসায় প্রশাসন ইন্সটিটিউট
4.
পুষ্টি ও খাদ্য বিজ্ঞান ইন্সটিটিউট
5.
সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউট
6.
আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট
7.
তথ্য প্রযুক্তি ইন্সটিটিউট
8.
লেদার প্রকৌশল ও প্রযুক্তি ইন্সটিটিউ
9.
স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইন্সটিটিউট:গত তিন দশক ধরে স্বাস্থ্য অর্থনীতিতে
অর্থনীতির একটি প্রধান শাখা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে যা উন্নত ও উন্নয়নশীল উভয়
দেশের শিক্ষাবিদদের স্বাস্থ্যের নির্ধারকদের উপর প্রভাব ফেলতে পারে এবং আমরা
কীভাবে প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ করি এবং স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করি। ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি (আইএইচই) ইনস্টিটিউট,1998 সালে স্বাস্থ্য
অর্থনীতির উন্নয়নে অগ্রণী ভূমিকা রাখে,যা দক্ষিণ-এশিয়াতে
একমাত্র স্বাস্থ্য অর্থনীতি শিক্ষাদান ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান। IHE শৃঙ্খলা সব অঞ্চলে কাজ করে,পদ্ধতিগত চিন্তাধারা উপর
একটি বিশেষ জোর দেওয়া এবং সংক্ষিপ্ত কোর্স / প্রশিক্ষণ এবং বিভিন্ন একাডেমিক
ডিগ্রী প্রোগ্রাম প্রস্তাব মাধ্যমে উচ্চ নীতি প্রভাব। এটি তার মানের শিক্ষার জন্য
এবং স্বাস্থ্যের পরিমাপের পরিমাপ,কর্মক্ষমতা পরিমাপ এবং
উত্পাদনশীলতা,স্বাস্থ্যসেবা অর্থায়ন,বিকল্প স্বাস্থ্যসেবা কর্মসূচির অর্থনৈতিক মূল্যায়ন এবং চিকিত্সা পদ্ধতি,রোগব্যাধি পরিমাপের পরিমাপ এবং অর্থনীতির
পদ্ধতিতে কাজ করার জন্যও পরিচিত। আইএইচএ নিম্নলিখিত একাডেমিক প্রোগ্রাম প্রস্তাব।
অধিভুক্ত
কলেজ/ইনস্টিটিউটসমূহ
গ্রন্থাগার
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগার আঠারো হাজার বই নিয়ে
যাত্রা শুরু করে। গ্রন্থাগারে বর্তমানে ছয় লাখ আশি হাজারেরও বেশি বই রয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ১৯২২-২৩
শিক্ষাবর্ষে প্রতিষ্ঠিত হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের
শুরুতে এর নাম ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু)। ডাকসুর বর্তমান ভিপি
নুরুল হক নুর।
আবাসিক হলসমূহ
শহীদুল্লাহ হলের পুকুর।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল ছাত্র-ছাত্রীকে কোনো না কোনো হলের
সাথে আবাসিক/অনাবাসিক ছাত্র-ছাত্রী হিসেবে যুক্ত থাকতে হয়। বর্তমানে
বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদের জন্য ১৬ টি এবং ছাত্রীদের জন্য ৫ টি আবাসিক হল রয়েছে।
এছাড়া চারুকলা অনুষদ ও ব্যবসায় প্রশাসন ইন্সটিটিউটের ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য
রয়েছে আলাদা হোস্টেল এবং বিদেশী ছাত্রদের জন্য আন্তর্জাতিক ছাত্রাবাস।
সংগঠন
টিএসসিতে শান্তির
পায়রা
বিশ্ববিদ্যালয়ে সক্রিয় রাজনৈতিক ছাত্রসংগঠনগুলো হল বাংলাদেশ ছাত্রলীগ,বাংলাদেশ ছাত্রলীগ(জাসদ),বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন,বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন,ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলন,সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট,বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রীসংঘ,বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র শিবির,জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল,বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী ইত্যাদি।
এছাড়াও উল্লেখযোগ্য সাংস্কৃতিক সংগঠনের মধ্যে রয়েছে প্রপদ,ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
চলচ্চিত্র সংসদ,চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র,ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ফটোগ্রাফিক সোসাইটি,ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
ডিবেটিং সোসাইটি,ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় টুরিস্ট সোসাইটি,ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আই টি সোসাইটি (DUITS),ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয় সায়েন্স সোসাইটি,বিজ্ঞান আন্দোলন মঞ্চ,বাংলাদেশ ওপেন সায়েন্স অর্গানাইজেশন,বাঁধন,সাংস্কৃতিক ইউনিয়ন ইত্যাদি। তাছাড়াও মধুর ক্যান্টিন ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ক্যাফেটেরিয়ার সবচেয়ে বিখ্যাত।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের
উপাচার্য
নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবন
প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ যাবৎ মোট ২৮ জন উপাচার্য দায়িত্ব পালন করেছেন। ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান ও ২৮ তম উপাচার্য বিশিষ্ঠ শিক্ষাবিদ অধ্যাপক মোহাম্মদ আখতারুজ্জামান। তিনি প্রথমে ভারপ্রাপ্ত উপাচার্যের দায়িত্ব
পালন করলেও বর্তমানে পূর্ণকালীন উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
উপাচার্যদের তালিকা
ছবি
|
নাম
|
দায়িত্ব
গ্রহণ
|
দায়িত্ব হস্তান্তর
|
|
১
|
|
স্যার
পি.জে.হার্টগ
|
ডিসেম্বর ১ ১৯২০
|
ডিসেম্বর ৩১ ১৯২৫
|
২
|
|
অধ্যাপক
জর্জ হ্যারি ল্যাংলি
|
জানুয়ারি ১ ১৯২৬
|
জুন ৩০ ১৯৩৪
|
৩
|
|
স্যার এ.এফ.রাহমান
|
জুলাই ১ ১৯৩৪
|
ডিসেম্বর ৩১ ১৯৩৬
|
৪
|
|
অধ্যাপক
রমেশচন্দ্র মজুমদার
|
জানুয়ারি ১ ১৯৩৭
|
জুন ৩০ ১৯৪২
|
৫
|
অধ্যাপক মাহমুদ
হাসান
|
জুলাই ১ ১৯৪২
|
অক্টোবর ২১ ১৯৪৮
|
|
৬
|
অধ্যাপক সৈয়দ মোয়াজ্জেম হুসাইন
|
অক্টোবর ২২ ১৯৪৮
|
নভেম্বর ৮ ১৯৫৩
|
|
৭
|
অধ্যাপক ডাব্লিউ.এ.জেনকিন্স
|
নভেম্বর ৯ ১৯৫৩
|
নভেম্বর ৮ ১৯৫৬
|
|
৮
|
বিচারপতি মোহাম্মদ ইবরাহিম
|
নভেম্বর ৯ ১৯৫৬
|
অক্টোবর ২৭ ১৯৫৮
|
|
৯
|
বিচারপতি হামুদুর
রহমান
|
নভেম্বর ৫ ১৯৫৮
|
ডিসেম্বর ১৪ ১৯৬০
|
|
১০
|
অধ্যাপক মাহমুদ
হুসেইন
|
ডিসেম্বর ১৫ ১৯৬০
|
ফেব্রুয়ারি ১৯ ১৯৬৩
|
|
১১
|
অধ্যাপক ওসমান গণি
|
ফেব্রুয়ারি ২০ ১৯৬৩
|
ডিসেম্বর ১ ১৯৬৯
|
|
১২
|
বিচারপতি আবু
সাঈদ চৌধুরী
|
ডিসেম্বর ২ ১৯৬৯
|
জানুয়ারি ২০ ১৯৭২
|
|
১৩
|
অধ্যাপক মোজাফফর আহমেদ চৌধুরী
|
জানুয়ারি ২১ ১৯৭২
|
এপ্রিল ১২ ১৯৭৩
|
|
১৪
|
আব্দুল মতিন
চৌধুরী
|
এপ্রিল ১৩ ১৯৭৩
|
সেপ্টেম্বর ২২ ১৯৭৫
|
|
১৫
|
অধ্যাপক
এম.শামসুল হক
|
সেপ্টেম্বর ২৩ ১৯৭৫
|
ফেব্রুয়ারি ১ ১৯৭৬
|
|
১৬
|
অধ্যাপক
ফজলুল হালিম চৌধুরী
|
ফেব্রুয়ারি ২ ১৯৭৬
|
মার্চ ২০ ১৯৮৩
|
|
১৭
|
এ কে এম সিদ্দিক
|
মার্চ ২১ ১৯৮৩
|
আগস্ট ১৬ ১৯৮৩
|
|
১৮
|
অধ্যাপক এম.শামসুল হক
|
আগস্ট ১৭ ১৯৮৩
|
জানুয়ারি ১২ ১৯৮৬
|
|
১৯
|
অধ্যাপক
আব্দুল মান্নান
|
জানুয়ারি ১২ ১৯৮৬
|
মার্চ ২২ ১৯৯০
|
|
২০
|
অধ্যাপক
মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান মিঞা
|
মার্চ ২৪ ১৯৯০
|
অক্টোবর ৩১ ১৯৯২
|
|
২১
|
অধ্যাপক
এমাজউদ্দিন আহমেদ
|
নভেম্বর ১ ১৯৯২
|
আগস্ট ৩১ ১৯৯৬
|
|
২২
|
অধ্যাপক শহিদ উদ্দিন আহমেদ(ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য)
|
আগস্ট ৩১ ১৯৯৬
|
সেপ্টেম্বর ২৯ ১৯৯৬
|
|
২৩
|
অধ্যাপক
এ.কে.আজাদ চৌধুরী
|
সেপ্টেম্বর ৩০ ১৯৯৬
|
নভেম্বর ১১ ২০০১
|
|
২৪
|
অধ্যাপক
আনোয়ারউল্লাহ চৌধুরী
|
নভেম্বর ১২ ২০০১
|
জুলাই ৩১ ২০০২
|
|
২৫
|
অধ্যাপক
এ.এফ.এম. ইউসুফ হায়দার (ভারপ্রাপ্ত
উপাচার্য)
|
আগস্ট ১ ২০০২
|
সেপ্টেম্বর ৯ ২০০২
|
|
২৬
|
অধ্যাপক
এস.এম.এ.ফায়েজ
|
সেপ্টেম্বর ৯ ২০০২
|
জানুয়ারি ১৫ ২০০৯
|
|
২৭
|
|
অধ্যাপক
ড.আ.আ ম স আরেফিন সিদ্দিক
|
জানুয়ারি ১৫ ২০০৯
|
সেপ্টেম্বর
৪ ২০১৭
|
২৮
|
|
অধ্যাপক মোহাম্মদ
আখতারুজ্জামান
|
সেপ্টেম্বর
৪ ২০১৭
|
বর্তমান
|
সমাবর্তন
গ্রাজুয়েট শিক্ষার্থীদের সমাবর্তন পোষাক
১৯২১ সালের ১ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক
কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর ব্রিটিশ আমলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বপ্রথম নিয়মিত সমাবর্তন অনুষ্ঠিত
হয় ১৯২৩ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি। এরপর ১৯২৪ থেকে ১৯৪৬ সাল পর্যন্ত প্রতি বছরই
(সর্বমোট ২৪ বার) সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়। ব্রিটিশ আমলে শেষ সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়
১৯৪৬ সালের ২১ নভেম্বর। পাকিস্তান আমলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম সমাবর্তন
অনুষ্ঠিত হয় ১৯৪৮ সালের ২৪ মার্চ। এরপর ১৯৭০ সাল পর্যন্ত আরও ১৫ বার সমাবর্তন
হয়। পাকিস্তান আমলে সর্বশেষ সমাবর্তন হয় ১৯৭০ সালের ৮ মার্চ; সেটি ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের
৩৯তম সমাবর্তন। স্বাধীনতার পর প্রথমবারের মতো (৪০তম) সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা
ছিল ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট। বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য রাষ্ট্রজনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রাষ্ট্রপতি
হিসেবে সমাবর্তন উদ্বোধন করার কথা ছিল; কিন্তু তার আগেই ভোররাতে ঘটে যায় নৃশংস
হত্যাকাণ্ড,১৫ আগস্ট ট্র্যাজেডি। এরপর ৪০তম সমাবর্তন হয়
১৯৯৯ সালের ১৮ ডিসেম্বর। এরপর ২০০১ সালে সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়। তারপর থেকে
নিয়মিত ভাবেই সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সর্বশেষ ৫০তম সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয় ৪
মার্চ ২০১৭ সালে।
সমাবর্তনে
সম্মানসূচক ডক্টরেটপ্রাপ্তদের তালিকা
সম্মানসূচক ডক্টরেটপ্রাপ্তদের তালিকা
|
|||
বছর
|
নাম
|
উপাধি
|
পরিচয়
|
১৯২২
|
লরেন্স জন
লামলে ডানডাস
|
ডক্টর অব ল'জ
|
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম চ্যান্সেলর
|
১৯২৫
|
ফিলিপ জোসেফ হার্টগ
|
ডক্টর অব ল'জ
|
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ভাইস-চ্যান্সেলর
|
১৯২৭
|
মহামহোপাধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রী
|
ডক্টর অব লিটারেচার
|
বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত ও বাংলা বিভাগের প্রথম অধ্যক্ষ
|
আর্ল অব লিটন
|
ডক্টর অব ল'জ
|
বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর
|
|
১৯৩২
|
স্যার চন্দ্রশেখর ভেঙ্কট রামন
|
ডক্টর অব সায়েন্স
|
পদার্থবিজ্ঞানী
|
স্যার ক্রান্সীস স্ট্যানলি জ্যাকসন
|
ডক্টর অব ল'জ
|
বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর
|
|
১৯৩৬
|
স্যার আবদুর রহিম
|
ডক্টর অব ল'জ
|
রাজনীতিবিদ
|
স্যার জন এন্ডারসন
|
ডক্টর অব ল'জ
|
বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর
|
|
স্যার জগদীশ চন্দ্র বসু
|
ডক্টর অব সায়েন্স
|
পদার্থবিদ,উদ্ভিদবিদ ও জীববিজ্ঞানী
|
|
স্যার প্রফুল্ল চন্দ্র রায়
|
ডক্টর অব সায়েন্স
|
রসায়নবিদ
|
|
স্যার যদুনাথ সরকার
|
ডক্টর অব লিটারেচার
|
ইতিহাসবিদ
|
|
স্যার মুহাম্মদ ইকবাল
|
ডক্টর অব লিটারেচার
|
কবি ও দার্শনিক
|
|
স্যার রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
|
ডক্টর অব লিটারেচার
|
কবি ও সাহিত্যিক
|
|
শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
|
ডক্টর অব লিটারেচার
|
কথা সাহিত্যিক
|
|
১৯৩৭
|
স্যার এ এফ রহমান
|
ডক্টর অব ল'জ
|
বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর
|
১৯৪৯
|
খাজা নাজিমুদ্দিন
|
ডক্টর অব ল'জ
|
পাকিস্তানের গভর্ণর জেনারেল
|
১৯৫১
|
স্যার মোহাম্মদ শাহ আগা খান
|
ডক্টর অব ল'জ
|
আগা সুলতান
|
১৯৫২
|
ড.আবদুল ওয়াহাব আজম
|
ডক্টর অব ল'জ
|
কূটনীতিক
|
১৯৫৬
|
আবুল কাশেম ফজলুল হক
|
ডক্টর অব ল'জ
|
রাজনীতিবিদ
|
ইস্কান্দার মির্জা
|
ডক্টর অব ল'জ
|
পাকিস্তানের গভর্ণর জেনারেল
|
|
চৌ এন লাই
|
ডক্টর অব ল'জ
|
গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের প্রধানমন্ত্রী
|
|
মাদাম সুংগ চিং লিং
|
ডক্টর অব ল'জ
|
---
|
|
১৯৬০
|
জামাল আব্দেল নাসের
|
ডক্টর অব ল'জ
|
যুক্ত আরব প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রপতি
|
আইয়ুব খান
|
ডক্টর অব ল'জ
|
পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি
|
|
১৯৭৪
|
সত্যেন্দ্রনাথ বসু
|
ডক্টর অব সায়েন্স (মরণোত্তর)
|
পদার্থবিজ্ঞানী
|
মুহম্মদ কুদরাত-এ-খুদা
|
ডক্টর অব সায়েন্স
|
রসায়নবিদ
|
|
কাজী মোতাহার হোসেন
|
ডক্টর অব সায়েন্স
|
পরিসংখ্যানবিদ
|
|
হীরেন্দ্রলাল
দে
|
ডক্টর অব সায়েন্স
|
বিজ্ঞানী
|
|
মুহম্মদ শহীদুল্লাহ
|
ডক্টর অব লিটারেচার (মরণোত্তর)
|
বহুভাষাবিদ
|
|
কাজী নজরুল ইসলাম
|
ডক্টর অব লিটারেচার
|
বাংলাদেশের জাতীয় কবি
|
|
আবুল ফজল
|
ডক্টর অব লিটারেচার
|
সাহিত্যিক
|
|
ওস্তাদ আলী আকবর খান
|
ডক্টর অব লিটারেচার
|
সঙ্গীতজ্ঞ
|
|
১৯৯৩
|
আবদুস সালাম
|
ডক্টর অব সায়েন্স
|
পদার্থবিজ্ঞানী
|
১৯৯৭
|
ফ্রেডারিকা মায়ার
|
ডক্টর অব সায়েন্স
|
ইউনেস্কোর মহাপরিচালক
|
১৯৯৯
|
অমর্ত্য সেন
|
ডক্টর অব সায়েন্স
|
অর্থনীতিবিদ
|
শেখ হাসিনা
|
ডক্টর অব ল'জ
|
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী
|
|
২০০৪
|
মাহাথির বিন মোহাম্মদ
|
ডক্টর অব ল'জ
|
মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী
|
২০০৭
|
মুহাম্মদ ইউনূস
|
ডক্টর অব ল'জ
|
অর্থনীতিবিদ
|
২০০৯
|
ইউয়ান ৎসে
লি
|
ডক্টর অব সায়েন্স
|
রসায়নবিদ
|
আবুল হুসসাম
|
ডক্টর অব সায়েন্স
|
রসায়নবিদ
|
|
রণজিত গুহ
|
ডক্টর অব লিটারেচার
|
ইতিহাসবিদ
|
|
২০১০
|
আবদুল্লাহ গুল
|
ডক্টর অব ল'জ
|
তুরস্কের রাষ্ট্রপতি
|
২০১১
|
বান কি মুন
|
ডক্টর অব ল'জ
|
জাতিসংঘের মহাসচিব
|
২০১২
|
প্যাসকেল ল্যামি
|
ডক্টর অব ল'জ
|
বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার মহাপরিচালক
|
ইরিনা বোকোভা
|
ডক্টর অব ল'জ
|
ইউনেস্কোর মহাপরিচালক
|
|
২০১৩
|
প্রণব মুখোপাধ্যায়
|
ডক্টর অব ল'জ
|
ভারতের রাষ্ট্রপতি
|
২০১৫
|
ফ্রান্সিস গুরি
|
ডক্টর অব ল'জ
|
বিশ্ব মেধাসত্ত্ব সংস্থার মহাপরিচালক
|
২০১৭
|
অমিত চাকমা
|
ডক্টর অব সায়েন্স
|
ভাইস-চ্যান্সেলর,ইউনিভার্সিটি
অব ওয়েস্টার্ন অন্টারিও
|
ইউকিয়া আমানো
|
ডক্টর অব ল'জ
|
মহাপরিচালক,আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা
|
প্রাক্তন শিক্ষার্থী ও
শিক্ষক
ছাত্র
·
শেখ মুজিবুর রহমান,বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জনক,বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি
·
সৈয়দ নজরুল ইসলাম,বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী
রাষ্ট্রপতি
·
তাজউদ্দীন আহমদ,বাংলাদেশের প্রথম
প্রধানমন্ত্রী
·
জামাল উদ্দিন আহমেদ ১৯৭৭
থেকে ১৯৮২ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের উপপ্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন।
·
শেখ কামাল,মুক্তিযোদ্ধা,আবাহনী লিমিটেড (ঢাকা) এর
প্রতিষ্ঠাতা
·
আব্দুল মতিন চৌধুরী,পদার্থবিজ্ঞানী,সদস্য,নোবেল কমিটি
·
এ কে এম সিদ্দিক,পদার্থবিজ্ঞানী,সদস্য,নোবেল কমিটি ১৯৮১
·
গোলাম মোহাম্মদ ভূঁঞা,পদার্থবিজ্ঞানী,সদস্য,নোবেল কমিটি
·
এম এ ওয়াজেদ মিয়া,পদার্থবিজ্ঞানী
·
অধ্যাপক ড.অনুপম সেন-সমাজবিজ্ঞানী ও একুশে পদক বিজয়ী
·
খন্দকার সিদ্দিক-ই-রাব্বানী,পদার্থবিজ্ঞানী
·
ইমদাদুল হক খান,পদার্থবিজ্ঞানী
·
মোহাম্মদ আতাউল করিম,পদার্থবিজ্ঞানী,আইইইই ফেলো
·
এ এম হারুন-অর-রশিদ,পদার্থবিজ্ঞানী
·
এম ইন্নাস আলী,পদার্থবিজ্ঞানী
·
কামরুল হায়দার,পদার্থবিজ্ঞানী
·
খন্দকার আব্দুল মুত্তালিব,পদার্থবিজ্ঞানী
·
সুলতানা নুরুন নাহার,পদার্থবিজ্ঞানী
·
ড.এ এফ এম ইউসুফ হায়দার,মনোনীত,পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল
পুরস্কার ১৯৯৪,২০১৩
·
ড.শাহিদা রফিক,মনোনীত,পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল
পুরস্কার ২০০১
·
মুহম্মদ মুনিরুল ইসলাম,পদার্থবিজ্ঞানী
·
সালেহ ফারুক
·
ফজলুর রহমান খান,পুরকৌশলী,স্থপতি
·
ডঃমুহাম্মদ ইউনূস,বাংলাদেশের বিশিষ্ট
অর্থনীতিবিদ ও গ্রামীন ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা।২০০৬ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার লাভ
করেন।
·
হাফিজ জি এ সিদ্দিকী,অর্থনীতিবিদ উপাচার্য,নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়
·
আব্দুস সাত্তার খান,রসায়নবিজ্ঞানী
·
ফজলুল হালিম চৌধুরী,রসায়নবিজ্ঞানী,সাবেক উপাচার্য,ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
·
আবুল হুসসাম,রসায়নবিজ্ঞানী
·
আবেদ চৌধুরী,জিনবিজ্ঞানী
·
শাহ মোহাম্মদ ফারুক
·
শাহ এ এম এস কিবরিয়া,অর্থনীতিবিদ,কূটনীতিবিদ,রাজনীতিবিদ,বাংলাদেশের
সাবেক অর্থমন্ত্রী
·
শাহাবুদ্দিন আহমেদ,বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রপতি
·
মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ
আল-গালিব,ইসলামী চিন্তাবিদ
·
আখতারুজ্জামান ইলিয়াস,কথাসাহিত্যিক
·
বুদ্ধদেব বসু,বাঙালি কবি,প্রাবন্ধিক,নাট্যকার,কথাসাহিত্যিক,অনুবাদক এবং সম্পাদক
·
জাহানারা ইমাম,লেখিকা,কথাসাহিত্যিক,শিক্ষাবিদ এবং একাত্তরের ঘাতক দালাল
বিরোধী আন্দোলনের নেত্রী।
·
হুমায়ূন আহমেদ,কথাসাহিত্যিক
·
হুমায়ূন আজাদ,কথাসাহিত্যিক
·
হুমায়ুন কাদির,কথাসাহিত্যিক
·
রফিক কায়সার,গবেষক,প্রাবন্ধিক
·
মুহম্মদ জাফর ইকবাল,লেখক।
·
ড.মুহাম্মাদ মুশতাক হোসেন,জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ,রোগতত্ত্ববিদ ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব
শিক্ষক
বিজ্ঞান
অনুষদ
·
সত্যেন্দ্রনাথ বসু
·
শ্রীনিবাস কৃষ্ণান
·
এ এম হারুন-অর-রশিদ
·
ডঃখোরশেদ আহমদ কবির
·
গোলাম মোহাম্মদ ভূঁঞা,পদার্থবিজ্ঞানী,সদস্য,নোবেল কমিটি
·
খন্দকার
সিদ্দিক-ই-রাব্বানী
·
ড.জে.কে.খাস্তগীর
·
ড.মোকাররম হোসেন খন্দকার
·
এম ইন্নাস আলী
·
আ ফ ম ইউসুফ হায়দার
·
ড.শাহিদা রফিক
·
আব্দুল মতিন চৌধুরী
·
ড.এম শমশের আলী
·
ড.মুহাম্মদ ইব্রাহিম
·
ড.কাজী মোতাহার হোসেন
·
ড.মজিদ আহমেদ
·
ভূপতিমোহন সেন
·
নলিনীমোহন বসু
·
নাফিস আহমেদ
·
ড.অজয় রায়
·
ড.ললিত মোহন নাথ
·
ড.হিরন্ময় সেনগুপ্ত
·
এ কে এম সিদ্দিক
·
ফজলুল হালিম চৌধুরী
কলা
অনুষদ
·
মহামোপাধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রী
·
রমেশচন্দ্র মজুমদার
·
ডবলু.এইচ.এ.সাদানি
·
ড.মুহম্মদ শহীদুল্লাহ
·
আবু মাহমেদ হাবিবুল্লাহ
·
ড.জ্যোতির্ময় গুহ ঠাকুরতা
·
ড.রাশিদুল হাসান
·
ড.মুনির চৌধুরী
·
মুহম্মদ আবদুল হাই
·
ড.কাজী দীন মুহম্মদ
·
ড.আহমদ শরীফ
·
ড.সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী
·
ড.ওয়াকিল আমেদ
·
ড.মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী
·
ড.এমাজউদ্দিন আহমেদ
·
আনোয়ার পাশা
·
ড.মাহমুদ হুসাইন
·
ড.সুশীল কুমার দে
·
ড.গোবিন্দ চন্দ্র দেব
·
ড.মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান
মিঞা
·
ড.মুহম্মদ এনামুল হক
·
ড.আনিসুজ্জামান
·
ড.হুমায়ুন আজাদ
·
ড.রেহমান সোবহান
·
ড.উপল তালুকদার
আইন
অনুষদ
বাণিজ্য
অনুষদ
·
ড.আবদুল্লাহ ফারুক
·
ড.মঈনউদ্দিন খান
·
ড.হরিপদ ভট্টাচার্য
সামাজিক
বিজ্ঞান অনুষদ
·
আবদুর রাজ্জাক (জাতীয়
অধ্যাপক)
·
অধ্যাপক ড.অনুপম সেন
·
সরদার ফজলুল করিম
·
এ.কে.নাজমুল করিম
·
আনোয়ারউল্লাহ চৌধুরী
·
ড.আবু আহমেদ
·
ড.নাজমা চৌধুরী
জীব
বিজ্ঞান অনুষদ
·
শাহ মোহাম্মদ ফারুক
·
পি.মহেশ্বরী
·
ড.হাবিবুল্লাহ খান ইউসুফজাই
·
ড.কামালউদ্দিন সিদ্দিকী
·
ড.আনোয়ারুল আজিম চৌধুরী
·
ড.ইয়াজুদ্দিন আহমেদ
·
ড.এ.জেড.এম.নওশের আলী খান
·
ড.এ.কে.এম.নুরুল ইসলাম (জাতীয় অধ্যাপক)
ফার্মেসী
অনুষদ
·
ড. আবুল কালাম আজাদ চৌধুরী
·
ড. রাশেদুজ্জামান চৌধুরী
·
ড মহিউদ্দিন আহমেদ কাদেরী।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে
অবস্থিত স্মৃতিস্তম্ভ ও ভাস্কর্য
·
অপরাজেয় বাংলা
·
সন্ত্রাস বিরোধী রাজু
স্মারক ভাস্কর্য
·
স্বোপার্জিত স্বাধীনতা
·
দোয়েল চত্বর
·
তিন নেতার মাজার
·
ঢাকা গেইট
·
স্বাধীনতা সংগ্রাম
·
স্বামী বিবেকানন্দ ভাস্কর্য
·
শহীদ মিনার
·
ঘৃণাস্তম্ভ
·
মধুদার ভাস্কর্য
·
সপ্তশহীদ স্মৃতিস্তম্ভ
·
বৌদ্ধ ভাস্কর্য
·
শহীদ ডা.মিলন ভাস্কর্য
·
শান্তির পায়রা ভাস্কর্য
তথ্যসূত্র:
1.
"সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"।২৬ জানুয়ারি ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা।সংগ্রহের তারিখ ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০১২
2.
"সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"।২৬ জানুয়ারি ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা।সংগ্রহের তারিখ ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০১২
3.
https://en.m.wikipedia.org/wiki/University_of_Dhaka
4.
Sajahan Miah।"University of Dhaka"।Sirajul Islam।Banglapedia: National Encyclopedia of Bangladesh।Asiatic Society of
Bangladesh। ১৫ জুন ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা।সংগ্রহের তারিখ ২০ মার্চ ২০১৩
5.
http://www.thenewnationbd.com/newsdetails.aspx?newsid=11176"Academy Gold Medal Award".bas.org.bd
6.
munir। "BAS Gold Medal Award Ceremony 2011"। bas.org.bd
7.
"TIME Magazine-Asia Edition-March 10,2013 - Vol.183,No.9"।asiaweek.com
8. https://web.archive.org/web/20010128111100/http://www.asiaweek.com/asiaweek/features/universities2000/multi/64.html"-প্রথম আলো" prothom-alo.com
9.
The
Muslim Heritage of Bengal-by Muhammad Mojlum Khan-Kube Publishing Ltd,UK- ISBN 978-1-84774-059-5
10.
জগন্নাথ কলেজ-বাংলাপিডিয়া] http://bn.banglapedia.org/index.php?
No comments:
Post a Comment